প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
শিব ও দূর্গার সন্তান, দেবতাদের সেনাপতি কার্তিকের পুজো বাংলার ঘরে ঘরেই হয়, আর বেশ ধুমধাম করে হয়। পশ্চিমবঙ্গের নানান জায়গায় কার্তিকের নানান ভাবে পুজো হয়, কোথাও তিনটি কার্তিক একসাথে কোথাও দুটো কার্তিক একসাথে। তবে দক্ষিণ ভারতীয় অঞ্চলগুলিতেও কার্তিক পুজো বেশ ধুমধাম করেই হয়। এছাড়াও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, মরিশাস ইত্যাদি দেশেও কার্তিক মুরুগান হিসেবে পূজিত হন। তবে বাংলার ঘরে ঘরে কার্তিক ঠাকুর ফেলার চল রয়েছে।
ছোটবেলা থেকে শুনতাম নব দম্পতিকে বা নিঃসন্তান দম্পতিকে কার্তিক ঠাকুর ফেলা হয় কারণ কার্তিক পুজো করলে তাদের কোল আলো করে পুত্র সন্তান আসবে। তবে আমাদের কাছে কার্তিক ফেলা নিতান্তই মজার। আমাদের মাসতুতো মামাতো ভাই বোনদের যে গ্রুপটা রয়েছে তারা সবাই নিজেরাই নিজেদের কার্তিক ঠাকুর ফেলেছে। তো গত জুলাই মাসে আমার মামাতো দাদার বিয়ে হয়েছে। চল বা প্রথা বা নিয়ম বা মজা অনুযায়ী এ বছর আমরা ওই দাদাকেই কার্তিক ঠাকুর দিয়ে আসবো।
কার্তিক ঠাকুর দেওয়া হয় পূজোর একদিন বা দুদিন আগে। কিন্তু আমার দাদা বি আই টি মিশ্রা রাঁচির প্রফেসার, বাড়িতে ছুটি ছাড়া আসে না। তাই আমরা ঠিক করলাম কালীপুজোর ছুটিতে যেহেতু আমিও রয়েছি এবং ওই দাদাও এসেছে তো কালীপুজোর দিনই আমরা কার্তিক ঠাকুর ফেলে আসবো। আমার নিজের দাদাকে বললাম, দাদা গিয়ে ঠাকুর বায়না করলো। কিন্তু গ্রামের দিকে তো আর কুমোরটুলির মতো কাজ হয় না, তাই এত তাড়াতাড়ি রেডি কার্তিক ঠাকুর পাওয়া যায়নি। তাও লোকটি বলল একটা কার্তিক ঠাকুর সে করেই দেবে।
কিন্তু পেটুয়া লোকটি কার্তিক ঠাকুর কি করবে তার অর্ডারের কালী ঠাকুর টাই শেষ করতে পারিনি বলে গায়েব হয়ে গেছিল। এদিকে কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি না পেলে আর তো দেওয়া যাবে না, তাই একটা গাড়ি নিয়ে দাদা ও আমার কন্যার বাবা মিলে খুঁজতে গেল৷ তাকে খুঁজে এনে কার্তিকের চোখ মুখ অঙ্কন করিয়ে জামা কাপড় পরিয়ে যখন আনে তখনই রাত্রি প্রায় দশটা। এদিকে আমাদের সবার রাত জেগে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার প্ল্যান রয়েছে। তো আমরা ঠিক করলাম ভোররাতে যাব কার্তিক দিতে তার আগে আমরা কিছু ঠাকুর দেখে আসি। ঠাকুর দেখতে গিয়ে মামাতো দাদা বৌদির সাথে রাস্তাতেই দেখা হয়ে গিয়েছিল। হাসিখুশি আলাপ-আলোচনা করে চলে এলাম। এসে কার্তিক দিতে যাওয়ার যখন প্রস্তুতির নেয়া হচ্ছে তখন লক্ষ্য করলাম কার্তিকের হাত কাঁচা। আর বেশ কিছু জায়গায় রং উঠে গেছে। খুব স্বাভাবিক এত তাড়াতাড়ি মধ্যে কোন কিছুই কি আর সুন্দর গোছানোভাবে হয়? এদিকে ঠাকুর দেখে ফিরতে ফিরতে রাত্রি আড়াইটা হয়ে গেছে, তখন ঠাকুর কিভাবে ঠিক করব সেটা চিন্তা করছি। আমার বৌদির থেকে তার ফাউন্ডেশন ক্রিম নিলাম আর বাড়ি তৈরীর সময় যে পুটটি বেশি হয়েছিল সেখান থেকে একটুখানি নিলাম। এইসব মিলিয়ে ঝুলিয়ে কার্তিক সারাই হলো, এদিকে তার গায়ের ওড়না খুলে ঝলছে। তাকে আবার হট গ্লু গান পিন এবং ফেভিকল ইত্যাদি দিয়ে যেখানে যেমন পেরেছি গুছিয়ে দিয়েছি।
সবই তো সারাই হলো কার্তিক যাবে কিসে! এত বড় কার্তিক গাড়িতে ঢোকাতে গিয়ে হাতটা ভেঙে গিয়েছিল। দাদা তখন বলল তাহলে বাইকে করেই চলে যাবে। তাহলে আমরাই বাজাবো কিভাবে। তখন করলাম কি বাইকে কার্তিক তুলে দিলাম, দাদ ও উনি দুজনে মিলে বেরিয়ে গেলে। এদিকে আমি গাড়িতে বাকিদের নিয়ে বেরলাম। এতো রাতে রাস্তাঘাট একেবারে শুনশান। কালীপূজার দিন গ্রামের দিকে রাস্তায় মাতাল ছাড়া কাউকেই দেখা যায় না৷ খুব সাবধানে চালিয়ে গেলাম। আমার আবার রাতে চালাতে অসুবিধে হয়।
তাড়াহুড়োর মধ্যে আমরা মিষ্টির প্যাকেট, চকোলেট বোম সবই নিতে ভুলে গেছি। এতো রাতে দোকানোও খোলা নেই যে কিনে নেব৷ তবে কি ফিরে আসব? তা না করে চলেই গেলাম। আসলে সময় সুযোগ দুটোরই বড় সমস্যা ছিল।
মামাদের পাড়ায় পৌঁছাতে আধঘন্টা লেগে গিয়েছিল। রাস্তায় আমাদের মতন কার্তিক-বাহী আরও বেশ কিছু গ্রুপ দেখলাম। সবাই সবাইকে উৎসাহ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আসল সমস্যা হল মামাবাড়িতে গিয়ে৷ ওদের পাঁচিল টপকে কার্তিক তোলা খুবই কঠিন। এদিকে বাইক থেকে কার্তিক নামিয়ে রাখতেও সমস্যা৷ সমস্যার সমাধান করতে মামাদের পাড়ার কালীপূজা প্যান্ডেলের ছেলেপুলেরা এলো। তাদের বিরাট উৎসাহ৷ সকলেই বলছে "উকিলবাবুর বাড়ি কার্তিক এসছে, ভোজ খাবো" হা হা হা৷
ওরাই ধরাধরি করে নামালো আর পাঁচিলেও উঠল, সাথে আমার দাদা। আমরা বাইরে থেকে দেখছি। ধুপ মোমবাতি আর দাদা বৌদির উদ্দেশ্যে লেখা কবিতা চিঠি সব ধরিয়ে দিলাম এক এক করে। কিন্তু চকলেট বোম তো নেই। ওই পাড়ার ছেলেরাই তাদের বোম টোম এনে ফাটিয়ে দিল৷ কিন্তু আমরা আর কেউ ডাকাডাকি করিনি। অনেক রাত হয়েছিল, পরের দিন আমায় কলকাতা যেতে হত৷ তাই তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম৷
এখন কার্তিক পুজোর দিন ওই কার্তিকঠাকুর পুজো হবে৷ কিন্তু আমি তো নেই৷ তাই ভোজও খাওয়া হবে না। তবে আমাদের এই মজার পরিনাম খুব একটা খারাপ না। মামাবাড়ির সবাই ও বউদির বাড়ির সবাই বেশ আনন্দ পেয়েছে। সাথে আমাদের ছানাপোনারাও৷ তারা তো আর এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়নি আগে।
আজকের জীবনের গল্পে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম আমাদের যুগ্ম দুষ্টুমি আর মজার একটি কান্ড। কেমন লাগল জানাবেন। আবার আসব অন্য কিছু নিয়ে৷ এখন আসি।
টা টা
পোস্টের ধরণ | লাইফস্টাইল ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | আই ফোন ১৪ |
লোকেশন | পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ইনশট |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
https://x.com/neelamsama92551/status/1857316949132288325?t=Rz8KgG7RhztZFDsXKmVMMQ&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
দারুন মজার একটি ঘটনা শেয়ার করলি। কার্তিক ফেলা বাংলার ঘরে ঘরে এক মজা হিসেবেই পরিচিত। তবে ঘটনাটি পড়তে পড়তে খুব হাসছিলাম। এমনভাবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কোথা কার্তিক ফেলা খুব কঠিন একটি বিষয়। তবে কপাল ভালো সম্পূর্ণ পর্বটি নিশ্চিন্তে সম্পন্ন হয়েছে। দারুন একটি মজার পোস্ট।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হে হে হে। মজাই তো বলো। যা দিনকাল আসছে এর পর অনলাইন ফেলতে হবে৷ তখন তোমায় আমি পরিবার সমেত মা দূর্গা ফেলব। 😜
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পোস্ট টা পড়ছিলাম আর কল্পনা করছিলাম,মনে হচ্ছিল আমিও আপনাদের সাথেই ছিলাম এই মিশনে।তবে মজার জন্য কিন্তু আপনাদেরও বেশ ভাল পরিশ্রম হয়েছে,ভাল ডেডিকেশন দেখিয়েছেন। ধন্যবাদ দিদি মজার মুহুর্তগুলো শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মিশনই বটে! প্রত্যেকেই কার্তিক দিতে গেলে কিছুনা কিছু ভোগান্তি হয় ভাই৷ তবে এটাই তো মজার৷ আজ মামাদের বাড়িতে এই কার্তিকের পুজা হচ্ছে৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বেশ মজা পেলাম লেখাটি পড়ে। এভাবে যে কারও বাসায় কার্তিক রেখে আসে জানা ছিল না। তবে মজা করার জন্য বেশ কস্ট করতে হলো আপনাদের। শেষ পর্যন্ত যে কাজটি সুসম্পন্ন করতে পেরেছেন জেনেই ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হা হা হা। আপু এক একজনের বাড়িতে দুটো করেও কার্তিক পড়ে যায়। মানে কেউ একদল দিয়ে এলো অন্যরা জানে না তারা আবার দিয়ে দিল! এরমও হয়েছে৷ খুব মজা হয় বিষয়টা নিয়ে৷ আজ তো কার্তিক পুজো। গতকাল রাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখার মতো, বাইকে বা স্কুটিতে বা গাড়িতে কত যে কার্তিক যাবে। হা হা হা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit