আড্ডার আসরে মসলা চায়ের উষ্ণতা☕

in hive-129948 •  3 months ago  (edited)

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমি ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

1000028694.jpg

গতকাল বিকেলটা ছিল একদম বিশেষ। আমাদের চার বন্ধু—আশিক, শিমুল, সঞ্চয় এবং আমি—যমুনার পাড়ে গিয়েছিলাম। নদীর শান্ত জল আর হালকা বাতাসে আমাদের আড্ডা শুরু হল। কিছু সময় নদীর পাশে বসে থাকার পর হঠাৎ করে হালকা বৃষ্টি শুরু হলো। আমরা সবাই একটু চিন্তিত হয়ে পড়লাম। কিন্তু বৃষ্টি আমাদের মেজাজে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং, আমাদের মনে হলো যে, বৃষ্টির সময়ে নদীর পাড়ে বসে থাকা আরও আনন্দের হবে।তবে, কিছু সময় পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, বৃষ্টির মধ্যেই ফিরে যেতে হবে। সেই সময় যখন আমরা যমুনার পাড় থেকে উঠে আসছিলাম, তখন দেখলাম একটি বড় বটগাছের নিচে আমার দুই বন্ধু অনিক ও মেহেদী বসে আছে। তারা অনেকদিন পর আবার দেখা হওয়াতে আমাদের মধ্যে উল্লাসের অনুভূতি কাজ করছিল। অনিক সিলেটে থাকে এবং মেহেদী ঢাকায়। তাই তাদের সাথে আবার মিলে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছিলাম না।

1000028683.jpg

এখন আমরা ছয় বন্ধু একসাথে নদীর পাড়ে বসে তুমুল আড্ডায় মেতে উঠলাম। কত কথা, কত হাসি-ঠাট্টা! একে অপরকে ঠাট্টা করার সময় যেন আমাদের মাঝে কোনো বয়সের পার্থক্য নেই। বন্ধুত্বের বন্ধনে সব সময়ের মতই সেই পুরনো সময়গুলো ফিরে আসছিল। কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর আমরা ডিসিশন নিলাম যে, কোথাও চা খেতে যাব।

আশিক তখনই বলল, “এখানে কাছে এক জায়গায় মজাদার মসলা চা ও লেবু চা পাওয়া যায়।” আমি লেবু চা খেতে খুব পছন্দ করি। তাই বললাম, “চলো, বন্ধুরা! সেখানে গিয়ে আমরা চা খেয়ে আসি।”

1000028687.jpg

চা খেতে যাওয়ার জন্য আমরা একটি বড় অটো রিকশা নিলাম। রিক্সাওয়ালা মামার সাথে মজার কথা বলতে বলতে আমরা সিরাজগঞ্জ বড়পুলে চলে আসলাম। রিকশায় বসে থাকা সময়টা যেন মজা করেই কাটছিল। আমরা সবাই মিলে হাসি-ঠাট্টা করতে করতে বেশ আনন্দে ছিলাম।বড়পুলে পৌঁছানোর পর আমরা আবার হাঁটা শুরু করলাম। বন্ধুদের সাথে হাঁটার সময় কত ধরনের ফাইজলামি চলে, সেটা বলতে গেলে আরেকটা গল্প হয়ে যাবে! আমরা ২০ মিনিট হাঁটলাম, এবং এই ২০ মিনিটে ফাইজলামি, ঠাট্টা, আর হাসির কোনো শেষ ছিল না।

1000028684.jpg

অবশেষে আমরা সিরাজগঞ্জের হাতিরঝিল নামক জায়গায় পৌঁছালাম। এই জায়গাটির নাম হাতিরঝিল রাখা হয়েছে কারণ সেখানে একটি সুন্দর ব্রিজ রয়েছে, যা ঢাকা শহরের হাতিরঝিল ব্রিজের মত দেখতে। রাতের বেলায় সেই ব্রিজের লাইটিং আরও মোহময়ী হয়ে ওঠে, যা আমাদের মনকে ছুঁয়ে যায়। সন্ধ্যার পরে এখানে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে, এবং সবাই ওই ব্রিজের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। ব্রিজের পাশেই এক লোক লেবু চা ও মশলা চা বিক্রি করে, এবং আমি শুনেছি এখানকার লেবু চা ও মসলা চা নাকি খুব সুস্বাদু। তাই আমি প্রথমেই বললাম, “মামা, ছয়টি লেবু চা দাও।”

1000028690.jpg

কিন্তু আমার দুই বন্ধু বলল, “আমরা লেবু চা খাব না, আমরা মসলা চা খাব।” যেহেতু তারা মসলা চা খাবে, আর আমি কখনো মসলা চা খেয়ে দেখিনি, তাই আমি বললাম, “আমাদের ছয়টি মশলা চা দাও।” মামা আমাদের অর্ডার নেওয়ার পর খুব সুন্দরভাবে মসলা দিয়ে চা বানানো শুরু করলেন। আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখলাম কিভাবে তিনি মসলা দিয়ে চা বানান। তাঁর হাতের কাজ দেখাটা ছিল আকর্ষণীয়, কারণ তিনি বিভিন্ন ধরনের মসলার সমন্বয়ে একটি পাউডার তৈরি করেছেন, যা দিয়ে মূলত মসলা চা তৈরি হয়। সেই পাউডার থেকে চা তৈরির সময় চারপাশে মসলার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল, যা আমাদের মুখে জল এনে দিচ্ছিল। আমরা সত্যিই উন্মুখ ছিলাম মসলা চা আসার জন্য।

1000028688.jpg

মসলা চায়ের মধ্যে শুধু মসলা নয়, বরং অল্প পরিমাণ লেবুর রসও দেয়, যা এর স্বাদকে বিশেষ করে তোলে। এই সংমিশ্রণ চায়ের গরম পানিতে মশলাগুলোর তাজা গন্ধ ছড়িয়ে দেয়, আর লেবুর রস যোগ হলে স্বাদে আরও একটি মাত্রা যুক্ত হয়। যখন আমাদের মসলা চা এসে গেল, তখন মনে হচ্ছিল যেন এক নতুন স্বাদের অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে। প্রথম চুমুকের সাথে সাথে অনুভব করছিলাম মসলার সুবাস এবং লেবুর তাজা স্বাদ, যা আমাদের আড্ডার মুহূর্তগুলোকে আরও রঙিন করে তুলেছিল। সেই চায়ের প্রত্যেক চুমুক যেন আমাদের বন্ধুত্বের আনন্দকে বাড়িয়ে দিচ্ছিল, আর আমরা হাসি-আনন্দে মশলা চায়ের স্বাদ উপভোগ করতে করতে সময় কাটাচ্ছিলাম।

1000028686.jpg

ছয় বন্ধু মিলে হাতিরঝিল ব্রিজের উপর অনেক মজা করে মশলা চা খেলাম। আমাদের মধ্যে কত ধরনের ফাইজলামি আর হাসি-ঠাট্টা চলছিল! সেই মুহূর্তগুলো যেন আরও বেশি মজার হয়ে উঠছিল। আমরা সবাই মিলে ছবি তুললাম, এবং একে অপরের সাথে বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তোলা যেন আমাদের বন্ধুত্বের অংশ হয়ে উঠেছিল। হাসির রোল ওঠার সাথে সাথেই ছবিগুলোতে প্রাণবন্ততা ছড়িয়ে পড়ছিল। কিছুক্ষণ পর আমরা ব্রিজে বসে আড্ডা দিতে শুরু করলাম। আমাদের আড্ডা যেন থামছিল না, মশলা চায়ের উষ্ণতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক মিলিয়ে অসাধারণ এক পরিবেশ তৈরি করেছিল। প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের হাসি ও ভালোবাসায় ভরে যাচ্ছিল।

1000028685.jpg

রাত প্রায় নয়টার দিকে, আমরা সবাই যার যার বাসায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। এই আনন্দের মুহূর্তগুলো মনে থাকবে আজীবন। গতকাল রাতে আমাদের মধ্যে যে মজা চলছিল, তা সত্যিই অসাধারণ ছিল। এত সময় ধরে আমরা একসাথে এতটা আনন্দ করতে পারিনি। গতকালের সন্ধ্যা ছিল আমাদের জীবনের অন্যতম একটি সুন্দর মুহূর্ত, যেখানে হাসি, গল্প আর আড্ডার মধ্যে দিয়ে সময় কেটেছিল। বন্ধুদের নিয়ে এমন ধরনের আড্ডা আমাদের জীবনকে আরও রঙ্গিন করে তোলে। মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তগুলো আমাদের বন্ধুত্বকে আরও গভীর করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক সুন্দর স্মৃতি তৈরি করার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়েছে। সত্যিই, বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো এই মুহূর্তগুলো আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।

1000028692.jpg

বন্ধুদের নিয়ে প্রথমে যমুনা নদীর পাড়ে সুন্দরতম সময় কাটানোর পর সিরাজগঞ্জ শহরের হাতিরঝিল নামক স্থানে এসে মজাদার মসলা চা খাওয়ার মুহূর্তটি ছিল অন্যরকম একটি অভিজ্ঞতা। নদীর কোল ঘেঁষে বসে আড্ডা দিতে দিতে যখন বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছিল, তখনই মনে হচ্ছিল জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটাচ্ছি। হাতিরঝিলের ব্রিজে এসে মসলা চা খাওয়া ছিল এক নতুন স্বাদের অভিজ্ঞতা, যেখানে মসলার সাথে লেবুর রসের সংমিশ্রণ আমাদের মজা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই মুহূর্তগুলো মনে পড়লে মনে হয় যেন সময় থেমে গেছে। জানি না এরকম দিন আর কখনো ফিরে আসবে কিনা, কিন্তু গতকালকে কাটানো সেই সুন্দর মুহূর্তগুলো সবসময় মনে থাকবে। তাই আজ আমি আপনাদের সাথে এই বিশেষ অনুভূতিগুলো শেয়ার করলাম। আশা করি, আজকের ব্লগ আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে এবং আপনাদেরও এমন কিছু সুন্দর মুহূর্তের স্মৃতি মনে পড়িয়ে দিয়েছে।

প্রত্যেকটা ছবি তোলার লোকেশন এবং ডিভাইসের নামঃ

Location
Device:Samsung A33 (5G)

আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

ফোনের বিবরণ

মোবাইলSamsung A33 (5G)
ধরণ"আড্ডার আসরে মসলা চায়ের উষ্ণতা"
ক্যমেরা মডেলA33 (48+8+5+2)
ক্যাপচার@mohamad786
অবস্থানসিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বন্ধুত্বের এই স্মৃতিগুলো সারা জীবন টিকে থাকবে আপনাদের মনের কোনায় এবং স্টিমিটের পাতায়।

আমি কোন দিন মসলা চা খেয়েছি কিনা মনে করতে পারছি না। তবে লেবু চা তো অনেক খাওয়া হয়েছে!

ধন্যবাদ আপনাদের এই আনন্দঘোন মুহুর্তগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে।

ভাল থাকুন।


ক্ষুদে স্বাস্থ্যবার্তা

দুই ধরণের ব্যায়ামের ( exercise) সাথে আমরা পরিচিতঃ এরোবিক (aerobic exercise) এবং এনএরোবিক (anaerobic exercise)! সহজভাবে বললে, জিমে (Gym) বাইচেপ্স বানাতে (Muscle build-up) বা ৬ প্যাক (6-Pack abdomen) বানাতে যে ব্যায়াম করা হয় তাকে বলে এনএরোবিক এক্সারসাইজ। আর বাইরে মুক্ত পরিবেশে হাটা, দৌড়ানো, জগিং করা, সাইকেল চালানো, সাতার কাটা ইত্যাদি কে বলে এরোবিক এক্সারসাইজ। দুই ধরনের ব্যায়ামেরই উপকারীতা আছে। তবে যদি টার্গেট হয় উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension), রক্তের সুগার (DM), রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ (blood lipids), তাহলে এরোবিক এক্সারসাইজই বেশী উপকারী এনএরোবিক এক্সারসাইজ এর তুলনায়। দুইটায় পাশাপাশি করলে তো সোনায় সোহাগা!
দুই ধরণের ব্যায়ামের মধ্যে আরো পার্থক্য জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন।

আপনার পোস্ট দেখে বোঝাই যাচ্ছে আপনি এই মুহূর্তগুলো খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করেছেন। তবে আমার কাছে সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে হাতিরঝিল ব্রিজের নিচে মসলা চায়ের বিষয়টা। আসলে আগে কখনো মসলা চা খাওয়া হয়নি তাই এই বিষয়টা আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে । আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ।

জি বন্ধুবান্ধব মিলে খুব সুন্দর একটি সময় অতিবাহিত করেছিলাম।এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অনিক এবং মেহেদী ভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে বেশ ভালোই হয়েছে ভাইয়া। অনেকদিন পর তাদের সাথে দেখা হয়েছে আর দারুন সময় কাটিয়েছেন। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার আনন্দ সত্যি অনেক বেশি। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে সেটা একদম হয় না।