শৈশবের মুক্তি, স্বাধীনতা, আর নির্ভেজাল হাসির দিনগুলো🤹‍♂️🤹‍♀️

in hive-129948 •  2 months ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমি ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

শৈশবের স্মৃতিগুলো আমাদের জীবনের সেই রঙিন অধ্যায়, যা কোনো কিছু দিয়েই ভোলা সম্ভব নয়। প্রত্যেকের শৈশবের এক একটি মুহূর্ত মিশে থাকে আনন্দে, দুষ্টুমিতে, কখনো বা শাসনে, আর কখনোবা বন্ধুত্বে। ছোটবেলায় করা দুষ্টুমিগুলো, মা-বাবার বকুনি খাওয়ার পরও আবার খেলে যাওয়া, কিংবা স্কুল পালিয়ে কোথাও চলে যাওয়া – এগুলোই তো আমাদের শৈশবের রঙিন দিনগুলো।

1000036598.webp

সোর্স

আমার শৈশবটা কাটিয়েছে গ্রামে, সবুজের বুক চিরে বহমান ছোট্ট নদীটির পাশে। সে সময় গ্রামের জীবন ছিল সরল, আর এই সরলতার মাঝেই ছিল আনন্দের ভান্ডার। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়তাম গ্রামের মাঠে। সেখানেই আমার ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে দিন কেটে যেত খেলাধুলা আর দুষ্টুমিতে। বিশেষ করে বর্ষার দিনে পুকুরে ঝাঁপ দেওয়া, হাঁটু পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে মাছ ধরা – এগুলো ছিল আমাদের শৈশবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এসব দিনগুলো আজও চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই।আমাদের বাড়ির পাশে ছিল আম, কাঁঠাল, লিচু আর জামগাছে ভরা ছোট্ট একটা বাগান। বন্ধুরা মিলে সেই বাগানে যেতাম, আর মনের আনন্দে গাছে চড়ে ফল পেড়ে খেতাম। সেই সময় গাছ থেকে ফল পাড়াকে যেন এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিতাম আমরা। প্রতিবার সফল হলে বুক ফুলিয়ে সবাইকে দেখিয়ে বলতাম, “দেখেছিস, আমি পেড়ে এনেছি!” এই ছোটখাটো অর্জনগুলোই যেন ছিল আমাদের বড় আনন্দের উৎস।

শীতের সকালগুলো ছিল আরও রোমাঞ্চকর। শীতকাল এলেই আমাদের বাড়িতে পিঠাপুলির আয়োজন হতো। মা,চাচি ও দাদী সারারাত জেগে পিঠা বানাতেন, আর আমরা ছোটরা সেই সময়ের অপেক্ষায় থাকতাম। গরম গরম পিঠার ঘ্রাণে ঘুম ভাঙত, আর সকালের ঠান্ডায় কম্বল জড়িয়ে মুড়ি দিয়ে পিঠা খাওয়া ছিল সত্যিই অসাধারণ। শৈশবের শীতকাল যেন পিঠাপুলির সঙ্গে মিশে আছে। আজও শীত এলেই সেই পিঠাপুলির দিনগুলো মনে পড়ে যায়।শৈশবের একটা স্মৃতিময় ঘটনা কখনো ভুলতে পারি না। একবার আমরা বন্ধুরা মিলে স্কুল পালিয়ে নদীর ধারে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল মাছ ধরা। স্কুল পালানো মানেই ছিল দুঃসাহসিক এক অভিযান। কিছুক্ষণ পর আমাদের খেলার মধ্যে এমনভাবে মত্ত হয়ে গেলাম যে সময়ের হিসাব করাই ভুলে গেলাম। পরে মা-বাবা জানতে পেরে যে শাসন করেছিল, সেই বকা আজও মনে আছে। কিন্তু সেই মুহূর্তগুলো আজও স্মৃতিতে অমলিন রয়ে গেছে।

শৈশবে টিনটিন, স্নোয়ি আর কমিক্সের বই ছিল আমাদের প্রিয় সঙ্গী। বন্ধুদের সাথে বই আদান-প্রদান করতাম, আর সেসব পড়ে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যেত। নতুন কোন বই বেরোলেই সেটা সবার আগে পড়তে চাইতাম। তখন ছিল না এখনকার মতো ইন্টারনেট, কিন্তু সেসব দিনেই ছিল কল্পনার রাজ্য। প্রতিটি গল্পের চরিত্র, তাদের দুঃসাহসিক অভিযান আমাদের মনের মধ্যে স্বপ্নের এক নতুন জগৎ তৈরি করত।আরেকটা মজার অভ্যাস ছিল ছোটবেলায় রাতের বেলা দাদা-দাদীর কাছে গল্প শোনা। তারা আমাদেরকে নানা ধরনের রূপকথা, লোককাহিনি, বীরত্বগাঁথা শোনাতেন। গ্রামের সেই শান্ত রাতে তারা যখন গল্প বলতেন, আমাদের চোখে যেন অন্য এক পৃথিবী ফুটে উঠত। প্রতিদিনই নতুন কোনো গল্প শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। দাদির মুখে রাক্ষসের গল্প শুনে কতবার যে ভয়ে রাত জেগে কাটিয়েছি, তা ভাবলে আজও হাসি পায়।

আজকের দিনে, যখন আমরা বড় হয়ে গেছি, জীবনের নানা দায়িত্ব এসে গেছে কাঁধে, তখন সেই শৈশবের স্মৃতিগুলো আরও বেশি মনে পড়ে। জীবন যতই জটিল হয়ে উঠুক, সেই সহজ-সরল দিনগুলোর কথা ভেবে মনটা অজান্তেই শান্তিতে ভরে যায়। শৈশবের দিনগুলো আসলে আমাদের জীবনের এক মূল্যবান অধ্যায়, যেখানে কোন দ্বিধা ছিল না, ছিল শুধু মুক্তি আর স্বাধীনতার স্বাদ। শৈশবের দিনগুলো ছিল আমাদের জীবনের সেই স্বর্ণযুগ, যা কোনোভাবেই ফিরে আসবে না, কিন্তু স্মৃতিতে চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

শৈশবের স্মৃতিগুলো মনে পড়লেই ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই রঙিন শৈশবে। কতইনা সুন্দর ছিলো শৈশবটা। ঠিক বলেছেন ভাইয়া, শৈশবে স্মৃতিগুলো আমাদের জীবনের সেই রঙিন অধ্যায় যা কোন কিছু দিয়েই ভোলা সম্ভব না। আপনার পোস্টটি পড়ে শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

ছোটবেলার কথা মনে হলে তো মনে হয় এখনই সেই ছোটবেলায় যদি ফিরে যেতে পারতাম তাহলে কতই না আনন্দ হত।আপনার পোস্টটি পড়ে ঠিক সেই ছোটবেলার কথাগুলো আবারো মনে পড়ে গেল।