প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
বন্ধুরা আপনারা তো জানেনই আমার বাড়িতে দেশের বাড়ি থেকে দাদা-দিদি তাদের পরিবার নিয়ে এসেছিলেন। আমি যেহেতু প্রবাসে থাকি তাই কেউ এলে তারা আমাদের বাড়িকেই কেন্দ্র করে চারপাশ ঘোরে৷ মাঝেমধ্যে দু একদিন হয়তো আমিও তাদের সাথে বেরই। এরকম ভাবেই হঠাৎ একদিন খাওয়া দাওয়ার পর ঠিক হলো সামনেই একটা ড্যাম আছে সেটা দেখে আসব। কিন্তু যেতে যেতে দেখলাম ড্যামে দেখার সেরকম কিছু নেই সেখান থেকে সামান্য একটুখানি প্রায় আধ ঘণ্টা মত গেলেই পাব সিংহগড় ফোর্ট। ফোর্ট মানেই সামান্য ট্রেকিং থাকে। এদিকে সাথে অনেকগুলো বাচ্চা সময়ও খুব একটা বেশি হাতে নেই আকাশেও মেঘ রয়েছে। সবকিছু মিলে ভাবলাম হেঁটে উঠতে পারব না তার থেকে না যাওয়াই ভালো। তারপর ওখানে একজনকে জিজ্ঞেস করাতে উনি বললেন যে মাত্র কয়েকটা সিঁড়ি ভাঙলেই ওঠা যায়। গাড়ি অনেকটাই চলে যায়। এসব শুনে সবাই মিলেই ঠিক করলাম যে তাহলে যাওয়া যাবে।
বাইরে টুকটাক বৃষ্টি পড়ছিল তবে আধ ঘন্টার মধ্যেই আমরা যখন পৌঁছে গেলাম তখন বৃষ্টিটা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মহারাষ্ট্রে এটাই সব থেকে ভালো লাগার জিনিস যে প্রায় প্রতিটি পাহাড়ের উপরেই একটা না একটা করে ফোর্ট রয়েছে। আসলে তখনকার দিনের রাজারা পাহাড়ের ওপরে দুর্গ বানাতেন কারণ উপর থেকে সবাইকে সহজে লক্ষ্য নজর করা যায় এবং প্রতিপক্ষকেও সহজে আক্রমণ করা যায়।
মারাঠা সাম্রাজ্যের অন্যতম একটি দুর্গ হল এই সিংহগড় ফোর্ট। তানাজি মালুসারে ও তার ভাই মিলে ১৬৭০ খ্রীস্টাব্দে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের হয়ে সিংহগড় যুদ্ধে মোঘলদের হারিয়ে তৃতীবারের জন্য জিতে নেন৷ তবে পরে আবার শিবাজি মহারাজের ছেলে সম্ভাজি মহারাজের মৃত্যুর পর মোঘলরা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন৷ এই দুর্গটি ঠিক মাঝখানে অবস্থিত এবং চারদিকে আরো অনেক গুলি দুর্গ রয়েছে। ওইখানে কথা বলে জেনেছিলাম এই দুর্গটি হল কেন্দ্র। এখান থেকে সমস্ত দুর্গতে লক্ষ্য নজর রাখত এবং চালনাও করা হতো। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকেই দাঁড়িয়ে রায়গড় দুর্গ/ফোর্ট , পুরন্দর ফোর্ট, তুর্ণা ফোর্ট পরিষ্কার দেখা যায়৷
বর্তমানে টুকটাক সারাই হলেও দুর্গের বেশিরভাগ অংশই ভাঙাচোরা। তবে সিঁড়ি ভেঙ্গে যখন উপরে উঠলাম যে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলাম তাতে মুগ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। বাড়ির পাশেই যে এমন একটি বেড়ানোর জায়গা রয়েছে তা বিগত ছয় মাসে বুঝিনি। তবে যেহেতু সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছিল তাই কোন জায়গাতেই দাঁড়িয়ে অনেক ছবি তুলতে পারিনি।
সিঁড়ি ভেঙে ওঠার পর প্রথমেই ডানদিকে আমরা দেখি একটি তোপ ঘর। খানিকটা হন্টেড হাউসের মতো দেখাচ্ছিল । সামনের দিকে যখন গেলাম তখন দেখলাম এখানে এখন আর কিছুই নেই যখন রাজত্ব ছিল তখন এখানে বড় বড় তোপ বসানো ছিল যেখান থেকে গোলাগুলি ছোঁড়া হতো। এখন এখানে ভিমরুলের চাক আর তলায় বিরাট সাইনবোর্ড - ইংরেজি ও মারাঠিতে লেখা ভিমরুলের চাক হইতে সাবধান।
সেটি দেখেই আমরা যখন বাঁ দিকে গেলাম সেখানে আশ্চর্য রকমের সুন্দর একটি গুহা দেখলাম। এখানে আগে কি হত সেই বিষয়ে কেউ বলতে পারেনি এবং ওখানে কোন সাইনবোর্ডও নেই যা পড়ে বুঝব৷ তবে বৃষ্টি হওয়ার কারণে টুপটাপ জল পড়ছিল তো তাই গুহার ভেতরটা অদ্ভুত রকমের সুন্দর লাগছিল।
তারপর আরো সামনে এগিয়ে গেলাম, সেখানে দেখলাম অনেক মারাঠি লোক ছোট্ট ছোট্ট ধাবার মতো করে খাবারের দোকান দিয়েছে। কালো মাটির ভাঁড়ে করে মটকা দই, ভুট্টা সেদ্ধ, চিনে বাদাম সেদ্ধ ইত্যাদি বিক্রি করছিল। আর যেটা বলছিল সেটা হলো পেয়াজি এবং ভাকরি খেয়ে যেতে। ভাকরি হল এক ধরনের রুটি যা চালের আটা দিয়েও বানানো হয় আবার জোয়ার বাজরা রাগী ইত্যাদির আটা দিয়েও বানানো হয়। সেখানেই শুনলাম এই ফোর্টের আসলে দুটি গেট। সোজাসুজি দক্ষিণপূর্ব দিকে রয়েছে কল্যাণ দরওয়াজা। আর উত্তর-পূর্ব দিকে রয়েছে পুনে দরওয়াজা। আমরা যেই গেট দিয়ে উঠেছি সেটাকে পুণে দরওয়াজা বলে।
ওপর থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো চারপাশে দুর্দান্ত লাগছিল। ইতিহাসের কথা মাথায় নেই শুধু হাঁ করে প্রকৃতিই দেখে গেছি। সদ্য বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার ফলে ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া বইছিল। কিন্তু হাতে খুব একটা বেশি সময় ছিল না তাই বেশিক্ষণ বসতে পারিনি, চটজলদি নেমে আসতে হয়েছে। কারণ অল্প করে হলেও রাস্তা চড়াই ছিল। রাত্রি হয়ে গেলে সেই চড়াই রাস্তা ধরে নেমে আসা একটু কঠিনই। চারপাশে সাবধানতার সাইনবোর্ড ছিল এবং সেখানেও ইংরেজি ও মারাঠিতে লেখা ছিল চিতাবাঘ হইতে সাবধান। অতএব বুঝতেই পারছেন সন্ধ্যে হওয়ার আগেই নেমে আসা ভালো।
আজ বেশ কিছু ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। তবে আরো বেশ কিছু চমৎকার ছবি রয়েছে সেগুলো অন্য একটি পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
আজকের ব্লগটি এখানেই শেষ করছি, ছবি সমেত আপনাদের এই লেখাটা কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন। আবার আসবো নতুন কোন লেখা নিয়ে। আজ এই পর্যন্তই।
টা টা
পোস্টের ধরণ | ভ্রমণ পোস্ট |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
ঘুরতে ঘুরতে আপনি অনেক ঘুরেছেন আর এই ভ্রমণ পোস্টার মাধ্যমে অনেক তথ্য শেয়ার করেছেন। যার জন্য আমি অনেক কিছু জানার সুযোগ পেলাম। এত সুন্দর ভাবে আপনি উপস্থাপন করেছেন ইতিহাস সত্যিই অনেক কিছু জানার সুযোগ করে দিয়েছেন। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আশা করব এভাবে অনেক কিছু আমাদের মাঝে উপস্থাপন করবেন যেগুলোর মাধ্যমে নতুন কিছু জানার সুযোগ মিলবে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
চেষ্টা করেছি মাত্র। আমি পুণেতে ছয়মাস থাকলেও মুম্বাইতে প্রায় আট বছর ছিলাম৷ তাই এখানকার অনেক ইতিহাসের গল্প আমি জানি৷ সেইগুলোই লিখি৷ ভালো থাকবেন আপনি৷ ধন্যবাদ জনবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রথমে আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আজকে আপনি আমাদের মাঝে খুব সুন্দর হবে একটি ভ্রমণ পোস্ট শেয়ার করেছেন যেখানে অনেক কিছু জানার ছিল দেখার ছিল বোঝা ছিল। এ জাতীয় পোস্টগুলো আমি অনেক পছন্দ করি এবং অজানা বিষয় সম্পর্কে ধারণা পেতে পছন্দ করি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ সুমন ভাই, আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুবই খুশি হয়েছি৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পাহাড়ের উপর ফোর্টটি অসাধারণ। এমন সুন্দর ফোর্ট বহু ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে। মারাঠারা একসময় ভারতবর্ষের প্রধান ক্ষমতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মুঘল সাম্রাজ্য তখন অস্তমিত। আর সারা ভারতবর্ষে তখন বিভিন্ন স্থানীয় রাজাদের উত্থান। সেই সময় এই দুর্গগুলি মারাঠা সাম্রাজ্যের শৌর্য বীর্যের প্রতীক হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। তাই এই ছবিগুলো দেখলে আমার ভালো লাগে। তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধে আহম্মদ শাহ আবদালীর জয়লাভটাই তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। আর জায়গাটিও সুন্দর। পাহাড়ের উপর থেকে সমগ্র দৃশ্যপট মন ভালো করে দেওয়ার মতো। ছবি তোলা ভীষণ ভালো হয়েছে।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মহারাষ্ট্রে এইগুলোই আসল জায়গা দেখার জন্য৷ মানুষ এসে মুম্বাই দর্শন করে ফিরে যায়৷ কিন্তু ইতিহাস পেছনে পড়ে থাকে৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit