আসসালামু-আলাইকুম,
হ্যালো স্টিমিটবাসী, কেমন আছেন আপনারা? আমি আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। আজ কিছু কথা আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো সুখ এবং জীবন নিয়ে।ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
সুখ বড়ই অদ্ভুত। কখনো সুখ খুঁজে পাওয়া যায় সীমাহীন দুঃখের মাঝে। দুঃখও বড়ই অদ্ভুত। কখনো দুঃখও খুঁজে পাওয়া যায় সুখের মাঝে। সুখের অপর নাম বলা যায় মানসিক শান্তি। শান্তি প্রশান্তের নির্মম খেলায় মেতে আছি আমরা। পরিবার, সমাজ, সংসার, কর্মস্থল, বন্ধুমহল, সব কিছুর মাঝেই আমরা মানসিক সুখ খুঁজে বেড়াই। প্রতিটা মানুষের মানুষের সুখের জায়গা আলাদা। কেউ সুখ খুঁজে পায় টাকার মাঝে, কেউ প্রকৃতির মাঝে, কেউ দায়িত্বের মাঝে, কেউ পরিবারের মাঝে আবার কেউবা অলসতায় মাঝে।
Copyright Free Image Source PixaBay.
অলসতা মানুষকে কিভাবে ধ্বংস করে দেয় সেটা আমি স্বচক্ষে দেখেছি। উনি আমার খুব কাছের একজন মানুষ। তাকে আমি দুষ্টু কাকু বলে সম্বোধন করি। আমার বাল্যকালের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে তার সাথে। আমার জীবনে প্রথম বইটি উনি কিনে দিয়েছিলেন। বইটা কিনে নিয়ে এসে যখন আমার হাতে দিয়েছিলেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম পিন কি আপনি লাগিয়েছেন? উনি স্বাভাবিকভাবেই না বলেছিলেন। তার উত্তর শুনে আমি বইটি ছিড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম। ষষ্ঠ শ্রেণীতে থাকতে আমার পা পুড়ে গিয়েছিলো। আমি 21 দিন হাসপাতলে ভর্তি ছিলাম। আমি হরলিক্স খেতে ভালোবাসি। তাই উনি সবচেয়ে বড় হরলিক্স আমার জন্য নিয়ে হাসপাতলে এসেছিলেন। দুষ্টু কাকু খুব জ্ঞানী একজন মানুষ। কিন্তু তার জ্ঞান সে কখনো ব্যবহার করতে পারেননি, শুধুমাত্র অলসতা জন্য। তার বাজে কোন অভ্যাস নেই নেশা করেননি কখনো, কখনো নারী আসক্তও হননি বা টাকার লোভে পড়েননি। আমার আব্বুর মুখে শোনা আমি যখন ছোট ছিলাম তখন কাকু পাবনাতে একটা সরকারি চাকরি করতো। সে চাকরি বিবরণ যদিও আমার জানা নেই। কিন্তু তার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কারণটা আমার জানা আছে। আব্বুকে কাকু বলেছিলেন, আমার নিম্ন পদে কর্মরত ব্যক্তি আমার থেকে উচ্চাভিলাষ জীবন যাপন কিভাবে করে? তাহলে এখানে নিশ্চয়ই অনেক সমস্যা আছে। এই জায়গা আমার জন্য নয়। আজ পর্যন্ত কেউ তার মুখে একটি গালি শুনতে পাইনি। তবে তার মায়ের সাথে তার কখনো বনিবনা হতো না, জানিনা কেন। একবার আমার দাদু আব্বুকে বলেছিলেন, খলিল আমার কোন কথা শোনে না কি করি বলতো? আব্বু কিছুটা দুষ্টু প্রকৃতির ছিল। আব্বু বলেছিলেন, ওকে জেলে দিয়ে দাও। দাদু তাই করল। কাকুকে জেলে একদিন রাখার পরে থানার পুলিশের বলেছিল, এই মানুষ কিভাবে জেলে থাকতে পারে, এত ভাল মানুষ জেলে কি করে থাকে। এরকম অনেক উদাহরণ আছে তার ভালো মানসিকতার। কিন্তু তার ধ্বংসের মূল কারণ হচ্ছে শুধু অলসতা। কাকুর জ্ঞানের ভান্ডার এতই সমৃদ্ধ যে তাকে যেকোনো বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে উনি তার কম-বেশী উত্তর দিতে পারেন। উনি সাধারণ বইয়ের পাশাপাশি সকল ধর্মগ্রন্থ পড়েছেন কোরআন, বাইবেল, গীতা। কাকুর একটা ছেলে আছে, মামুন। আমার থেকে বছর দুয়েকের বড় হবে। খুবই মেধাবী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেছে। যেহেতু কাকু নিজে কর্মহীন এবং কারো সাথে যোগাযোগ নেই, স্বাভাবিকভাবে তার ছেলের সাথে আমাদের খুব একটা যোগাযোগ হয় না। শুনেছি সে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করছে।
Copyright Free Image Source PixaBay.
এখন তার সকল কর্মকান্ড থেকে আমি মনে করি আমাদের দুটো জিনিস শেখার আছে। যেটা আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই প্রতিটা মুহূর্ত মনে রাখা উচিত। প্রথমটি আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন সেটা হচ্ছে অলসতা। প্রতিটা মানুষের ভিতরেই কম-বেশী অলসতা কাজ করে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে সেই অলসতা যেন আপনাকে কখনোই প্রভাবিত করতে না পারে। অলসতার উপরে অবশ্যই আপনার কর্তৃত্ব থাকতে হবে।
দ্বিতীয় বিষয়কে বলতে গেলে কি প্রবাদ বলতে হয় সেটি হল, "স্ব-সহায়তাই সর্বোত্তম সাহায্য।" আসলে সত্যি বলতে এই দুনিয়ার মানুষ আপনার থেকে কিছুই চায় না। আপনি একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন একটা মানুষ প্রতিদিন সকালে তার কাজে যায় রাতে ফিরে আসে। সে কাউকে সাহায্যও করে না, কারো ক্ষতিও করে না। সে শুধু নিজের কাজটা নিজে করে। আপনি যখন কাউকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন দেখবেন সবাই বলবে হ্যাঁ লোকটি ভালো। কারণটা তার খারাপ দিক কেউ কখনো দেখেনি। আর সবাই এটাই চাই যে নিজের কাজ নিজে করুক। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানে এই নয় যে আপনি কখনো কাউকে সাহায্য করবেন না। কিন্তু আপনি যদি নিজের দায়িত্ব সঠিভাবে পালন করতে সক্ষম না হন তবে কি করে আপনি অন্যের উপকার করবেন।
আমি শুরুতে সুঃখের কথা বলেছিলাম। সুখের ব্যাখ্যা প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন হলেও সুখের স্বাদ সবাই পেতে চায়। দিন শেষে সবাই মানসিক শান্তি খুঁজে। আর সুখ বা মানসিক শান্তি যেটাই বলেন না কেন এর মূলমন্ত্র দুইটি অলসতা ত্যাগ করা এবং দায়িত্ত্ব সঠিকভাবে পালন করা।
ধন্যবাদ সকলকে। আপনাদের দোয়া এবং সহযোগিতা কামনা করছি।