জেনারেল রাইটিং:"মানুষের পরিচয় তার মনুষ্যত্বে"

in hive-129948 •  6 days ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমি ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত আছি।


মানুষের প্রকৃত পরিচয় খুঁজতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে তার মনুষ্যত্বের প্রসঙ্গ। মানুষকে মানুষ হিসেবে আলাদা করে তোলে তার বিবেক, সহানুভূতি, এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। সভ্যতার শুরু থেকেই মানব জাতির উন্নতি, উন্নয়ন, এবং সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে এই গুণাবলীকে ধরা হয়ে থাকে। আজ আমরা যে আধুনিক বিশ্বে বাস করছি, তা মনুষ্যত্বের আদর্শিক মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

1000037632.png

সোর্স

প্রথমত, মনুষ্যত্বের অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য হলো সহানুভূতি। সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা নিজের দুঃখের কথা ভুলে গিয়ে অন্যের দুঃখ ভাগ করে নেয়। সহানুভূতির ক্ষমতা মানুষের মনুষ্যত্বের একটি শক্তিশালী রূপ। অন্যের কষ্টে কষ্ট পাওয়া এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হলো মানুষের ভেতরের সেই মানবিক গুণ, যা তাকে প্রকৃত অর্থে একজন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। সহানুভূতির এই গুণ যদি সকলের মধ্যে বিকশিত হয়, তবে সমাজের যাবতীয় অন্যায়, অসাম্য, এবং বিদ্বেষ কমে আসবে।

দ্বিতীয়ত, মনুষ্যত্বের আরেকটি বড় গুণ হলো সহিষ্ণুতা। জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে সম্মুখীন হওয়া, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করা, এবং সামাজিক বিভিন্ন মতপার্থক্যকে মেনে নেওয়া হলো সহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত। সহিষ্ণুতা আমাদেরকে ছোটখাটো বিষয়কে উপেক্ষা করতে শেখায় এবং বৃহৎ উদ্দেশ্যের দিকে অগ্রসর হতে অনুপ্রাণিত করে। সহিষ্ণুতা ছাড়া মানুষের পরিচয় অসম্পূর্ণ, কারণ এই গুণ আমাদের মানুষ হিসেবে একে অপরের কাছে নিয়ে আসে।

তৃতীয়ত, মানুষ তার নৈতিক দায়িত্ববোধ দিয়ে পরিচিত। নৈতিকতা হলো এমন এক শক্তি যা মানুষের আচরণের নিয়ামক। ন্যায়বিচার, সততা, এবং দায়িত্ববোধের মাধ্যমে সমাজের প্রতি একজন মানুষের কর্তব্য পালনের সক্ষমতা প্রকাশ পায়। এ কারণে সমাজে একজন প্রকৃত মানুষকে নৈতিকতাবোধ দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। নৈতিকভাবে সঠিক পথ অনুসরণ করলেই মানুষ প্রকৃত মানবিকতার সন্ধান পায়।

আরেকটি বিষয় হলো সাহায্যের মনোভাব। অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতা হলো মনুষ্যত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। একে অপরের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতা সমাজে এক ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। এটি কেবল যিনি সাহায্য পান তার জন্য নয়, বরং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই গুণ আমাদের শেখায় যে একা নয়, বরং পরস্পরের সহযোগিতায় জীবনযাত্রা সহজ ও সুন্দর করা সম্ভব।

এছাড়া, মানুষের মনুষ্যত্ব প্রকাশ পায় শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে। সমাজে সবাই সমান, সবার নিজের নিজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মতামত থাকে। কিন্তু সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তাদের ভিন্নমত গ্রহণ করা এবং অহমিকা ত্যাগ করে অন্যদের কাছ থেকে শিখতে ইচ্ছুক হওয়া হলো প্রকৃত মনুষ্যত্বের পরিচায়ক। মানুষের এই সম্মান প্রদর্শনের মানসিকতা সমাজে এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে।

মনুষ্যত্বের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সত্যনিষ্ঠা। সত্যের পথে চলা, নিজের কথার পক্ষে দৃঢ় থাকা, এবং অন্যের সঙ্গে সৎ হওয়া হলো মনুষ্যত্বের নিদর্শন। সত্যনিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষ তার ব্যক্তিত্বকে সবার সামনে উপস্থাপন করতে পারে এবং এটি মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করে।

একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক মহাত্মা গান্ধীর জীবনের ঘটনা। তিনি সত্য এবং অহিংসার পথে থেকে নিজের মনুষ্যত্বকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার প্রতিটি কাজ এবং সিদ্ধান্ত মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং সহানুভূতির দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তার জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি যে মনুষ্যত্ব আমাদের প্রতিদিনের কাজে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।শেষমেশ, মানুষ কেবল নিজে ভালো থাকলেই একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে পরিচিতি পায় না; বরং সে কিভাবে সমাজে, অন্যের জীবনে, এবং চারপাশের পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তা-ই তাকে প্রকৃত মানব হিসেবে পরিচিত করে। মনুষ্যত্বের এই গুণাবলী একজন ব্যক্তিকে পরিচিত করে তোলে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে, যার মধ্যে রয়েছে সহানুভূতি, সহিষ্ণুতা, দায়িত্ববোধ, নৈতিকতা, এবং সহমর্মিতা।

আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজের মধ্যে মনুষ্যত্বের গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা। তবেই একটি সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যেখানে মানুষের পরিচয় হবে তার মনুষ্যত্বে, তার অবস্থানে নয়।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

একজন মানুষের জীবনে সততা এবং নিষ্ঠা খুবই প্রয়োজনীয়। মানুষের পরিচয় তার মনুষ্যত্ব বহন করে। একজন মানুষকে উপর থেকে দেখে কখনো তার সম্পর্কে বোঝা যায় না। আপনার পোস্ট পড়ে সত্যি অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আপনি আপনার পোষ্টের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু।

আমরা অনেকেই বলে থাকি পড়ালেখা করলেই ভালো মানুষ হয়ে থাকে। আসলে এটা ভুল ধারণা। কারণ যাদের মনুষ্যত্ব নেই তাদেরকে কোন কিছুতেই পরিবর্তন আনা যায় না। অনেক শিক্ষিত মানুষ আছে যাদের বিবেক মনুষ্যত্ব অনেক খারাপ। পড়ালেখা করে বিবেক যাদের খারাপ তাদের কখনো শিক্ষিত বলা যায় না। যাদের বিবেক আছে তা একজন শিশু কিংবা একজন রিকশাওয়ালার কাছে থেকেও সুন্দর ব্যবহার পাওয়া যায়।

গঠনমূলক একটি মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু।

সত্যিকারের মানুষ হওয়ার জন্য মনুষত্ববোধ থাকা অনেক বেশি প্রয়োজন। এসব গুণাবলী না থাকলে সত্যিকারের মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। বাস্তব কথা গুলো লিখেছেন। ভালো লাগলো আপনার আজকের পোস্ট পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।

আসলে সত্যিকারের মানুষ হওয়াটা খুবই জরুরী। যাই হোক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

একজন মানুষ শুধু শিক্ষিত হলেই মানুষ হতে পারে না তার মধ্যে থাকা লাগে মনুষত্ব। আপনার পোস্ট পড়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো। এ ধরনের পোষ্টের মধ্যে অনেক শিক্ষা পাওয়া যায়।

মাঝে মাঝেই সব শিক্ষনীয় বিষয়গুলো লিখতে খুবই ভালো লাগে। যাইহোক অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু।

মানুষ যদি সত্যিই আপনার এই লেখা কথাগুলোর মতো হত তাহলে হয়তো পৃথিবীর রূপটাই অন্যরকম হতো। কিন্তু তা তো নয় শরীর কেমন যেন ওলট-পালট আজকের দিনে। তবে মান আর হুঁশ সম্পন্ন প্রাণী যেহেতু মানুষ তাই মানুষের মধ্যে এই সমস্ত গুণ থাকা অতি প্রয়োজনীয়।

জি আপু আপনি একদম সঠিক কথা বলেছেন।

কোন মানুষের মধ্যে যদি নৈতিক দায়িত্ববোধ, সাহায্য করার মনোভাব এগুলো না থাকে তাহলে সে পুরোপুরি মানুষ ঠিক হয় না। মানুষের পরিচয় তার মনুষ্যত্বে। সম্ভবত এটাই মানুষ কে অন্য সকল জীব থেকে আলাদা করে। সুন্দর লিখেছেন ভাই।

যার মধ্যে কোন নৈতিকতা নাই, দায়িত্ববোধ নাই, সাহায্য করার মনোভাব নাই তাকে মানুষ হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়।

আসলে শুধু মান এবং হুশ থাকলে মানুষ হওয়া যায় না৷ মানুষ হওয়ার জন্য অনেক কিছুরই প্রয়োজন রয়েছে এবং তার মধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে মনুষত্ব৷ মানুষের মধ্যে যদি কোন ধরনের মনুষত্ববোধ না থাকে তাহলে সে কখনোই মানুষ হিসেবে পরিচিতি পায় না৷ যদি সত্যিকারের মানুষ হতে হয় তাহলে তার ভিতরে অবশ্যই মনুষ্যত্ব থাকতে হবে৷ এই মনুষত্ব দ্বারাই তাকে তার পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে হবে৷ ধন্যবাদ এত সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য৷

মানুষ হবার পূর্ব শর্ত মনুষত্ববোধ সৃষ্টি করা।যার মধ্যে মনুষত্ববোধ নাই সে মানুষই নয়।