একটি বিরক্তিকর ট্রেন জার্নি- শেষ হবার অপেক্ষায় - শেষ কি হবে?

in hive-129948 •  23 days ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


InShot_20241028_111448351.jpg







আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



ছ'মাস পর বাড়ি যাওয়ার আনন্দ অনেকটাই আলাদা হয়, যারা প্রবাসী তারাই একমাত্র এই আনন্দের স্বাদ জানে৷ টিকিট কাটার দিন থেকেই সেই আনন্দ লেগে থাকে মনে। ওই খানিকটা উৎসব আসছে এই ধরণের অনুভূতি৷

InShot_20241028_111758437.jpg

গতকাল অর্থাৎ ২৬শে অক্টোবর সন্ধে সাড়ে ছটায় ট্রেন ছিল, পুনে জংশন থেকে খড়গপুর ; আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেস৷ প্রতিবার সেকেন্ড এসি তে টিকিট করি৷ কিন্তু দিওয়ালির সময় এতোই ভিড় হয় আর টিকিটের লাইন থাকে, যেই দিন টিকিট খোলে তার এক ঘন্টার মধ্যেই ওয়েটিং লিস্ট হয়ে যায়৷ আমাদের টিকিটটাও তাই, ওয়েটিং লিস্টে ছিল। ২৫ তারিখের তৎকাল চেষ্টা করেছিলাম হয়নি। কিন্তু কপাল ভালো তাই ওয়েটিং লিস্ট টা আর এ সি হয়ে অবশেষে চার্ট তৈরির সময় কনফার্ম হয়ে যায়৷ একটা টেনশন এভাবেই শেষ হল৷

289a70b5-c422-4cf0-8a6b-801601b9faa7_20241028_111028_0000.jpg

ট্রেনের খাবার খুব একটা ভালো হয় না বলে বাড়ি থেকেই রান্না করে নিই। পরোটা বা লুচি, ফ্রায়েড রাইস ইত্যাদি যে খাবার গুলো সহজে নষ্ট হয়না। গতকাল সকালে ভাত চাপিয়েছি গ্যাস শেষ! এদিকে পনের দিন আগে গ্যাস বুক করেছিলাম তা আসেনি৷ অগত্যা পাশেই বন্ধুর বাড়ি থেকে ভাত করে আনলাম৷ সব রান্না সম্ভব না৷ ফ্রিজে ক্ষীরোদ কাতলা ছিল আর আলু ভর্তা বানিয়ে সকালের লাঞ্চ সেরে নিলাম৷ এদিকে বহু কষ্টে ইনডাকশনে চিকেন হান্ডি বসিয়ে দিলাম৷ ইন্ডাকশনে এই প্রিপারেশনটাই ভালো হয়। অনেকদিনের পুরনো ইনডাকশন তো তাই খুব একটা ভালো কাজ হয় না৷ এতো তাড়াহুড়োর মধ্যে আই আর সি টি সি থেকে ম্যাসেজ এলো ট্রেন সাড়ে ছ'টার বদলে পৌনে ন'টায় ছাড়বে। উফফফফ শুরুই যদি এতো লেট হয় তবে আর পৌঁছোব কিভাবে? ২০০০ কিলোমিটারের জার্নি৷

লেট তো মেকাপ হবে না, সে আরও বাড়বে৷ এবং তাই হলো। ২-১৫ ঘন্টা লেট বেড়ে চার ঘন্টা হল, পাঁচ ঘন্টা হল। এদিকে সারা রাস্তা ভালো টাওয়ার নেই৷ কাজ করতে অসুবিধে। কোন মতে ব্লগ লিখেছি। কমেন্ট প্রায় সারাদিন ধরেই করে গেছি। এই ভাবে সময় কাটালেও ধৈর্য্য রাখা মুশকিল। কারণ বর্তমানে ট্রেন প্রায় দশ ঘন্টা লেটে চলছে৷

InShot_20241028_112000139.jpg

বাচ্চারা বিরক্ত হয়ে যায় এতো সময় ট্রেনে। তাও এবার একটি ছোট্ট মেয়ে ছিল একই কূপে তাই ওর সঙ্গী হয়েছে৷ কিন্তু আমরা? আমরা তো আর খেলি না৷ ভালোও লাগছে না কিছু৷ এই পশ্চিম থেকে পূর্বের রেলপথ আজকাল অতিরিক্ত মাত্রায় লেট চলে৷ অথচ এই রেলপথটুকুই সরকারের অধীনে। বাকি খাবার দাবার সারভিস সমস্ত কিছু আই আর সি টি সি টেন্ডারের।

একবার লেট হওয়া ট্রেন আরও অনেক বেশি লেট হয়৷ কারণ বাকি সমস্ত ট্রেনকে যেতে দেওয়া হয়, ফলত লেট হওয়া গাড়ি আর সিগন্যাল পায় না। কিন্তু এই ভাবে ট্রেনের যাত্রীদের বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। একবার জার্নি করেছিলাম এই ট্রেনেই, কয়েকমাস আগে সেবার প্রায় ৩২ ঘন্টা লেট ছিল। আমায় অনেকেই বলেন ফ্লাইটে আসা যাওয়া করতে কিন্তু যে ভাড়া চার হাজার টাকার ছিল তা এখন এগারো বারো হাজার টাকার। অথচ কলকাতা থেকে সিঙ্গাপুরের ভাড়া ন'হাজার টাকা৷ বর্তমানে ট্রেনের ভাড়াও অনেক বেড়েছে৷ কিন্তু সারভিস! সময়ে না পৌঁছোলে অনেকেরই অনেক অসুবিধে হয়, সময়ের দাম তো সবারই আছে।

কিন্তু কথা হল আমরা আম জনতা, আমাদের কথা শোনার লোক নেই৷ তাই হাজার বিরক্তি হলেও ট্রেন বয়কট করার উপায় নেই। এখানেই বসে থাকতে হবে। বাড়ি যাওয়া বিশুদ্ধ আনন্দে এই একমুঠো মাটি না ফেললেই বোধহয় চলছিল না। জীবন যেন এরমই।

চলন্ত ট্রেন থেকে কিছু ছবি তুলছিলাম সেইগুলোই শেয়ার করলাম, ভালো মন্দ জানি না, সময় এভাবেই কাটিয়েছি। এবেলায় বাড়ির খাবার কিছু নেই। কেক বিস্কুট খেয়েছি আর ভালোও লাগছে না। বাড়ি থেকে ফোন আসছে বার বার। মনে হচ্ছে আমিই যেন রেলগাড়ির ড্রাইভার৷

InShot_20241028_111900117.jpg

এতো বিরক্তির মধ্যেও একটা ভালোলাগা আমার সন্তান ফোন দেখার জন্য বায়না করেনি। আপন মনে খেলছে নয় তো বই পড়ছে। এ বোধয় বেশিই পাওনা। ট্রেনের সকলেই আমাদের জিজ্ঞেস করছে কিভাবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সন্তানকে মোবাইল থেকে দূরে রাখতে পেরেছি? কিভাবে তার শখ মোবাইল না হয়ে বই হল? এ সত্যিই চ্যালেঞ্জিং ছিল। তাদের উত্তর দিয়েছি। আপনাদেরও দিতে পারি তবে আজ নয়। অন্য কোন পোস্টে৷ আজ বরং বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটু স্বস্তির শ্বাস নিই।

তবে আর বেশি দেরী নেই৷ পোস্ট লিখতে লিখতেই দেখছি জ্ঞানেরশ্বরীর পোড়া ভাঙা বগিগুলো। পড়েই আছে আজও। অবহেলায়, অযত্নে৷ প্রয়োজন ফুরোলে সব কিছুই এমন পড়ে থাকে- মানুষও৷

আপনাদের সাথে সব দিনই আনন্দের কথা ভালো মুহুর্ত শেয়ার করি। কিন্তু মানুষ তো অনেক অনুভূতি নিয়েই তৈরি। আজ খানিক খারাপ লাগা লিখে রাখলাম।

ভালো থাকবেন আপনারা।

টা টা

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণলাইফস্টাইল ব্লগ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, ইনশট


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

new.gif

IMG_5055.jpg

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

মাটির টানে লং ট্রেন জার্নি করে বাড়ি পৌছানোর সাথে সাথে আপন জনদের দেখতে পেয়ে কস্টটা আর মনে থাকে না। তবে এই জার্নি করে বেশ কিছুদিন না থাকলে যেনো মন ভরে না। আমি ঈদে ৮ ঘন্টা ট্রেন জার্নি করেই বিরক্ত হয়ে যাই। আর আপনি ৩২ ঘন্টা ট্রেন জার্নি করে বাসায় পৌছাবেন ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে। তবে আমারও ২ দিন ৩ রাত ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা আছে। যখন কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোর গিয়েছিলাম। তবে মাঝে কিছু স্টেশনে নেমেছিলাম। বিরক্ত লাগছিলো ট্রেন জার্নি। ভালো সময় কাটান পরিবারের সাথে এই কামনা করি। ভালো কাটুক সময় আপনার ্প্রিয় কলকাতায়।

এসে গেছি আপু। রেস্ট নিলাম। বাড়ির খাবার খেলাম। এখন বেশ ভালোই আছি৷

ঘুম পাচ্ছে না? আমিতো এমন জার্নি করলে দু'দিন ঘুমাতাম।

না না৷ দুলছে সব কিছু একটু পেটে ব্যথা। বাকি ওকে৷