শৈশবের বর্ষাকালে পরিবারের সাথে নৌকা ভ্রমণের স্মৃতিচারণা।

in hive-129948 •  last month 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমি ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

আমার শৈশবের অন্যতম স্মরণীয় একটি মুহূর্ত হলো বর্ষাকালে পরিবারের সবাই মিলে নৌকা ভ্রমণ। বর্ষার সময় গ্রামে যখন জলভরা মাঠ, ফুলে ফেঁপে ওঠা নদী, আর চারদিকে সবুজের সমারোহ, তখন নৌকা ভ্রমণের মতো আনন্দ অন্য কিছুতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই ভ্রমণগুলোতে যেমন ছিল এক গভীর আনন্দ, তেমনই ছিল পরিবেশের সাথে এক গভীর সংযোগের অভিজ্ঞতা।শৈশবে পরিবারের সবাই মিলে নৌকা ভ্রমণের সেই নির্ভেজাল অভিজ্ঞতা আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে আসলাম।আমার শৈশবের নৌকা ভ্রমণের দারুন অভিজ্ঞতা পড়ে আশা করছি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।চলুন তাহলে এবার শুরু করি...

1000038581.webp

সোর্স

বর্ষাকালে গ্রামের নদী আর খাল-বিল পূর্ণ জলধারায় পরিপূর্ণ থাকে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই বাড়ির আঙিনা পর্যন্ত জলমগ্ন থাকে। সেই সময় সবার মুখে মুখে একটা কথাই চলত, "এবার বর্ষার জল জমেছে ঠিক মতো।" আমাদের ছোট্ট গ্রামে একটি বড় নদী ছিল, আর বর্ষাকালে সেই নদীর পানি বাড়িতে পর্যন্ত এসে পৌঁছাত। তখন বাবা একদিন বললেন, “এই জল তো আর বেশিদিন থাকবে না, চল সবাই মিলে নৌকা করে ঘুরে আসি।” তার কথায় মায়ের মুখেও একরকম উচ্ছ্বাস দেখা গেল। শৈশবের সেই দিনগুলোতে এই ছোট্ট ছোট্ট পরিকল্পনাগুলো আমাদের জন্য কত বড় সুখের উৎস ছিল!আমরা ছোটদের আনন্দ যেমন ছিল আলাদা, তেমনই বড়দের নিজেদের মাঝে গল্প করতে করতেই সময় কাটানোর ব্যাপার ছিল। তবে নৌকাতে ওঠা আমাদের জন্য এক বিশাল অভিজ্ঞতা ছিল। নৌকায় ওঠার জন্য যখন সবাই প্রস্তুত হচ্ছিলাম, তখনই যেন আমার বুকের ভেতর কেমন এক শিহরণ অনুভব করছিলাম। নৌকায় ওঠা মানে হলো এক নতুন জগতে প্রবেশ করা। বাবা নৌকায় আমাদের সবার সিট ঠিক করে দিলেন। মায়েরা বসে পড়লেন নৌকার মাঝখানে, আর ছোটদের জন্য সামনের দিকে জায়গা ঠিক করা হলো। আমি আর আমার ছোট বোন সবচেয়ে সামনে বসলাম, যেন পুরো নদী আর খালের দৃশ্য আমাদের চোখের সামনে ফ্রেমবন্দী হতে পারে।

নৌকা ছেড়ে দিলেই শুরু হয়েছিল আমাদের আনন্দ। মাঝি তার দক্ষ হাতে দাঁড় টেনে নৌকাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন নদীর স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে। নৌকা একটু করে সামনে এগোচ্ছে, আর আমরা সবাই চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছি। নদীর জলে এক ধরনের ঝিলিক, আকাশের মেঘগুলো যেন নৌকার সাথে পাল্লা দিয়ে ভাসছে। সেই সময় আমাদের কাছে যেন জগতের সব সৌন্দর্য হাতের নাগালে ছিল। আমি আর আমার বোন কখনো সাঁতার কাটতে থাকা হাঁসগুলো দেখতাম, কখনো জলে খেলা করা রঙিন পোকামাকড়ের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।মাঝে মাঝে বাবা কিছু পুরনো গল্প বলতেন, তার ছোটবেলার স্মৃতি শেয়ার করতেন আমাদের সঙ্গে। বাবা বলতেন, তার ছোটবেলায় নদীর পানি ছিল আরও বেশি সজীব, আর মাঝি-মাল্লারাও ছিল আরও সাহসী। বড়দের গল্প শুনতে শুনতে সময় কখন যে কেটে যেত টের পেতাম না। মা-ও মাঝে মাঝে তাদের ছোটবেলার স্মৃতি বলতেন, কেমন করে নানাবাড়ির সবাই মিলে নৌকাভ্রমণে যেতেন। তাদের কথা শুনে আমার মনে হতো, এই ভ্রমণগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সংরক্ষিত হয়ে চলেছে।

নদীতে যাত্রা চলাকালীন কখনো বৃষ্টি নেমে আসতো হঠাৎ করেই। সেই বৃষ্টিতে আমাদের সবার গায়ে ঝাপসা ফোঁটা পড়তো, আর বৃষ্টির মাঝেই নৌকার মৃদু দুলুনিতে একটা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হত। তখন মা আমাদের শাড়ি বা ওড়না দিয়ে বৃষ্টি থেকে একটু আড়াল করতেন। আর আমরাও সেদিকে তোয়াক্কা না করে বৃষ্টির জলে ভিজতাম। সেই বৃষ্টি মানেই ছিল এক ধরনের মুক্তি। প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়ে যেন আমাদের হৃদয়েও এক ধরনের শান্তি নেমে আসত।এই নৌকাভ্রমণে আমাদের খাবারের আয়োজনও থাকত বিশেষ। মা বিশেষভাবে রান্না করে আনতেন নানা রকমের সুস্বাদু খাবার। নদীর জলে ভেসে ভেসে সেই খাবার খাওয়ার আনন্দই ছিল আলাদা। সাধারণ ভাত, ডাল আর ভর্তা, কিন্তু বর্ষার এই ভ্রমণে সেই সাধারণ খাবারও স্বাদে অসাধারণ মনে হতো। তখন নদীর স্রোতের সাথে মিশে সেই খাবারের প্রতিটি গ্রাস যেন আরও উপভোগ্য হয়ে উঠত।একটা সময়ে নৌকা নদীর এক নির্জন কোণে এসে থামতো। সবাই সেইখানে নামতাম একটু করে হাঁটাহাঁটি করার জন্য। বড় বড় গাছের ছায়ায় সবাই বসে একটু বিশ্রাম নিতাম। ছোটদের জন্য এই সময়টা ছিল দারুণ আনন্দের, কারণ আমরা নদীর ধারে গিয়ে ছোট ছোট পাথর নিয়ে খেলতাম। মাঝে মাঝে মাছ ধরারও চেষ্টা করতাম, যদিও সেই সময় মাছ ধরা মানে শুধু পাথর ছুড়ে জল ঘোলা করা ছিল।

নৌকাভ্রমণ শেষে যখন বাড়ি ফিরতাম, তখন মনে হতো যেন একটা স্বপ্নের রাজ্য থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসছি। বাড়ি ফিরে সবাই মিলে সেই স্মৃতিগুলো নিয়ে গল্প করতাম, বিশেষ করে ভাই-বোনরা মিলে নতুন অভিজ্ঞতার কথা একে অপরকে বলতাম। পরিবারের সবাই মিলে সেই এক দিনেই যেন এত স্মৃতি তৈরি হয়ে যেত, যা পুরো বছর জুড়ে আমাদের মনে গেঁথে থাকত।

এই নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আজও আমার মনে গভীরভাবে গেঁথে আছে। শৈশবে পরিবারের সাথে বর্ষাকালের নৌকা ভ্রমণ ছিল জীবনের সবচেয়ে সুন্দর আর মধুর অভিজ্ঞতাগুলোর একটি।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

বর্ষায় শৈশবের স্মৃতিচারণ খুব ভালো লাগলো। বর্ষায় জল জমলে এমন নৌকা চড়ে ঘোরা সত্যিই খুব আনন্দ দান করে। আমার মনে পড়ে যায় ছেলেবেলায় বর্ষায় জমা জলে কাগজের নৌকা ভাসানোর গল্প। সে ছিল এক অন্যরকম আনন্দের সময়। এখন সেসব ভাবলে যেন নস্টালজিক হয়ে পড়ি।

আসলে নৌকা ভ্রমণ করে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে খুব ভালো লাগে। আপনার শৈশবের বর্ষাকালের পরিবারের সাথে নৌকা ভ্রমণের স্মৃতি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনার পোস্ট পড়ে আমারও শৈশবের অনেক কথা মনে পড়ে গেলো। আসলে যখন পরিবারের সাথে শৈশবে নৌকা ভ্রমণ করতে বের হতাম তখন বেশ আনন্দ উপভোগ করতাম। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই এতো সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।