আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২০ || আমার জীবনে প্রথম প্রেমের অনুভূতি।

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

couple-g6da131fa3_1280.jpg

লিংক

আসসালামু আলাইকুম/আদাব
আমার বাংলা ব্লগ স্টিম কমিউনিটির বন্ধুগন
আমি @mostafezur001 বাংলাদেশ থেকে
আজকে বৃহস্পতিবার , জুলাই ২১ /২০২২

আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন আমিও ভাল আছি। প্রথমে আমি @rme দাদাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এমন সুন্দর একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য।আমি কোনদিন ভাবতেও পারিনি আমার জীবনের প্রথম প্রেম অনুভূতিটি কারো সাথে শেয়ার করব। আসলে আমার প্রেম কাহিনী টি ছিল অনেকটাই সিনেমার মতো। যেখানে ভালো এবং খারাপ সময়ের দেখা পেয়েছি আমি।

আমার জীবনের প্রথম প্রেমের কাহিনীটি শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের যখন আমি দশম শ্রেণী ছাত্র। মেয়েটির নাম ছিল বন্যা সে তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়তো। শ্রেণীর মধ্যে পার্থক্য থাকার ফলেও আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল খুবই গভীর। আমরা দুজন দুজনকে খুবই ভালবাসতাম। প্রেম করার শাস্তি স্বরূপ আমাকে স্কুল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছিল। এভাবে বললে হয়তো বা আপনারা আমার গল্পটি পড়ে মজা পাবেন না তাই আমি প্রথম থেকে শুরু করছি।

ঘটনাটি শুরু হয় ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে তখন আমি সবেমাত্র দশম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছি এবং মেয়েটি অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। তখন আমি মেসে থাকতাম আমাদের স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক হাসান মামার সাথে। মামা সকালবেলায় প্রাইভেট পড়াতো। একদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে আমি যখন বাইরে আসলাম তখন একটি সুন্দরী মেয়ে দেখতে পেলাম। মেয়েটিকে দেখার পরে আমি চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। আমার মনের মধ্যে অন্য রকমের একটি আবেগ কাজ করছিল যা আমি আপনাদেরকে বলে বোঝাতে পারবো না। সেই দিনের পর থেকে প্রত্যেকদিন আমি সকালে ঘুম থেকে উঠতে শুরু করলাম মেয়েটিকে দেখার জন্য। এভাবেই অনেক দিন কেটে যেতে লাগলো আর মেয়েটির প্রতি আমার ভালবাসাও বৃদ্ধি পেতে লাগলো। আমার অবস্থা দেখে মেয়েটি অনেকটাই বুঝতে পেরে গিয়েছিল আমার মনের কথা কিন্তু আমি যে তাকে ভালোবাসি এই কথাটা কোনভাবেই প্রকাশ করার মতো সাহস আমি অর্জন করতে পারছিলাম না।

couple-g7f911ad02_1920.png

লিংক

হঠাৎ একদিন আমার সাথে একটি আজব ঘটনা ঘটে গেল। আমি যে মেয়েটিকে মনে মনে পছন্দ করতাম সেই মেয়েটি এবং তার সাথে একটি বান্ধবীকে নিয়ে আমার সামনে আসলো। আর বন্যা তখন আমাকে বলল আমার এই বান্ধবীটি আপনাকে ভালোবাসে। কথাটি শোনার পরে সত্যিই আমি অনেক কষ্ট পেয়ে গিয়েছিলাম কারণ আমি চাচ্ছিলাম কি আর পেলাম কি। তার মুখ থেকে এই কথাটি শোনার পরে আমি আর নীরব থাকতে পারলাম না, আমি তাকে বলেই ফেললাম আমি তো তোমার এই বান্ধবীকে ভালোবাসি না আমি তোমাকে ভালোবাসি। কথাটি শোনার পর মেয়েটির দৌড়ে চলে গেল। এর পরের দিন থেকে মেয়েটি যখনই প্রাইভেট পড়তে আসতো আমার দিকে তাকাতো না। তাকে দেখেই মনে হতো সে যেন আমার উপর প্রচুর পরিমাণে রেগে রয়েছে। এভাবে অনেকদিন কেটে গেল আমাদের মধ্যে আর কোন কথা হয় না। একদিন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি তার সাথে সকল বিষয় নিয়ে কথা বলব।

দেখতে দেখতে আরো বেশ কিছুদিন কেটে গেল। যতদিন যাচ্ছিল মেয়েটির প্রতি আমার আবেগের পরিমাণ ততটাই বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছিল। সময়টা তখন বর্ষাকাল বাইরে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছিল বন্যা একা ছাতা মাথায় দিয়ে প্রাইভেট শেষ করে বাড়িতে যাচ্ছিল। তাকে দেখেই আমি আমার মেসের গোলাপ ফুলের বাগান থেকে একটি গোলাপ ফুল তুলে নিয়ে দৌড়ে চলে গেলাম তার কাছে। আমার মনের মধ্যে তখন এতটাই আবেগ কাজ করছিল বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা সেটা আমার মাথায়ই ছিল না। বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে পড়লাম তার সামনে। গোলাপ ফুলটি হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে তাকে বললাম আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু সে কোন উত্তর দিল না। তখন আমি তাকে আমার মোবাইল নাম্বারটা দিয়ে বললাম তুমি পরে আমাকে উত্তরটা জানিয়ে দিও। বুদ্ধি করে মোবাইল নাম্বারটা আমি আগেই একটি পেজে লিখে নিয়ে গিয়েছিলাম।

মোবাইল নাম্বারট দেবার পর অনেকদিন কেটে যাচ্ছিল আমি অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম আর ভাবছিলাম কখন বন্যা আমাকে ফোন দিবে। একদিন দুদিন করে অনেকদিন কেটে গেল হঠাৎ এক বিকেলে আমার মোবাইলে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসলো। ফোনটা রিসিভ করার পরে বিপরীত পাশ থেকে হ্যালো বলার সাথে সাথেই আমি বুঝে গেলাম এটা বন্যা। আমার মনের মধ্যে এতটা খুশি লেগেছিল তখন যা আপনাদেরকে আমি সত্যি বোঝাতে পারবো না। তখন থেকেই শুরু হয়ে গেল আমাদের প্রেমের গল্প। যত দিন যাচ্ছিল আমাদের সম্পর্কের গভীরতা ততোই বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছিল। মেসে থাকার ফলে বাড়ি থেকে সব সময় খুব একটা বেশি টাকা দিত না শুধুমাত্র প্রয়োজনে টাকাটাই দিতো। কিন্তু আমার তো তার সাথে কথা বলতে হবে আমার কাছে টাকা নাই, তাই আমি এক ব্যাগ রক্ত বিক্রি করেছিলাম মোবাইলে টাকা লোড দেবার জন্য। তার সাথে কথা বলা থেকে আমার এক ব্যাগ রক্ত অনেক সামান্য বলে মনে হয়েছিল সেই সময়।

problem-g9afa98b64_1920.jpg

লিংক

আমরা দুজন যে স্কুলে পড়তাম সেখানে মোবাইল ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু আমি চুরি করে হলেও মোবাইল ব্যবহার করতাম। একদিন টিফিনের সময় বন্যা আমাকে বলল সে মোবাইলে গান শুনবে তার কথাটি শোনার সাথে সাথেই আমার পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে তার হাতে দিয়ে দিলাম। সে চলে গেল তাদের ক্লাস রুমে বান্ধবীদের সাথে গান শুনতে। আর এরই মধ্য দিয়েই শুরু হয়ে গেল আমাদের দুজনের জীবনের সব থেকে বড় একটি সমস্যা। মোবাইলে গান শোনার সময় আমাদের স্কুলের একজন শিক্ষক দেখে ফেলল এবং তাকে নিয়ে চলে গেল প্রধান শিক্ষকের কাছে। পরে শিক্ষকেরা জানতে পারল মোবাইলটি আমার। মোবাইল ব্যবহার করার অপরাধে আমাকে এবং আমার অভিভাবককে প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে নিয়ে গেলেন। সেখানে যাবার পরে আমি দেখতে পেলাম বন্যা এবং তার অভিভাবকও রয়েছে। সকল শিক্ষকের সামনে প্রধান শিক্ষক আমাকে প্রশ্ন করলেন এই মেয়েটির কাছে তুমি মোবাইল দিয়েছো মেয়েটি তোমার কে হয়? আমি একবিন্দু সংকোচবোধ না করেই বলে ফেললাম আমি মেয়েটিকে ভালোবাসি। কারণ তখন আমার মনের মধ্যে আবেগ ছাড়া কিছুই ছিল না,বাস্তবতা সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। আমার কথা শোনার পরে প্রত্যেকটি শিক্ষক আরো রেগে গেল।আমাকে অফিস রুম থেকে বের করে দিয়ে আমার এবং বন্যার অভিভাবকের সাথে কথা বলতে লাগলো। অবশেষে যখন আমার অভিভাবক বাইরে আসলো তখন আমি জানতে পারলাম আমাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিন্তু মেয়েটিকে স্কুলে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি শোনার পরে আমার বহিষ্কার হবার জন্য কষ্ট লাগছিল না কষ্ট লাগছিল বন্যার সাথে আর দেখা হবে না বলে । দুজনের অভিভাবক যখন আমাদেরকে টানতে টানতে স্কুল থেকে বের করে নিয়ে আসছিল তখন আমরা দুজনের দিকে বারবার তাকাচ্ছিলাম আর কান্না করছিলাম।

এই ঘটনার পরে আমার বাবা আমাকে মেস থেকে বাড়িতে নিয়ে চলে আসলো। আমার কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়া হলো বন্ধ হয়ে গেল বন্যার সাথে সকল যোগাযোগ। যত বেশি দিন যাচ্ছিল মেয়েটির প্রতি আমার ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছিল কোনোভাবেই আমি তাকে ভুলতে পারছিলাম না। দীর্ঘ তিন মাস সকল প্রকার যোগাযোগ করতে পারিনি আমি মেয়েটির সাথে। তিন মাস পরে আমি যখন চুরি করে @tuhin002 ভাইয়ের মোবাইল থেকে মেয়েটিকে ফোন দিলাম হ্যালো বলার সাথে সাথেই সে কেঁদে ফেলল, একই সাথে আমিও কেঁদে ফেললাম। পরিস্থিতি আমাদের দুজনকে যতই দূরে করে দিয়েছিল না কেন আমাদের ভালোবাসা এক বিন্দুও কমে যায় নি। আমরা দুজন দুজনকে যতটা না ভালবাসতাম সমস্যাটার পরে আমাদের ভালোবাসার পরিমাণটা আরো বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে লাগলো আর শুরু হয়ে গেল আমার এসএসসি পরীক্ষা। তখন আমাদের মধ্যে কথাবার্তা আবার আগের মতই চলতে শুরু করে দিয়েছিল।

couple-g902eac786_1920.jpg

লিংক

কিছুদিন পরে শেষ হয়ে গেল আমার এসএসসি পরীক্ষা। আমরা দুজনে মধুর সময় অতিবাহিত করছিলাম কিন্তু কোন এক কারণে আমাদের দুজনের অভিমানের সৃষ্টি হয়ে গেল। আর অভিমানের সাথে সাথে ভাইয়ের মোবাইলটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আমার জীবনে সমস্যা গুলো যেন আবার একসাথে আসতে শুরু করে দিল।প্রায় এক মাসের বেশি সময় তার সাথে আমার আর কোন যোগাযোগ হয়েছিল না। একদিন আমি উপজেলা শহরে গিয়েছিলাম সেখানে দেখতে পেলাম মেয়েটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। দূর থেকে আমি তাকে দেখেই ছুটে চলে গেলাম তার কাছে। সে আমাকে বলল এই এক মাসে আমার সাথে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু মোবাইল বন্ধ পেয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে সে আমাকে বলল সাত দিন আগে তার বাবা-মা তাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। কথাটি শোনার সাথে সাথে কষ্টের সাগরে ভেসে গেল আমার জীবন। মনে হচ্ছিল যেন আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে মাথা ঘুরতে শুরু করে দিল। অবশেষে যখন আমার জ্ঞান ফিরলো তখন আমি নিজেকে সরকারি হসপিটালে দেখতে পেলাম।

কথায় আছে প্রথম প্রেম নাকি ভুলতে পারা যায় না। আজ শুধু বন্যা আমার স্মৃতি। কিন্তু যখন আমার মনে পড়ে তার স্মৃতিগুলো তখন আমার সারা শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে। আমার মনে পড়ে যায় তখনকার দিনের আমার ভালবাসার প্রতিটি মুহূর্তের স্পর্শের কথা। আমি যেন সেই অতীতের মধুর সময়ে আবারো হারিয়ে যায়।যার জন্য জীবনের সবথেকে খারাপ সময় গুলো পার করেছিলাম অবশেষে তাকেই হারিয়ে ফেললাম। আসলে কিছু ভালোবাসার সম্পর্ক অপূর্ণই থেকে যায়।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ছোট ভাই তোমার প্রেম সম্পর্কে খুব বেশি আমার জানা ছিল না। পোস্ট পড়ে সব বিস্তারিত জানতে পারলাম। তোমার প্রেম ময় দিন গুলো ছিল সত্যি অছাম।তবে বড় ভাই হয়ে ছোট ভাই কে প্রেম করার জন্য মোবাইল ফোন দিয়েছি, এই কথা লোকে শুনলে মানুষে কি বলবে।হাহাহা

আরে বাহ! বেশ দারুন কথা তো 🤔 জেনে গেলাম।

ছোট ভাইকে বড় ভাই সাহায্য করবে নাতো কে করবে

যেই ভালোবাসায় জীবন বাঁচে, সেই ভালোবাসা পেতে চায় প্রেমিকার কাছে। তবে সেই ভালোবাসা কোন কাজে আসতে চায় না। ভাগ্য ভালো এই কনটেস্ট এর আয়োজন দাদা করেছিল। কতজনের গোপন কাহিনী মনের অগোচরে ছিল, যা খুব সহজেই জানতে পারা গেল।

কথাটা আপনি একদম ঠিক বলেছেন এর মাধ্যমে আমরা অনেকেই অনেকের গোপন কথা জেনে গেলাম

কিছু কিছু সম্পর্ক এই রকমই হয় ভাইয়া যার জন্য সবথেকে খারাপ সময় পাড় করলেন তাকেই জীবন থেকে হারিয়ে ফেললেন।তবে আমার কাছে মনে হয় আপনার সাথে তার ফোনে যোগাযোগ থাকলে এই বিয়ে হতো না।যাই হক হয়তো আপনার কপালে নাই। সত্যি ভাইয়া প্রথম প্রেমের অনুভূতি গুলো ভোলা যায় না। রক্ত বিক্রি করে ফোনের টাকা যোগাড় করতেন শুনে খারাপই লাগলো।শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

আসলে আপু যেটা ভাগ্যে ছিল সেটাই হয়েছে