গল্প-সময়ের ব্যবধানে||

in hive-129948 •  last month 

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। গল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। গল্প আমার কল্পনা কিংবা ভালোলাগা বলতে পারেন। আমার খুবই প্রিয় একটি কাজ হলো গল্প লেখা। মাঝে মাঝে সময় পেলে বসে পরি গল্প লিখতে। তবে মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া কখনো গল্প লিখা যায় না। আশা করছি আজকের গল্পটি সবার ভালো লাগবে।


সময়ের ব্যবধানে:

people-2565169_1280 (2).jpg

Source


সময়ের ব্যবধানে আজ তুমি আমি মুখোমুখি। তোমার সাজানো ঘর আর আমার বিষণ্নতা আজ মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। হয়তো এমনটা নাও হতে পারতো। হয়তো তোমার সাজানো ঘরে আমার চিরো ঠাই হতো। কিন্তু সেটা হয়নি। কারণ ভালোবাসার বড্ড অভাব ছিল। ভালোবেসে ছিলাম তোমায়। বড্ড ভালোবেসে ছিলাম। কথাগুলো ভাবছিল আর সুস্মিতার দুচোখের কোণে পানি চলে এসেছিল। মুখ ফুটে বলতে পারেনি। শুধু অপলক দৃষ্টিতে দেখছিল তার ভালোবাসার মানুষটিকে। নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে সে।


সময়ের সাথে সাথে কতটা বদলে গেছে সীমান্ত এটাই ভাবছে সুস্মিতা। সুস্মিতা আর সীমান্ত একই ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন তাদের দেখা হয়েছিল অরিয়েন্টেশন ক্লাসে। সুস্মিতা দেরিতে আসার কারণে পেছনের সারিতে জায়গা পেয়েছিল। সুস্মিতাকে জায়গা করে দিয়েছিল সীমান্ত। তখন থেকেই তাদের বন্ধুত্বর সূচনা হয়েছিল। সীমান্ত ভালো ছেলে আর সুস্মিতা দেখতেও ভারী সুন্দরী। দুজনের বন্ধুত্বটা ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছিল।


সীমান্ত সুস্মিতাকে ভালোবেসেছিল। তেমনি সুস্মিতাও সীমান্তকে ভালোবেসেছিল। তারা চুটিয়ে প্রেম করতো। তাদের প্রেমে যেন কারো নজর না লেগে যায় তাই তো তারা দ্রুতই বিয়ে করে ফেলেছে। পরিবারের অমতে গিয়েই তারা বিয়ে করেছিল। প্রথম প্রথম ভালোই কাটছিল তাদের দিনগুলো। দুজনের বেকারত্বের জীবনে সুখের কোন কমতি ছিল না। সুস্মিতা এবং সীমান্ত দুজনেই টিউশনি করাতো। ছোট্ট একটি চিলেকোঠার ঘর ভাড়া নিয়েছিল তারা। তাদের চিলেকোঠার সংসার জীবনে সুখের কোন কমতি ছিল না। দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল বড্ড ভালোভাবে। হঠাৎ করে সীমান্তর বাবা-মা সীমান্তকে বাড়িতে ডেকে পাঠালো। সীমান্তর বাবা ভীষণ অসুস্থ। তিনি চান সীমান্তকে নিজের কাছে রাখতে।


অন্যদিকে সুস্মিতাকে তারা মেনে নিতে নারাজ। সুস্মিতা রয়ে গেল সেই চিলেকোঠার সংসারে। আর সীমান্ত ফিরে গেল নিজের বাড়িতে প্রথম প্রথম বেশ ভালই কথা হতো তাদের কিন্তু ধীরে ধীরে। সীমান্ত কেন জানি বদলে যেতে শুরু করলো। হঠাৎ একদিন তার চিলেকোঠার দরজায় একটি চিঠি পড়ে থাকতে দেখল সুস্মিতা। চিঠিতে সীমান্তের হাতের লেখা বুঝতে পারছিল সে। সীমান্ত তার থেকে মুক্তি চায়। তার বাবা-মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে চায় সে। সীমান্ত সুস্মিতাকে অনুরোধ করে সে যেন তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।সুস্মিতা মা হতে চলেছে এই কথাটি সীমান্তকে জানাতে পারেনি। তার জীবনে নতুন অতিথি আসতে চলেছে। তবুও সীমান্তের বদলে যাওয়াকে মেনে নিতে না পেরে সুস্মিতা কোন কিছু না ভেবেই সীমান্তকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিল।


এরপর থেকে তাদের আর কখনোই দেখা হয়নি। ডিভোর্সের পর কেটে গেছে প্রায় পাঁচটি বছর। সীমান্ত সুস্মিতাকে অনেক খুঁজেছে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পায়নি। সীমান্ত তার নতুন জীবনে সবকিছু পেয়েছিল কিন্তু সুস্মিতাকে হারিয়ে সীমান্ত মোটেও ভালো ছিল না। সে আর বাবা হতে পারেনি। সময়ের ব্যবধানে সীমান্ত তার ভুলগুলো বুঝতে পেরেছিলো। সুস্মিতার কাছে ক্ষমা চাওয়াই যেন তার জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। আজ তারা অনেক বছর পর মুখোমুখি। সুস্মিতার পাশে বসা ছোট্ট মেয়েটি যে সীমান্তের মেয়ে। কিন্তু সীমান্ত তাকে ছুঁয়ে দেখার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। সময়ের ব্যবধানে সীমান্ত নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে। সময়ের ব্যবধানে সবকিছুই বদলে গেছে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

সত্যি আপু সময়ে ব্যবধানে অনেক কিছু হয়।সবাই তার ভুল গুলো একদিন ঠিক বুঝতে পারে তবে অনেক দেরি হয়ে যায়।আসলে কিছু কিছু ভুলের মাশুল কাউকে সারাজীবন দিতে হয়। ধন্যবাদ আপু সুন্দর লিখেছেন।

সময়ের ব্যবধানে সীমান্ত সবকিছু বুঝতে পেরেছিল ঠিকই কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। ধন্যবাদ আপু।

সত্যি আপনার গল্পটি পড়ে হতবাক হয়ে গেলাম। কি মন্তব্য করব বুঝতে পারছি না। এটি গল্প হলেও বাস্তবে এমন ঘটনা অনেক ঘটে থাকে। সীমান্ত তার ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্যায় করেছিল তাই তার সাজা সে পেয়েছে।কিন্তু একটা কথা আছে সময় গেলে সাধন হয় না। তাই এখন চাইলেও তাদের করার কিছু ছিল না। বেশ ভালো লাগলো আপু গল্পটি পড়ে।

মাঝে মাঝে গল্প জীবনের কথা বলে। কখনো কখনো কারো জীবনের সাথে মিলে যায় আপু। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।

@tipu curate