কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি কবিতাটি বাংলা ভাষা আন্দোলন নিয়ে লিখিত প্রথম কবিতা। এই জন্য কবিতাটিকে বাংলাদেশের একুশের প্রথম কবিতাও বলা হয়। অনবদ্য এ কবিতাটি কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রচনা করেন ।
কবিতাঃ কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি
রচয়িতাঃ মাহবুব-উল-আলম চৌধুররী
এখানে যারা প্রাণ দিয়েছে
রমনার উর্ধ্বমুখী কৃষ্ণচূড়ার তলায়
যেখানে আগুনের ফুলকির মতো
এখানে ওখানে জ্বলছে অসংখ্য রক্তের ছাপ
সেখানে আমি কাঁদতে আসিনি।
আজ আমি শোকে বিহ্বল নই
আজ আমি ক্রোধে উন্মত্ত নই
আজ আমি প্রতিজ্ঞায় অবিচল।
যে শিশু আর কোনোদিন তার
পিতার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ার
সুযোগ পাবে না
যে গৃহবধূ আর কোনোদিন তার
স্বামীর প্রতিক্ষায় আঁচলে প্রদীপ
ঢেকে দুয়ারে আর দাঁড়িয়ে থাকবে না
যে জননী খোকা এসেছে বলে
উদ্দাম আনন্দে সন্তানকে আর
বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবে না
যে তরুণ মাটির কোলে লুটিয়ে
পড়ার আগে বারবার একটি
প্রিয়তমার ছবি চোখে আনতে
চেষ্টা করেছিলো
সে অসংখ্য ভাইবোনদের নামে
আমার হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত
যে ভাষায় আমি মাকে সম্বোধনে অভ্যস্ত
সেই ভাষা ও স্বদেশের নামে
এখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে
আমি তাদের ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি
যারা আমার অসংখ্য ভাইবোনকে
নির্বিচারে হত্যা করেছে।
ওরা চল্লিশজন কিম্বা আরো বেশি
যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে রমনার রৌদ্রদগ্ধ
কৃষ্ণচূড়ার গাছের তলায়
ভাষার জন্য মাতৃভাষার জন্য বাংলার জন্য।
যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে
একটি দেশের মহান সংস্কৃতির মর্যাদার জন্য
আলাওলের ঐতিহ্য
রবীন্দ্রনাথ, কায়কোবাদ, নজরুলের
সাহিত্য ও কবিতার জন্য
(যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে
পলাশপুরের মকবুল আহমদের
পুঁথির জন্য
রমেশ শীলের গাথার জন্য,
জসীমউদ্দীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাটের’ জন্য।)
> যারা প্রাণ দিয়েছে
ভাটিয়ালি, বাউল, কীর্তন, গজল
নজরুলের “খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি
আমার দেশের মাটি।”
এ দুটি লাইনের জন্য
দেশের মাটির জন্য,
রমনার মাঠের সেই মাটিতে
কৃষ্ণচূড়ার অসংখ্য ঝরা পাপড়ির মতো
চল্লিশটি তাজা প্রাণ আর
অঙ্কুরিত বীজের খোসার মধ্যে
আমি দেখতে পাচ্ছি তাদের অসংখ্য বুকের রক্ত।
রামেশ্বর, আবদুস সালামের কচি বুকের রক্ত
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সেরা কোনো
ছেলের বুকের রক্ত।
আমি দেখতে পাচ্ছি তাদের প্রতিটি রক্তকণা
রমনার সবুজ ঘাসের উপর
আগুনের মতো জ্বলছে, জ্বলছে আর জ্বলছে
এক একটি হীরের টুকরোর মতো
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছেলে চল্লিশটি রতŒ
বেঁচে থাকলে যারা হতো
পাকিস্তানের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ
যাদের মধ্যে লিংকন, রঁল্যা,
আরাগঁ, আইনস্টাইন আশ্রয় পেয়েছিল
যাদের মধ্যে আশ্রয় পেয়েছিল
শতাব্দীর সভ্যতার
সবচেয়ে প্রগতিশীল কয়েকটি মতবাদ,
সেই চল্লিশটি রতŒ যেখানে প্রাণ দিয়েছে
আমরা সেখানে কাঁদতে আসিনি।
যারা গুলি ভরতি রাইফেল নিয়ে এসেছিল ওখানে
যারা এসেছিল নির্দয়ভাবে হত্যা করার আদেশ নিয়ে
আমরা তাদের কাছে
ভাষার জন্য আবেদন জানাতেও আসিনি আজ।
আমরা এসেছি খুনি জালিমের ফাঁসির দাবি নিয়ে।
আমরা জানি তাদের হত্যা করা হয়েছে
নির্দয়ভাবে ওদের গুলি করা হয়েছে
ওদের কারো নাম তোমারই মতো ‘ওসমান’
কারো বাবা তোমারই বাবার মতো
হয়তো কেরানি, কিংবা পূর্ব বাংলার
নিভৃত কোনো গাঁয়ে কারো বাবা
মাটির বুক থেকে সোনা ফলায়
হয়তো কারো বাবা কোনো
সরকারি চাকুরে।
তোমারই আমারই মতো,
যারা হয়তো আজকে বেঁচে থাকতে পারতো,
আমারই মতো তাদের কোনো একজনের
হয়তো বিয়ের দিনটি পর্যন্ত ধার্য হয়ে গিয়েছিল,
তোমারই মতো তাদের কোনো একজন হয়তো
মায়ের সদ্যপ্রাপ্ত চিঠিখানা এসে পড়বার আশায়
টেবিলে রেখে মিছিলে যোগ দিতে গিয়েছিল।
এমন এক একটি মূর্তিমান স্বপ্নকে বুকে চেপে
জালিমের গুলিতে যারা প্রাণ দিল
সেইসব মৃত্যুর নামে
আমি ফাঁসি দাবি করছি।
যারা আমার মাতৃভাষাকে নির্বাসন দিতে
চেয়েছে তাদের জন্যে
আমি ফাঁসির দাবি করছি।
যাদের আদেশে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের জন্য
ফাঁসি দাবি করছি
যারা এই মৃতদেহের উপর দিয়ে
ক্ষমতার আসনে আরোহণ করেছে
সেই বিশ্বাসঘাতকদের জন্য।
আমি ওদের বিচার দেখতে চাই
খোলা ময়দানে সেই নির্দিষ্ট জায়গাতে
শাস্তিপ্রাপ্তদের গুলিবিদ্ধ অবস্থায়
আমার দেশের মানুষ দেখতে চায়।
পাকিস্তানের প্রথম শহীদ
এই চল্লিশটি রতŒ,
দেশের চল্লিশ জন সেরা ছেলে
মা, বাবা, বৌ, আর ছেলে নিয়ে
এই পৃথিবীর কোলে এক একটি
সংসার গড়ে তোলা যাদের
স্বপ্ন ছিলো।
যাদের স্বপ্ন ছিল আইনস্টাইনের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে
আরো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার,
যাদের স্বপ্ন ছিল আণবিক শক্তিকে
কীভাবে মানুষের কাজে লাগানো যায়
শান্তির কাজে লাগানো যায়।
তার সাধনা করার।
যাদের স্বপ্ন ছিল-রবীন্দ্রনাথের
‘বাঁশিওয়ালার’ চেয়েও সুন্দর
একটি কবিতা রচনা করার,
সেই সব শহীদ ভাইয়েরা আমার
যেখানে তোমরা প্রাণ দিয়েছ
সেখানে হাজার বছর পরেও
সেই মাটি থেকে তোমাদের রক্তাক্ত চিহ্ন
মুছে দিতে পারবে না সভ্যতার কোনো পদক্ষেপ।
যদিও অসংখ্য মিছিল অস্পষ্ট নিস্তব্ধতাকে ভঙ্গ করবে একদিন
তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ঘণ্টা ধ্বনি
প্রতিদিন তোমাদের ঐতিহাসিক মৃত্যুক্ষণ ঘোষণা করবে।
যদিও আগামীতে কোন ঝড়-ঝঞ্ঝা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভিত্তি পর্যন্ত নাড়িয়ে দিতে পারে
তবুও তোমাদের শহীদ নামের ঔজ্জ্বল্য
কিছুতেই মুছে যাবে না।
খুনী জালিমের নিপীড়নকারী কঠিন হাত
কোনোদিনও চেপে দিতে পারবে না
তোমাদের সেই লক্ষদিনের আশাকে,
যেদিন আমরা লড়াই করে জিতে নেবো
ন্যায়-নীতির দিন
হে আমার মৃত ভায়েরা,
সেই দিন নিস্তব্ধতার মধ্য থেকে
তোমাদের কণ্ঠস্বর
স্বাধীনতার বলিষ্ঠ চিৎকারে
ভেসে আসবে
সেই দিন আমার দেশের জনতা
খুনি জালিমকে ফাঁসির কাষ্ঠে
ঝুলাবেই ঝুলাবে
তোমাদের আশা অগ্নিশিখার মতো জ্বলবে
প্রতিশোধ এবং বিজয়ের আনন্দে।
দারুন আবৃত্তি করেছেন, মাহবুব আলমের, কাঁদতে আসিনি। ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি। আপনার কবিতা আবৃত্তি উপভোগ করলাম খুবই ভালো লেগেছে। এবং সত্যিই অসাধারণ ছিল প্রশংসা না করে পারলাম না। আমাদেরকে এত সুন্দর একটি কবিতা উপহার দেওয়ার জন্য, আপনার প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি ধৈর্য ধরে কবিতা আবৃত্তি শুনেছেন তার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার কবিতা আবৃত্তি টি অনেক ভালো হয়েছে। কবিতাটি অনেক অর্থবহ কবিতাটি আমার অনেক ভালো লেগেছে। এত সুন্দর একটি কবিতা আমাদের সাথে আবৃত্তি করে শোনানোর জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কবিতাটি ভাষা আন্দোলনের উপর রচিত এর মধ্যে অনেক কষ্ট লুকায়িত আছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
খুবই চমৎকার আবৃত্তি করেছেন ভাই, তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এতবড় একটি কবিতা আপনি কত চমৎকার আবৃত্তি করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মাশাল্লাহ আপনার আবৃত্তির কন্ঠ অসাধারণ। এভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের মাঝে নতুন নতুন কবিতা আবৃত্তি করে শোনাবেন এই শুভকামনা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কবিতাটি অনেক বড় একথা সত্য তবে কবিতাটি আবৃত্তি করতে আমার অনেক ভালো লাগে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাই আপনার কবিতা আবৃত্তি শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কবিতা আবৃত্তির ওপর আপনার দক্ষতা বেশ প্রখর তা বুঝতে পারছি। কেননা এত বড় একটি কবিতা কত সাবলীল ভাষায় এবং অসাধারণ সুন্দর কন্ঠে আবৃত্তি করে শোনালেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। অসম্ভব সুন্দর একটি কবিতা আবৃত্তি করে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
চমৎকার প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ, আপনাদের অনুপ্রেরণা পেলে। ভালো লাগে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করেছেন আপনি ভাইয়া। এত বড় কবিতা ধৈর্য নিয়ে বলেছেন যা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। আর আপনার আবৃত্তির কন্ঠ অসাধারণ। এভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের মাঝে নতুন নতুন কবিতা আবৃত্তি করে শোনাবেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ আপু আমার জন্য দোয়া করবেন
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ওরে বাবা এত বড় কবিতা। এত বড় কবিতা এতক্ষণ ধৈর্য নিয়ে আবৃত্তি করা ও কিন্তু চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। যাইহোক অসাধারণ ছিল ভাই আবৃত্তি টা।তবে আপনি যদি একটু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এড করে নিতেন তাহলে আরো সুন্দর লাগতো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কবিতাটি আমার অসম্ভব ভালো লাগা একটি কবিতা , তাই আবৃতি করতে ভালই লাগে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কবিতার প্রতি আমার আলাদা একটা টান আছে । আপনার যে আবৃত্তি সুন্দর, তা সেই দিন হ্যাংআউটে আপনার আবৃত্তি শুনেই বুঝেছি । বাহ্ এবারের টাও ভালই বলেছেন। শুভেচ্ছা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই এত বড় কবিতাটি আপনি ধৈর্য ধরে শুনেছেন। আসলে হ্যাংআউটে আমি সবসময় কবিতা আবৃত্তি করতে চাই। আমি যেদিকে থাকি সেখানে মোবাইল ডাটা দিয়ে নেট চালাতে হয়, তাই মাঝে মাঝে কিছু কিছু শব্দ আসে। আমার জন্য দোয়া করবেন ভাই আমি ভালো একজন আবৃত্তি কারক হতে চাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit