আজ ১৫ ই আগস্ট। বাঙালি জাতির শোক দিবস। আজ থেকে ঠিক ৪৮ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্টে কতিপয় কিছু সেনা সদস্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তারপর পুরো পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইতিহাস মানে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইতিহাস মানে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে রক্ত দেওয়ার ইতিহাস।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িত।এই মহান মানুষ তার জীবনে যা যা করেছেন সবকিছু তার দেশের স্বার্থের জন্য করছেন।আর প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত,তার প্রত্যেকটা পতক্ষেপ ছিল দেশের স্বার্থের জন্য।এই মহামানবের জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম। আজ সেই মহামানবের ৪৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও জাতির পিতা।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করে।তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। সেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের চার কন্যা এবং দুই পুত্র সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।বাবা-মা শেখ মুজিবকে খোকা বলে ডাকতেন।শেখ মুজিবের ছোটবেলা কাটে টঙ্গীপাড়াতেই।সাত বছর বয়সে ১৯২৭ সালে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্রজীবনের সূচনা হয়।এরপর বঙ্গবন্ধু ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জের শীতানাথ একাডেমীতে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন।১৯৩৪ সালে হাইস্কুলে পড়া অবস্থায় তিনি একটি রোগে আক্রান্ত হন।সে কারণে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু লেখাপড়া বন্ধ রাখেন।ছাত্র জীবন থেকে বঙ্গবন্ধু রাজনীতি ও দেশ ব্রতে যুক্ত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে অধ্যয়ন করেন।
১৯৪৮ সালের ১০ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভায় ১১ মার্চ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ধর্মঘট চলাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নির্যাতিত বাঙালি জাতিকে বাঁচানোর জন্য, অত্যাচারীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুবার কারাবরণ করেন।রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মোট ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাবরণ করেন।১৯৫৬ সালে বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে দেশব্যাপী সফরের মাধ্যমে নির্যাতিত, নিপীড়িত বাঙালিদের কাছে যান।নির্যাতিত বাঙ্গালীদের কাছে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছার হতে বলেন।অন্যায়ের বিরুদ্ধে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে বলেন। বাঙালি জাতিকে জাতীয়তাবোধ ও রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি করে৷ ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে পরিচিত ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে এক সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করার পরেও পাকিস্তানি বাহিনী যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেন না তখন বাঙালি জাতি গণআন্দোলনের লিপ্ত হলেন।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে নিপীড়িত, অত্যাচারিত, অবহেলিত বাঙালিদের উদ্দেশ্যে বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের রক্তের সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দিবো, তবুও এ দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।জয় বাংলা”। সেই দিনের বঙ্গবন্ধুর আঠারো মিনিটের ভাষণে পুরো বাঙালি জাতীয় ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে এবং পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের ঝাঁপিয়ে পড়ে।এমত অবস্থায় পাকিস্তানি বাহিনী বুঝতে পারল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশে থাকলে আমাদের আর গদিতে বসা হবে না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানি নিতে হবে।বিভিন্ন পরিকল্পনা করার পর ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে বাঙালি জাতির উপর পাকিস্তানি বাহিনী নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায়।রাতভর বাঙালিদেরকে হত্যা করে।সেদিন রাতেই বঙ্গবন্ধু ওয়ারলেস এর মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যান।এরপর শুরু হয় সেই মহান মুক্তিযুদ্ধ।৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ নয়মার শুদ্ধ করার পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে।
এরপর থেকে শুরু হয় সারাদিন বাংলাদেশের পথ চলা।স্বাধীন বাংলাদেশকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য ১৯৭২ সালের ১০ ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে পা রাখেন।জীর্ণ শীর্ণ এই বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের হাতে হাত রেখে দেশের স্বার্থের জন্য কাজ করা শুরু করেন।বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশে গড়ে তোলা। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে তিনি আর বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারলেন না তার আগেই একাত্তরের পরাজিত শক্তিসহ দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রে সামরিক বাহিনীর কতিপয় কুচক্রী ক্ষমতা সদস্যরা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে তাকে হত্যা করেন।সেই দিন তাকে হত্যা করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সূর্য অস্তমিত হয়ে পড়ে।শুরু হয় বাংলাদেশের কালো অধ্যায়।
আজ সেই ১৫ ই আগস্ট বাঙালি জাতির শোক দিবস।বাঙালি জাতি এই দিন শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকত তাহলে বাংলাদেশ আরো অনেক অনেক এগিয়ে যেত।আজ বঙ্গবন্ধুর বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর কাতারে চলে যেত।কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না।আসুন আমরা এই শোকের দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও জাতির পিতাকে সম্মানের সাথে গভীরভাবে স্মরণ করি।
ছবি তোলার স্থান এবং ডিভাইসের নামঃ
Device:Poco X2
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
টুইটার লিংক👇
https://twitter.com/FaisalA45225288/status/1691302728579133440?s=20
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া আমাদের দেশের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিউয়ার রহমান যদি বেচেঁ থাকতো তাহলে দেশটা আরো অনেক আগেই উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হতো। কিন্তুু বেইমান,দুর্নীতিবাজরা তাদের কাউকে বাচঁতে দেয়নি। ধন্যবাদ ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাঙালি পিতার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন কাহিনী নিয়ে খুব সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে আজকে শেয়ার করেছেন। আপনার এই দারুন পোস্টটা আমার কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে, যেখানে অনেক তথ্য বহন করেছেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit