শারদীয়া কনটেস্ট -১৪৩১ || নবমী দশমীর প্রবাস পুজোর ছবি||

in hive-129948 •  20 days ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,



কেমন আছেন সবাই? আশাকরি বেশ ভালই আছেন। হেমন্তের দিনগুলো আপনাদের খুব একটা কাবু করতে পারেনি বলেই ধারণা করছি৷ আপনাদের সবার সুস্থতা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।

Onulipi_11_03_03_41_36.jpg

গতকাল পুনের কিছু পুজোর ছবি দেখিয়েছিলাম আপনাদের৷ এর মধ্যে সপ্তমীর পুজোর পোস্ট তো আগেই করেছিলাম। এদিকে অষ্টমী থেকে পোস্ট করব করব ভেবেও করা হয়নি। আসলে এতো ব্যস্ততা পুজোর পর থেকে৷ ছবিগুলো না গুছিয়ে উঠতে পারলে তো করাও হয় না৷ আর আপনারা তো জানেনই আমি কোনদিনই যেমন তেমন করে পোস্ট করতে পারি না৷ তারপর দাদা কনটেস্ট ঘোষণা করলেন যখন ভাবলাম আর আলাদা করে পোস্ট করে কাজ নেই একেবারে কনটেস্টের থ্রুইই দেখাব৷

ছবি শুরু করার আগে বলি বিগত ছয় মাসই হল আমি পুনেতে থাকি৷ তার আগে এক বছর গোয়া তারও আগে প্রায় ন'বছর মুম্বাইতে। মানে থানে তে। থানে পুনের মতই আর একটি জেলা৷ এতো বছর থাকার ফলে আমার দ্বিতীয় হোমটাউন হিসেবে আমি থানেটাই ভেবে ফেলি৷ সত্যি বলতে কি খুব মিসও করি৷ ওখানকার জীবনযাপন খুবই প্রাণবন্ত ছিল। বন্ধুরা সকলেই ডাকে, কারণ পুণে থেকে থানে যেতে মাত্র তিন ঘন্টা ড্রাইভ লাগে৷ মুম্বাইতে থাকা কালীন আমরা পাঁচ ছ'টা ফ্যামিলি মিলে সারারাত ঠাকুর দেখতাম৷ আমি ছাড়া বাকি সবাই অবাঙালি। কিন্তু আমি সবাইকেই বাঙালিপ্রেমি বানিয়ে দিয়েছিলাম৷ ফলত ওরা এখনও নবরাত্রি বা পুজোর একটা দিন আটপৌরে করে শাড়ি পরে, সাদা লালপাড় শাড়ি। এই সব কথা আমাদের মধ্যে প্রায়ই আলোচনা হয়৷ পুজো যখন এসে গেল বন্ধুরা বলল একদিন চলে যেতে৷ যেহেতু নবমী দশমী শনিবার পড়েছিল আর উইকেন্ড তাই আমাদের পক্ষেও বেরিয়ে পড়াটা সুবিধাজনক ছিল। কিছু রাস্তা আমি আর কিছু রাস্তা কন্যার বাবা মিলে চালিয়ে চলে গিয়েছিলাম পুরনো আস্তানায়। গোড়বন্দর রোডে, ওয়াগবিল নাকা, বিজয় রেসিডেন্সি৷ কত যে স্মৃতি এখানে৷ তবে কার নজর পড়েছিল জানি না, বৃষ্টি আর থামেই না৷ তাই সারারাত ব্যাপী ঠাকুর দেখার প্ল্যান মাঠে মারা গেল। তবে ওখানেই কাছে পিঠে বেশ কিছু ভালো পুজো হয় সেইগুলোই ঘুরেছি৷ আপনাদের সেইগুলোরই ছবি দেখাব।

নবমী- দশমীর দেখা ঠাকুর- ১


IMG-20241102-WA0015.jpg

IMG-20241028-WA0003.jpg
লোকেশন

ফালক্রাম কালচারাল ফাউন্ডেশন খুবই ছোট্ট পুজো। বলা চলে ঘরোয়া ভাবেই এই পুজো হয়৷ প্রতি বছর ষষ্ঠী থেকেই অঞ্জলি দিতে যেতাম। কম লোকের মাঝে বড্ড শান্তিপূর্ণ মনে হত৷ আমার মুম্বাইয়ের এক বন্ধু যার থেকে মূলত কেক বানানো শিখেছি, সেই খোঁজ দিয়েছিল। তার সাথে আবারও গেলাম৷ অনেক পরিচিত মানুষের সাথে দেখা হল৷ প্রবাসের এই বন্ধুগুলোই কেমন বাড়ির লোক হয়ে যায় সময়ের সাথে সাথে৷ একজন তো মনেও রেখেছে, আমার মেয়ে এখানে প্রথম ঢাকে কাঠি বুলিয়েছিল। হা হা হা। এই পুজোর লোকেশন দেখে বুঝতেই পারছেন, প্ল্যান্ডেল নেই, বাংকোয়েট হলে পুজো হয়৷ এখানে ছোট পুজো হলেও আতিথেয়তার অভাব নেই৷ ফালক্রামের পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল মুর্তিতে মালা পরিয়েই রেখে দেয়৷ পুজো হয়, পাশের ঘটে। মুর্তিতে অনেক ফুল কখনই চাপাতে দেখিনি। কি জানি কেন এমন ব্যবস্থা৷
দ্বিতীয় ছবিটি আমার ওই কেক শেখানো বন্ধুর থেকে চেয়ে নিয়েছি। ঠাকুর বসানোর দিন তুলেছিল৷

নবমী-দশমীর দেখা ঠাকুর -২


IMG-20241102-WA0014.jpg

IMG-20241028-WA0002.jpg
লোকেশন

হীরানন্দানী এস্টেট। হীরানন্দানী থানে বা মুম্বাই দুই জায়গার কস্টলি হাউসিং কমপ্লেক্স৷ টাউনের ভেতর আর একটা টাউন৷ এখানে ঢুকে গেলে মনেই হয় না ভারতে আছি৷ এই পুজোর বাজেট অনেক বেশি। প্যান্ডেল হয়। নিউ হরাইজন আই সি এস ই স্কুলের মাঠে৷ সাথে কলকাতার সমস্ত স্ট্রিটফুডের স্টল এবং বোলপুরের শাড়ি গয়না ইত্যাদিরও দোকান বসে৷ একটা এগরোলের দাম ১৫০ টাকা এখানে৷ হা হা হা৷ তবে বড়লোকদের পুজোয় বড় বড় ব্যপার। মানে প্যান্ডেলের ভেতর এসি দেওয়া৷ আর অনুষ্ঠানের জায়গায় বিরাট বিরাট ফ্যান। ভালোই ব্যবস্থাপনা৷ এবছর প্রথম দেখলাম এখানে থিমের প্যান্ডেল৷ কেদারনাথ মন্দির৷

হীরানন্দানী এস্টেটে কিন্তু সিংহভাগ বাঙালি।

নবমী দশমীর দেখা ঠাকুর-৩


IMG-20241102-WA0013.jpg

IMG-20241028-WA0000.jpg

d4ce622d-7c75-4f3a-936e-889266cd2496_20241103_165636_0000.jpg

c6550d6f-631b-4856-bf9c-c89e28fecff4_20241103_172205_0000.jpg

[লোকেশন(https://what3words.com/game.superhero.edges)

নবোদয় সংঘ। ফালক্রামের পুজো থেকে সোজা গিয়ে বাঁ দিকে বাঁকলেই এই পুজো। রাস্তায় চন্দননগরের লাইট দেওয়া হয়৷ গাড়ি থেকে সেসব ছবি তোলা হয়নি। তাছাড়া দাদা এমন কনটেস্ট রাখবেন আগে জানতাম না তো৷ এখানে আমরা যখন যাই পশ্চিমবঙ্গের একদল কীর্তনীয়া স্টেজ মাতিয়ে রেখেছিলেন৷

নবমী দশমীর দেখা ঠাকুর-৪


IMG-20241102-WA0012.jpg

3c0f9eb7-cfa8-4b39-9b77-274876638e27_20241103_184743_0000.jpg

44ca0b2d-10c1-4e18-9817-60b874bf8eee_20241103_184626_0000.jpg

লোকেশন

নিউ বেঙ্গল ক্লাব দুর্গাপূজা। এলাকাতেই তিনটে পুজো৷ ৷ ফালক্রাম, নবোদয় ও এই পুজোটি। এই জায়গায় থাকার মজা পুজোর সময়ই পেতাম। সেদিনও পেয়েছিলাম। পুরনো জায়গায় পা দিলে তার অনুভূতি অন্যরকম হয়। যাইহোক সেই সব নিয়ে আলাদা পোস্ট করা যাবে। এই দুধ সাদা ঠাকুর পুরোপুরি ডাকের সাজে৷ প্যান্ডেলের থিম হয়েছে মুম্বাই এশিয়াটিক সোসাইটির মতো। সাদা রঙ আমার ব্যক্তিগত ভাবে প্রিয় হওয়ার কারণে এই প্যান্ডেলটি আমার সব চেয়ে ভালো লেগেছে।

নবমী দশমীর দেখা ঠাকুর -৫


IMG-20241102-WA0008.jpg

IMG-20241102-WA0009.jpg

IMG-20241102-WA0010.jpg
লোকেশন

বঙ্গীয় পরিসদ। থানের মধ্যে সব থেকে বড় পুজো এখানেই হয়। প্যান্ডেল দেখে নিশ্চই বুঝতে পারছেন। এখানে কিন্তু ফ্রীতে খাওয়ানো হয়৷ আর মেলাও বসেছিল প্রতি বছরের মতো বেশ বড় মাপের৷ তবে এবার আমরা আর খেতে পাইনি৷ তবে প্রতি বছরের মতো ঠাকুর দেখে বড় খুশি হয়েছি৷

নবমী- দশমীর দেখা ঠাকুর - ৬


IMG-20241028-WA0001.jpg
লোকেশন

হীরানন্দানী পাওয়াই ঠাকুর দেখেই বুঝতে পারছেন বেশ বড় বাজেটের পুজো৷ পাওয়াই হল মুম্বাই আই আইটি অঞ্চলের৷ এখানে বেশিরভাগ প্রফেসরদের নয়তো কোন কোম্পানির ডাইরেক্টরদের বাস৷ বাঙালি যে আসলেই কৃপণ নয় তা এই সমস্ত পুজো দেখলেই বোঝা যায়৷ পাওয়াইয়ের পুজো প্রতিবারের মতই এবারেও আলাদা করে প্যান্ডেল হয়েছিল। গেট ওয়ে অফ ইন্ডিয়ার মতো দেখতে ছিল। কিন্তু আমরা যতক্ষণে পাওয়াই পৌঁছেছিলাম বৃষ্টির বেগে বেশ কাবু। তাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম আর ফসকে গিয়েছিল হ্যাংলা হেঁসেলের বিরিয়ানি।

এই বেদনাদায়ক পরিস্থিতির কারণে এবারে আর রাণী মুখার্জির পুজো, অভিজিতের পুজোতে যাওয়া হয়নি। নইলে জুহুর ঠাকুর দেখার আলাদাই মজা৷ সমস্ত সেলিব্রিটিদের ভিড়। আর টিভিতে দেখা রূপসীদের বুড়ি বুড়ি মুখ দেখার জন্য মানুষের ঠেলাঠেলি। রিপোর্টাররাই বা কোথায় যায়? হা হা৷ পরের বছর আবার ট্রাই করব। যদি হয় তখন অবশ্যই দেখাব সেলিব্রিটিদের পুজো।

প্রবাসে পুজোর ঝুলি আমার এখানেই শেষ হল৷ আবার আগামী বছর আসব নতুন নতুন ঠাকুরের মুখ নিয়ে৷ ততদিন আপনারা ভালো থাকুন৷

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণফটোগ্রাফি কনটেস্ট
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ ৫৪ ও আইফোন ১৩
লোকেশনথানে, মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি
তারিখ১২/১০/২০২৪


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

downloadfile.webp

PUSSfi.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

চলমান এই প্রতিযোগিতায় আপনি অংশগ্রহণ করেছেন দেখে ভালো লেগেছে আমার। আজকের এই কনটেস্টে আপনি খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন অনেক বিষয়। যে বিষয়গুলো আমার মোটেও ধারণা ছিল না আর জানতাম না। যাই হোক অনেক কিছু জানার সুযোগ করে দিয়েছেন।

চেষ্টা করেছি দাদা৷ প্রবাসের পুজো তো বাংলার মতো না৷ কলকাতার পুজো অনেক বেশি সুন্দর৷

প্রবাসে কত সুন্দর পুজো হয় তাই দেখছি। প্রত্যেকটি প্যান্ডেল এবং প্রতিমার সাজ ভীষণ অভিনব। সবথেকে ভালো লাগলো একদম প্রথমে সাদা ডাকের সাজে ঠাকুরটি। অসাধারণ একটি প্রবাসের পূজা পরিক্রমা পেলাম তোর পোষ্টের মাধ্যমে। প্রতিযোগিতায় ভালো ফল হবে আশা করছি।

থানে মুম্বাইতে খুবই ভালো ভালো পুজো হয়। আমি যখন থাকতাম প্রায় ১৫/২০ টার ওপরে ঠাকুর দেখতাম। তবে এবার তো দূর থেকে যাওয়া আর সময় খুবই কম তাই পুরনো বাসস্থানের কাছাকাছি যা ছিল সেইগুলোই পাওয়াইটা একটু দূরে মাত্র৷

শারদীয় দুর্গা উৎসবের শুভেচ্ছা জানাই দিদি। আপনি খুব সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত কাটালেন এবং সেগুলো ফটোগ্রাফি আকারে বিস্তারিত বর্ণানা সহকারে আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করলেন দেখে অনেক ভালো লেগেছে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ আপু। আমি চেষ্টা করেছি মাত্র। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হয়েছি৷

আর কয়েক বছর এভাবে চলতে থাকলে হয়তো ভারতের এমন কোন শহর বাদ থাকবে না যেখানে আপনি থাকেননি হা হা। আপনার পোস্টের কোয়ালিটি সত্যি বেশ ভালো। এটা বেশ ভালো লাগে আমার কাছে। পূজা পরিক্রমার এই পোস্ট টা বেশ ভালো ছিল আপু। দারুণ করেছেন আপনি ফটোগ্রাফি গুলো। বেশ চমৎকার লাগছে সত্যি। ধন্যবাদ আমাদের সাথে ফটোগ্রাফি গুলো শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।

ভাই বাড়ি ছাড়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত, কলকাতা, সিঙ্গাপুর, ক্যালিফোর্নিয়া, মুম্বাই, গোয়া, পুনে হয়েছে। আপনি দোয়া করুন আমি যেন এভাবেই ঘুরে ঘুরে থাকি৷ এক জায়গায় বেশিদিন থাকতে ভালোই লাগে না আজ আর৷ মুম্বাইতে ন'বছরের শেষের দিকে হাপিয়ে উঠেছিলাম। তবুও মুম্বাইয়ের জীবন অনেক ভালো ছিল যা এখন বুঝি৷ সব সময়ই মিস করি।

যত জায়গায় থাকব অনেক বেশি জানব। এটাই মনে হয়। ভারতবর্ষের সংস্কৃতি সব রাজ্যেই আলাদা আলাদা৷ সবাইকেই কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করে৷

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ইমন ভাই, আমার পোস্টটি ধৈর্য্য ধরে পড়লেন৷ 💐💐