প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
[সোর্স](মেটা AI)
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
দীর্ঘ যাত্রাপথে ঠিকে থাকা পাথরা, পশ্চিম মেদিনীপুরের মন্দির-পরগণা
বাংলার মন্দির বলতেই আমাদের চোখে যে জায়গার নাম বা মন্দির ভেসে ওঠে তা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর অথবা বর্ধমানের কালনা। আর বিখ্যাত মন্দির বলতে আমরা মায়াপুরের ইসকন মন্দির কিংবা কলকাতার দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট। এর বাইরে যে মন্দির নেই তা না অজস্র মন্দির আছে বাংলায়। কত গ্রামের নামকরণই হয়েছে মন্দিরের বা দেবতার নাম অনুসারে। কত জাগ্রত মন্দির আছে সেখানে মানুষের বিশ্বাস পুজো পুজো পার্বণ সবই লেগে থাকে। তার কটাই বা আমরা জানি, আর কত জায়গাতেই বা আমরা পৌঁছে যেতে পারি। বিষ্ণুপুর, কালনা বা ইসকন এইগুলো যোগাযোগের সুবিধার কারণে অনেক বেশি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে কিন্তু ইতিহাসের দিক থেকে মেদিনীপুরের মন্দির কোনদিনই পিছিয়ে নেই সে আমরা বর্গভীমা বলি বা নাচিন্দার কথা বলি। তবে এখন এসবের কথা বলবো না সোজাসুজি চলে যাব পশ্চিম মেদিনীপুরে। মেদনীপুর ভাগ হয়েছে এই কিছু বছর আগে। বেশ খানিকটা পিছিয়ে গেলে ধরুন গুপ্ত যুগে তখন এই ভাগাভাগি ছিল না, কিন্তু এই অঞ্চল বিখ্যাত ছিল তাম্রলিপ্ত বন্দরের কারণে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক যোগাযোগের কেন্দ্রস্থলই ছিল তাম্রলিপ্ত। সে যদি রমরমিয়ে চলত তামার ব্যবসা যেখান থেকেই নামকরণ। ব্যবসা-বাণিজ্য থাকার কারণে নানান দেশ বিদেশ থেকে লোকজনের আনাগোনা তো ছিলই সাথে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ইত্যাদি ধর্মেরও বিকাশ ঘটে। তাই বলা যায় ওই সময় থেকে মেদিনীপুরের প্রসিদ্ধ লাভ। সে যুগে কংসাবতী আজকের মতো নাব্যতা হারায়নি। নৌকা চলত মানুষের আনাগোনা ছিল। তাই নদীর ধারের গ্রামগুলিতে নানান ধর্মের মানুষের স্থায়ী বসবাস বেড়ে উঠেছিল। সে কারণেই নানান জায়গায় নানান মন্দির দেখা যায়। পাথরা এমনই একটা গ্রাম। কলকাতা থেকে একশ' চল্লিশ কিলোমিটার পশ্চিমে আজকের কাঁসাই নদীর তীরে অবস্থিত। পাথরা বিখ্যাত নানান বৈচিত্র্যময় মন্দির এর কারণে।
একটা গ্রাম শুধুই মন্দিরে ভর্তি। বাংলার চালা, রত্ন দালান, দেউল, মঞ্চ প্রায় সব ধরনেরই মন্দির দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে চৌত্রিশটি মন্দির মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকলেও আন্দাজ করা যায় অতীতে অনেক বেশি ছিল। কারণ এমন কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেছে যা পাথরা নামকরণের বহু আগের। জানা যায় এই গ্রামেই বিষ্ণুলোকেশ্বর মূর্তি যা ভাস্কর্যের নিরিখে খ্রিস্টীয় ও নবম শতকের পুরাবস্তু। বিষ্ণুলোকেশ্বর মূর্তি কি? ব্রাহ্মণ দেবতা বিষ্ণু এবং মহাযানী বৌদ্ধ দেবতা লোকেশ্বরের মিলিত রূপ। আশেপাশের গ্রামগুলিতে অনেক জৈন মন্দিরও দেখতে পাওয়া যায় যা প্রমান করে এখানে একদিন বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের মানুষের পাকাপাকি বসবাস ছিল।
পরবর্তীকালে প্রায় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝে মাঝে সময়ে যখন বাংলা যুগের রাজত্ব করছেন নবাব আলীবর্দী খাঁ আর সুশাসনের জন্য প্রতিটি পরগনায় সুশিক্ষিত নায়েব মোতায়েন করেন। রাঢ় বঙ্গের অবিভক্ত মেদিনীপুরের দায়িত্ব পান বিদ্যানন্দ ঘোষাল। তাঁর কাজ ছিল প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করে নবাবের দপ্তরে পৌঁছে দেওয়া। ভাগ্যচক্রেই হোক বা কোন কারণে এই দায়িত্ব পাওয়ার পর বিদ্যানন্দ ঘোষালের আর্থিক অবস্থার বিশাল উন্নতি দেখা যায়। এই প্রতিপত্তি দেখে তাঁর গুরুদেব বলেছিলেন ধর্মীয় কাজে কিংবা সেবামূলক কাজে ব্যবহার করতে। তিনি কথার অমান্য করেননি৷ খাজনার অর্থ দিয়ে তৈরি করতে লাগলন একের পর এক কারুকার্যময় মন্দির৷ কিন্তু খাজনা পৌঁছোচ্ছেনা দেখে নবাবের সৈন্যরা এলেন৷ দেখলেন তাঁর কর্মকান্ড৷ নবাব ক্ষমা করলেন না৷ মৃত্যদণ্ডে দণ্ডিত করলেন৷ পাগলা হাতির মুখে ফেললেন। গল্পে শোনা যায় সেই হাতি বিদ্যানন্দের পাশ কাটি বারবার চলে যাচ্ছিল আর একবার পা তুলতে গিয়েও ফিরে যায় সে থেকেই গ্রামটির নাম হয় পাতরা। অর্থাৎ পা উৎরা। পরে অপভ্রংশের কারণে পাথরা নাম প্রচলিত হয়৷ এই মন্দির নির্মাণের কাজ পরবর্তীকালে থেমে থাকেনি। কারণ বংশধরদের অর্থের অভাব ছিল না, নীল চাষ এবং রেশমের ব্যবসায় তাঁরা প্রচুর উন্নতি করে প্রভাব ও প্রতিপত্তিশালী হয়ে ওঠেন। সেই অর্থে তৈরি হতে থাকল আরও মন্দির। তবে আঠারো শতকের শেষে মন্দির নির্মাণ থেমে গেল, কারণ এই পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছিল৷ আস্তে আস্তে পাথরা গ্রাম ও তাম্রলিপ্ত বন্দর গুরুত্ব হারাল। বন্দরের মতো মন্দিরগুলিও পরিত্যক্ত হয়ে গেল।
তথ্যসূত্র -
১) অবহেলিত পুরাকীর্তির প্রাচুর্যঃ পাথরার দেবদেউল- তারাপদ সাঁতরা (দেশপত্রিকা)
২) রিসার্চ জার্নাল, পাথরার মন্দির - তনয়া মুখার্জি
৩) পাথরার মন্দির নিয়ে লেখা - তিলক পুরকায়স্থ
৪) মন্দিরময় পাথরা ব্লগ- প্রীতম নস্কর
৫) বাংলার শিকড়ঃ পাথরা, বাংলার মন্দিররীতির প্রদর্শন মালা, নিউজ বাইট - সুতপা জ্যোতি, সায়ন্তনী নাগ
পোস্টের ধরণ | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
---|---|
কলমওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/neelamsama92551/status/1886127084696961315?t=K3UaskvQfrjzPQj8YwVODQ&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
@tipu curate
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted 👌 (Mana: 3/8) Get profit votes with @tipU :)
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit