নানা বাড়ির পুকুরটা ছিল বিশাল। আমগাছের ছায়ায় ঢাকা, শীতল জলের পুকুরটা যেন সারাক্ষণই আমন্ত্রণ জানাতো। সকালে হাঁসগুলো পানিতে খেলা করত, আর দুপুরের রোদে পানির ওপর চকচকে রূপালি আভা দেখা যেত। পাড়ে দাঁড়িয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে বড় ভাই আর কাজিনদের ঝাঁপাঝাঁপি দেখতাম। তারা সাঁতারে ওস্তাদ, আর আমি ছিলাম সাঁতারের বিষয়ে পুরোপুরি আনাড়ি।কাজিনরা আমাকে বারবার বলত, “তুইও নাম, মজা পাবি।” কিন্তু আমি গোপনে একটু ভয় পেতাম—এই যদি ডুবে যাই! অথচ মনটা ছটফট করত সেই জলকেলির অংশ হতে। একদিন ভাবলাম, "ভয় পেলে হবে না, ঝাঁপ দিতে হবে।"
দুপুরের দিকে সবাই যখন পুকুরে নামল, আমিও সাহস করে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এক কাজিন বলল, "ধরে থাকিস, ডুবে যাবি না।" ছোট্ট একটা লাল-নীল রঙের টিউব নিয়ে আমি জলের ধারে এলাম। মনে হচ্ছিল, যেন জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি। ভাইয়ের হাত ধরে ধীরে ধীরে পা নামালাম ঠাণ্ডা জলে। প্রথমে পানি কেমন জানি কাঁপুনি ধরিয়ে দিল, কিন্তু একটু পরেই শরীর সয়ে গেল। একসময় তারা বলল, “এবার লাফ দে!” একটু ইতস্তত করলেও, ভেতরে জমে থাকা সাহসটা একসময় ছাড় দিয়ে দিলাম। দুম করে পানিতে লাফিয়ে পড়তেই চারপাশে পানি ছিটকে উঠল। টিউবের ভরসায় পুকুরের মাঝখানে ভাসতে ভাসতে অনুভব করলাম এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ। মনের সব ভয় যেন মুহূর্তেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
পুকুরের পানিতে নামার পর আর উপরে ওঠার নাম নেই। সবাই মিলে পানিতে একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে দিতাম, ঢেউ তুলে হাসি-ঠাট্টা চলত। যদিও আমি সাঁতার জানতাম না, তবু কাজিনদের দেখে সাঁতার কাটার ভান করতাম। তারা প্রশংসার ভান করে বলত, "দেখ, তুই তো শিখেই গেলি!" আমি তখন ভাবতাম, সত্যি বুঝি সাঁতার শিখে গেছি! একবার পানির নিচে ডুব দিতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলাম। সাঁতার না জানায় পানির নিচে দম ধরে রাখতে পারিনি। কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে হাত-পা ছোড়া শুরু করলাম, কিন্তু বড় ভাইয়ের শক্ত হাতে ভর করে আবার ওপরে উঠে এলাম। সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল, “আহা! এই তো জীবন!” পরে অবশ্য সবাই মিলে আমাকে নিয়ে এমন হাসাহাসি করেছিল যে আমিও নিজেই লজ্জা ভুলে হেসে ফেলেছিলাম।
পানিতে কয়েক ঘণ্টা মজার পর সবাই উঠে এসে পুকুরপাড়ের মাটিতে বসে রোদ পোহাতাম। পাড়ে বসে আম আর জলপাইয়ের আচার খেতে খেতে চলে আড্ডা। নানা বাড়ির সেই সোনালি বিকেলগুলোতে যেন সময় থমকে থাকত। হালকা বাতাস, গাছের পাতার মৃদু মর্মর ধ্বনি, আর আমাদের কোলাহল—সবকিছুই ছিল স্বপ্নের মতো সুন্দর। সেই পুকুরের গল্পগুলো আজও মনে করলে হাসি পেয়ে যায়।সেদিনের সেই পুকুরে নামার অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছিল, জীবনের অনেক মজা পেতে গেলে মাঝে মাঝে ভয়ের মুখোমুখি হওয়া জরুরি। আমি সাঁতার না জানলেও ভয় পেয়ে দূরে না থেকে মজাটাই বেছে নিয়েছিলাম। ছোট ছোট ঝুঁকিগুলোই জীবনের রঙিন মুহূর্ত তৈরি করে দেয়, আর সেগুলোই স্মৃতির পাতায় থেকে যায় চিরকাল।
আজ বড় হয়েছি, অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু শৈশবের সেই নানা বাড়ির পুকুরে গোসলের গল্প আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দদায়ক স্মৃতিগুলোর মধ্যে একটি। হয়তো সেদিন সাঁতার শিখতে পারিনি, কিন্তু মনের মধ্যে সাহস আর আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলাম, যা আজও আমাকে পথ চলতে অনুপ্রাণিত করে।নানা বাড়ির সেই পুকুর আর সেখানে কাটানো মুহূর্তগুলো আজও মনে পড়লে হাসি পেয়ে যায়। সময় বদলে গেছে, জীবন অনেক দিকেই এগিয়েছে, কিন্তু শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো আজও আমার মনে জ্বলজ্বলে হয়ে আছে। আর আমি জানি, যখনই জীবনের কোনো ভয় আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন মনে পড়ে যায় সেই প্রথম পুকুরে ঝাঁপ দেওয়ার কথা—ভয় কাটিয়ে আনন্দে ভাসার সেই মধুর স্মৃতি।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
https://x.com/mohamad786FA/status/1848048692491854203?t=5_YJy2tbxvAy91BebvpHIw&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
নানা বাড়ীর পুকুরে প্রথম গোসল করার অভিজ্ঞতা নিয়ে সুন্দর একটি স্মৃতি কথা শেয়ার করেছেন ভাইয়া। আসলেই শৈশবের সোনালী স্মৃতি। আপনার স্মৃতি কথা পড়ে, ছুটিতে বাবা মায়ের সাথে গ্রামের বাড়িতে গেলে, ভাই-বোন ও কাজিনদের সাথে নদীতে গোসলের কথা মনে পড়ে গেল। আহা! সেই দিন গুলি। আপনি ঠিকেই বলেছেন,জীবনের অনেক মজা পেতে গেলে মাঝে মাঝে ভয়ের মুখোমুখি হওয়া জরুরি। অনেক ভালো লেগেছে আপনার আজকের স্মৃতি কথা। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার পোস্ট টা পড়ে ছোটবেলার পুকুরে গোসল করার সেই মূহুর্ত টা মনে পড়ে গেল। যদিও আমি অনেক ছোট থেকেই সাঁতার জানতাম। তবে বন্ধুদের সাথে একসঙ্গে পুকুরে ঝাপাঝাপি করার মধ্যে আলাদা একটা প্রশান্তি ছিল। সুন্দর লিখেছেন। ভালো লাগল আপনার পোস্ট টা পড়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit