মহিষাসুর মর্দিনী , সাল ২০০৮

in hive-129948 •  3 years ago  (edited)

বাঙালি সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে দুর্গা পূজা র পাঁচটি দিনের জন্য। তারা সকল দুঃখ কে সরিয়ে রেখে হাসি আর আনন্দে মেতে ওঠে দুর্গা মায়ের আগমনে । দুর্গা পূজোর পাঁচ দিন বাঙালি মেতে ওঠে নানা রকম উৎসব উদ্দীপনায়। সকাল থেকে শুরু হয় মায়ের পুজো তারপর প্রসাদ বিতরণ , আবার সন্ধ্যা থেকে চলে নানা রকম অনুষ্ঠান। নাচ, গান ,কবিতা আবৃত্তি, অভিনয় ,নাটক ,কৌতুক সহ পুজোর বিভিন্ন রকম বাদ্যযন্ত্র বাজানোর প্রতিযোগিতা, উল্লুধনী প্রতিযোগিতা ,প্রদীপ প্রজ্জ্বলন , মায়ের আরতি প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
এসব অনুষ্ঠান এর মাধ্যমে ছোট বড় সবাই মেতে থাকে উৎসবের আমেজ। কখনো কখনো আবার আয়োজন করা হয় নাট্যানুষ্ঠানের সে সব নাট্যানুষ্ঠান গুলো আমাদের পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ও হয়ে থাকে আবার ধর্মীয় বিভিন্ন দেব দেবীর উপাখ্যান নিয়েও করা হয়ে থাকে।
আমরা সে বার ভাবলাম মা দুর্গার মহত্বের কাহিনী নিয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ করবো । যেখানে অভিনয় করবে আমাদের পাড়ার ছোট বড় ছেলে মেয়েরা।
কিন্তু যে কোনো কাজে তো বাধা বিপত্তি থাকবে ই । পুজো কমিটির সদস্যরা তো কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না প্রথমে তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভাবছিলেন এত সব ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেমেয়ে আবার সব আনাড়ি কিকরে এরা এত বড় একটা নাটক মঞ্চস্থ করবে ? এরা কি পারবে? না কি সব গুলিয়ে ফেলবে?
যা হোক সে পর্যন্ত তারা রাজি হলেন আর আমাদের পারমিশন দিলেন নাটকটি করার। পারমিশন পাওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে গেল প্রিপারেশন । কাকে কোন চরিত্রে নেওয়া যায় ,পোশাক কোথা থেকে আনা হবে, গয়না গাটি কোথা থেকে মেনেজ হবে, ইত্যাদি বিভিন্ন রকম ঝামেলা এসে উদয় হলো।
যা হোক কাস্টিং এর ব্যাপার টা শেষ হলো তারপর শুরু হলো প্র্যাকটিস , টানা এক মাস ধরে চললো প্র্যাকটিস। প্র্যাকটিস করতে করতে মোটামুটি অভিনয় টা সবার আয়ত্তে এসে গেল ।
এভাবে প্র্যাকটিস করতে করতে পুজো এসে গেল আমরা জোর কদমে এগিয়ে চলেছি মহিষাসুর মর্দিনী উপস্থাপনের জন্য। আমাদের জন্য সময় পুজো কমিটির সদস্যরা সময় দিলেন নবমীর দিন রাতে । আমরা সেটাই মেনে নিলাম। সবাই মিলে এগিয়ে চললাম যে মহিষাসুর মর্দিনী আমাদের মঞ্চস্ত করতেই হবে।
সবাই যে যার পাঠ সুন্দর করে আত্মস্থ করলাম ,যার যে টুকু দায়িত্ব সবাই সুন্দর করে পালন করে আমাদের নাটকটি উপস্থাপনের চেষ্টা করলাম। প্রথমে যারা ভুরু কুচকিয়েছিল তারাই চমকে গেল আমাদের মতো ছোট দেরএত ভালো উপস্থাপন দেখে।
টানা এক ঘন্টা ধরে চললো মহিষাসুর মর্দিনী । পুরো মা দুর্গার সৃষ্টি থেকে শুরু করে দেবতাদের স্বর্গচুত হওয়া, দেবতাদের মা দুর্গার শরণাপন্ন হওয়া, দেবতাদের মা দুর্গা কে নিজেদের অস্ত্র সমর্পণ এবং সব শেষে মহিষাসুর এর সাথে দেবী দুর্গার যুদ্ধ । যে যুদ্ধে মা দুর্গা মহিষাসুর কে বধ করে দেবতা দের আবার রক্ষা করেন ।
এবং সব শেষে ভগবান রামচন্দ্র যখন রাবনের সাথে যুদ্ধে পেরে উঠছিলেন না তখন দেবী দুর্গার অকাল বোধন করেছিলেন সেটিও আমরা দেখানো র চেষ্টা করেছিলাম।
যা হোক শেষ মেষ মহিষাসুর মর্দিনী সব ধরণের দর্শকের কাছে খুব ভালো লেগেছিল। এটাই আসলে আমাদের বড় প্রাপ্তি ছিল যেটা এখনো আমরা ভুলতে পারি নি । এখনো মনে হয় সেই দিন গুলো র কথা । আসলে সে ই সব দিন গুলো ভোলার নয়। তখন কিছু ছবি আমি তুলে রেখেছিলাম স্মৃতি হিসেবে সে গুলোই এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

FB_IMG_1639735460527.jpg
প্রথম ছবিতে মহিষাসুর মর্দিনীর পুরো টিম কে দেখা যাচ্ছে। এখানে মা দুর্গা মহিষাসুর এর সাথে যুদ্ধে র পর নিজের ছেলে মেয়ে সহ যে মূর্তি কে আমরা পুজো সেটি দৃশ্যমান।

FB_IMG_1639735464412.jpg

দ্বিতীয় ছবিটি মা দুর্গার চরিত্রে যে অভিনয় করেছিল সেই মেয়েটি।

FB_IMG_1639735467422.jpg

এটি মা কালির ছবি। মা কালি তো মা দুর্গার ই আর একটি রূপ আমরা সেটি এখানে দেখানোর চেষ্টা করেছি। আর এই চরিত্রে অভিনয় করেছে যে তার নাম শিল্পী।

FB_IMG_1639735470337.jpg

মহিষাসুর কাত্তায়নি মুনির আশ্রমে গিয়ে দেবতাদের নিকট নিবেদিত অর্ঘ ভক্ষণ করেছিল যে নারীর বেশে। সে ই নারী র চরিত্রে অভিনয় ও করেছে শিল্পী।

FB_IMG_1639735473011.jpg

এখানে রামচন্দ্রকে দেখা যাচ্ছে।সব শেষে রামচন্দ্রের অকাল বোধন দিয়ে আমাদের মহিষাসুর মর্দিনীর সমাপ্ত হয়।

আশাকরি আমার মহিষাসুর মর্দিনী মঞ্চস্থ করার কাহিনী টি আপনাদের সবার ভালো লাগবে ।

ছবি: মহিষাসুর মর্দিনী
স্থান:খুলনা, বাংলাদেশ
সময়: আর্শিন মাস, ২০০৮ সাল

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অসাধারণ সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন আপু। পোস্টটি পড়ে আমার অনেক অনেক ভালো লেগেছে। এধরনের সুন্দর পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।