শৈশবের স্মৃতিচারণঃ ❝বর্ষার শেষে গ্রামের কাদামাখা কৃষি জমিতে একটি ফুটবল ম্যাচের গল্প❞

in hive-129948 •  last year 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমির সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

আমাদের শৈশব এমন একটা সময় যেখানে বারবার যেতে ইচ্ছা করে। আমাদের শৈশব এমন একটা সময় যা বারবার আমাদের মনে পড়ে।আমাদের শৈশবের সময় গুলো কাটে অনেক আনন্দের সাথে।আমরা যত বড় হতে থাকি এই আনন্দ গুলো ততই কমতে থাকে।শৈশব আমাদের জীবনের একটি স্বর্ণালী যুগ।শৈশবের দিনগুলো অনেক মজার মাধ্যমে কাটে দ্বিধায় আমরা ঐ সকল দিনগুলো বা ঘটনা গুলো ভুলে যেতে পারি না।বারবার সেই ঘটনাগুলো সেই স্মৃতিগুলো আমাদের মনে পড়ে যায়।শৈশবের স্মৃতি মাখা সেই সকল স্বর্ণালী দিনের বিভিন্ন ধরনের স্মৃতিময় ঘটনা একে অপরকে জানানোর জন্য আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি আমাদের জন্য অনেক বড় একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।এর মাধ্যমে আমরা সবার শৈশবের মজার মজার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারছি এবং নিজের ঘটনা সম্পর্কেও সবাইকে বলতে পারছি।আজ আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করব আমার শৈশবের ঘটে যাওয়া গ্রামের বন্ধুদের নিয়ে একটি ফুটবল ম্যাচের গল্প।বর্ষার শেষে গ্রামের কাদা মাখা কৃষি জমিতে ফুটবল খেলার মজাই যেন অন্যরকম।গল্পটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে হয়তো আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।তো চলুন তাহলে আর বেশি দেরি না করে গল্পটি শুরু করি...


football-1807520_1280.jpg

সোর্স

আমি ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করতে অনেক পছন্দ করি।বিশেষ করে ফুটবল এবং ক্রিকেট খেলতে আমি অনেক ভালোবাসি।আমার শৈশব কেটেছে আমার গ্রামের বাড়িতে।বর্ষার শেষে যখন পানি নেমে যেতে থাকে তখন গ্রামের জমিগুলোতে অল্প পরিমাণ পানি থাকে।ওই সময় গ্রামের মানুষ ফুটবল খেলার আয়েজন করে।আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগের ঘটনা।প্রতিবার এর মত সেইবারও বর্ষার শেষে ফুটবল খেলার উপযোগিতা আয়োজন করা হয়েছিল।গ্রামের ছোট বড় পোলাপানদের নিয়ে এই ফুটবল খেলার আয়োজন।আমাদের গ্রাম তেমন বড় গ্রাম না। তাই আমাদের গ্রামকে দুইটা দলে ভাগ করা হয়েছিল।আমার এখনো মনে আছে একটি দলের নাম ছিল নলকা কিংস আর অন্য দলের নাম ছিল নলকা লায়ন্স।আমি নলকা কিংসের দলে যোগ দিয়েছিলাম।কারণ আমাদের পাড়ার মধ্যে পড়েছিল।তাই এই দলে আমার সব কাছের বন্ধু বান্ধব এবং বড় ভাই ছিল।আর নলকা লায়ন্সের দলে আমাদের গ্রামের অন্য পাড়ার পোলাপান ছিল।খুবই প্রতিযোগিতা পূর্ণ একটি ম্যাচ। প্রতিবছর এই সময় আমাদের গ্রামে এই দুটি দল নিয়ে ফুটবল খেলার আয়োজন করা হত।


football-3475163_1280.jpg

সোর্স

বর্ষার শেষে কোন এক দিনে,তারিখ ঠিক এখন আমার মনে নাই। সেদিন এই ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছিল।বিকেল ৪ টা থেকে এই ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছিল। যথা সময়ে দুই দল ফুটবল মাঠে এসে উপস্থিত হয়েছিল।আসলে ফুটবল মাঠ বলতে গ্রামের চড়ার মধ্যে বড় একটি ক্ষেতে ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল।সেখানে এসে যথা সময়ে আমরা উপস্থিত হয়েছিলাম।ফুটবল খেলার রেফারিং এর দায়িত্বে ছিলন আমাদের গ্রামের সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড় কুদ্দুস কাকা।এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমাদের নলকা গ্রামের চেয়ারম্যান সিদ্দিক কাকা।আমাদের দলের গোলকিপার হিসেবে ছিল আমার চাচাতো ভাই শফি,আর ক্যাপ্টেন ছিলেন আমার ফুফাতো ভাই আরিফ ভাই।আমাদের দলটি অনেকটা আমাদের আত্মীয়দের নিয়ে করা হয়েছিল। কারণ দলে আমার সব চাচাতো, ফুফাতো ভাইরা ছিল আর আমার কিছু বন্ধু ছিল।আমরা সবাই এক দলে ছিলাম তাই আমাদের অনেক ভালো লাগতে ছিল। আমরা অনেক খুশি ছিলাম।এবং খুব মনোযোগ দিয়ে আমরা খেলার জন্য খেলার মাঠে উপস্থিত হয়েছিলাম।আমাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল যেভাবে হোক আমরা এই ম্যাচ জিতবই।বিকেল চারটা বাজার একটু আগে রেফারি মাঠের মাঝখানে ফুটবলটির রাখলেন।এবং চারটা বাজার সাথে সাথে রেফারির বাঁশি বাজানোর মধ্য দিয়ে ফুটবল খেলা শুরু হয়ে গিয়েছিল।শুরু হয়ে গেল গ্রামের কাদামাখা কৃষি জমিতে ফুটবল ম্যাচ।

children-1822688_1280.jpg

সোর্স

শুরু থেকেই আমরা অনেক ভালো খেলতে ছিলাম।ভালো খেলতে খেলতে প্রতিপক্ষ টিমের এক বড় ভাই ম্যাচের মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় আমাদের জালে তারা গোল দিয়ে বসল।আমাদেরকে গোল দিয়ে তারা উল্লাসে মেতে উঠল।আমরা পিছিয়ে গেলাম ০-১ গোলে।একটি গোল খাওয়ার পরে আমরা আরো ভালোভাবে খেলা শুরু করলাম। আমরা ডিফেন্সের দিক বেশি মনোযোগ দিলাম এবং এটাকিং মোডে বেশি করে যাচ্ছিলাম।ম্যাচের ২০ মিনিটের মাথায় আমাদের টিমের একটি গোলের সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু আমাদের টিমের ক্যাপ্টেন আরিফ ভাই সেই গোলটি করতে ব্যর্থ হয়েছিল।এরপর আমরা আরও অ্যাটাকিং মোডে গেলাম।এক পর্যায়ে আমাদের দলের ক্যাপ্টেন আরিফ ভাই বল কাটাতে কাটাতে প্রতিপক্ষ গোলবারের সামনে আমাকে বল পাছ দিল।সাথে সাথে আমি বলে শর্ট দিয়ে একটি গোল করে ফেললাম।আমি গোল করে উল্লাসে মেতে উঠলাম।এত বড় একটি ম্যাচে আমি গোল করতে পেরে অনেক ভালো লাগলো।১-১ গোলের সমতা নিয়ে আমাদের প্রথমার্ধের খেলা শেষ হল।১৫ মিনিট বিশ্রাম নেওয়ার পর শুরু হয়ে গেল দ্বিতীয় আর্ধের খেলা। দ্বিতীয় আর্ধের শুরুতেই আমাদের দলের রকি ভাই প্রতিপক্ষ জালে আরো একটি গোল দিয়ে দিল।এর মধ্য দিয়ে আমরা ২-১ গোলে এগিয়ে গেলাম।এরপর আমরা ২০ মিনিট দুই দলই অনেক ট্রাই করেছি গোল দেওয়ার জন্য,কিন্তু কোন দলই গোল করতে পারেনি।ম্যাচের শেষের দিকের সময়টা অনেক বেশি উত্তেজনাপূর্ণ হয়।এই উত্তেজনাপূর্ণ সময় আমাদের দলের ক্যাপ্টেন আরিফ ভাই দুর্দান্ত খেলার মধ্য দিয়ে প্রতিপক্ষের জালে আরও একটি গোল করে বসল।এর মধ্য দিয়ে আমরা ৩-১ গোলে এগিয়ে গেলাম।এরই মধ্য দিয়ে আমাদের টিম নলকা কিংস জয় লাভ করল।আমাদের টিমের খেলোয়াড়াসহ আমাদের পাড়ার লোকেরা আনন্দে মেতে উঠল।


আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে ঘটে যাওয়া আমাদের গ্রামের এই ফুটবল ম্যাচের কথা আজকে হঠাৎ করেই মনে পরল।তাই আর দেরি না করে সাথে সাথে আপনাদের সাথেও শেয়ার করে নিলাম আমার শৈশবে ঘটে যাওয়া এত সুন্দর একটি ফুটবল ম্যাচের গল্প। আশা করি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে।

আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

IMG_20230821_180423.jpg

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ ।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবসি ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে।

Amar_Bangla_Blog_logo_png.png

👉বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺

Posted using SteemPro Mobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

স্মৃতি জাগানীয়া সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার লেখা পড়ে ছোট বেলার অনেক কথা মনে পড়ছে। কর্দমাক্ত মাঠে ফুটবল খেলে আপনারা জিতেছেন এবং সে জয়ে আপনি এক গোল করেছেন। অবশ্যই ভাল লাগার। দশ বছর আগের হলেও এসব স্মৃতি ভোলা যায়না। শুভ কামনা।

প্রায় দশ বছর আগে ঘটে যাওয়া আপনাদের গ্রামের এই ফুটবল ম্যাচের কথা জেনে বেশ ভালো লাগলো ভাই। কৈশোর জীবনে আমিও বৃষ্টির সময়টাতে এরকম অনেক ফুটবল ম্যাচ এনজয় করেছি । আপনার এই ঘটনাটি পড়ার সময় সেই কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল । এই ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত যে আপনারাই বিজয়ী হয়েছিলেন সেটা জেনে খুশি হলাম।