তখন আমি খুবই ছোট, তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। মামাতো ভাই-বোনেরা মিলে এক বিশাল দল, যেন ছোট্ট একটা বাহিনী। আমাদের প্রতিদিনের প্রধান কাজ ছিল গ্রামের এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ানো, দস্যিপনা করা আর নতুন কিছু আবিষ্কার করা।
একদিন দুপুরবেলা, সবাই মিলে বসে গল্প করছিলাম। এমন সময় বড় মামাতো ভাই রফিক বলল, “এই, চল সবাই মিলে কুইশাল চুরি করতে যাই।” প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও সবার উচ্ছ্বাস দেখে সাহস পেলাম। আমাদের গ্রাম থেকে খানিকটা দূরে বড়সড় এক জমি, যেখানে সারি সারি কুইশালের খেত। সেই জমির মালিক ছিলেন বড় চাচা, কিন্তু তার খুব রাগী স্বভাব ছিল।বেলা পড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পরিকল্পনা করলাম। সূর্য ডোবার ঠিক আগমুহূর্তে, যখন চারপাশে হালকা অন্ধকার নেমে আসে, তখনই অভিযান চালানো হবে। ৮-১০ জনের দল, প্রত্যেকের হাতে এক-একটা ব্যাগ বা ঝুড়ি। মিশনের নাম “কুইশাল অভিযান।”
যেই ভাবা সেই কাজ। সন্ধ্যার একটু আগে আমরা সবাই জমির পাশে জড়ো হলাম। দলপতি রফিক ইশারায় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সে কৌশল ঠিক করে দিল—কেউ পাহারা দেবে, কেউ কাটবে, আর বাকিরা ঝুড়িতে ভরবে। আমি ছিলাম ছোট বলে আমাকে পাহারা দেওয়ার কাজ দেওয়া হলো।অভিযান শুরু হলো। হাত-পা কাঁপছিল উত্তেজনায়। কেউ যেন দেখে না ফেলে এই ভয়ে আমরা সবাই গায়ের সব শক্তি দিয়ে কাজ করছিলাম। রফিক আর হাসান কুইশাল কাটছিল, আর বাকি সবাই মিলে সেগুলো ব্যাগে ভরছিল। আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে চারপাশে নজর রাখছিলাম।
ঠিক তখনই বিপদ! দূর থেকে কারো ছায়া দেখতে পেলাম। আমি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে চিৎকার করে বললাম, “কেউ আসছে! সবাই পালাও!” সঙ্গে সঙ্গে সবাই ছোটাছুটি শুরু করল। কেউ ব্যাগ ফেলে দৌড়, কেউবা হাতে একটা-দুটো কুইশাল নিয়ে ছুটছে।আমরা একটা বড় পুকুর পাড়ে এসে দাঁড়ালাম। হৃদয় দৌড়ানোর পরও কাঁপছিল উত্তেজনায়। রফিক বড়সড় একটা কুইশাল হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বলল, “দেখেছিস! আমরাই তো গ্রামের বীর।” তার কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।
তারপর বাড়ি ফিরে এলাম। মা-মামীরা আমাদের মুখের চেহারা দেখে বুঝতে পারল কিছু একটা হয়েছে। বড় আপু মুচকি হেসে বলল, “কী করেছো আজ?” আমরা কিছু না বলে কুইশালগুলো বের করলাম। সবাই হাসতে লাগল। মা বললেন, “তোমাদের এই দুষ্টুমি ছেড়ে যদি পড়াশোনায় মন দাও, তাহলে তো বেশ হয়।”সে রাতেই আমরা সবাই মিলে কুইশাল খেতে বসলাম। কুইশালের মিষ্টি রস আর সেই রাতের আড্ডা—সব মিলিয়ে যেন এক অনবদ্য মুহূর্ত। কেউ কেউ নিজের কাটার গল্প বলল, কেউ আবার বলল কিভাবে পালিয়েছিল।
আজ এত বছর পরও সেই দিনের কথা মনে পড়লে হাসি পায়। শৈশবের এইসব দুষ্টুমি, সাহসিকতার গল্প আমাদের জীবনের এক মিষ্টি অংশ। হয়তো তখন জানতাম না, কিন্তু আজ বুঝি, এই ছোট ছোট মুহূর্তই জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। কুইশাল চুরির সেই দিনগুলোই আমাদের শিখিয়েছিল সাহসী হতে, একসঙ্গে কাজ করতে, আর আনন্দ খুঁজে নিতে।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত
X-Promotion
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আখকে যে কুইশাল বলে তা আপনার পোস্ট থেকে জানতে পারলাম ভাই। আপনাদের আখ চুরির গল্প বেশ টানটান উত্তেজনায় ভরা। যেন থ্রিলিং মুভি একটা। তবে পড়ে বেশ মজা পেয়েছি কিন্তু। ছেলেবেলার এইসব স্মৃতি গুলো সারাজীবন বেশ রঙিন হয়ে থাকে। ভোলা সম্ভব হয় না। দারুণ মজার এক ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করলেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শৈশবের মজার ঘটনার আম চুরি,কুইশাল চুরি আমাদের গ্রামেও আখকে কুইশাল বলে। আসলে সব ভাই বোনেরা যদি এক হওয়া হয় রাজ্যের সব দুষ্ট বুদ্ধি এক হয়ে যায়।আপনাদের সেরকমই হয়েছে। কুইশাল চুরি করতে গেছেন কিন্তুু ভয় কাজ করছিলো এবং দ্রত কুইশাল নিয়ে সেখান থেকে কেটে পড়েছেন এবং সবাই নিজেদের কে বীর ঘোষণা করেছে।সব মিলিয়ে সুন্দর লাগলো পোস্ট টি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit