আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা- ২২|আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি||

in hive-129948 •  2 years ago 

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। আমার বাংলা ব্লগ সব সময় ভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। তাই এবারের প্রতিযোগিতাটিও একেবারে ভিন্ন রকমের হয়েছে। জীবনে প্রথম কিছু পাওয়ার অনুভূতি সত্যি কাউকে বলে বোঝানো যায় না। বিশেষ করে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি সব সময় আমাদের জীবনের স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাই আজকে আমি আমার জীবনের প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি।


আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি:

mobile-g26b3b9f26_1920.jpg

Source


প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি হয়তো ভিন্ন ভিন্ন। তবে আমার অনুভূতি সবার চেয়ে একেবারে আলাদা। হয়তো শুধুমাত্র যাদের প্রাণ আছে তারাই আমাদের আপন হয় না আমাদের চারপাশে এমন কিছু জিনিস আছে যেগুলো আমাদের খুবই আপন হয়। তেমনি আমার হাতে পাওয়া প্রথম মোবাইল ফোনটি আমার এতটাই আপন হয়েছিল যেটা বলে বোঝাতে পারবো না। আমি আমার বাবা মায়ের প্রতিচ্ছবি সেখানে খুঁজে পেয়েছিলাম। আমি খুব ছোটবেলায় মোবাইল হাতে পেয়েছিলাম। যখন আমি স্কুলের গণ্ডি পেরোইনি তখন প্রথম মোবাইল হাতে পেয়েছিলাম। আমার বাবা যেহেতু চাকরির সূত্রে বাইরে থাকতেন তাই বাসায় মোবাইল কিনে দিয়েছিলেন। আমার যতদূর মনে পড়ছে ২০০৪ সালে আমি প্রথম মোবাইল ফোন হাতে পাই। তখন সবেমাত্র ক্লাস ফোরে পড়ি। মোবাইল ফোন এই জিনিসটি আগে খুব একটা দেখিনি। হয়তো সবার হাতে হাতে তখন মোবাইল ফোন ছিল না। যখন আমার বাসায় মোবাইল ফোন ছিল না তখন আমার বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটি ফোনের দোকানে গিয়ে বাবার সাথে কথা বলতাম। কবে তিনি ফোন করবেন এই খবরটি আগেই জানিয়ে দেওয়া হতো। বাবার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম। এরপর যখন কথা বলা শুরু করতাম কখন যে অনেকটা সময় কেটে যেত বুঝতেই পারতাম না। সেই সময় ফোনের কলরেট অনেক বেশি ছিল। তাই খুব একটা কথা বলা যেত না। তাই আমার বাবা ছুটিতে আসার সময় মোবাইল ফোন নিয়ে আসলেন। সেই মোবাইলটি ছিল নোকিয়া ১১০০ মডেল। ফোন হাতে পাওয়ার পর যেই অনুভূতি তৈরি হয়েছিল সত্যি কথা বলতে সেই অনুভূতি হয়তো কাউকে বলে বোঝানোর মত নয়। হয়তো ফোন সম্পর্কে তখন এত কিছু বুঝতাম না তবে রিংটোন বাজিয়ে বাজিয়ে শুনতাম। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল সাপ খেলা।


আমার বাবা যেহেতু দূরে চাকরি করতেন তাই বাবার সাথে কথা বলার জন্য সব সময় মন আনচান করত। কিন্তু সেই সময় নেটওয়ার্কের এতটাই সমস্যা ছিল যে টিভির এন্টিনিয়ার এর মত তার বাঁশের আগায় বেঁধে রাখতে হত। আগে যারা বিটিভি দেখেছেন তারা হয়তো এই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। বাবা যখন ফোন করতেন তখন দৌড়ে যেতাম ফোনের কাছে। মনে হতো যেন আমি তার সামনে বসে কথা বলছি। সত্যিই ফোনটাকে তখন খুবই আপন মনে হতো। মনে হতো যেন বাবার আদর, স্নেহ, ভালোবাসা সব কিছুই যেন মিশে আছে এই ফোনের মাঝে। আমার বাবা যেহেতু সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন তাই অনেকটা সময় ব্যস্ত থাকতেন। তবে আমি অপেক্ষায় থাকতাম কখন বাবা ফোন করবেন। স্কুল থেকে ফিরে এসে ফোনের পাশে বসে থাকতাম। বাবা ফোন করে যদি আমাকে না পান তাহলে হয়তো মন খারাপ করবেন তাই আমি ফোনের পাশে বসে থাকতাম। আমার এখনো মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। আমি খেলাধুলা একেবারে কমিয়ে দিয়েছিলাম। যাদের বাবা বাহিরে চাকরি করে শুধু তারাই বুঝতে পারে সেই কষ্টটা। বাবার থেকে দূরে থাকা সত্যি অনেক কঠিন ছিল। এরপর ধীরে ধীরে আমার পথ চলা আরো বেশি কঠিন হয়ে যায়। যখন আমার ছোট বোন এই পৃথিবীতে আসে তখন বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদের সবাইকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলে যাবেন। সেই অনুযায়ী আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে চলে গেলাম।


সেখানে যাওয়ার এক মাসের মধ্যেই বাবার বদলি হলো খাগড়াছড়িতে। সেই সময় খাগড়াছড়িতে যাতায়াত ব্যবস্থা এবং পড়াশোনার জন্য কোন ভালো স্কুল ছিলনা। তাইতো আমাকে আমার মেজো চাচার কাছে পাঠানো হলো। তখন আমার মেজো চাচা অন্য জায়গায় জব করতেন। তার শহরে ভালো স্কুল আছে এই ভেবে আমাকে সেখানে পাঠানো হলো। প্রথমে আমি খুব খুশিতে সেখানে গেলাম। কিন্তু এরপর কিছুদিন যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে। ফোনের পাশে সারাক্ষণ বসে থাকতাম কখন বাবা ফোন দিবে। তখন মায়ের কাছে ফোন ছিল না। বাবা যখন অফিস থেকে বাসায় আসতেন তখন মা আমার সাথে কথা বলতেন। তারাও অনেকটা বাধ্য হয়ে আমাকে দূরে রেখেছিলেন। কারণ পাহাড়ি অঞ্চলের সাথে আমি একেবারেই পরিচিত ছিলাম না। পাহাড়ের গা ঘেঁষে উপরে উঠা আমার জন্য অনেক কষ্টের ছিল। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার ছিল সেখানে শুধুমাত্র একটি স্কুল ছিল। যেটা পাহাড়ের উপরে উঠতে হয়। আর সেটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা।


হয়তো সবার প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি ভিন্ন রকমের। কিন্তু আমার অনুভূতি সবার থেকেই আলাদা। কারণ একটা সময় আমি আমার মোবাইল ফোনটিকে এতটাই আপন করে নিয়েছিলাম যে বলে বোঝাতে পারবো না। আমি সেই মোবাইল ফোনটির মাঝে আমার বাবা মাকে খুঁজে পেয়েছিলাম। সারাক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতাম কখন আমি তাদের সাথে কথা বলতে পারবো। হয়তো কিশোরী মনের অনেক আবেগ মিশেছিল সেই ফোনটির সাথে। হাসি, কান্না, আনন্দ, অভিমান সবকিছু মিশে ছিল সেই ফোনের মাঝে। যারা বাবা মার থেকে অনেকটা দূরে থাকে তারাই শুধু সেই কষ্ট বুঝতে পারে। যদিও আমার চাচা চাচী অর্থাৎ আমি যাদের কাছে ছিলাম তারা আমাকে অনেক ভালবাসতেন। কিন্তু তারপরেও মনের মাঝে অজানা শূন্যতা সব সময় থেকে যেত। কারণ সেই শূন্যতা পূরণ করতে শুধু বাবা মাকেই প্রয়োজন ছিল। তবে যখন আমি তাদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতাম তখন আমার অনেক ভালো লাগতো। মনে হতো এই মোবাইলটি আমার খুবই আপন। সেই মোবাইলটির জন্যই আমি কিছুটা সময়ের জন্য আমার বাবা মাকে পেয়েছিলাম।


সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে প্রথম হাতে পাওয়া মোবাইল ফোনের কথা আজও আমার মনে পড়ে। হয়তো সেই স্মৃতি আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না। কারণ সেই স্মৃতির মাঝে মিশে আছে আমার অনেক অভিমান ও অনেক অনুভূতি। কখনো বাবা মায়ের উপর অভিমান হতো কখনোবা নিজের উপর অভিমান হতো। আমি কেন আমার বাবা থেকে দূরে এই কথাটি ভেবে অভিমান করতাম। আবার মাঝে মাঝে ভাবতাম হয়তো পড়াশোনার জন্য দূরে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আমি আমার খেলার সাথী ও হাসি কান্নার সাথীকে পেয়েছিলাম। যেটা ছিল সেই মোবাইল ফোনটি। আসলে সেই অনুভূতি এখনকার সময়ের ছেলে মেয়েরা বুঝতে পারবে না। সেই অনুভূতি কাউকে বলে বোঝানোর মত নয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমি আমার মা বাবার অস্তিত্ব সেখানে অনুভব করতাম। সেই মোবাইল ফোনের সাথে আমার বাবা মায়ের অস্তিত্ব জড়িয়ে ছিল।


কিছু কিছু অনুভূতি আছে যেগুলো হয়তো বলে বোঝানো যায় না। তবে আমি চেষ্টা করেছি নিজের হাতে পাওয়া প্রথম মোবাইল ফোনের অনুভূতি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য। আশা করছি আমার লেখা কথাগুলো আপনাদের ভালো লাগবে।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

মা-বাবার থেকে দূরে থাকা আসলে খুবই কষ্টের ব্যাপার। সেটা যদি আবার অত ছোটবেলায় হয় তাহলে তো সেটা মানিয়ে নিতে আরো বেশি কষ্ট হয়। খুবই খারাপ লাগলো আপু আপনার ঘটনাটি পড়ে। তবে আপনি খুবই ছোটবেলায় ফোন হাতে পেয়েছেন এটা শুনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।

সত্যি ভাইয়া সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে খুবই খারাপ লাগে। যাই হোক সেই মোবাইল ফোনটি আমার সুখ দুঃখের সাথী ছিল। আজও মনে পড়ে সেই কথাগুলো। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

আমার কাছে তো নোকিয়া ১১০০ মডেল টা দারুন লাগতো। এতোটাই হার্ডি যে ঢিল দিয়ে আম পারা যাবে মনে হয় 😀। খুব সুন্দর করে সাজিয়ে লিখেছেন আপু।বেশ মজা পেলাম লেখাটা পড়ে। আসলে ঐ সময়কার মনের এই আবেগ গুলো সত্যিই হয়তো লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আর আমিও সাপ খেলা ভীষণ পছন্দ করতাম। কত যে মার খেয়েছি এর জন্য। মনে হলে এখনো হাসি পায় 😅

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া নোকিয়া ফোনটি সত্যি অনেক ভালো ছিল। সাপ খেলার কথা এখনো মনে পড়ে। এখনকার সময়ে হয়তো অনেক নতুন নতুন গেম এসেছে। কিন্তু সেই গেমটির মাঝে অন্যরকম ভালো লাগা ছিল।

আপনার বাবা চাকরির সুবাদে আপনাকে আপনার চাচার বাসায় রাখতে হয়েছিল ।আসলে মা-বাবা দূরে থাকলে তাদের অভাবটা অনুভব করা যায়। যে কারণে আপনি তাদের ফোনের অপেক্ষায় সব সময় থাকতেন। সব মিলিয়ে ফোন ব্যবহারের প্রথম ঘটনাটি বেশ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।