আজ বাইশে শ্রাবণ। আজ দুখী শ্রাবণ।। কবিতা পোস্ট ও কবিতাপাঠ।। ক্রিয়েটিভ রাইটিং।।

in hive-129948 •  4 months ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


1000225870.jpg








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



আজ বাইশে শ্রাবণ। আজ দুখী শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিরাশি তম তিরোধান দিবস৷ রবিঠাকুর আমাদের কাছে কি তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার দরকার নেই৷ তাও কিছু কথা না বললেই নয়৷ বাঙালি জাতির ঈশ্বর তিনি৷ আমরা পূজো করি, আমরা প্রণাম করি৷ সারা বিশ্বের কাছে তিনিই একমাত্র যিনি একটি জাতিকে ধরে রেখেছেন৷ তার কীর্তি কথা বলে শেষ করা যায় না। আর আমি যে বলবো তারও আলাদা করে কোন কারণ দেখছি না। কারণ আমরা প্রত্যেকেই ছোটবেলা থেকে রবি ঠাকুর পড়ে বড় হয়েছি, রবি ঠাকুর মেখে বড় হয়েছে। তিনি আমাদের শয়নে, স্বপনে, জাগরনে অক্ষয় অনন্তকাল ধরে বিরাজমান।

1000225865.jpg

আজ আমি তাঁকে উৎসর্গ করে একটি কবিতা লিখেছি। বলা বাহুল্য তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই কবিতা লিখেছি।

কবিতা সম্পর্কে একটু বলে নিই, কবিতাটিতে বেশ কিছু ফুলের নাম ব্যবহার করেছি। এই প্রত্যেকটি ফুলের নামই রবি ঠাকুরের দেওয়া। যাদের আলাদা আলাদা অন্য কোন নাম রয়েছে। সেগুলি একটু উল্লেখ করছি।

অমলতাস — বাঁদরলাঠি বা কর্ণিকা বলে এই ফুলটিকে। ইংরেজিতে বলে গোল্ডেন সাওয়ার

তারাঝরা — স্ক্যানেভিয়ান ফুল। বা অ্যারোমাটিক জুঁই। এই ফুলটি সাদা রঙের, জুঁই ফুলের মতই দেখতে অনেকটা

নীলমণি— লতা জাতীয় নীল রঙের থোকা ফুল। এনে বিদেশে ব্লু বার্ড ভাইনও বলে

সোনাঝুরি— আকাশমণি

বাগানবিলাস— বোগেনভিলিয়া বা কাগজফুল

রক্তকরবী— লাল করবীফুল। তবে এই নামটি রবিঠাকুরের দেওয়া নাকি আমার জানা নেই।

এছাড়াও অনেক ফুল রয়েছে এবং গাছ রয়েছে, যার মিষ্টি মিষ্টি নামকরণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যেমন অ্যালামন্ডাকে বলতেন অলকানন্দা, হীমচাঁপা কে নাম দিয়েছিলেন উদয়পদ্ম, মান্দার ফুলকে পারিজাত, মধুমালতিকে মধমঞ্জুরি ইত্যাদি এরকম আরো অনেক ফুলের নামকরণ তিনি করেছিলেন মিষ্টি বাংলা ভাষায়। আসলে আমাদের প্রাণের প্রিয় রবি ঠাকুর যে কি করেননি তাই ভাবি।

এবার চলুন কবিতায় যাই—



1000225819.jpg


সকল মাধুরী লুকায়ে যায়...
--------------------------------------- নীলম সামন্ত

অঝোরে ভিজে যাচ্ছে জলরঙ।

রক্তকরবীর ছায়ায় কবিতা লেখা হল
তখন ভোরের সাথে পা মিলিয়ে চকমকি সকাল
অলঙ্কার শুয়ে আছে দীর্ঘ কৌশলে
তুমি স্নান সেরে খোপায় আটকে দিলে শৌখিন পরাগ
গলায় পরিচ্ছন্ন তর্জনী,
বাড়তি হিসেবে দু'একটা অমলতাস ঝুলে পড়লেই
মৃৎশিল্পী মণিহার বেচে দেয়
প্রবঞ্চনায় মাখামাখি হয় চোখের কামড়
এই যে মিষ্টি করে হাসো,
সুধারসের ভাঙা ভাঙা ঢেউ—
উনুন জ্বলে,
ভাতের গন্ধে মিশে যায় সোঁদামাটি
তরঙ্গের গন্ধ,
ঝমঝমিয়ে আছড়ে পড়ে তারাঝরা,
জাফরানি রুমালে কত কি আটকে থাকে
সামান্য ফাঁকফোকর পেলেই
অযুত-নিযুত ইন্দ্রিয়-মৌমাছি ছুটে আসে
বাগানে ফুল ফুটছে।
আমার থেকে অনেক আলাদা
তাও নীলমণির গা ঘেঁষে কেউ এলে
ঈশ্বর ভেবে নাকছাবি পরি
ভিজে যায় ফাগুন বৌ-
এতো বৃষ্টি এতো জল
এতো ভাবনা
তবুও মৌমাছি,
দেওয়াল থেকে তাকিয়ে দেখে
বাগানবিলাসে লেগে আছে ফিঙের মানচিত্র
সে জানে কেবল সোনাঝুরি তৎসম শব্দ
আর অনেক বর্ণ,
ইতিহাস থেকে প্রাগৈতিহাস বাউলের ঔদাসিন্য।
এই সমস্ত পথ ধরে তুমি ফিরে আসো
সুরে, শব্দে, আঘাতে, প্রত্যাঘাতে
তুমি কি সত্যিই নেই?
নাকি জামা ছেঁড়া গীতবিতানে শব্দের ভেতর
ডুবোজাহাজ হয়ে শুয়ে আছো
পাতা ওল্টালেই হাজার সুর
দমকা হাওয়া ম্যাজিশিয়ান হলেই
ঘুলঘুলি ছাপিয়ে আলো ঢোকে,
বলে, আজ বাইশে শ্রাবণ
আজ মাধুরী ঝরে পড়ার দিন।
কত প্রেমিকার চুল
আঙুল ভিজিয়ে দেয়
প্রেম ডাকাডাকি করে জোৎস্না পেতে দিয়ে বলে
কেউ কোত্থাও নেই
এই ঘন জঙ্গলে অনেকটা স্থির হয়ে এসো,
আমি তো জানি ঘর খুলে দাঁড়ালেই
মুলতুবি ঘোষণা করবে ভরা কোটাল
আর 'মাস্তুলবিহীন' বাঁশি ছুঁয়ে
গেয়ে যাব, সকল মাধুরী লুকায়ে যায় /গীত সুধারসে এসো...



আজকে কবিতাটির অর্থ খুবই সহজ। আমি আশা করব আপনারা কবিতাটি পড়ে বুঝতে পারবেন। তাই নতুন করে আর কিছু বলছি না। কবিতাটি লিখেই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে। তাই তার দেওয়া কিছু ফুলের নাম ব্যবহার করেছি। বাকি আপনারাই পরে বলবেন কেমন হয়েছে কবিতাটি।

শুধু লিখে নয়, আমি কবিতাটির একটি পাঠও রেকোডিং করেছি। তার লিংক নিচে দিলাম।

আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে। এখন তো সবাই উপস্থিত নেই যখন আসবেন তখন যদি চোখে পড়ে অবশ্যই পড়বেন এবং শুনবেন আর মন্তব্য করতে ভুলবেন না।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণক্রিয়েটিভ রাইটিং ও কবিতাপাঠ
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট


1000216466.jpg


৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

রবীন্দ্র তিরোধান দিবসে তাঁকে স্মরণ করে অসাধারণ একটি লিরিকাল কবিতা। সব থেকে ভালো লাগলো কবিতার কিওয়ার্ড গুলি নিয়ে আলোচনাটা। বেশ একটা অভিনবত্ব আগাগোড়া ধরা দিয়েছে এই কবিতায়। যেন আপন খেয়ালে শান্তিনিকেতনের লাল মাটি বেয়ে এগিয়ে চলা। অসাধারণ।

হ্যাঁ আমি সাধারণত বিষয়ভিত্তিক তো লিখি না, তাও চেষ্টা করলাম। আসলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লিখতে হলে আমি চেষ্টা করি তারই সৃষ্টিকে কেন্দ্র করে লেখার। এই ফুল গুলো নিয়ে একটা বড় প্রবন্ধ লেখার ইচ্ছে ছিল দেখি কখনো লিখে উঠতে পারি নাকি। কারণ উনি প্রচুর ফুলের নামকরণ করেছিলেন। আর প্রতিটা শব্দই অসাধারণ মিষ্টতায় পরিপূর্ণ। তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হয়েছি।