"শৈশবের দুষ্টুমি: বন্ধুদের সাথে স্কুল পালানোর স্মৃতিময় অভিযান"

in hive-129948 •  3 months ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমি ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

শৈশবের দিনগুলো ছিল মুক্ত বাতাসে দৌড়ে বেড়ানোর, নির্ভয়ে স্বপ্ন দেখার এবং কখনো কখনো নিয়মের বাইরে গিয়েও দুষ্টুমি করার। আমার শৈশবের একটি স্মৃতি এখনও আমার মনে গভীরভাবে গেঁথে আছে—যা হলো স্কুল পালানোর সেই ঘটনার কথা। তখন হয়তো আমরা সচেতনভাবে কিছু বুঝতাম না, তবে আমাদের জন্য সেই দিনটি ছিল এক রোমাঞ্চকর অভিযান।



1000023607.jpg

সোর্স


আমরা তখন ক্লাস ফোরে পড়ি, বয়স হবে দশ কিংবা এগারো। আমাদের স্কুল ছিল গ্রামের এক প্রান্তে, ধানের ক্ষেতে ঘেরা ছোট্ট একটি বিল্ডিং। আমার খুব কাছের কয়েকজন বন্ধু ছিল—রাজু, বাবু, আরিফ আর রুবেল। আমরা পাঁচজন একসঙ্গে দুষ্টুমি করতাম, মজা করতাম, আবার ঝগড়াও করতাম। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব ছিল অবিচ্ছেদ্য।

একদিন সকালে, স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলতে খেলতে রাজু একটা প্রস্তাব দিল। সে বলল, "আজকে আমরা স্কুল পালাই, কেমন হবে?" প্রথমে আমরা সবাই হতভম্ব হয়ে গেলাম। স্কুল পালানো! এটা তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার। তবে ভেতরে ভেতরে আমরা সবাই খুব উৎসাহী হয়ে উঠেছিলাম। স্কুলের প্রতিদিনের নিয়মিত ক্লাস, হোমওয়ার্ক, আর টিচারের বকুনি—সবকিছু থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা সুযোগ ছিল সেটা।

প্রথমে আমরা সবাই রাজুর প্রস্তাব মানতে রাজি হলাম না। কিন্তু রাজু যখন বলল যে সে তার বাবার সাইকেল নিয়ে যেতে পারে আর আমরা সারা দিন মাঠে ঘুরে বেড়াব, তখন আমাদের মন গলে গেল। বাবু আর রুবেল প্রথমে রাজি হলো, তারপর আরিফও সম্মতি দিল। শেষ পর্যন্ত আমি নিজেও সাহস করে হ্যাঁ বললাম।

আমরা প্ল্যান করলাম প্রথম পিরিয়ডে ক্লাসে উপস্থিত থাকব যাতে টিচাররা সন্দেহ না করেন। দ্বিতীয় পিরিয়ডে অঙ্কের ক্লাস ছিল, যেটা আমাদের কারোই পছন্দের ছিল না। ঠিক তখনই পালানোর সুযোগটা নিতে হবে। আমরা স্কুলের পিছনের জানালার দিকে যাব, যেটা সরাসরি মাঠের দিকে খোলে। রাজু আমাদের বুঝিয়ে দিল, "আমি আগে যাব, তারপর তোমরা একে একে আসো।"

পরের দিন সেই ঐতিহাসিক দিন এলো। আমরা সবাই স্কুলে এলাম যথাসময়ে, কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবাই কিছুটা নার্ভাস ছিলাম, আর হয়তো ভিতরে ভিতরে একটু ভয়ও পাচ্ছিলাম। প্রথম পিরিয়ডে স্যার যখন পড়াচ্ছিলেন, আমরা সবাই অপেক্ষা করছিলাম কখন ঘণ্টা বাজবে। ঘণ্টা বাজতেই আমরা টিফিনের অজুহাতে একে একে বেরিয়ে এলাম।

স্কুলের পিছনে পৌঁছে রাজু সবার আগে জানালা দিয়ে লাফিয়ে নেমে গেল। তারপর একে একে আমরা সবাই নিচে নামলাম। জানালার বাইরে পা ফেলার পর যেন মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছিলাম। আমরা তাড়াতাড়ি মাঠের দিকে ছুটলাম, যেন আমাদের পিছনে কেউ ধাওয়া করছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে আমরা স্কুলের চারপাশের ধানক্ষেত পেরিয়ে গেলাম এবং তখন বুঝলাম, আমরা সত্যিই পালিয়ে এসেছি।

সাইকেল নিয়ে আমরা সবাই মিলে গ্রামের পাশের এক ছোট্ট নদীর ধারে গিয়ে পৌঁছালাম। সেদিনের সেই নদীর ধারে সময় কাটানো ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় মুহূর্তগুলোর একটি। আমরা কেউই আর স্কুলের কথা ভাবছিলাম না। নদীর পানি ছিল ঠান্ডা, আর আমরা পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পানিতে নামলাম। একসময় রাজু তার বাবার সাইকেলটা একদিকে রেখে দিল, আর আমরা সবাই মিলে পানিতে নেমে গা ভিজিয়ে খেলতে লাগলাম।

1000023608.webp

সোর্স

কিছুক্ষণ পর আমরা নদীর পাড়ে বসে নিজেদের নিয়ে নানা গল্প করলাম, ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে কথা বললাম। কারো মুখেই কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না। সবাই ভাবছিলাম, যেন এই মুহূর্তটা চিরকাল থাকবে।

তবে সময় তো কারও জন্য অপেক্ষা করে না। বিকেল গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নামতে শুরু করল, আমরা বুঝতে পারলাম স্কুল পালানোর মূল্য দিতে হবে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু বাড়ি ফিরতেই আমাদেরকে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, সেটাও আমরা জানতাম।

সেই বিকেলে বাড়িতে ফিরে গিয়ে দেখা গেল, আমাদের পালানোর খবর আগেই পৌঁছে গেছে। আমাদের মা-বাবারা সবাই জানেন, আমরা আজ স্কুলে উপস্থিত ছিলাম না। তখন মনে হলো, পৃথিবীর সব সাহস একত্র করলেও সেই পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব না।

কিন্তু ঘটনা যত ভয়ঙ্করই হোক, আমাদের সেই দিনটির স্মৃতি আজও মধুর। যেই ভয় আর লজ্জা সেই সময় হয়েছিল, সেটাও আজ হাসির বিষয় হয়ে গেছে। স্কুল পালানো ছিল আমাদের শৈশবের একটি কাণ্ডজ্ঞানহীন দুষ্টুমি, কিন্তু সেই একদিন আমাদের ছোট্ট জীবনে এমন কিছু স্মৃতি রেখে গেছে যা কখনো ভুলবার নয়।

আমাদের শৈশবের সেই স্মৃতি আজও আমি এবং আমার বন্ধুরা যখনই মিলিত হই, তখন আলোচনা করি। রাজু এখন বিদেশে থাকে, বাবু ঢাকায় একটি বড় কোম্পানিতে কাজ করে, আরিফ নিজের ব্যবসা শুরু করেছে, আর রুবেল গ্রামের শিক্ষক। তবে আমরা সবাই সেই দিনটির কথা মনে করলে হাসি থামাতে পারি না। আমরা বুঝতে পেরেছি, আমাদের সেই ছোট্ট দুষ্টুমিগুলোই আমাদের বন্ধুত্বকে আরও মজবুত করেছে।

সেদিনের সেই স্কুল পালানোর ঘটনা আমার জীবনের সবচেয়ে দুষ্টুমি এবং একইসঙ্গে সবচেয়ে মজার একটি ঘটনা হয়ে রয়ে গেছে। সেই দিনটি শুধুমাত্র আমাদের শৈশবের একটি দিন নয়, বরং সেই সময়ের অবাধ্যতা, মুক্তির আনন্দ এবং বন্ধুত্বের উষ্ণতা আমাদের জীবনের এক অমূল্য স্মৃতি হিসেবে স্থান পেয়েছে।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

IMG_20230821_180423.jpg

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ ।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবসি ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে।

Amar_Bangla_Blog_logo_png.png

বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png