আসসালামু-আলাইকুম,
হ্যালো স্টিমিটবাসী, কেমন আছেন আপনারা? আমি আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। আমি গল্প বলতে অনেক পছন্দ করি। আজ একটু লেখার চেষ্টা করলাম। জানিনা কেমন লাগবে আপনাদের। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
নীলা ছাদের রেলিংয়ে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশের বুকে ঢলে পড়েছে। লাল রঙের আভায় আকাশটা অন্য এক রূপ ধারণ করেছে। পাঁচতলা ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে নীলা রিক্সার ঘণ্টার শব্দ, মোটর বাইকের হর্ন, লোকজনের চেঁচামেচি সব ষ্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। যত বেশী শব্দ ওর কানে যাচ্ছে তত যেন তার নিজের উপর ঘৃনা, তিক্ততা, বিরক্তি, রাগ বেড়েই চলেছে। এমনটা নয় যে এই শব্দগুলো নীলার কখনই ভালো লাগেনি। ছোটবেলা থেকেই পুরান ঢাকার বেগম বাজারের এই কোলাহলের সাথে পরিচিত সে, ভালোও লাগে। মাঝেমধ্যে বিকালে বা সন্ধায় একা ছাদে এসে বসে থাকত, কোলাহল উপভোগ করতো। পাশে বেঞ্চের উপরে মুঠোফোনটি থেকে শব্দ ভেসে আসলো। হয়তো কোনো মেসেজ এসেছে। সারাদিন মোবাইল মাঝে ডুবে থাকা নীলার আজ মেসেজ দেখার প্রতি কোনো আগ্রহই খুঁজে পাচ্ছে না। আবারো একই শব্দ মোবাইল থেকে। এবার অনিচ্ছাসত্ত্বেও মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো আবিরের মেসেজ। মেসেজ দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তার। ফোনটা রাখতে যাবে এমন সময় আবার মেসেজ। এবার বিরক্তিভরা মুখ নিয়ে বেঞ্চে বসে মেসেজগুলো দেখলো। "কি করছিস?", "বাসার কি অবস্থা?", আর সব শেষে "তুই খেয়েছিস?" উত্তরে নীলা বলল, "তোর এতকিছু না জানলেও চলবো। আমার সাথে আর যোগাযোগ করার চেষ্টাও করবি না।" মেসেজটা সেন্ড হতেই মোবাইল বন্ধ করে দিল। নীলা ভাবছে আমি তো ছাদে এসেছিলাম আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্যে। তবে আমি এখনও কেন...... তবে কি আমার সাহস নেই, নাকি আমার মন বেচে থাকার চেষ্টা করছে। এসব ভাবতে ভাবতে নীলার পায়েল এর দিকে চোখ যেতেই চোখ দুটি ভিজে উঠল। পায়েল জোড়া আবির পরিয়ে দিয়েছিল অনার্স প্রথম বর্ষে। ৪র্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি আজ সতেরো দিন। পায়েল জোড়া একবারের জন্যও খোলেনি নীলা।
এখনও মনে আছে নীলার কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চে ওঠার আগে আবির যেভাবে ধুতি ঠিক করছিল সেটা দেখে হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা নীলা আর ওর বান্ধবী শর্মিলার। আবিরের সেটা দেখে বিরক্ত অনুভব হলেও কিছু না বলে মঞ্চে চলে গেল। সেদিন অনুষ্ঠানে আবিরের দল প্রথম হয়েছিল। পরদিন ক্লাসে যাওয়ার সময় দর্শনবিদ্যা বিভাগ লেখাটি চোখে পড়ল নীলার। লেখারটির রং কিছুটা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। কিছুটা সামনে এগোতেই আবিরের সাথে দেখা। নীলাকে দেখে গতকালের কথা মনে পড়ে গেল। কিছুটা বিরক্ত নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। নীলা ভাবল হয়তোবা গতকালের জন্য খুব কষ্ট পেয়েছে। পেছন থেকে আবিরকে ডাক দিইয় বললো, "কোথায় যাচ্ছো ক্লাসে যাবানা?" আবির বলল, "তুমি যাও আমার কাজ আছে।" নীলা আর কিছু না বলে ক্লাসে চলে গেল। ক্লাস শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আবির ক্লাসে ঢুকলো। নীলা আবিরকে দেখল কিন্তু কিছু বললো না। আজ রফিক স্যারের ক্লাস। স্যারের বোঝানোর ক্ষমতা অসাধারণ কিন্তু মাঝেমধ্যে সে মূল বিষয় ছেড়ে অনেক দূরে চলে যায়। বেশিরভাগ সময় নিজের জীবনের গল্প শুরু করে, তখন ক্লাসটা কিছুটা বিরক্তিকর হয়ে উঠলেও কিছু করার থাকেনা। ক্লাস শেষে নীলা ক্যান্টিনে গিয়ে বসল। আবীর ক্যান্টিনে ঢুকে সিঙ্গারা নিয়ে টেবিলে বসে খেতে শুরু করলো। নীলা উঠে এসে বললো গতকালের জন্য আমি দুঃখিত আমার এমনটা করা উচিত হয়নি। আবির ঠিক আছে বলে আবার খাওয়ায় মন দিল। আবির নীলাকে উপেক্ষা করতে চাইছে বুঝতে পেরে নীলা চলে গেল। কলেজ থেকে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। আবির ভিজতে ভিজতে বাস স্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনিতে এসে দাঁড়ালো। বৃষ্টিতে ভিজে সাদা শার্টটা শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে। নীল আবার এগিয়ে গিয়ে বললো তুমি তো দেখে ভিজে গেছ। আবির শুধু ছোট্ট করে হুম বলে আবার চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। বাস আসলো, বাসে উঠল দুজনেই, যে যার গন্তব্যে নেমে গেল। রাতের বেলা আবির ভাবছে নীলার সাথে এমন ব্যবহার করা উচিত হয়নি কালকে আমি ওর সাথে কথা বলব। পরদিন আবির একটু আগেই কলেজে চলে গেল। নীলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু কীভাবে কথা শুরু করবে খুঁজে পাচ্ছে না। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে নীলা ক্লাসে এসে বসেছে আবির সেটা খেয়ালই করেনি। ক্লাস শেষে নীলা আবির কে বলল তোমার রাগ কি কমেছে? আমি কি এতই বড় অন্যায় করে ফেলেছি? রাগ কমলে চলো লাইব্রেরীতে গিয়ে বসি। আজকের ক্লাসটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারিনি তুমি যদি আমাকে একটু বুঝিয়ে দাও। আবির কিছুটা লজ্জিত কন্ঠে বলল ঠিক আছে চলো। এভাবেই ওদের বন্ধুত্বের শুরু। পড়াশোনা নিয়েই ওদের বেশিরভাগ আলোচনা হতো।
এছাড়া দুজনেরই সাংস্কৃতিক অঙ্গন খুবই পছন্দের। আবিরের অভিনয় অসাধারণ, নীলা খুব সুন্দর গান করে। এভাবেই ওদের বন্ধুত্ব থেকে আস্তে আস্তে প্রেম। তবে প্রেমটা ওরা বুঝতে পারেনি। প্রেমটা প্রথম বুঝতে পেরেছিল শর্মিলা। স্কুল জীবন থেকে ওদের বন্ধুত্ব। নীল এখন আর শর্মিলাকে আগের মত সময় দেয় না। শর্মিলার খুব রাগ হতো। শর্মিলা বুঝতে পারে যে ওদের ভেতর প্রেমের সম্পর্ক দিন দিন গভীর হচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে ওরা কখনোই কারো সামনে কিছু বলেনি বা নিজেরাও কখনো প্রকাশ করেনি। দিনের পর দিন আবিরের প্রতি ঘৃণা বাড়তে লাগল শর্মিলার। শর্মিলা অনেক চেষ্টা করেছে ওদের দুজনকে আলাদা করার। কিন্তু একটু বোকা ধরনের মেয়ে হওয়ার জন্য প্রতিবারই নীলার কাছে ধরা খেয়ে গেছে। একবার তো সবকিছুর মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। আবির একদিন একটা প্রয়োজনে শর্মিলার মোবাইলে ফেসবুক আইডি লগইন করেছিল। কিন্তু লগআউট করতে ভুলে গিয়েছিল। শর্মিলা এই সুযোগে ওদের ক্লাসেরই কয়েকজন মেয়ের সাথে আবিরের আইডি দিয়ে কথা বলেছিল। যে কথাগুলো মাত্রাতিরিক্ত অশ্লীল ছিল। এমনকি দু একজনের কাছে অশ্লীল ভিডিও পাঠিয়েছিল। এই বিষয়টা নীলা জানার পরে নীলা আর আবিরের মধ্যে অনেকটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেল। প্রায় তিন মাসের মত ওদের কথা হয়নি। এভাবেই দিন যেতে লাগলো। আবির নীলাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো আমি এসব কোন কিছুই করিনি, আমি এগুলো কিছুই জানিনা। কিন্তু একথা আদৌ কি এটা বিশ্বাস করার মত। একদিন হঠাৎ নীলার মোবাইল নষ্ট হয়ে যায়। তখন শর্মিলা মোবাইলে ফেসবুক আইডি লগইন করতে গিয়ে দেখে ওখানে আবিরের আইডি লগইন করা। শর্মিলাকে সব কিছু জিজ্ঞেস করতেই শর্মিলা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। শর্মিলার মুখ দেখেই বুঝতে পারে এগুলো ওরই কাজ। আবির নির্দোষ। এরপর থেকে আর শর্মিলার সাথে কথা হয়নি। এ ঘটনার পরে আবির নীলার সম্পর্ক আরও গভীর হল। আবির প্রায়ই নীলার বাসায় যেত। নীলার বাবা-মাও আবিরকে পছন্দ করত। ওনারা দুজনেই চাকরি করেন। বাসায় দিনের বেলা কেউ থাকে না। ওরা দুজনে একান্ত সময় উপভোগ করত। যদিও এই বিষয়ে নীলাই আবিরকে জোর করেছিল।
আজ থেকে ২০ দিন আগে নীলার চাচা নীলার বাবাকে বলেছিল দিনের বেলাতে আবিরের বাসায় যাওয়া আসার কথা। নীলাকে বরণ করেছিল ওর বাবা। এবিষয়ে আবির কিছুই জানে না। কারণ নীলা জানে আবিরকে বললে আবির কখনোই আসবে না। দিনের পর দিন বাসায় এই বিষয়ে কথা হতে থাকে। নীলাকে বিয়ের কথা বলে। কিন্তু ও এখন বিয়ে করবে না, আরো পড়তে চায়। আবিরকে বলে বাসায় বিয়ে নিয়ে ঝামেলা করছে আমি খুব সমস্যার মধ্যে আছি। আবির নীলাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিষয়টা যে এখন শান্তনার ঊর্ধে। রাগে ক্ষোভে আজ সকালে নীলার বাবা নীলাকে বলেছিল তুই মরে জাস না কেন? সারাদিন এইসব নিয়ে ভাবে ভেবেই এখন নীলা ছাদে। এমন সময় তন্নী এসে বললো বাবার বুকে ব্যাথা উঠেছে। বলেই তন্নী চলে গেল। ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া নীলার ছোট বোন তন্নী। বোনের কথা শুনে নীলা দৌড়ে সিড়ি থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেল। শব্দ পেয়ে তন্নী দৌড়ে এসে দেখল নীলার মাথা থেকে অনবরত রক্ত বের হচ্ছে। দুইজন একসাথে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।
Copyright Free Image Source PixaBay.
পরদিন সকালে তন্নীর কাছ থেকে আবির জানতে পারল নীলা আর ওর বাবা হাসপাতালে। নীলার বাবা এখন আশঙ্কামুক্ত। নীলার কোনো উন্নতি নেই। আবির হাসপাতালে এসে নীলাকে একবার দেখতে চাইল কিন্তু ওর মা দেয়নি। আবির সবকিছু শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। নীলার রক্তচাপ কমতে লাগল, নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে শরীর। তখন নীলা একটা কথাই ভাবছে, এভাবেই যদি সব ইচ্ছা পূরণ হতো। নীলার নিথর শরীর পড়ে রইল হাসপাতালের বিছানায়। আবির হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছে নীলা তুই বলেছিলি যোগাযোগ না করতে, সত্যিই তোর সাথে যোগাযোগ করার আর কোনো উপায় রইল না। এরপরে আর আবিরকে কেউ কোনোদিন দেখতে পায়নি।
ধন্যবাদ সকলকে। আপনাদের দোয়া এবং সহযোগিতা কামনা করছি।
১৩ দিন আগে আপনি শেষ পোস্ট করেছেন আর আজ পোস্ট করলেন। এভাবে কি আপনি ভেরিফাইড মেম্বার হতে পারবেন? আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি তে কাজ করতে হলে আপনাকে অ্যাক্টিভ হতে হবে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি নিয়মিত পোস্ট করবো এখন থেকে ইনশাআল্লাহ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit