কাঁঠাল চুরির গল্প
আমাদের ছোট্ট গ্রামটি ফুলজোঁর নদীর পাড়ে অবস্থিত। চারপাশে শ্যামল প্রকৃতি আর সবুজ ধানের ক্ষেত। গ্রামের এক প্রান্তে বিশাল এক কাঁঠাল গাছ ছিলো, যে গাছটি বহু পুরোনো। আমাদের সবারই খুব প্রিয় ছিলো এই গাছটি। আমরা প্রায়ই তার ছায়ায় বসে গল্প করতাম, খেলতাম। তবে কাঁঠাল গাছটির বিশেষত্ব ছিলো এর মিষ্টি আর বড় কাঁঠালগুলো। আমি আর আমার বন্ধুরা, মোট ছয়জন - রাতুল, ইমরান, হারুন,সুমন,সাজু,আকাশ আর আমি,। আমরা ছয়জন একদিন ঠিক করলাম যে কাঁঠাল গাছ থেকে কাঁঠাল চুরি করবো। এই রোমাঞ্চকর কাজটি আমাদের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা এনে দেয়। গ্রামের সব বাড়ির মতোই কাঁঠাল গাছের মালিকের বাড়িও গাছ থেকে একটু দূরে ছিলো। তাই এই কাজটা করতে হলে একটু সাহসের দরকার ছিলো।
পরিকল্পনা
সন্ধ্যার পর সবাই গ্রামের মাঠে মিলিত হলাম। সবার মুখে একটাই হাসি, সেই চুরি করে কাঁঠাল খাওয়ার উত্তেজনা। আমরা ঠিক করলাম,রাত দশায় কাজটা শুরু করবো।সুমন তার মার কাছ থেকে একটা বড় বস্তা নিয়ে এলো।আকাশ আবার খুব ভালো গাছে উঠতে পারে, তাই সে গাছে উঠবে আর কাঁঠালগুলো পাড়বে। ইমরান আর হারুন পাহারা দিবে। আমি আর সাজু নিচে দাঁড়িয়ে কাঁঠালগুলো বস্তায় ভরবো।
অভিযান
রাত দশটার পর, যখন পুরো গ্রাম নিস্তব্ধ, তখন আমরা বের হলাম। চাঁদনি রাত, চারপাশে আলো ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা খুব সাবধানে গাছের কাছে পৌঁছালাম। ইমরান আর হারুন দ্রুত আশেপাশে পাহারা দিতে শুরু করলো। আকাশ গাছে উঠতে শুরু করলো। গাছের উপর থেকে সে বললো, "এই যে, একটা বিশাল কাঁঠাল পেয়েছি"।আকাশ কাঁঠালগুলো নিচে ফেলতে লাগলো, আর আমি আর সাজু দ্রুত সেগুলো বস্তায় ভরতে লাগলাম। হঠাৎ করেই, আমরা শব্দ পেলাম। কেউ যেন আমাদের দিকে আসছে। আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। ইমরান ফিসফিস করে বললো, "তাড়াতাড়ি কর, কেউ আসছে"।
বিপত্তি
কাঁঠালের মালিক, বুড়ো শাহাজাহান চাচা, টর্চ লাইট হাতে নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিলো। আকাশ তাড়াহুড়ো করে গাছ থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গেল। আমি আর সাজু বস্তাটা নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম, আর বাকি সবাই আমাদের পিছু পিছু। বুড়ো শাহাজাহান চাচা আমাদের পেছনে দৌড়াতে লাগলো। আমরা সবাই একত্রিত হয়ে গ্রামের পেছনের ছোট্ট বাশঁবাগানে লুকিয়ে পড়লাম। বুড়ো শাহাজাহান চাচা কিছুক্ষণ খুঁজে ফিরে না পেয়ে চলে গেল। আমরা হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম।
উৎসব
রাতুল তার বাড়ির পেছনের ছোট্ট খোপটায় আমাদের ডেকে নিলো। সেখানে আমরা মাটিতে বসে কাঁঠালগুলো খেতে শুরু করলাম। কাঁঠালগুলো সত্যিই খুব মিষ্টি ছিলো। আমাদের সবাই মিলে এই রোমাঞ্চকর অভিযানের কথা বলতে বলতে রাত বারোটা বেজে গেল।সেই রাতের সেই কাঁঠাল চুরির অভিজ্ঞতা আমাদের শৈশবের সেরা স্মৃতির মধ্যে একটি হয়ে থাকবে। আমরা যখনই গ্রামের মাঠে একত্রিত হতাম, সেই গল্পই প্রথমে আলোচনায় আসতো। বুড়ো শাহাজাহান চাচার সেই টর্চ লাইটের আলো আর আমাদের দৌড়, সেই মিষ্টি কাঁঠালের স্বাদ - সবকিছু মিলিয়ে আমাদের ছোট্ট গ্রামটির সেই নির্ভেজাল সময়গুলো ছিলো সত্যিই অসাধারণ।
শিক্ষণীয়
এই ঘটনাটি আমাদের মধ্যে এক ধরনের একতা এবং বন্ধুত্বের বন্ধন আরও মজবুত করেছিলো। যদিও আমরা জানতাম কাঁঠাল চুরি করা ঠিক নয়, তবে সেই শিশুসুলভ দুষ্টুমির মধ্যে আমরা শিখেছি কিভাবে একসাথে কাজ করতে হয়, বিপদের সময় কিভাবে সাহস রাখতে হয়, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কিভাবে মজার মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে হয়।আমাদের শৈশবের সেই দিনগুলো হয়তো আর ফিরে আসবে না, কিন্তু এই কাঁঠাল চুরির গল্পটি আমাদের হৃদয়ে চিরকাল রয়ে যাবে। আমাদের ছোট্ট গ্রাম, সেই কাঁঠাল গাছ আর আমাদের ছয়জন বন্ধুর সেই রাতের গল্প - সবকিছু মিলিয়ে তা আমাদের জীবনের একটি মধুর অধ্যায়।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺
https://x.com/mohamad786FA/status/1817473804546736595?t=CoUp08zt1Tz8pcwoVGn9uQ&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কি একটা অবস্থা! শাহাজাহান চাচারে তো সিস্টেম কইরা দিলেন। 😅😅
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার শৈশবের স্মৃতি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে ভাইয়া চুরি করা ঠিক নয় তবে আমার মনে হয় শৈশবের চুরি দোষের মধ্যে পড়ে না। শৈশবে একটু চুরি কম বেশি সবাই করে থাকে। আসলে বুড়ো মানুষ তাই হয়তো আপনাদের খুঁজে পায়নি।ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার শৈশবের স্মৃতি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার শৈশব স্মৃতি পড়ে নিজের শৈশবের কথা ভীষণ মনে পরে গেলো।বেশ ভালো ভালো লাগলো আপনার লেখাটি পড়ে।সকলে বেশ মজা খেয়েছিলেন জেনে ভালো লাগলো।বিপদের সময় বন্ধুরা এইভাবে পাশেই থাকে।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমাদের ছেলেবেলা অনেক অনেক স্মৃতি রয়েছে তার মাঝে এমনও কিছু স্মৃতি রয়েছে যা কখনো ভোলা যায় না। আজ আপনার শৈশবে কাঁঠাল চুরির মধুর স্মৃতির গল্প পড়ে খুব ভালোই লাগলো। পড়ছিলাম আর হাসছিলাম। সত্যি ভাইয়া এই ঘটনাটি একটি দুষ্টামি হলেও সেটা আপনাদের বন্ধুদের বন্ধন কে আরো মজবুত করেছে। এবং একে অপরের পাশে বিপদ আপদে কিভাবে পাশে থাকতে হয় সেটা শিখিয়েছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit