গোপালের জন্মদিনে... বাড়িতে ছাপান্ন ভোগ দিয়ে জন্মাষ্টমীর পুজো করলাম।

in hive-129948 •  5 months ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


ভারত এবং বাংলাদেশের সমস্ত বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


1000243807.jpg







আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



গতকালের পোস্টেই লিখেছিলাম আমার বাড়িতে জন্মাষ্টমীর পুজো হয়েছে। আজ সেরকম একটা কাজ সকাল থেকেই ছিল না তাই ভাবলাম জন্মাষ্টমীর ছবিগুলো একটু সুন্দর করে সাজিয়ে ব্লগটা লিখে ফেলবো। কিন্তু সকাল থেকে আর হলো কই আমার বাইনান্স অ্যাপ নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে সেই নিয়েই যেন সারাদিন কেটে গেল এই ওই ভিডিও দেখতে দেখতে। নতুন ইউজার হওয়ার কারণে অনেক কিছুই জানিনা আর জানতেও একটু সময় লাগছে। সেটা ঠিক আছে তাতে কোন অসুবিধে নেই কারণ নতুন কিছু জানার বিষয়টা আমি বেশ উপভোগ করি। এ কিছুদিন আগে পর্যন্ত জানতাম না কিভাবে ব্লগ লিখতে হয় বাক ক্রিপটো কারেন্সি কি হয় না হয়। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসে আপনাদের সাথে থেকে থেকে আমি সব টা না হলেও কিছুটা তো অবশ্যই জেনে

যাই হোক চলুন দেখে নিই আমার জন্মাষ্টমী পূজো কেমন ছিল। গত বছর থেকেই জন্মাষ্টমীতে আমি ৫৬ রকমের ভোগ অর্পণ করি গোপালকে। ৫৬ রকমের ভোগ শুনতে বিরাট হলেও আসলে মন যদি থাকে খুব একটা কষ্ট হয় না। কারণ আজকাল বাজারেই অনেক ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায় এছাড়াও ফলমূল তো রয়েইছে। তবে বেশ কিছু ভোগ আমি নিজেও রান্না করি। সে কারণেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ঘর তোর পরিষ্কার করে ঠাকুরের বাসনগুলো ধুয়ে নিয়েছিলাম। তারপর শুরু করলাম ভোগের রান্না। প্রায় আট রকমের ভাজা সুক্তো লুচি মালপোয়া কলার বড়া ক্ষীর তিন চার রকমের পায়েস দু রকমের হালুয়া খিচুড়ি ইত্যাদি নানান ধরনের রান্না করেছিলাম। গোপালপুজোর প্রধান প্রসাদ হয় ক্ষীর এবং তালের বড়া এই প্রবাসে তাল পাওয়া যায় না। তবে কোন কোন বছর বাড়ি থেকে আনিয়ে রাখি। এবছর আর ছিল না। সে কারণেই কলার বড়া বানিয়েছি। বানানোর সময় মনে মনে গোপালকে বললাম 'বাবা গোপাল একটু মানিয়ে নাও'। এছাড়াও নারকেলের নানান ধরনের নাড়ু তিলের নাড়ু বাদামের নাড়ু মোয়া ইত্যাদি বানাতে হয়। মোটামুটি ১১ টা নাগাদ রান্নাবান্না শুরু করেছিলাম। সব গুছিয়ে উঠতে আমার প্রায় বিকেল সাড়ে চারটা বেজে গিয়েছিল। তারপর শুরু করলাম পুজোর আয়োজন।

1000243798.jpg

1000243795.jpg

প্রথমেই গোপাল এবং রাধাকৃষ্ণের যে বিগ্রহ রয়েছে আমার তাদের স্নান করাই। গোপালকে বছরের অন্যান্য দিনগুলোতেও স্নান করাই তবে রাধা কৃষ্ণের বিগ্রহটি শুধুমাত্র জন্মাষ্টমীর দিনে স্নান করায়। এই স্নানের আলাদা মন্ত্র আছে সেটা উচ্চারণ করে পঞ্চামৃত স্নান করাই। অর্থাৎ, দুধ, দই, মধু, ঘি,গঙ্গাজল। এবারে রাধা কৃষ্ণ কে একটু হলুদ মাখালাম। আসলে এইভাবে স্নান করালে পেতলের যে রংটা সেটা শোনার মত ঝকঝকে হয়। পূজোর দিনে বিগ্রহের মুখটা বড্ড ঝকঝক করে। যেটা দেখে মনে অদ্ভুত প্রশান্তি জাগে।

1000243883.jpg

1000243882.jpg

1000243881.jpg

জন্মাষ্টমীর দিন অনেকেই শুধু গোপাল পুজো করে। মানে গোপালের উদ্দেশ্যই সবকিছু করে। কিন্তু আমার কাছে যেহেতু রাধা কৃষ্ণ এবং জগন্নাথ সুভদ্রা বলরাম সবাই রয়েছেন এবং প্রত্যেকেই গোপালের সাথে জড়িত তাই আমি সবাইকেই আজকের দিনে আলাদা করে পূজা দিই। রাধা কৃষ্ণের মধ্যে রাধা, কৃষ্ণের প্রেয়সী আর কৃষ্ণ গোপালের বড়বেলা। জগন্নাথ হল শ্রীকৃষ্ণের আর একটি রূপ। পঞ্চামৃত স্নানের পর আমি প্রত্যেককেই নতুন জামা কাপড় পরিয়ে সাজিয়ে নিয়েছি। শুধু জামা কাপড় নয় সবার জন্যই টুকটাক চুড়ি মালা মুকুট ইত্যাদি পরিয়েছি। এবারের জন্মাষ্টমীর সমস্ত সাজ পোশাক আমি যখন পুরি বেড়াতে গিয়েছিলাম সেখান থেকে কিনেছিলাম। আমার বিগ্রহগুলিকে কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন।

1000243786.jpg

1000243885.jpg

ঘরোয়াভাবে আমি আমার নিজের মতো করে আরতি করে মন্ত্র পাঠ করে পুজো করেছি। পূজোর আয়োজন কেমন লাগছে আপনাদের?

1000243796.jpg

1000243797.jpg

এই যে দেখুন সমস্ত ভোগ। আগেরবার সমস্ত ভোগ বাটিতে করে আলাদা আলাদা করে দিয়েছিলাম। এবার আর সেসব করিনি একসাথেই দিয়ে দিয়েছি। গোপাল যেহেতু কৃষ্ণের ছেলেবেলা তাই গোপালের জন্য ছিল নানান ধরনের চকলেট চিপস। খানিকটা আমার বাড়ির বাচ্চার যেমন ভাবে আমরা জন্মদিন পালন করি সেরকমই।

শ্রীকৃষ্ণের অনেক মহিমা। শ্রীকৃষ্ণের বৈজ্ঞানিক দিকগুলি একদিন আলোচনা করব আপনাদের সাথে। ধর্মের ভিত্তিতে নয় রাজা শ্রীকৃষ্ণকে মানুষ শ্রীকৃষ্ণ কে জানলে জীবনের অনেক পথ খুলে যায়। আর এই সমস্ত পুজো আচ্ছা বা যেকোনো ধরনের সাধনাকে কোন ধর্মের চোখ দিয়ে না দেখে আমি ভাবি আমার জীবনে এগুলো একটা উৎসব। যা দৈনন্দিন একঘেয়ে জীবনে খানিকটা পরিবর্তন আনে। এবং কিছু করার মধ্যে আনন্দ এনে দেয়। তাছাড়া কোন একজনকে সামনে রেখে আমি যদি জীবনে ভালো হওয়ার চেষ্টা করি তাহলে বিপথগামী সবার আগে আরো অনেকবার ভাববো। এটাই সাধনার পথ। মানুষের হিতকরাই মুক্তির পথ।

এতকিছুর মধ্যে একটা কথা বলাই হয়নি, জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আমার বাড়িতে অনেক অতিথি এসেছিলেন। প্রায় ১৫ জন হবে। তাদের সবার জন্য রাতে রান্নাও আমি করেছিলাম। হ্যাঁ একদিনেই জন্মাষ্টমীর পুজোর এত আয়োজন করার পর আলাদা করে তাদের রান্না করেছি। আর সবাইকে ভর পেট খাইয়েছি। একান্নবর্তী পরিবারের বড় হওয়ার কারণেই হয়তো মানুষকে আতিথেয়তা দিতে আমার অসুবিধা হয় না বরং ভালোই লাগে। বাড়িতে উৎসব অনুষ্ঠান হোক বা না হোক অতিথি এলে আমার মনটা ভীষণ পুলকিত থাকে।

1000243880.jpg

বন্ধুরা আপনাদের কেমন লাগলো আমার আজকের ব্লগটি? অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আর গোপালের কাছে আমি আপনাদের সবার জন্য মঙ্গল কামনা করেছি। আশা করি আপনাদের জীবন সুন্দর এবং মসৃণ হয়ে উঠুক। করুণাময় তিনি আপনাদের সবাইকে ভাল রাখুন।

আবার আসবো আগামীকাল অন্য কোন লেখা নিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি আমার আজকের ব্লগ।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণউৎসব বিবরণী
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিখন


1000216466.jpg


৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

অনেক সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে ভগবান গোপালের ভোগ দিয়েছেন দিদি।আমার হয়নি উপোস ও পূজো দেয়া।ইচ্ছে ছিলো অনেক তবে শারীরিক সমস্যার কারণে শেষমেশ করা হয়ে ওঠেনি। ৫৬ প্রকারের ভোগ দিয়েছেন এতো সুন্দর করে গুছিয়ে দেখে খুব ভালো লাগলো।ভগবান সবার মঙ্গল করুন।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

পরের বার হবে। তাছাড়া গোপালের আদর তো রোজের৷ জন্মদিনে একটু ঘটা থাকে এই যা।

আপনার গোপাল আছে?

যে বিষয়ে জানা নেই বা ধারণা নেই সেই সমস্ত বিষয়ে ধারণা পেতে আমি খুবই পছন্দ বোধ করি। কারণ জ্ঞান অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেকোনো বিষয়ে কম বেশি ধারণা থাকলে ভবিষ্যতে কাজে লাগে। ঠিক তেমনি না জানা বেশ কিছু ধারনা পেয়ে গেলাম আজকে আপনার এই ব্লগের মধ্য দিয়ে। অনেক সুন্দর একটি ব্লগ নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। তারপরও সেটা আপনাদের প্রিয় বিষয়। অনেক অনেক ভালো লাগলো দেখে।

এইটে শুধুমাত্র উৎসব৷ কিন্তু ঈশ্বর আমার কাছে সুন্দর দেখতে মুর্তি সম্পন্ন ভগবান নয় যে যার কাছে আমি কামনা করব বা দোয়া করব৷ ঈশ্বর মঙ্গল করুন এইটা কথার কথা৷ আমি তাদের প্রকৃতির এক একটি আধ্যাত্মিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ হিসেবেই দেখি৷ কৃষ্ণ নিয়ে কখনও গবেষণা মূলক পোস্ট লিখলে অবশ্যই আমার দৃষ্টিটা জানবেন।

এই পূজো স্রেফ উৎসব৷ বাড়িতে লোকজনের সমাগম হয়৷ আনন্দ হয়৷

এই দিনটা সত্যই যেন পুরোপুরি গোপালের জন্য নিবেদিত। জন্মাষ্টমীর তাই গুরুত্বই আলাদা। অসাধারণ হয়েছে সব আয়োজনটা। সবটুকুই পরিপাটি। তার সঙ্গে এই পোস্টও। গুছিয়ে ছবি দিয়ে এবং দুর্দান্ত ব্যাখ্যার মাধ্যমে জন্মাষ্টমী উৎসবের উদযাপন অসাধারণভাবে উঠে এলো এবিবির পাতায়।

হ্যাঁ। জন্মদিন। উৎসবের দিন৷ চেষ্টা করেছি সুন্দর করে করার৷ তোমাদের বাড়িতেও তো হল৷ কাকিমা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। দেখলাম।

🌸🌺🎉👏 "কোন শাখা মেলে ধরেছি।" - আমার ভাষা, নিজের থেকে!

ব্যস্ত প্রবন্ধ লিখি, গদ্য-কাব্য উৎসর্গ হয়ে থাকি। মনের ভাষায় বাংলাকে জীবন ধরে আনন্দেই বাঁচি!

"সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতবর্ষের পুনে-তে এলেও, ভার্জিন ছোঁয়ায় বাংলার অহরহর উৎকাট সৌরভ ধরি।"

"আমাদের ভাষাই, যেন তার নিজস্ব পৃথিবী!

এখানে কলম-চিঠি, অন্ধকার-উদিতকাল। "মোমবাতির কার্ণিশ" ও "ইক্যুয়াল টু অ্যাপল"-এর আধুনিক ভাষা, 20 মহাদেশের জনতার চির-স্নেহে।

"বাংলা, যেন এখানে...।"


1000205458.png

"সৌন্দর্য বাংলা, নিজের থেকে! "


1000205505.png