শৈশবের স্মৃতিগুলো জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখানে প্রতিটি ছোট্ট ঘটনা জীবনের রঙিন ক্যানভাসে আঁকা হয়। এই গল্পটি ঠিক তেমনই এক স্মৃতির খাতায় লেখা, যেখানে আমি আমার নানার কাঁধে চড়ে বাজারে যেতাম। এখন তিন বছর হয়ে গেছে, আমার নানা আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতিগুলো আজও মনের গভীরে রয়ে গেছে।
আমার নানা ছিলেন আমার শৈশবের সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের একজন। তাঁর সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই যেন ছিল একেকটি রঙিন অধ্যায়। তখন আমি খুব ছোট, হয়তো চার বা পাঁচ বছর বয়স। প্রতিদিন সকালে যখন নানা আমাকে তাঁর কাঁধে তুলে নিতেন, তখন মনে হতো পৃথিবীর সব সুখ যেন আমি পেয়ে গেছি। ছোট্ট শরীরে তখন এমন এক অনুভূতি হত, যেন আমি আকাশে উড়ছি। বাজার যাওয়ার সেই ছোট্ট যাত্রাটা ছিল আমার দিনের সবচেয়ে আনন্দের অংশ।
নানার কাঁধে চড়ে আমি যেন একটা রাজা ছিলাম। নানার শক্তিশালী কাঁধে বসে আমি সমস্ত বাজারের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। বাজারে গিয়ে নানা যখন বিভিন্ন সবজি, মাছ বা মসলা কিনতেন, আমি মুগ্ধ হয়ে সেই সব দৃশ্য দেখতাম। নানা সব সময় আমার পছন্দের জিনিস কিনতেন, আর তা কিনতে গিয়ে তাঁর মুখে সব সময় এক রকমের হাসি লেগে থাকত। তাঁর সেই হাসির উষ্ণতা আমাকে সব সময় সুরক্ষিত অনুভব করাতো।
বাজারের পথে যেতে যেতে নানা আমাকে নানান গল্প শোনাতেন। তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা, তাঁর দেখা পৃথিবী আর তাঁর সংগ্রামের কথা আমাকে বলতেন। আমি অবাক হয়ে সেসব গল্প শুনতাম। তাঁর মুখে তখন কোন ক্লান্তির ছাপ ছিল না। তাঁর প্রতিটি গল্প যেন ছিল একেকটি শিক্ষা, যা আমাকে পরবর্তীকালে জীবনের পথে চলতে সাহায্য করেছে।
একদিন আমরা বাজার থেকে ফিরছিলাম, নানা তখন এক অল্পবয়সী কৃষকের কাছ থেকে টাটকা শাকসবজি কিনছিলেন। কৃষকের মুখে হাসি ছিল, কিন্তু চোখে ছিল অভাবের ছাপ। নানা তা লক্ষ্য করেছিলেন। তিনি তখন সেই কৃষককে কিছু টাকা বাড়তি দিয়ে বললেন, "এই টাকা তোর পরিবারের জন্য। খারাপ সময়ে সবাইকে সাহায্য করতে হয়, মনে রাখিস।" সেই দিনের পর আমি বুঝেছিলাম, মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও দয়া প্রদর্শন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নানার প্রতিটি কাজই ছিল অনুকরণীয়, যা আমার চরিত্র গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
তিন বছর আগে নানা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁর প্রিয় মানুষজন আর বাজারের সেই চেনা পথগুলো এখনও আছে, কিন্তু তিনি নেই। নানা ছাড়া বাজারে যাওয়া কখনোই আগের মতো আনন্দের ছিল না। প্রতিবার বাজারে গেলে নানার কাঁধে চড়ে যাওয়ার সেই ছোট্ট আনন্দগুলো মনের মধ্যে বেজে ওঠে। তাঁর না থাকাটা আজও মেনে নেওয়া কঠিন।
নানার অনুপস্থিতি মাঝে মাঝে আমাকে শূন্যতায় ভোগায়। কিন্তু তাঁর স্মৃতিগুলো সব সময় আমার হৃদয়ে বেঁচে থাকে। তাঁর কাছ থেকে শেখা প্রতিটি শিক্ষাই আমি এখনো আমার জীবনে ধারণ করে আছি। বাজারের সেই যাত্রাগুলো আমাকে শিখিয়েছিল, জীবনে ছোট ছোট সুখের মুহূর্তগুলোও কতটা মূল্যবান হতে পারে। তাঁর সেই হাসিমুখ, উদারতা আর ভালবাসার উষ্ণতা আমার শৈশবকে স্মৃতিময় করে তুলেছে।
তিন বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু নানার কাঁধে চড়ে বাজারে যাওয়ার সেই মুহূর্তগুলো আজও আমার স্মৃতির পাতায় জীবন্ত। সময়ের স্রোতে অনেক কিছু হারিয়ে যায়, কিন্তু সেই মুহূর্তগুলো চিরকাল আমার মনে গেঁথে থাকবে। নানা চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর সঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতিগুলো আজও আমাকে সান্ত্বনা দেয়, আমাকে শক্তি যোগায়।
শৈশবে নানার কাঁধে চড়ে বাজারে যাওয়া, তাঁর হাসিমুখ, সহানুভূতি, আর শিক্ষা – সব কিছুই আমার জীবনের অমূল্য স্মৃতি। যদিও তিনি আজ আর আমার পাশে নেই, কিন্তু তাঁর স্মৃতিগুলো চিরকাল আমার হৃদয়ে জীবন্ত থাকবে। কারণ, এই স্মৃতিগুলোই আমাকে সেই শৈশবের মধুর সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যেখানে আমি ছিলাম আমার নানার কাঁধে বসে থাকা এক ছোট্ট রাজা।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমার পরিচয়
আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ।আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।
https://x.com/mohamad786FA/status/1831042135455682587?t=EDtPwj9i-028LVfUnZxxgQ&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
@tipu curate
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted 👌 (Mana: 5/7) Get profit votes with @tipU :)
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit