শৈশবের সোনালি স্মৃতি: সাঁতার না জানার সত্ত্বেও পুকুরে গোসলের মজা

in hive-129948 •  last month 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমি ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

ছোটবেলার কথা মনে পড়লে নানা বাড়ির স্মৃতিগুলো যেন মনের গহীনে মধুর এক গানের মতো বেজে ওঠে। গ্রীষ্মের ছুটিতে আমরা ভাই-বোনেরা মিলে নানা বাড়ি যেতাম, আর সেখানে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত ছিল রোমাঞ্চকর। সেই ছোট্ট আমি তখনও সাঁতার শিখিনি, কিন্তু তাতে কি! পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ার আনন্দ থেকে নিজেকে কীভাবে বিরত রাখি? আর এটাই হয়ে ওঠে আমার জীবনের এক ভোলার মতো মজার অভিজ্ঞতা।

1000033439.jpg

সোর্স

নানা বাড়ির পুকুরটা ছিল বিশাল। আমগাছের ছায়ায় ঢাকা, শীতল জলের পুকুরটা যেন সারাক্ষণই আমন্ত্রণ জানাতো। সকালে হাঁসগুলো পানিতে খেলা করত, আর দুপুরের রোদে পানির ওপর চকচকে রূপালি আভা দেখা যেত। পাড়ে দাঁড়িয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে বড় ভাই আর কাজিনদের ঝাঁপাঝাঁপি দেখতাম। তারা সাঁতারে ওস্তাদ, আর আমি ছিলাম সাঁতারের বিষয়ে পুরোপুরি আনাড়ি।কাজিনরা আমাকে বারবার বলত, “তুইও নাম, মজা পাবি।” কিন্তু আমি গোপনে একটু ভয় পেতাম—এই যদি ডুবে যাই! অথচ মনটা ছটফট করত সেই জলকেলির অংশ হতে। একদিন ভাবলাম, "ভয় পেলে হবে না, ঝাঁপ দিতে হবে।"

দুপুরের দিকে সবাই যখন পুকুরে নামল, আমিও সাহস করে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এক কাজিন বলল, "ধরে থাকিস, ডুবে যাবি না।" ছোট্ট একটা লাল-নীল রঙের টিউব নিয়ে আমি জলের ধারে এলাম। মনে হচ্ছিল, যেন জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি। ভাইয়ের হাত ধরে ধীরে ধীরে পা নামালাম ঠাণ্ডা জলে। প্রথমে পানি কেমন জানি কাঁপুনি ধরিয়ে দিল, কিন্তু একটু পরেই শরীর সয়ে গেল। একসময় তারা বলল, “এবার লাফ দে!” একটু ইতস্তত করলেও, ভেতরে জমে থাকা সাহসটা একসময় ছাড় দিয়ে দিলাম। দুম করে পানিতে লাফিয়ে পড়তেই চারপাশে পানি ছিটকে উঠল। টিউবের ভরসায় পুকুরের মাঝখানে ভাসতে ভাসতে অনুভব করলাম এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ। মনের সব ভয় যেন মুহূর্তেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।

পুকুরের পানিতে নামার পর আর উপরে ওঠার নাম নেই। সবাই মিলে পানিতে একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে দিতাম, ঢেউ তুলে হাসি-ঠাট্টা চলত। যদিও আমি সাঁতার জানতাম না, তবু কাজিনদের দেখে সাঁতার কাটার ভান করতাম। তারা প্রশংসার ভান করে বলত, "দেখ, তুই তো শিখেই গেলি!" আমি তখন ভাবতাম, সত্যি বুঝি সাঁতার শিখে গেছি! একবার পানির নিচে ডুব দিতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলাম। সাঁতার না জানায় পানির নিচে দম ধরে রাখতে পারিনি। কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে হাত-পা ছোড়া শুরু করলাম, কিন্তু বড় ভাইয়ের শক্ত হাতে ভর করে আবার ওপরে উঠে এলাম। সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল, “আহা! এই তো জীবন!” পরে অবশ্য সবাই মিলে আমাকে নিয়ে এমন হাসাহাসি করেছিল যে আমিও নিজেই লজ্জা ভুলে হেসে ফেলেছিলাম।

পানিতে কয়েক ঘণ্টা মজার পর সবাই উঠে এসে পুকুরপাড়ের মাটিতে বসে রোদ পোহাতাম। পাড়ে বসে আম আর জলপাইয়ের আচার খেতে খেতে চলে আড্ডা। নানা বাড়ির সেই সোনালি বিকেলগুলোতে যেন সময় থমকে থাকত। হালকা বাতাস, গাছের পাতার মৃদু মর্মর ধ্বনি, আর আমাদের কোলাহল—সবকিছুই ছিল স্বপ্নের মতো সুন্দর। সেই পুকুরের গল্পগুলো আজও মনে করলে হাসি পেয়ে যায়।সেদিনের সেই পুকুরে নামার অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছিল, জীবনের অনেক মজা পেতে গেলে মাঝে মাঝে ভয়ের মুখোমুখি হওয়া জরুরি। আমি সাঁতার না জানলেও ভয় পেয়ে দূরে না থেকে মজাটাই বেছে নিয়েছিলাম। ছোট ছোট ঝুঁকিগুলোই জীবনের রঙিন মুহূর্ত তৈরি করে দেয়, আর সেগুলোই স্মৃতির পাতায় থেকে যায় চিরকাল।

আজ বড় হয়েছি, অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু শৈশবের সেই নানা বাড়ির পুকুরে গোসলের গল্প আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দদায়ক স্মৃতিগুলোর মধ্যে একটি। হয়তো সেদিন সাঁতার শিখতে পারিনি, কিন্তু মনের মধ্যে সাহস আর আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলাম, যা আজও আমাকে পথ চলতে অনুপ্রাণিত করে।নানা বাড়ির সেই পুকুর আর সেখানে কাটানো মুহূর্তগুলো আজও মনে পড়লে হাসি পেয়ে যায়। সময় বদলে গেছে, জীবন অনেক দিকেই এগিয়েছে, কিন্তু শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো আজও আমার মনে জ্বলজ্বলে হয়ে আছে। আর আমি জানি, যখনই জীবনের কোনো ভয় আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন মনে পড়ে যায় সেই প্রথম পুকুরে ঝাঁপ দেওয়ার কথা—ভয় কাটিয়ে আনন্দে ভাসার সেই মধুর স্মৃতি।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

নানা বাড়ীর পুকুরে প্রথম গোসল করার অভিজ্ঞতা নিয়ে সুন্দর একটি স্মৃতি কথা শেয়ার করেছেন ভাইয়া। আসলেই শৈশবের সোনালী স্মৃতি। আপনার স্মৃতি কথা পড়ে, ছুটিতে বাবা মায়ের সাথে গ্রামের বাড়িতে গেলে, ভাই-বোন ও কাজিনদের সাথে নদীতে গোসলের কথা মনে পড়ে গেল। আহা! সেই দিন গুলি। আপনি ঠিকেই বলেছেন,জীবনের অনেক মজা পেতে গেলে মাঝে মাঝে ভয়ের মুখোমুখি হওয়া জরুরি। অনেক ভালো লেগেছে আপনার আজকের স্মৃতি কথা। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার পোস্ট টা পড়ে ছোটবেলার পুকুরে গোসল করার সেই মূহুর্ত টা মনে পড়ে গেল। যদিও আমি অনেক ছোট থেকেই সাঁতার জানতাম। তবে বন্ধুদের সাথে একসঙ্গে পুকুরে ঝাপাঝাপি করার মধ্যে আলাদা একটা প্রশান্তি ছিল। সুন্দর লিখেছেন। ভালো লাগল আপনার পোস্ট টা পড়ে।