অরণ্যের ছোট্ট জীবনটি ছিল আটপৌরে, তবে মনটা ছিল বিশাল। মফস্বলের এই ছেলেটি সারাজীবন শহর সম্পর্কে কেবল গল্প শুনেছে, সিনেমায় দেখেছে, কিন্তু কখনো পা রাখেনি। বাবা-মা কৃষক, এবং অরণ্যের স্বপ্নগুলো তাদের সামর্থ্যের বাইরে। তবু সে মনের মধ্যে একদিন বড় শহরে যাওয়ার স্বপ্ন বুনেছিল।
একদিন কলেজে অরণ্যের প্রফেসর বললেন, “ঢাকায় একটা প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সেরা গল্প লেখককে পুরস্কার দেওয়া হবে। কেউ অংশ নিতে চাও?”
অরণ্য হাত তুলল। সাহিত্যের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল গভীর। এই প্রতিযোগিতাটি তার জীবনের প্রথম সুযোগ হতে পারে। প্রফেসর তাকে ঢাকায় যাওয়ার অনুমতি দিলেন। বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে জানালে তারা প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত হন, কিন্তু অরণ্যের চোখের তারায় তারা কিছু এক অদ্ভুত জেদ দেখতে পেলেন।
“যাও, তবে সাবধানে থেকো,” মা বললেন।
প্রথমবার ঢাকায়
ঢাকায় পৌঁছে অরণ্য যেন আরেক দুনিয়ায় পা রাখল। এত আলো, এত মানুষ, এত গাড়ি—সবকিছু তার মফস্বলের জীবনের চেয়ে আলাদা। পকেটে টাকা বেশি ছিল না। প্রফেসরের এক পরিচিতের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল।
গল্প লেখার প্রতিযোগিতার দিন ঘনিয়ে এল। অরণ্য নির্ঘুম রাত কাটাল নিজের গল্পের শেষটা ঠিক করার জন্য। গল্পের নাম ছিল “স্বপ্নের ফড়িং”।
প্রতিযোগিতার হলে অরণ্যের গল্প পড়ার সময় সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছিল। গল্পটা এক তরুণের জীবন সংগ্রাম নিয়ে, যে তার নিজের জীবন আর স্বপ্নের মধ্যে সেতুবন্ধন খুঁজে বেড়ায়। গল্প শেষে হলভর্তি করতালিতে মুখর হয়ে উঠল।
অরণ্য দ্বিতীয় স্থান অধিকার করল। তবে তার কাছে এটি বড় জয়ের মতো মনে হয়েছিল। পুরস্কার হিসেবে সে নগদ পাঁচ হাজার টাকা আর একটি বইয়ের দোকানে কাজের সুযোগ পেল।
নতুন শুরু
ঢাকায় থেকে যাওয়া অরণ্যের জন্য ছিল একটি বড় সিদ্ধান্ত। সে বুঝতে পারল, এই শহরটি যতটা ভয়ঙ্কর মনে হয়েছিল, ঠিক ততটাই সুযোগে ভরা। দোকানে কাজ করার পাশাপাশি সে নিয়মিত লেখালেখি চালিয়ে যেতে লাগল।
এদিকে দোকানে আসা এক তরুণী, রুদ্রা, প্রায়ই অরণ্যের সঙ্গে কথা বলত। রুদ্রা নিজেও লেখালেখি করত। দুজনের বন্ধুত্ব বাড়তে লাগল। রুদ্রা ছিল খুবই প্রাণবন্ত।
“তোমার লেখায় জীবন আছে,” একদিন রুদ্রা বলল। “তুমি চাইলেই বড় হতে পারবে।”
অরণ্যের মনোবল বাড়ল। রুদ্রা তাকে শহরের নানা জায়গায় নিয়ে গেল, সাহিত্য আসরে পরিচয় করিয়ে দিল।
বড় সুযোগ
একদিন অরণ্যের গল্প একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হলো। এটি তার প্রথম প্রকাশনা ছিল। গল্পটি এতটাই প্রশংসা পেল যে একটি বড় প্রকাশনী তার সঙ্গে একটি বই লেখার চুক্তি করল।
অরণ্য যখন নিজের প্রথম বইটি হাতে পেল, তার চোখ ভিজে গেল। সে বুঝতে পারল, তার স্বপ্নগুলো সত্যি হতে শুরু করেছে। বইটি রুদ্রাকে উপহার দিল।
“তোমার জন্যই এই পথটা খুঁজে পেয়েছি,” অরণ্য বলল।
রুদ্রা মৃদু হাসল, “তুমি নিজেই নিজের পথ তৈরি করেছ, আমি শুধু একটু সাহস দিয়েছি।”
ফেরার গল্প
অরণ্য মফস্বলে ফিরে গেল কিছুদিনের জন্য। মা-বাবার চোখে গর্ব ছিল। গ্রামে সবাই তাকে অভিনন্দন জানাল।
“তুই তো আমাদের গর্ব,” বাবা বললেন।
অরণ্য বুঝতে পারল, সে একা কিছুই করেনি। তার গ্রামের মাটি, মা-বাবার স্নেহ, রুদ্রার অনুপ্রেরণা—সব মিলে তাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।
শেষ পরিণতি
অরণ্যের গল্পগুলো একে একে জনপ্রিয় হতে লাগল। ধীরে ধীরে সে একজন বিখ্যাত লেখক হয়ে উঠল। তবে সে কখনো তার শিকড় ভুলে গেল না।
ঢাকার আলো তার জীবনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল। কিন্তু সেই আলোর পেছনে তার মফস্বলের অন্ধকার রয়ে গিয়েছিল, যা তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে নিয়ে যেত আরও নতুন গল্পের সন্ধানে।
গল্পটি কেমন লাগল জানাবেন!
বাহ। আপনি চমৎকার গল্প লিখেছেন৷ কবি সাহিত্যিকরা যদি সত্যিই এরম জনপ্রিয় হিয়ে যেতে পারতেন তবে আখেরে ভালোই হত।
তবে লেখিকা হিসেবে একটা কথা বলতে পারি লেখার জন্য অনুপ্রেরণা চাই৷ অনুপ্রেরণা ছাড়া লেখা হয় না৷ আপনার গল্পটি বেশ উপভোগ করলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit