প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
পুজো শেষ। দিন তো এমনই হয়, আসে আর যায়৷ কত কথা জমে যায় লিখব লিখব করে লেখাও হয়ে ওঠে না৷ এই তো দিন কয়েক আগেই ষষ্ঠী মানে দুর্গাপূজার ষষ্ঠী ছিল। প্রবাসের এই সব ষষ্ঠী সপ্তমী অনেকটা "অন্ধের কি বা দিন কি বা রাত'র মতো। তাও যেহেতু ষষ্ঠী, বাড়ি থেকে রুটিন ফোন আসে৷ মাইকের শব্দ শুনতে পাই৷ খানিক কথা বলে রেখে দেওয়ার পর খুব ফাঁকা লাগছিল। চলে গেলাম নিচে৷ ভাবলাম লনে সামান্য ঘোরাঘুরি করি আর কিছু ছবি তুলি। এখানে দুর্গাপূজার মাইক না থাকলেও শিউলির অভাব নেই৷
মেঝের ওপর পড়েছিল। আমার ম্যাক্রো লেন্স টা লাগিয়ে ছবি তুলতে তুলতে মোবাইলে এক বন্ধুর ম্যাসেজ ঢুকল লিখেছে 'শুভ মহাষষ্ঠী'! সব কিছুর আগে মহা লিখে দিলেই ওজন বেড়ে যায় তাই না? অনেক কবি লেখেন, মহাজল, মহাঘর। দুর্গাপূজার তিথিতে মহা কেবলমাত্র অষ্টমীতেই বসে৷ কারণ অষ্ঠমী তিথিতেই অসুর বধ হয়েছিল৷
আবার এই দুর্গাপুজা কিন্তু আসল না। আসল দুর্গাপুজা তো বসন্ত কালে মানে চৈত্রমাসে যেটা হত৷ এই সময় দেবদেবীরা ঘুমোয়। কিন্তু রাম কোনভাবেই রাবণ বধ করতে পারছিল না, কৃত্তিবাসী রামায়ণের গল্প অনুযায়ী রাম যখন রাবণ বধ করতে যাচ্ছিল তখনই রাবণ রামের স্তুতি জপ করছিল। এমত অবস্থায় কিভাবে কেউ কাউকে বধ করতে পারে? তখনই রাম আরাধনা করে দেবী কে ডেকে আনেন। সাথে সমস্ত দেবকুল। সকলে অস্ত্র প্রদান করলেন আর বধ হল অসুর। এই গল্প বাল্মীকিরচিত রামায়ণে নেই৷ মূল মহাকাব্য বাংলায় অনুবাদ করার সময় কৃত্তিবাস এই সব জুড়ে দিয়েছেন৷ অনুবাদ সাহিত্যের ক্ষেত্রে এমন কান্ড ঘটেই থাকে৷
অনেক শিউলি ছিল। আমি স্টাইল দেখিয়ে একটা দুটোর ওপর ফোকাস দিয়ে তুলেছি। ছবিগুলো কেমন হয়েছে বলবেন কেমন?
আমাদের গ্রামের বাড়িতে অনেক শিউলি ফোটে৷ তবে দুর্গাপূজায় শিউলি ফুলের বিশেষ কোন দায়িত্ব নেই৷ এ শুধু বিছানার পাশে বা বইয়ের টেবিলে সুগন্ধি ছড়ানোর কাজে আসে। সাথে শোভাবর্ধকও৷
শোভাবর্ধক বলতেই মনে পড়ে দুর্গামায়ের সাজ। একসময় ছিল যখন সার্বজনীন ভাবে এই পুজোটা হত না৷ বড় বড় বনেদি বাড়ি বলা ভালো রাজবাড়িগুলোতেই দুর্গাপূজার প্রচলন ছিল৷ এই পুজোর এতো ব্যবস্থাপনা, খরচ সাধারণ মানুষ কিভাবেই বা সামলাত? তবে দেখতে যেত সকলেই, গ্রাম খাওয়ানোর প্রচলনও ছিল৷ এতো আড়ম্বর ছিল না৷ মুর্তিও সাধারণ ভাবেই গড়া হত। কিন্তু ব্রিটিশরাজ যখন নবাব সিরাজকে হারিয়ে দিলেন, আর শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণ দেবের সাথে জুটে গেল ধনসম্পত্তি নিয়ে তখন বাঙালির মনে বিশেষ জায়গা করে নেওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকার লন্ডন থেকে থার্মোকলের সমস্ত গয়না বানিয়ে নিয়ে আসতেন মা দুর্গার অলংকরণের জন্য। চেক হই হই রই রই ব্যাপার। এমন সাজসরঞ্জাম বাঙালি এর আগে কখনো দেখেনি। এক কথায় বলা যায় এইসবই দুর্গাপূজার শোভাবর্ধক হয়ে উঠেছিল।
আজকাল শুধু শরৎকাল বলেই নয় সেগুলি ফুল প্রায় সারা বছরই ফোটে। এই শিউলি গাছের তলায় গিয়ে দাঁড়ালে মনে হয় না কখন শরৎকাল আর কখনো হেমন্তকাল।
শরৎ পেরিয়ে যখন হেমন্ত আসে তখনই আরেকটা দুর্গাপূজা হয় যাকে আমরা জগদ্ধাত্রী বলে চিনি। তারও এক লম্বা গল্প আছে তারপরে একদিন আপনাদের সাথে শেয়ার করব। তবে এই যে বললাম থার্মোকলের সাজ তা আজও ওই জগদ্ধাত্রী ঠাকুরের গায়ে দেখতে পাওয়া যায়। এখন যেমন কলকাতাতেই সমস্ত কিছু তৈরি হয়, সেই সময় লন্ডন থেকে জাহাজে করে কন্টেইনার বোঝাই হয়ে আসতো। যেন ডাকমাধ্যমে ঠাকুরের সাজ আসছে৷ এ কারণেই এই থার্মোকলের সাজ সরঞ্জাম কে বলা হয় ডাকের সাজ।
ভাবী ভোলার নয়। তাই বাঙালিও ভোলেনি৷ শুরু হল স্বাধীনতার আন্দোলন। তারই বিশেষ প্রয়োজনে ঘরের দালান ছাড়িয়ে দুর্গাপূজা পৌঁছে গেল সার্বজনীন দরবারে। চার দিনের ভিড়ভাট্টা জাঁকজমক সবকিছুর মাঝে আজ বাঙালি যেমন উল্লাসে মেতে থাকে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী দিনগুলোতে সংগ্রামীরা আলাপ আলোচনার সুযোগে মেতে থাকতো। একেই বলে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যবহারও পরিবর্তন হয়।
দুর্গাপূজা নিয়ে অনেক কথা অনেক গল্প রয়েছে, আমরা ছোট থেকেই দুর্গাপুজোর সঙ্গে বড় হয়েছি। আবেগ আহ্লাদ সবই অন্য মাত্রায়। আজ যখন পড়াশোনা করে সমস্ত কিছুর ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করি তখন ছোটবেলার আনন্দ গুলো অনেকটাই ম্লান হয়ে আসে। এটা ঘটে হয়তো দীর্ঘদিন গ্রাম বাংলা থেকে দূরে আছি সে কারণে। কিন্তু সত্যি বলতে কি আজকাল দুর্গাপূজার আলাদা অনুভূতি প্রায় কিছুই নেই।
মুঠো মুঠো শিউলি ফুল কুড়িয়ে ঘরে এনে উদযাপন করি শরৎকাল। এই মধুর গন্ধই যেন দুর্গাপূজার গন্ধ। এখানে কাশফুল নেই তাই যাবতীয় সকাল সেগুলি ফুল দিয়ে মিটিয়ে ফেলি। এই পড়ার দেশে অবশ্য দুর্গাপূজা না থাকলেও নবরাত্রি পূজা হয়। সেও দুর্গারই এক রূপ। সে গল্প নয় আরেকদিন করবো।
সেদিনের শিউলি ফুল কুড়াতে গিয়ে এবং শিউলি ফুলের ছবি তুলতে গিয়ে যে কথাগুলো বার বার মনে হচ্ছিল সেগুলোই আজ আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম। সাথে ছবিগুলোও দিয়ে দিলাম। ছবিগুলো হয়তো পর পর দিলে ভালো হতো কিন্তু লেখাটা ছবির অনুপাতেই লিখেছি তাই মাঝে দিলাম।
আজকের অনুভূতি ও গল্পকথা এ পর্যন্তই রইল, আবার আসবো আগামীকাল অন্য কোন লেখা নিয়ে। আপনারা ততক্ষণ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
টাটা
পোস্টের ধরণ | অনুভূতি ও গল্পকথা |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit