ত্রিবান্দমের নেপিয়ার মিউজিয়াম, পর্ব-২|| ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া -২||

in hive-129948 •  4 days ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


InShot_20250109_180513013.jpg








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



গত সপ্তাহে কেরালাতে ছিলাম, ট্রেনে ওঠার আগের দিন রাত্রিতে হোটেলে বসে বসে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম ত্রিবান্দমের নেপিয়ার মিউজিয়ামের কিছু সংগ্রহ। যার বেশিরভাগটি ব্রোঞ্জ এবং কাঠের তৈরি মূর্তি। পোস্টটির টাইটেলে লিখেছিলাম পর্ব ১ এর অর্থ পরবর্তী পর্বে আরো কিছু আসবে। আজ ঠিক করলাম ওই মিউজিয়ামে দেখা বিশেষ কিছু শিল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আজকে যে মূর্তিগুলো দেখাবো সেগুলো কবে তৈরি আমি জানিনা, ওখানে লেখা ছিল কিনা সেই বিষয়টাও খেয়াল করিনি। ফলে খুব একটা বেশি ডিটেলসে বলতে পারব না। তবে যেহেতু মূর্তিগুলো চিনি তাই পরিচয় করিয়ে দেব।

আইভরি কারভিং অর্থাৎ হাতির দাঁতের তৈরি। তো অনেকেই জানি ভারতবর্ষের দক্ষিণ অংশ চন্দন কাঠ এবং হাতির দাঁতের জন্য বিখ্যাত। যদিও বাজারে খুব একটা কিছু হাতির দাঁতের তৈরি জিনিস সেইভাবে দেখিনি, মার্কেটে কমই ঘুরেছি তাই হয়তো চোখে পড়েনি। তবে মিউজিয়ামে যে সমস্ত হাতির দাঁতের তৈরি মূর্তি দেখলাম এক কথায় যাকে বলে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এত সূক্ষ্ম কাজ যে সম্ভব তা এই মূর্তিগুলো না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। প্রথমে তো দেখে ভেবেছিলাম স্টোন ডাস্ট বা মার্বেল কেটে তৈরি করা। কারণ যখন জব্বলপুর গিয়েছিলাম মানে মধ্যপ্রদেশ সেখানে দেখেছিলাম মার্বেল পাথরের তৈরি নানান সূক্ষ্ম কাজের জিনিসপত্র। সেগুলো অবশ্য খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু হাতির দাঁতের তৈরি এত চমৎকার জিনিসপত্র এই প্রথম দেখলাম।

কভার পিকচার হিসেবে প্রথমে যে ছবিটি আমি দিয়েছি, সেটিও দুদিকে দুটো হাতির দাঁত রয়েছে। ওগুলো আর্টিফিশিয়াল নয়। আর মাঝে দোলনায় ঝুলছেন রাধা কৃষ্ণ। কি অপূর্ব তাই না?

বাকি শো পিস গুলো আপনাদের সামনে দেখানোর আগে আমি বলে রাখি, শোপিসগুলো আকারে ছোট, ফলে একেকটা একটু বড় সাইজের কাচের বক্সের মধ্যে প্রায় চার-পাঁচটি করে রাখা। তাই যখন ছবি তুলেছি কোনভাবেই পরিষ্কার ব্যাকগ্রাউন্ড পাইনি। এদিকে লোকজনেরও বেশি ভিড় ছিল তাই ঠেলাঠেলির জ্বালায় খুব একটা বেশি অ্যাঙ্গেল করি ছবি তুলতে পারিনি। কিন্তু আজ যখন আপনাদের সাথে শেয়ার করব বলে ঠিক করি তখন ভেবে দেখলাম ছবিগুলো যেমন তুলেছি তেমনি ভাবেই দিলে আপনারা কিছুই বুঝতে পারবেন না। তাই বোঝার সুবিধার্থে সামনের ছবি রেখে পেছন দিকটা রিমুভ করে ইচ্ছেমতো ব্যাকগ্রাউন্ড বসিয়ে দিয়েছি। যাতে আপনারা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেন এবং উপভোগও করতে পারেন।

তাহলে চলুন আর দেরি না করে আজকের ছবিগুলো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি।

ছবি -১

InShot_20250109_224202463.jpg

নটরাজ - যারা নাচ করেন বা নাচতে ভালোবাসেন তাদের কাছে নটরাজ সম্পর্কে আলাদা করে আমার বলার কিছু নেই। তবে সবার সুবিধার্থে বলে রাখি নটরাজ হল শিবের একটি রূপ।

ছবি-২

InShot_20250109_223716683.jpg

মাথা ও দাঁত- এই শোপিসটির বিশেষত্ব হল হাতির একটি দাঁতকে খোদাই করে বানানো হয়েছে। বড়ই অদ্ভুত! বিভিন্ন প্রাণীর মাথাকে একত্রে একটি দাঁতে খোদাই করে বসিয়ে এমন অপূর্ব শিল্প ফুটিয়ে তোলা সহজ না৷

ভারতের মন্দিরগুলো দেখলে বুঝি মানুষ কত বড় মাপের শিল্পী। আর এগুলোও তারই প্রমান৷ এই শোপিসগুলো কিন্তু কোনটাই মেশিনে কাটা নয়।

ছবি-৩

InShot_20250109_223750940.jpg

মহিষাসুরমর্দিনী - আট হাতের দেবী দূর্গা৷ মাথার দিকটা দেখলে বোঝা যায় যুবতী দেবী অসাধারণ কেশে শোভিতা কিন্তু রুক্ষ মুখ। যার হাতে মহিষাসুর রয়েছে যিনি মহিষের পিঠে বসে আছেন।

সংসারের অসুর দূর হোক। সমস্ত শুভ শক্তির ছত্রছায়ায় ভালো থাকুক জনজীবন। এই মুর্তি দেখে মনে হল অর্থ এমনই হবে৷

ছবি-৪

InShot_20250109_223808623.jpg

নারায়ণের অনস্ত শয্যা৷ এই মুর্তিটি ত্রিবান্দম এ খুবই বিখ্যাত এবং প্রচলিত। কারণ ভারতবর্ষের সেই বিখ্যাত মন্দির পদ্মনাভস্বামী, যেখানে সোনার তৈরি নারায়ণ তথা বিষ্ণু অনন্ত শয্যায় শুয়ে আছেন। তাই অনন্ত সূর্যের ছবি বা মূর্তি আমরা প্রায়শই দেখতে পেয়েছি।

ছবি- ৫

InShot_20250109_223902103.jpg

সকলেরই পরিচিত এই দৃশ্য। রাম লক্ষণ সীতা এবং ভক্ত হনুমান। এই মূর্তিগুলো খুবই ছোট ছোট ছবিতে তাও অনেকটা বড় দেখাচ্ছে।

ছবি- ৬

InShot_20250109_223924637.jpg

জাপানিজ হ্যান্ড ফ্যান। দোকানে বাজারে কাপড়ের তৈরি বা পাতলা কাঠের উপর ডিজাইন করা ফ্যানগুলো প্রচুর বিক্রি হয়। কিন্তু হাতির দাঁত দিয়েও যে এত সুন্দর তৈরি করা যায় তা না দেখলে জানতেই পারতাম না।

ছবি- ৭

InShot_20250109_223944083.jpg

ললিথা দেবী- তিনি ভগবান শিবের পবিত্রতম এবং চূড়ান্ত রূপের সহধর্মিণী হলেন দেবী ললিথা। ইনি সাধারণ মানুষের উপাস্য নন। যাঁরা জীবনের তিনটে প্রধান আকাঙ্খা যেমন কোন কিছু অর্জন করার ইচ্ছে, কোথাও পৌঁছোনর ইচ্ছে এবং জানার ইচ্ছে, অতিক্রম করেছেন তাঁদের দ্বারা উপাসিতা হন৷ বলা হয় ইনিই সকল আত্মার আদি ও গন্তব্য।

এক ফরেন টুরিস্ট পার্টি ছিল সাথে। গাইড দাদা বোঝাচ্ছিলেন আমি একটু ভিড়ে মিশে শুনলাম যে কথাগুলো সেগুলোই শেয়ার করলাম। আমি খুব একটা কিছু পড়াশুনো করিনি এই বিষয়ে।

ছবি- ৮

InShot_20250109_224003061.jpg

কনসেন্ট্রিক বল বা কেন্দ্রেভূত বল - অদ্ভুত এই বলটির যে গোলাকার ছিদ্রগুলো দেখা যাচ্ছে তার ভেতরে প্রায় ৩২টা করে বল রয়েছে। উপরের বড় ছিদ্র গুলিকে জানালা হিসেবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। ছবিতে বেশ বড় দেখালেও সামনে থেকে কিন্তু এতটা বড় নয়।

ছবি- ৯

InShot_20250109_224021469.jpg

শাঁখের মতো দেখতে এসো বৃষ্টি কিন্তু আসলেই শাঁখ নয়। হাতির দাঁতের তৈরি শাঁখ যার ওপর অপূর্ব শৈলী। ভাগ্যিস ছবি তোলা অ্যালাও ছিল, নইলে কি যে হত!

ছবি- ১০

InShot_20250109_224043028.jpg

জারের মতো দেখতে। মানে বয়াম। যার ওপর নিচের রূপালী অংশ রূপোর তৈরি। এই বয়ামের গায়ে গৌতিম বুদ্ধের জীবনের নানান চিত্র খোদাই করা আছে। এর নিচে লেখা ছিল তনখড৷ আমার দেখে বয়ামই মনে হল।

ছবি- ১১

InShot_20250109_234141658.jpg

গৌতমবুদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন দুই সেবিকার একজন দাঁড়িয়ে ও একজন প্রণাম করছেন৷ পেছনে দুটো হরিণ।

ছবি- ১২

IMG-20250109-WA0041.jpg

রাধাকৃষ্ণ। ঈশ্বর কেমন দেখতে জানি না৷ তবে আমার কাছে এই শিল্পীরাই যেন জীবন্ত ঈশ্বর৷

নেপিয়ার মিউজিয়ামে এই রকম হাতির দাঁতের তৈরি শোপিস আরও অনেক ছিল। সেখানে ক্রুশবিদ্ধ যিশু থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু ছিল। আমি সব কিছুর ছবি তুলতে পারিনি। যেগুলো তুলেছি তাও অনেক। তার মধ্যে থেকে কিছু আপনাদের জন্য দিলাম। পরের পর্বে অবশ্যই অন্য কিছু মজার ও অবাক করা জিনিস দেখাবো। আজ এপর্যন্তই থাক। আপনারাও ভালো থাকুন, উপভোগ করুন৷

আবার আসব আগামীকাল। আজ এপর্যন্তই৷

টা টা

টা টা।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণভ্রমণ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমআইফোন-১৪
লোকেশনত্রিবান্দম, কেরালা
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, ইনশট, পিক্স আর্ট


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNpHpfrvWwu1NyawLk5VomqzbmpmRPBqvbat59CwrDpXB7VjqK4Wx1cqY9zZNYqJwQ6PTwYbpB8.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNpJoZ3XxcLQ7Q5nuJCmx5hnTtBeSHggK5QRgSowHbkG8LXCuvhUoAEiQChEMXRtaN4v21MHMvN.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

1000371938.jpg1000371939.jpg1000371941.jpg1000371942.jpg