আজ,৪ অগ্রহায়ণ |১৪২৮, বঙ্গাব্দ | ১৯, ই নভেম্বর|২০২১,খ্রিস্টাব্দ | ১২ ই রবিউস সানি | ১৪৪৩, হিজরি | শুক্রবার | হেমন্তকাল
আসসালামুআলাইকুম/নমস্কার, আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল সদস্যকে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।আপনারা সকলেই কেমন আছেন? আশা করি, সকলেই ভালো আছেন।আমিও আপনাদের দোয়া এবং আশির্বাদে ভালোই আছি।
আমাদের গ্রামের নাম গোবিন্দপুর সরদার পাড়া। বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত আমাদের গ্রামটি।বর্তমানে যুগের উন্নয়ন হওয়ায় গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে একটি পিচঢালা সড়ক। আর সড়কের দুই পাশে কারো কারো রঙিন অট্টালিকা, কারো কুঁড়েঘর,কারো টিনের ঘর,বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি ঘরও লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া গ্রামটি বৃহৎ বসতিপূর্ণ হওয়ায় গ্রামের শুরু থেকে শেষ দুই দিকেই রাস্তার দুপাশে রয়েছে সবুজের লীলাভূমি।
যা-ই হোক, আমি সে কথা বলছি না। এখন আমি আলোচনা করতে যাবো আজকের মূল বিষয় নিয়ে।
আলোচ্যবিষয়ঃ
আজকের আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে হাডুডু খেলা।আমরা সকলেই জানি আমাদের দেশেরও প্রত্যেকটি দেশের মতো একটি নির্দিষ্ট খেলা রয়েছে যেটি আমাদের দেশের জাতীয় খেলা হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমনঃইংরেজদের জাতীয় খেলা ক্রিকেট,আমেরিকানদের জাতীয় খেলা বেসবল⚾ ইত্যাদি। ঠিক তেমনই আমাদের জাতীয় খেলা হচ্ছে কাবাডি বা হাডুডু।
হাডুডু খেলা সত্যি সত্যিই উপভোগ করার মতো একটি খেলা। এই খেলার মধ্যে একটি অন্যরকম বিনোদন ভোগ করা যায়। হাডুডু খেলায় দুই দলের অতিরিক্ত খেলোয়াড় সহ মোট খেলোয়াড়ের সংখ্যা থাকে ১১ জন করে ২২জন।এর মধ্যে ৭জন করে মোট ১৪জন খেলোয়াড় মাঠে অবস্থান করে খেলায় অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকৃত খেলোয়াড়দের মধ্যে কোনো খেলোয়াড় আহত হলে পরে অতিরিক্ত খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে নিজ দলের খেলোয়াড় হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
হাডুডু খেলা মানেই তো শক্তির পরীক্ষা। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী শক্তিমান পুরুষেরা এই খেলার মাধ্যমে দর্শকদের মনে আনন্দের জোয়ার তৈরী করেন।যদিও হাডুডু বাংলাদেশের জাতীয় খেলা তারপরও প্রযুক্তির ছোয়ায় হাডুডু খেলা আজ বিলুপ্তপ্রায়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট, অনলাইন গেম আর বিভিন্ন বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে আজকালকার ছেলেমেয়েরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।অনেকেই জানেই না হাডুডু খেলা কি?এটা কেমন করে খেলতে হয়।প্রবীণ মানুষদের মধ্যেও অনেকে আছেন যারা হাডুডু খেলা নিয়ে তেমন আগ্রহ পোষণ করেন না।এর কারণ হলো হাডুডু খেলার তো চলিত নেই। তাহলে এর আনন্দ কিভাবে উপভোগ করা যায় সেটা বুঝতে পারা তো সত্যিই দুঃসাধ্য ব্যাপার।
একসময় এদেশের জনপ্রিয় খেলা হিসেবে প্রচলিত ছিল দাড়িয়াবান্ধা, লুডু, তাস,গোল্লাছুট,বৌ বাড়ি,কিতকিত,ফুটবল, হ্যান্ডবল,কাবাডি বা হাডুডু, লাটিম ইত্যাদি খেলা।এর মধ্যে কাবাডি বা হাডুডু হলো জাতীয় খেলা।কিন্তু বর্তমানে উক্ত খেলাগুলোর মধ্যে একটিরও প্রচলন সেরকম দেখা যায় না।অথচ এই খেলাগুলো আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য বহন করে। শুধুমাত্র ফুটবল খেলার প্রচলন কিছুটা বিদ্যমান আছে। তাছাড়া বাকি খেলাগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে তা আমার জানা নেই।
আমাদের গ্রামে অবশ্য অনেক বছর পূর্বে থেকেই হাডুডু খেলা হয়ে থাকে। যদিও বর্তমানে অন্য কোনো এলাকায় এই খেলা লক্ষ্য করা যায় না একেবারেই। তবুও বিশেষ করে বিগত বছর চারেক ধরে আমাদের গ্রামে বৃহৎ আকারে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই হাডুডু খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবছরও শুরু হয়ে গেছে ১৬টিমের হাডুডু খেলা। এর মধ্যে যেই দুটি দল বিজয়ী হবে প্রথম স্থান অধিকারী দলের জন্য ১টি গরু এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারী দলের জন্য ১টি খাসি পুরস্কার হিসেবে বিতরণ করা হবে।প্রতিবছর আমাদের গ্রামে বাদ্যবাজনার সাথে আনন্দ উদ্দীপনা সহকারে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হাডুডু।চারপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত হাজারো মানুষ উপভোগ করেন হাডুডু খেলা।
এভাবেই যেন বাংলাদেশের সর্বত্রই জাতীয় খেলা হাডুডু অনুষ্ঠিত হয় এবং আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যও যেন আঁকড়ে ধরে আমরা আগামীর দিকে ধাবিত হই সকলেই সম্মিলিতভাবে এই প্রত্যাশায় আজকের আলোচনার সমাপ্তি করলাম।