প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
কন্যাকুমারীতে অ্যাকোরিয়াম দেখার পর আমরা বাড়ি ফিরে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে রেস্ট নিয়ে বিকেল বেলায় সূর্যাস্ত দেখতে গিয়েছিলাম। সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতি তা অন্য একদিন আপনাদের সাথে শেয়ার করব। ঐদিনটাই ছিল আমাদের কন্যাকুমারীতে শেষ দিন।
পরের দিন সকাল সকাল আমরা ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিয়ে অটো করে সোজা চলে এলাম কন্যাকুমারী স্টেশনে। এখান থেকে আমাদের ট্রেন সকাল সাড়ে সাতটায়। এবং আমরা প্রায় চার ঘন্টা জার্নি করে পৌঁছে গিয়েছিলাম থিরুবানান্থপুরামে। অর্থাৎ আমরা কেরালাতে এসে গেলাম ।
কেরালা স্টেশন থেকে আবারো অটো ভাড়া করে আমরা আমাদের হোটেলে চলে গিয়েছিলাম। সেখানে পৌঁছে ব্যাগ রাখার সাথে সাথে বুঝলাম যে আমাদের সবারই প্রচন্ড খিদে পেয়েছে। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল হওয়ার কারণে এখানে শীতের কোন পরস্পার ছিল না উল্টে প্রচন্ড গ্রীষ্মের রোদের তাপ। পথ চেয়ে এই সমস্ত জায়গায় নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া থাকার কথা।
আমাদের টিমের বাকিরা অনেকেই খাবার বাড়িতে জমাটো দিয়ে আনিয়েছিল। কিন্তু আমার খুব কেরালিয়ান অথেন্টিক খাবার খাওয়ার ইচ্ছে তাই আমরা বেরিয়ে পড়লাম খাবার হোটেল খুঁজতে। যদিও ফোর স্টার হোটেল হওয়ার কারণে আমাদের হোটেলে খাবার রেস্টুরেন্ট ছিল কিন্তু সেখানে সমস্ত রকমের খাবার আর প্রচন্ড দাম। সামান্য একটু দূর হেঁটে গিয়ে পেয়েছিলাম একটি ছোট্ট বাড়ি যেখানে তারা স্বামী-স্ত্রী থাকেন এবং ঘরোয়া রান্নাই খেতে আসা মানুষদের পরিবেশন করে। এই দেখে তো আমার খুবই ভালো লাগলো এবং কথায় কথায় দেখলাম ওখানে একটি ছেলে যে বিরিয়ানি বানায় সেই ছেলেটির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে। বাঙালি মানুষ পেয়েছে ছেলেটিও আমাদের সাথে বেশ ভালোই কথাবার্তা বলল।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে হোটেলে ফিরে সামান্য রেস্ট নিয়ে আমরা বিকেল বেলায় বেরিয়ে পড়েছিলাম কেরালার সব থেকে বিখ্যাত মন্দির স্বামীপদ্মনাভ মন্দির দেখতে। সহ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দির মূলত বিষ্ণুর মন্দির। মূর্তি দেখে বুঝেছিলাম এটি নারায়ণের অনন্ত সজ্জা। মন্দিরের মূল অংশটি পুরোপুরি সোনার তৈরি। সেখানে ঢোকার মুখেই বিশাল একটি তুলসীর মন্দির যেটি সোনার তৈরি এবং একটি বিরাট সোনার তালগাছ। আমি ভেবেছিলাম এগুলো এমনি তৈরি বাইরেটা সোনালী রঙের কোটিং করা তাই সোনার বলা হয়। কিন্তু ওখানকার পুলিশরা বললেন যে না বাইরের পুরো মোড়কটাই সোনা দিয়ে বাঁধান। আর সেই কারণেই মন্দিরটি বিখ্যাত। এই মন্দিরের বিরাট লাইন পরে তাই আমরা অত্যন্ত তাড়াতাড়ি করে চলে এসেছিলাম। আর এই সোনার জিনিস গুলো ছাড়াও অসম্ভব সুন্দর পাথরের ওপর কাজ করা মূর্তি চারপাশে সাজিয়ে রাখা ছিল। যেগুলো বহু বছরের পুরনো। আর বেশিরভাগ মূর্তি শিবের নানান রূপ। আমার সবথেকে ভালো লেগেছিল নটরাজ মূর্তির কারুকাজ।
মন্দিরের ভেতরে টাকা পয়সা মোবাইল বা কোন রকমেরই ব্যাগ নিয়ে যাওয়া যায় না। এছাড়াও ফটোগ্রাফি করা একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। তাই ভেতরের কোন ছবিই আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারব না। বাইরে থেকেও ফটোগ্রাফি করার অনুমতি ছিল না। তবে পেছনদিকে বা সামান্য দূরে গিয়ে ক্যামেরার জুম করে ছবি তুলেছিলাম। তাতে খুব একটা ভালো ছবি আসেনি। একটা ছবি একটু লুকিয়ে তুলেছিলাম। আসলে বাইরে থেকে মন্দিরের ছবি তোলার পারমিশন ছিল আগে। কিন্তু এর কারণে মন্দিরের কোন ছবি বিক্রি হত না। ভেতরের বিষয়টা আলাদা কারণ সেখানে ভারতীয় শিল্প-সংস্কৃতির অনেক ঐতিহ্য রয়েছে যার রক্ষা আজকালকার দিনে নিতান্ত প্রয়োজন।
আমাদের প্রায় ২-৩ ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছিল মন্দিরটি দেখতে। শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের প্রসাদ হিসেবে পেয়েছিলাম সামান্য একটু সেদ্ধ করা ভাত যা ম্যাপল সিরাপ বা খেজুর গুড় জাতীয় কোন একটি গুড়ে ডোবানো। খেতে অপূর্ব ছিল। পদ্মনাভস্বামী মন্দিরে যাবার অদ্ভুত নিয়ম। সবাইকে পা ঢাকা পোশাক পরতে হবে। মেয়েরা মূলত শাড়ি আর ছেলেদের ধুতি। ছেলেদের ওপরই অংশ কিন্তু কোন জামা থাকবে না অর্থাৎ খালি গায়ে।
মন্দির দেখার পর হাতে বিশেষ একটা সময় ছিল না তাই আমরা অল্প দূরত্বে চলে গিয়েছিলাম ভেট্টুকাড়ু বিচে৷
যদিও বিচে না গিয়ে আমার ইচ্ছে ছিল শহরটা ঘুরে দেখার। কারণ সেই দিনটি ছিল পঁচিশে ডিসেম্বর। থিরুভানান্থাপুরামে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ থাকার কারণে প্রচুর বড় বড় চার্চ রয়েছে৷ আর শহরটা আলোয় আলোয় সেজে উঠেছিল। কিন্তু চোদ্দ জনের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে গিয়ে সে আর হল না৷ যাইহোক ভেট্টুকাড়ু বিচে সূর্যাস্ত দেখলাম। আর পেছনেই একটি বিরাট চার্চ। সেখানে প্রোগ্রাম হচ্ছিল। ভালোও লাগছিল।
ওখানে দাঁড়িয়ে আমি সম্ভবত একটি পোস্ট লিখেছিলাম বলে আমার এখন মনে পড়ছে। বেড়াতে গিয়েও চেষ্টা করেছি কাজ করে যাওয়ার। এটা আমার কাছে অভ্যেসের মতন।
২৫শে ডিসেম্বর হওয়ার কারণে চার্চে ভালই মানুষের আনাগোনা ছিল। আর গোয়ার মতনই দেখলাম এখানে সমস্ত ধর্মের মানুষেরই ভিড়। এই দৃশ্যগুলো দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। এবং ভারতবর্ষ বলেই হয়তো এমন বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। মানুষ ধর্মের উপরে উঠে উৎসবকে আপন করে নিয়েছে। এর থেকে বেশি আনন্দের আর কি হতে পারে।
এই দিন রাস্তায় প্রচুর ভিড়, তাই খুব সহজেই আমরা ক্যাব পাচ্ছিলাম না হোটেলে ফেরার জন্য। অনেকটা সময় অপেক্ষা করার পর উবের অ্যাপের সাহায্যে ক্যাব পেয়েছিলাম।
থিরুবনন্তপুরমের প্রথম দিন আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আবার আসবো পরবর্তী পোস্টে এবং আগামী দিনগুলোর গল্প নিয়ে।
আজ এ পর্যন্তই
টা টা

পোস্টের ধরণ | ভ্রমণ ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | আইফোন ১৪ |
লোকেশন | থিরুভানান্থাপুরাম শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দির(https://what3words.com/clay.undivided.develops) ভেট্টুকাড়ু বিচ (https://what3words.com/wreck.extremely.brothers) |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/neelamsama92551/status/1891175241252032897?t=YAYK_aiQfj-LM49RbpI6zw&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
তোমার চোখ দিয়ে ঈশ্বরের নিজের দেশ কেরালা দেখতে পেলাম।জীবনে কখনো যেতে পারবো কিনা জানিনা কখনো কল্পনাও করতে পারি না যে যাবো!মন্দিরের বাহিরের দৃশ্য দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেল না জানি ভেতরকার দৃশ্য আরো কত চমৎকার ছিলো..!ফোন নেওয়ার পারমিশন থাকলে হয়তো বা ভিতরের দৃশ্যগুলো দেখতে পেতাম!তবে যোতটুকু দেখলাম তাতেই শান্তি লাগছে।ওখানে গিয়ে ঘরোয়া পরিবেশের খাবার পেয়েছো এবং সেই সাথে বাঙালির দেখা সব মিলিয়ে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছো তা তোমার পোস্ট পড়েই বুঝতে পারলাম।অসম্ভব সুন্দর পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।ঈশ্বর তোমাকে ভাল রাখুক আর তোমার মাধ্যমে যেন আমরা আরো অনেক ভালো কিছু জানতে পারি দেখতে পারি সেই প্রত্যাশা করি।🙏❤️
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মন্দিরটা তো ঐতিহাসিক। খুব বিখ্যাত মন্দিরের একটা। এর মাহাত্ম্য অনেক৷ তবে খুব কড়াকড়ি নিয়ম। চুরি করেও ছবি তোলা যায় না৷ আর ভেতরে তো কোনভাবেই না৷ সত্যিই বৃষ্টি সেই অপূর্ব স্থাপত্যের ছবি তুলে আনতে পারলে দেখতে। মানুষ তখনকার দিনে ছেনি হাতুড়ি দিয়ে এতো সুক্ষ্ম কারুকাজ করেছেন। আর জানো সিলিং এ কিছু কাজ ছিল আর সেগুলো প্রতিটা কড়িবর্গার সাথে যুক্ত। সব কটার একই মাপ। কিভাবে মানুষ এমন কাজ করত সেটাই আশ্চর্যের৷
জীবন সুযোগ দিলে চলে এসো। ভালো লাগবে৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit