গল্প-এক জনমে||

in hive-129948 •  yesterday  (edited)

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে অনেক ভালো লাগে। তাই গল্প লেখার চেষ্টা করি। আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।


এক জনমে:

people-2565169_1280 (6).jpg

Source


প্রীতিলতা ছোটবেলা থেকেই সাহসী একটি মেয়ে। যখন সে দশম শ্রেণীতে পড়ে তখন সে জানতে পারে তার জীবনের সময় প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। কিন্তু মেয়েটি হাল ছেড়ে দেয়নি। হাসিখুশি মেয়েটি সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। দেখতে দেখতে কেটে যায় প্রায় একটি বছর। সময়ের সাথে সাথে মরণব্যাধি ক্যান্সার তার পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। মেয়েটি প্রথমে বুঝতেই পারেনি সে মরন রোগে আক্রান্ত। হেসে খেলে কেটে যাচ্ছিল তার দিনগুলো।


সময়ের সাথে সাথে অসুস্থতা যেন তার ভেতরে আরো বেশি বাসা বাঁধে। দেখতে দেখতে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে গেল মেয়েটা। তার বড় ইচ্ছে ছিল আরো কিছুদিন বেঁচে থাকার। তাই নিজেকে দমিয়ে রাখেনি। পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। তাকে দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না সে ভেতরে ভেতরে বেঁচে থাকার লড়াই করছে। দেখে মনে হয় যেন সদাচঞ্চল আর হাসিখুশি একটি মেয়ে সবার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা যে তার থেকে একদমই আলাদা। ভিতরে ভিতরে অসুস্থতা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।


প্রীতিলতা কলেজে যেদিন প্রথম পা রাখে সেদিন তার ভেতরে অনেকটা অন্য রকমের অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। প্রীতিলতা যেন বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পেয়েছিল। প্রীতিলতার মিষ্টি কন্ঠের গান শুনে সবাই যেমন মুগ্ধ হতো তেমনি প্রীতিলতার লম্বা চুলের বেনুনি দেখে পাগল হতো হাজারো ছেলে। মেয়েটা যে বড্ড হাসি খুশি। প্রথম দেখাতেই প্রীতিলতাকে ভালো লেগেছিল অয়নের। অয়ন প্রীতিলতার এক ব্যাচ সিনিয়র ছিল। তাই সে প্রীতিলতার সম্পর্কে খুব একটা জানতো না। প্রীতিলতাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো। প্রীতিলতা কিশোরী বয়স থেকে কেবল একটু বাড়ন্ত বয়সে পা দিয়েছে। তার মনে যে ভালোলাগার সৃষ্টি হয়েছে। হয়তো বয়সের কারণে তার হৃদয় জুড়ে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে।


হঠাৎ যখন প্রীতিলতার মনে মৃত্যুর ভয় চলে আসে তখন আবারও সে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। নিজেকে আড়াল করে নেয়। অয়নের থেকে অনেকটা দূরে চলে যায়। কিন্তু কেন জানি বড্ড একা একা লাগছে প্রীতিলতার। অয়কে ছেড়ে দিন কাটছে না তার। প্রীতিলতা যে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই অয়নকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে। হয়তো ভালোবাসার অনুভূতিটাই এরকম। প্রিয় মানুষটির শূন্যতা হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। প্রিয় মানুষের শূন্যতা সত্যিই অনেক কষ্টদায়ক। প্রীতিলতা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিল না। আবারও দেখা করে অয়নের সাথে। কিন্তু কিছু বলে না। শুধু এক পলকে তাকিয়ে থাকে।


অয়ন নীরবতা ভেঙে প্রীতিলতার হাত দুটো ধরে বলে এভাবে হারিয়ে গিয়েছিলে কেন? আমি তোমাকে অনেক খুজেছি। তখন প্রীতিলতা বলে কোন একদিন চিরতরে হারিয়ে যাব আমি। আমার এই এক জনমে এই কয়টা দিন আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার এই এক জনমের ক্ষুদ্র জীবনে তোমাকে পেয়ে আমার জীবনটা পূর্ণতা পেয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমার জীবনে ভালোবাসার পূর্ণতা লিখে রাখেনি। তাইতো হঠাৎ করেই সবাইকে ছেড়ে পরপারে পারি জমাতে হবে। কথাগুলো বলছিল আর প্রীতিলতা একদম নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল। অয়েনের কোলে মাথা রেখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে প্রীতিলতা। শেষ হয়ে যায় তার এই এক জনমের ভালোবাসা।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
  ·  yesterday (edited)

IMG_20241223_133424.jpg
IMG_20241223_133336.jpg
IMG_20241223_133317.jpg

Screenshot_2024-12-22-20-18-36-85_23bb9e0ea952186c441897efdc323bdd.jpg

আপনার গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। সত্যি আপু আমরা পৃথিবীতে যতই বেঁচে থাকতে চায় না কেন মৃত্যু আমাদের খুঁজে নেবেই। আসলে আপু এটা শুধু গল্প নয় আমাদের জীবনে এমন অনেক ঘটে।বেশ ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

ঠিক বলেছেন আপু আমরা বেঁচে থাকতে চাইলেও মৃত্যু আমাদেরকে খুঁজে নেবে। আর তখন আমরা চাইলেও ফিরে আসতে পারবো না।

আপনি একদম বাস্তব মুখী গল্প শেয়ার করেছেন আপু। বর্তমান সময়ের এরকম প্রায় ঘটে কারণ এখন ক্যান্সারের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। পৃথিবীতে যে বেশি বাঁচতে চায় তার সময় ততই কম হয়। কি আর করার সৃষ্টিকর্তার উপর আমাদের ভরসা রাখতে হবে। গল্পটি একদম মন ছুয়ে গেছে আপু।

ঠিক বলেছেন আপু বর্তমানে ক্যান্সারের প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে। এরকম ঘটনা অনেক ঘটছে।মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

তাদের এই ভালোবাসা অমর। সত্যি এটি গল্প হলেও অনেক ঘটনার সাথেই মিলে যায়। আমরা ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে অনেক বছর বাঁচতে চাই। কিন্তু ওই যে প্রীতিলতা একটা কথা বলেছে তার ভালোবাসায় হয়তো পূর্ণতা লেখা নেই। ভালো থাকুক সকল ভালোবাসা।

ঠিক বলেছেন আপু ভালোবাসা অমর। মাঝে মাঝে ভালোবাসা গুলো অপূর্ণই থেকে যায়। তাদের ভালোবাসাতেও অপূর্ণতা লেখা ছিল আপু।

এই গল্পটা পড়ে আমার কাছে সত্যি অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। প্রীতিলতার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। এরকমভাবে এত অল্প বয়সে তার জীবনটা শেষ হয়ে গিয়েছে এটা ভাবতেই তো খারাপ লাগছে। তার ভালোবাসাকে সে পায়নি। ভালোবাসার মানুষটার কোলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। অনেক সুন্দর করে গল্পটা শেয়ার করেছেন।

এমন বিয়োগাত্মক গল্পগুলো পড়লে বেশ মন খারাপ হয়।তবুও এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলেই গল্পে উঠে আসে। বেশ সুন্দর লিখেছেন আপু। তাইতো মন ছুঁয়ে গেলো। ধন্যবাদ আপু পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।