একাকীত্ব জীবনের গল্প

in hive-129948 •  8 days ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমির সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

আসলে আমরা যখন একা থাকি, তখনই মনের ভিতরে নানা রকমের বাসা বাঁধে। অনেক কিছু চিন্তা হয়। ভাবতে ভাবতে হয়তো আমাদের জীবনের আনন্দ হাসি আমরা হারিয়ে ফেলি। আর একাকীত্ব জীবনে নেমে আসে ধ্বংস। একাকীত্ব জীবন কখনোই সফলতা দেখতে পারে না। আর একাকীত্ব মানুষকে অসুস্থ করে তোলে। মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে সেই যেন অসুস্থ হয়ে যায়। আর একাকীত্ব মানুষ কখনোই থাকতে পারে না। মানুষ সামাজিক জীব। যার কারণে সমাজের মধ্যে তার বসবাস করার ইচ্ছা এবং সকলকে সাথে নিয়ে বসবাস করার মধ্যেই যেন মানুষ শান্তি খুঁজে পায়। একাকীত্ব কখনোই তাকে শান্তি খুঁজে দিতে পারে না। আর একাকীত্ব মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। তাই আজকে একাকীত্ব জীবনের একটি গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। এটা বাস্তবমুখী গল্প, আশা করছি এই গল্পটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে।

man-5846064_1280.jpg

Source

আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি আমার বন্ধু সাজুর কথা, আসলে আমার বন্ধু সাজু যখন হাইস্কুলে ছিল তখন আমাদের সাথে খুবই মিশতো এবং আমরা একসাথে থাকতাম, অনেক আনন্দের সাথে আমরা হাই স্কুল জীবন পার করেছি কিন্তু সাজুর বাবা ব্যাংকার সে সব সময় তার চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর মা একজন টিচার সব সময় সে তার স্কুল নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং বাকি সময় অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকে। সাজুকে যেন সময় দিতে পারেনা। হাইস্কুল জীবনে অনেক দুঃখ আমাদের সাথে প্রকাশ করেছে। মা বাবার ভালোবাসা সে পায় না। আসলে একটা সন্তানের ভিতর তখনই অভাব দেখা দেয় যখন মা বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হয়। আর মা-বাবার যখন অবহেলা হয়,সেই সন্তানের মনের ভিতরে থেকেই তার অভিমান চলে আসে। আর এই অভিমান জীবনের উপরে অনেক ধরনের প্রভাব ফেলে।


হাই স্কুলের জীবন পার হয়ে সাজু যখন কলেজে ভর্তি হয়, তখন ওরা ঢাকা চলে যায়। আর আমরা সিরাজগঞ্জে থেকে যায়। যার কারণে ওর সাথে আর ওই ভাবে যোগাযোগ হয় না। ও হয়তো ওর নিজের মতোই রয়েছে, খোঁজ খবরও আর নেওয়া হয়নি। তবে গত কয়েকদিন আগে আমার সাথে সাজুর ঢাকার শহরেই দেখা হয়েছিল। তখন দেখতে পেলাম সাজু আর আগের মত নেই। অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিল, যে ছাত্র পড়াশোনা ছাড়া কিছুই বুঝতো না। সে এখন হাতে সিগারেট এবং মদ গাঁজা থেকে শুরু করে অন্যান্য নেশায় আসক্ত হয়েছে। সে এখন এমন অবস্থায় মনে হয় ঢাকা শহরের মাস্তান। তার চুলের কাটিং এবং তার পোশাকের অনেক বদলে গেছে। ওকে দেখে আমি চিনতেই পারলাম না। কি অবস্থায় ছিল, আর এখন কি অবস্থায়। রাত দিন তফাৎ, এই সাজুকে দেখেই যেন আমি অবাক হয়ে গেলাম। এই অবস্থা কিভাবে হল ওর কাছে জানতে চাইলাম। আসলে ছোটবেলার প্রিয় বন্ধু ছিল, সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত একসাথে পড়েছি। মনের ভিতরে যেন টান রয়েই আছে। যার কারণে সাজু আমার কাছে অনেক দুঃখ প্রকাশ করল ওর এই জীবনে আসার গল্প গুলো।


তখন সাজু আমাকে বলল কলেজে ঢাকা শহরে ভর্তি হয়েছে, ভালো একটা প্রাইভেট কলেজে এবং সেখানে অনেক ভালো ভালো স্টুডেন্ট ছিল। তবে বেশি স্টুডেন্ট এর মধ্যে ওর যাদের সাথে পরিচিত হয় তাদেরও বাবা মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত। ছিল তাদের বাবা-মা ও সরকারি কর্মকর্তা ছিল। সব সময় চাকরির পিছনে থাকতো। তাদের সময় দিত না, এরকম কিছু বন্ধুর সাথে ওর সম্পর্ক জোরে যায়। আর সেই বন্ধুগুলো মদ গাঁজা থেকে শুরু করে অন্য অন্য নেশায় আসক্ত ছিল। আর সাজুও ওর মা-বাবা ওইভাবে খেয়াল করতে পারিনি এবং যত্ন করতে পারিনি। টাকা পয়সা ঠিকই দিয়েছে, যার কারণে সাজুর ওই সব খারাপ বন্ধুদের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্যই এই পরিস্থিতি হয়েছে। এখন সাজু নেশা না করলে থাকতেই পারে না। বাবা-মা আর আদর দিয়ে এখন ঠিক করতে পারছে না। এখন বাবা-মা তাদের ভুল বুঝছে, কিন্তু সময় মত তাকে শাসন করতে পারেনি এবং তাকে সময় দিতে পারিনি।


ওর সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। বললাম বন্ধু যা করেছিস এখুন শেষ এখানেই কর। এখন ভালো হয়ে যা। ভালো হওয়ার চেষ্টা কর, তুই অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলি। তুই আজ কোথায় থাকতি। তোর মা বাবার টাকা-পয়সার অভাব ছিল না। হয়তো তাদের আদর যত্নের অভাব ছিল। যার কারণে তোর আজ এই পরিণতি হয়েছে। তুই ঠিক হয়ে যা, তুই আর এই পথে থাকিস না।তখন সাজু বলল বন্ধু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এখন আমার যে পরিস্থিতি এখন আমি একদিন নেশা না করেও থাকতে পারি না। নেশা না করলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। মা বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করি। আগে আমি মা-বাবার মুখের উপরে কোন কথা বলতে পারতাম না। এখন তাদের আমার কথা মতো চলতে হয়। তারা আমাকে দেখে ভয় পায়। না হলে যেন আমি বাসায় ঠিকভাবেই থাকতে দেই না। অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলি। নিজের কাছেও কখনো কখনো খারাপ লাগে। মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করার পরে, কিন্তু কি আর করব নেশা যখন উঠে যায় তখন আমার মাথা ঠিক থাকে না।


তারপরে অনেকক্ষণ বুঝালাম, বললো জানিনা আমি ঠিক হব কিনা। তবে চেষ্টা করব তোর কথাগুলো শুনার। তুই আজ অনেক ভালো একটা পরিবেশের মধ্যে আছিস। আমিও হয়তো এভাবেই থাকতাম, অনেকক্ষণ বলার পরে বলল ঠিক আছে আমি আস্তে আস্তে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। সাজুর সাথে আমার মাঝে মধ্যে এখন দেখা করতে হবে। ওর বাবা মার সাথে কথা বলবো। এই বিষয় নিয়ে, কারণ ও যে বন্ধুদের সাথে মিশে যাচ্ছে আর কিছুদিন মিশলেই হয়তো ওর জীবনে একদম শেষ হয়ে যাবে। আর কখনোই নেশার ঘর থেকে ফিরে আসবে না হয়তো । নেশার কারণে নিজের জীবন ও বাবা-মা কেউ শেষ করে দিতে পারে, এরকম পরিস্থিতিও হতে পারে। যার কারণে আমার বন্ধুকে যতটা সম্ভব আমি ফেরাতে পারি কিনা এই বলে ওর কাছ থেকে চলে আসলাম। সাজু বলল বন্ধু বাসায় আসিস মাঝে মাঝে দেখা হবে। তুই যেহেতু ঢাকা শহরে আছিস। বললাম ঠিক আছে এই বলে ওর কাছ থেকে বিদায় নিলাম।


নেশা একটা মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। সাথে ধ্বংস করে দেয় বাবা-মার স্বপ্ন। বাবা মার সম্মান। বাবা-মার ভালোবাসা। আর এই নেশার কারণে আমাদের সমাজ থেকে এরকম হাজারো সাজু হারিয়ে যাচ্ছে। তাই নেশা থেকে দূরে এবং বাবা-মার যদি সন্তানের প্রতি সঠিক ব্যবহার, সঠিক আদর যত্ন এবং সময় দিতে পারে। তাহলে এই নেশার দুনিয়া থেকে অনেক সন্তান ফিরে আসবে বলে আমি মনে করি। তো বন্ধুরা আজকে পর্যন্তই পরবর্তীতে আবার আপনাদের মাঝে ভিন্ন কোন পোস্ট নিয়ে হাজির হব। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন,আর আমার বন্ধু সাজুর জন্য দোয়া করবেন। সাজু যেন স্বাভাবিক জীবনে আবার ফিরে আসতে পারে।

আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

IMG_20230821_180423.jpg

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ ।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবসি ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে।

Amar_Bangla_Blog_logo_png.png

👉বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png