ঘুরে এলাম খড়কওয়াসলা ড্যাম|| বিকেল ভ্রমণ

in hive-129948 •  16 hours ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


IMG-20241121-WA0018.jpg






আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



IMG-20241121-WA0019.jpg

আপনারা তো সবাই জানেন আমি মহারাষ্ট্রের পুনেতে থাকি। মোটামুটি যারা ভারতবর্ষের পশ্চিমের খবর রাখেন তারা ভালই জানেন এই দিকে প্রবল বৃষ্টিপাত হলেও জলের খুবই সমস্যা থাকে। মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোতে অনেক দূর দূর থেকে জল আনতে হয়। কিছু কিছু গ্রাম তো এমনই আছে যেখানে দিনে হয়তো এক কলসি বা এক বালতি জল জোটে। যখন মুম্বাইতে থাকতাম তখনো এই জলের সমস্যা দেখেছি। এইসব কারণেই মুম্বাই পুনে জায়গাগুলোতে নদীর উপর বড় বড় ড্যাম তৈরি করা হয়েছে। সেই ড্যামগুলোতে জল ধরে রাখা হয় যা বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়তে শহরের জীবনযাত্রা চালাতে সহায়তা করে।

IMG-20241121-WA0021.jpg

আমাদের পূর্বাঞ্চলে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ বা আপনাদের বাংলাদেশেও যে সমস্ত নদী রয়েছে সেগুলো প্রায়ই বরফ গলা জলে পুষ্ট। ফলত সারা বছরই নদীতে জল থাকে। গ্রীষ্মকালে কমে যায় কিন্তু শুকিয়ে যায় এমন নয়। যে কারণে আমাদের খাওয়ার জলের কোন সমস্যাই হয় না। কিন্তু ভারতবর্ষের দক্ষিণে বা পশ্চিমে সমস্ত নদী বৃষ্টির জলে পুষ্ট। তাই বর্ষাকাল চলে যাওয়ার পর নদীগুলো আস্তে আস্তে শুকনো হয়ে যায়। গরমকালে তো একেবারেই জল থাকে না। অতএব জলের অভাব পূরণের জন্য ড্যাম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি প্রকল্প।

IMG-20241121-WA0023.jpg

মহারাষ্ট্র এরকম অনেক বড় বড় ড্যাম আছে। আমি আগেও খেয়েছি। খড়কওয়াসলা ড্যাম মহারাষ্ট্রের ড্যামগুলির মধ্যে অন্যতম কারণ এই ড্যাম থেকে সারা পুনের সমস্ত প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ হয় এবং তা সারা বছর ধরেই। মুথা নদীর ওপর অবস্থিত এই ড্যামটি ১৯৬১ সালে বানানো শুরু হয়েছিল এবং সব কিছু ঠিক করে চালু করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে৷ পুনে সিটি থেকে একটি কিলোমিটার দূরে হলেও আমার বাড়ি থেকে মাত্র আধ ঘন্টার দূরত্ব। এতগুলো মাস এখানে আছি কিন্তু কোনদিনও যাওয়া হয়নি। কিভাবেই বা যাব এতদিন টানা বর্ষাকাল, আর বর্ষাকালে আমার একেবারেই বেরোতে ভালো লাগে না। শীতকাল এসে যেতেই যখন রাস্তাঘাট একদম শুকনো হয়ে গেছে তখন ঠিক করলাম একদিন ঘুরে আসি। ছুটির দিন দেখে বিকেল বেলায় বেরিয়ে পড়েছিলাম। আসলে কলকাতার মতো তো অনেক পার্ক বা ছোটখাটো বেড়ানোর জায়গা নেই তাই এইগুলোতেই যেতে হয় তাতে বাচ্চারও ভালো লাগে আর আমাদেরও একটু প্রকৃতির মাঝে থাকা হয়ে যায়।

IMG-20241121-WA0020.jpg

যদিও এখানে বড় বড় শপিং মল রয়েছে কিন্তু আমার শপিংমলে খুব একটা ঘুরতে যেতে ভালো লাগে না। যাইহোক তো আধঘন্টা ড্রাইভ করে পৌঁছে গেলাম খড়কওয়াসলা ড্যাম। ভেবেছিলাম সেখানে হয়তো কিছুই নেই। কিন্তু গিয়ে দেখি রাস্তার ধারে অনেক ছোট ছোট টেম্পোরারি দোকান যেখানে নানান ধরনের চটপটা স্ন্যাক্স বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝ বরাবর একটি ঘোড়া এবং একটি উট দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিশাল লম্বা ওর থেকে দেখে আমার মনে পড়ে গেল রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান মুভিতে একেন বাবু উটের পিঠে চড়ার আগে দেখে বলেছিলেন এত উঁচুতে উঠতে হয় বলেই এর নাম উট হা হা হা। উট দেখে মেয়ে বলল উট যে শুধু রাজস্থানেই থাকে তা নয় এখানেও বাঁচতে পারবে, এনে রাখা হয় না তাই। বাচ্চাদের মাথায় এমন অনেক কথাই খেলে যায় যা আমরা সাধারণত ভেবে দেখিনা।

IMG-20241121-WA0017.jpg

আমরা যতক্ষণে পৌঁছেছি ততক্ষণে সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। আর সমস্ত পাখি বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। অপূর্ব এই দৃশ্য লেকের পাশে বসে দেখব এমন কোন জায়গা ফাঁকাই নেই। এত ভিড় মানুষের তাছাড়াও দোকানের ভিড়। দোকানদার গুলো ড্যামের পাশেই দোকান পেতেছি এবং যতটুকু অংশ ফাঁকা সেখানে মাদুর পেতে তিতিক দৃশ্য উপভোগ করার ব্যবস্থা করেছে। তবে দোকানে কিছু না কিনে খেলে ওই মাদুর বার বসার জায়গাতে বসা যাবে না। কি অবস্থা ভাবুন না খেলেও জোরজবরদস্তি খেতে হবে।

20241121_152152_0000.png

কি খাব ভেবে ভেবে বিকেল বেলায় এক প্লেট পালং শাকের পকোড়া এবং পেঁয়াজি কিনে নিয়ে বসেছিলাম। আর সেই অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলাম দুচোখ ভরে৷ ড্যামের ওপারে বেশ কিছু পাহাড়ের সারি রয়েছে। সূর্যটা ঠিক তার উপরে। মেয়েকে বললাম ভালো করে তাকিয়ে দেখ সূর্যটা এক্ষুনি পাহাড়ের পেটের মধ্যে ঢুকে যাবে।। বেশ কিছুক্ষণ পর সেটাই ঘটলো। আর মেয়ে জিজ্ঞেস করল ** সূর্য ডুবে যাওয়ার পরেও কেন আকাশে আলো থাকে? ** সবকিছু ভালো করে না বুঝলেও ওর মত করে বুঝিয়ে বললে অনেকটাই বোঝে৷ তাই ওর মতো করে এই প্রশ্নের উত্তর দিলাম৷

IMG-20241121-WA0024.jpg

সূর্য ডুবে যাওয়ার পরও বেশ কিছুক্ষণ আলো ছিল তাই ওই সময়টাও আমরা ওখানেই বসে উপভোগ করলাম। অন্ধকার হয়ে যেতেই ফিরে এলাম। বাজারে টুকটাক কাজ ছিল সেগুলো মিটিয়ে বাড়ি চলে এলাম।

IMG-20241121-WA0025.jpg

একটা সুন্দর বিকেল এভাবেই ড্যামের ধারে প্রকৃতির মাঝে বসে কেটে গেল। আগে আগে এমন পরিস্থিতিতে বসে আমি অনেক কবিতা লিখতাম। এখন মনে হয় একটু প্রকৃতি দেখি কবিতা পড়ে লিখব কারণ সামান্য কিছুক্ষণ তো মোবাইল থেকে দূরে থাকা যাবে। আসলে লেখালেখি বা ব্লগ সবটাই তো মোবাইল দিয়ে করি তাই আমার স্ক্রিন টাইমটা অনেক বেশি।

IMG-20241121-WA0021.jpg

বেশ কিছু ফটোগ্রাফি করেছিলাম সেগুলোই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। বাড়ির পাশেই ঘুরতে যাওয়ার জায়গা তাই অনেকটা লম্বা জার্নি করতে হয় না। কেমন লাগলো বলুন পুনের বিখ্যাত খড়কওয়াসলা ড্যাম?

আপনাদের উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো আজ এ পর্যন্তই। আবার আসবো আগামীকাল নতুন কোন ব্লগ নিয়ে৷ আজ
টা টা

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণভ্রমণ ব্লগ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং আই ফোন ১৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র(https://what3words.com/winks.gambles.nothing)
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

PUSS.zip_-_14.png

PUSS.zip_-_18.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

কি একটা অবস্থা পৃথিবীর তিনভাগ জল আর একভাগ স্থল। তবুও কোন কোন জায়গায় পানির জন্য ড্যাম তৈরি করতে হয় বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখতে। তবে বেশ সুন্দর মনে হয় জায়গাটি, যা আপনার বর্ণনা ও ফটোগ্রাফির মাধ্যমে জানতে পারলাম। আর বৃষ্টির পানি দিয়ে চলে পুনে শহরের মানুষের জীবিকা।

গরমকালে সব শুকিয়ে যায় আপু। বৃষ্টির জলে পুষ্ট এরিয়া তো তাই৷

মাঝেমধ্যে বাইরের পরিবেশে যেতে ভালো লাগে। ঠিক তেমনি একটা বাইরের পরিবেশের সৌন্দর্য আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। যেখানে সূর্য ডুবে যাওয়ার পরেও কিছুটা সময় আপনারা উপস্থিত ছিলেন। অনেকটা ভালো লাগলো এত সুন্দর একটি স্থান সম্পর্কে জানতে পেরে এবং আপনাদের উপস্থিতি জেনে।

হ্যাঁ। একটু বেড়িয়ে এলে ভালোই লাগে৷

1000317397.jpg

1000317396.jpg