একটি ছোট্ট গ্রাম ছিল যেখানে মেঘলাভাসা নদীর কোল ঘেঁষে একদল গাছের ছায়ায় ছোট ছোট বাড়ি। গ্রামের নাম ছিল মেঘপুর। এই গ্রামে এক বালক বাস করত, তার নাম ছিল রুদ্র। রুদ্র ছিল খুবই চঞ্চল, উদ্যমী এবং তার দুঃখ ছিল খুবই কম। কিন্তু আজকে রুদ্রের মন ভালো ছিল না।
আজকের দিনটা বিশেষ ছিল, কারণ আজ তার প্রিয় বন্ধুর চলে যাওয়ার দিন। রুদ্রের বন্ধু রিয়া আর এই গ্রামে থাকবে না। রিয়ার বাবার চাকরি বদল হয়েছে এবং তারা অন্য শহরে চলে যাচ্ছে। রুদ্র আর রিয়া ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছে। তারা একসঙ্গে স্কুলে যেত, মাঠে খেলত, নদীতে সাঁতার কাটত। তাদের বন্ধুত্ব ছিল খুবই গভীর।
সকালের প্রথম আলো ফুটতেই রুদ্র আর রিয়া নদীর পাড়ে গিয়ে বসল। তারা বসে বসে সূর্যোদয় দেখল। রিয়া বলল, "রুদ্র, তুমি জানো আমি তোমাকে খুব মিস করব।" রুদ্র কিছু বলল না, শুধু নদীর পানির দিকে তাকিয়ে থাকল। রিয়া আরও বলল, "তুমি যদি কখনো এই নদীর পাড়ে আসো, আমাকে স্মরণ করো।"
রুদ্র মাথা নাড়ল এবং বলল, "আমি তোমাকে কখনো ভুলব না রিয়া। তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।"
সেই সময় গ্রামের বাকি ছেলেমেয়েরাও তাদের বিদায় জানাতে এলো। সবাই মিলে রিয়ার জন্য একটা ছোট্ট উপহার দিল। রিয়া কাঁদতে কাঁদতে সবার কাছ থেকে বিদায় নিল।
রিয়া চলে যাওয়ার পর রুদ্র আর নদীর পাড়ে গেল না। প্রতিদিন নদীর দিকে তাকিয়ে সে রিয়াকে স্মরণ করত। ধীরে ধীরে রুদ্র বুঝতে পারল যে রিয়ার স্মৃতি তাকে কষ্ট দিলেও সেই স্মৃতিগুলোই তাকে শক্তি দেয় সামনে এগিয়ে যেতে।
রুদ্র নিজেকে প্রতিজ্ঞা করল যে সে বড় হয়ে ভালো কিছু করবে, যাতে রিয়া তার উপর গর্বিত হতে পারে। সময়ের সাথে সাথে রুদ্র একজন সফল মানুষ হয়ে উঠল। সে যখনই তার জীবনে কঠিন সময়ে পড়ত, সে নদীর পাড়ে যেত এবং রিয়ার কথা মনে করে সাহস পেত।
এভাবেই রুদ্র শিখল যে বন্ধুত্ব কখনো ফুরিয়ে যায় না, শুধু সময় আর দূরত্বের সাথে সাথে তা আরও মজবুত হয়।