ত্রিবান্দমের নেপিয়ার মিউজিয়াম, পর্ব-১ || ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া -২||

in hive-129948 •  3 days ago  (edited)

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


InShot_20241230_223359307.jpg








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



কেরালা ট্যুরের আজ শেষ দিন। বলা ভালো আজ শেষ রাত। আমি আছি এর্নাকুলাম জংশনের পাশেই একটি হোটেলে। সারাদিন ঘোরাঘুরির পর এসে ভাবলাম একটু একটু করে পুরো ট্যুরের নানান বিশেষ জিনিসগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করি। এই ট্রিপে আমি অনেক কিছুই নতুন দেখেছি, আবার অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই সব নিয়েই আমার প্রিয় ভারতবর্ষের এই সিরিজ ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া। এরই অন্তর বিভাগে আজ আপনাদের সাথে কেরালার রাজধানী ত্রিবান্দমে অবস্থিত বিখ্যাত নেপিয়ার মিউজিয়াম সম্পর্কে দু' চার কথা জানাবো এবং কয়েকটি বহু প্রাচীন জিনিসের ছবি দেখাবো।

নেপিয়ার মিউজিয়াম বা নেপিয়ার জাদুঘর ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা উথরাম থিরুনালের উদ্যোগে চালু হয়েছিল। খুব ছোট করেই চালু হয়েছিল তবে তার ইচ্ছেতেই এই জাদুঘরের পত্তন। আসলে তিনি চেয়েছিলেন কেরালা রাজ্যের নানান প্রত্নতত্ত্ব শিল্প সংস্কৃতি সমেত বহু আরকিটেকচার সংরক্ষণ করতে এবং সারা বিশ্ববাসীর কাছে কেরালার গৌরব তুলে ধরতে।

কেরালা কে বলা হয় ঈশ্বরের নিজের দেশ। কেন তা এই কয়েকদিন থেকেই বুঝেছি। সবটা না হলেও কিছুটা তো বুঝেছি। কেরালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে শুরু করে শিল্পকলার জুড়ি মেলা ভার। এতদিন আমি জানতাম বাংলার বাইরে এতখানি শিল্পের কদর বোধহয় আর কোথাও নেই। সংস্কৃতিও নেই। কিন্তু এখানে এসে রাস্তাঘাটে মানুষজনের সাথে কথা বলে নানান মিউজিয়াম দেখে বুঝেছি কেরালা বাংলার থেকে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। কি অসম্ভব ঐতিহ্য রয়েছে তার নিজের চোখে না দেখলে বোঝাই যাবে না। সেই ঐতিহ্যেরই যৎসামান্য প্রতিবিম্ব হল নেপিয়ার মিউজিয়াম। এই মিউজিয়াম বর্তমানে প্রায় ৫৫০ টি প্রদর্শনীর আবাসস্থল। এটিতে হাতির দাঁতের খোদাই, রাজকীয় সংগ্রহের জিনিসপত্র, কাঠের ভাস্কর্য এবং খোদাই, ব্রোঞ্জের ছবি এবং ভাস্কর্য, ৫০০০ টিরও বেশি মুদ্রা যা অতীতে একবার ব্যবহার করা হয়েছিল এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে। এই সমস্ত কিছু ছবি আমি তুলতে পারিনি। তাছাড়া ভিডিও এলাও ছিল না। তাই যে কটা ছবি তুলেছি সেগুলোই পর্ব হিসেবে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। কারণ আমার মনে হয় এত সুন্দর ভাস্কর্য এবং এত পুরনো জিনিস যা আমার সাথে সাথে আপনাদেরও দেখলে ভালো লাগবে।

তাহলে চলুন বাড়িয়ে আজকের ছবিগুলো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি।

ছবি -১

InShot_20241230_224241444.jpg

মিউজিয়ামে ঢোকার পর আমরা শুরু করেছিলাম বাম দিক থেকে। এই ছবিটির মুর্তিটি প্রথমেই ছিল। ভগবান বিষ্ণুর ছবি৷ যা এইটথ সেঞ্চুরিতে বানানো হয়েছিল পল্লভ-র আমলে। মুর্তিটি সম্পূর্ণ ব্রোঞ্চের তৈরি।

ছবি-২

InShot_20241230_225301823.jpg

দক্ষিণ ভারতে যখন চোলরা রাজত্ব করছেন এই মূর্তিটি সেই সময় বানানো হয়েছিল। এই মুহূর্তটিও ভগবান বিষ্ণুর।

ছবি-৩

InShot_20241230_230438379.jpg

এই মূর্তিগুলো আকারে খুবই ছোট। একটি বড় কাঁচের বক্সের মধ্যে রাখা রয়েছে। আগের মূর্তিগুলো কিন্তু খোলা রাখা ছিল। আমি সামান্য এডিট করেছি যাতে করে আপনারা খুব স্পষ্ট দেখতে পান বিশেষ করে ব্যাকগ্রাউন্ডটা।

প্রথম মূর্তি টি হল নারায়ণের অনন্ত সজ্জা, তার পরের জন বিষ্ণু, এবং তার ওপরে লক্ষীনারায়ন তার সন্তান-সন্ততি নিয়ে বসে রয়েছে।

ছবি-৪

InShot_20241230_230751225.jpg

এতক্ষণ যে কটা মূর্তি শেয়ার করেছিলাম সেগুলো সবই ব্রোঞ্চের তৈরি। আর এই ছবিটা কিন্তু পুরোটা কাঠের। আর কী সুক্ষ্ম ও নিখুঁত কাজ!

মুর্তিটি দ্বারপালকার।

ছবি- ৫

InShot_20241230_230959031.jpg

এই মুর্তিটিও কাঠের তৈরি। পঞ্চদশ শতকে তৈরি করা হয়েছিল। কে বলুন তো? যাকে সহজে বা অনেক বেশি মর্তে দেখতে পাই না।

ইনি হলেন ব্রহ্মা। তিন মাথা ওয়ালা ব্রহ্মা।

ছবি- ৬

InShot_20241230_231233498.jpg

পঞ্চদশ শতকে কাঠের তৈরি করা এই মূর্তিটি হলো ভগবান বিষ্ণুর।

আপনারা কেমন উপভোগ করছেন আমার আজকের ব্লগটি? আমি যেদিন দেখেছিলাম বিশ্বাস করুন অসাধারণ লেগেছিল।

ছবি- ৭

InShot_20241230_231655764.jpg

দ্বজার ওপর দাঁড়িয়ে আছে ত্রিপুরান্তকা মুর্তি৷ বলে রাখি ত্রিপুরান্তকা হল মহাদেব অর্থাৎ শিবেরই একটি রূপ, যাঁর হাতে তীর ধনুক রয়েছে৷ যেই রূপে তিনি অসুরদের তিনটি রাজ্য ধ্বংস করেছিলেন।

ছবি- ৮

InShot_20241230_231855171.jpg

এই মূর্তিটিও পঞ্চদশ শতকে তৈরি হয়েছিল। দেবতাদের রাজা স্বয়ং ইন্দ্রদেবের মূর্তি। যার বাহন হল ঐরাবত অর্থাৎ সাদা হাতি। চার হাত ওয়ালা ইন্দ্রদেব। হাতির মাথায় বসে আছেন৷ সামনের দুটো হাত আসনে বসে আছে বা ধ্যানে বসতে চাওয়া হাত৷ আর পেছনের দুটো হাত অস্ত্র নিয়ে।

ছবি- ৯

InShot_20241230_232059612.jpg

বিখ্যাত মহাকাব্য রামায়ণের সেই চরিত্র যাকে বিষ্ণুর সপ্তম অবতার হিসেবে জেনে আসছি। হ্যাঁ ইনি হলেন রামচন্দ্র আর সাথে হনুমান। তবে এ তাদের বনবাস না৷ রাজকীয় বস্ত্র পরে আছেন যে। অর্থাৎ রামরাজ। হা হা হা

ছবি- ১০

InShot_20241230_232207209.jpg

দক্ষিণা মূর্তি। যা দেবাদিদেব মহাদেবের আরেক রূপ। যিনি বসে আছেন বীরাসনাসনে৷ দক্ষিণা মূর্তিটি সাধারণত সাধন ভজন ও য়োগা ইত্যাদির ঈশ্বর বলে মানা হয়৷

নেপিয়ার মিউজিয়ামের ছবি শেয়ারের প্রথম পর্ব আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আবার আগামীকাল আসব৷ ততক্ষণ আপনারা এটাই উপভোগ করুন। আর আনন্দে থাকুন। আসি।

টা টা।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণজেনারেল রাইটিং
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমআইফোন-১৪
লোকেশনত্রিবান্দম, কেরালা
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, ইনশট


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNpHpfrvWwu1NyawLk5VomqzbmpmRPBqvbat59CwrDpXB7VjqK4Wx1cqY9zZNYqJwQ6PTwYbpB8.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNpJoZ3XxcLQ7Q5nuJCmx5hnTtBeSHggK5QRgSowHbkG8LXCuvhUoAEiQChEMXRtaN4v21MHMvN.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

1000365568.jpg1000365567.jpg1000365566.jpg
1000365565.jpg1000365552.jpg

ভারতবর্ষের সব রাজ্যের কিছু না কিছু নিজস্ব হেরিটেজ ও কালচার আছে। কেরালাও তার বাইরে নয়। আর যেহেতু ভারতবর্ষে অনেক পুরনো এবং ঐতিহ্যশালী একটি দেশ, তাই সেখানে ইতিহাসের শেষ নেই। বাংলায় যেরকম পাল সেন বংশের রাজত্ব ছিল, তেমনি দক্ষিন ছিল চোল ও চালুক্য বংশ। আমরা সমৃদ্ধশালী রাজ্য বিজয়নগর ও বাহমনীর ইতিহাস পড়েছি। দক্ষিণ ভারতের সংস্কৃতি ভারতবর্ষের বুকে এক স্বতন্ত্র সংস্কৃতি হিসেবেই পরিচিত। তাই এইসব প্রাচীন মূর্তি সেই ভিন্নধর্মী সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।

একদমই তাই। দক্ষিণের রাজারা অনেক স্থাপত্য বানিয়ে গেছেন। এবং আমি যতদুর দেখলাম দক্ষিণের স্বতন্ত্রতার আলাদাই মাত্রা।

এটা কিন্তু আপনি ভাল করেছেন আপু। সম্পূর্ণ ভ্রমণের বিষয়গুলো যদি একটু একটু করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেন তাহলে অচেনা এই স্থান সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাবো এবং অনেক কিছু দেখার সুযোগ পাবো। যেমন আজকের দিনটাতে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট উপহার পেয়ে গেলাম এবং বেশ কিছু জানার সুযোগ পেলাম। এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

হ্যাঁ ভাইয়া৷ একটু একটু করে দিলে পড়তেও সুবিধে আর আমার সাজাতেও সুবিধে৷ কারণ এই কয়েকদিন অনেক কিছুই দেখলাম।

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই৷

ত্রিবান্দমের নেপিয়ার মিউজিয়াম দেখে অসম্ভব ভালো লাগলো দিদি।কেরালার বেশ কিছু ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারলাম সঙ্গে নতুন ধরনের মূর্তির সঙ্গে পরিচিত হলাম।ফটোগ্রাফিগুলো দুর্দান্ত ছিল, ধন্যবাদ দিদি।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

নেপিয়ার মিউজিয়ামে আরও অনেক কিছু রয়েছে৷ যা সত্যিই দেখার মতো৷ আমি অনেক ছবি তুলেছি৷ আস্তে আস্তে শেয়ার করব৷