প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির যুগে সন্তানকে সুস্থ মানসিকতায় বড় করে তোলা বর্তমান সময়ে বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে পরিবার ক্ষুদ্রাকায় হয়ে গেছে, ফলে সন্তানদের মধ্যে পারিবারিক মূল্যবোধ ঢোকানোও কঠিন। আসলে আমরা বিজ্ঞানের উন্নতির পথে হাঁটতে গিয়ে ক্রমশ অতি আলোর দিয়ে ছুটতে গিয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি না কি?
কিছুদিন আগে মেয়েকে নিউক্লিয়ার এনার্জি পড়াচ্ছিলাম। যখন বোঝালাম নিউক্লিয়ার অস্ত্রসস্ত্র মানজীবনের হানিকারক। নির্দ্বিধায় জিজ্ঞেস করল "কি দরকার ছিল এই ওয়েপন বানানোর? সবাই সবাইকে মারলে পৃথিবীতে কেউ থাকবে কি?" আমি অনেকখানি থমকে যাই৷ যে সরল প্রশ্নটা একটি দশ বছরের শিশু ভাবে তা আমাদের উন্নয়নমূলক সমাজ ভাবেনি৷
আমরাও কি ভাবি?
আমরা বাবামায়েরা আজকাল ছেলেমেয়েদের বাৎসল্যের সাথে নিজেদের ছেলেবেলার ঘটনা প্রায়শই তুলে ধরি। নিজেকে সহ সবার কাছেই একটা সহজ প্রশ্ন, ওদের ছেলেবেলাটা নরম সুন্দর ও প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য আমরা কি আমাদের বাবা মায়েদের মতো প্রচেষ্টা করি? গ্রাম বা শহর বলে নয়, বাচ্চারা দৌড়োদৌড়ি করে খেলার জায়গা পায় না৷ বাড়িতে বাচ্চা কান্না করলে হাতে মোবাইল দিয়ে দেওয়া হয়। আর যারা একলা বাচ্চা বড় করছে! ছ'মাস বয়স হতে না হতেই মোবাইল। বাচ্চা মোবাইলে মশগুল আর সেই ফাঁকে মায়েরাও হাতের কাজ সেরে নিচ্ছে, বাচ্চাকে খাইয়ে দিচ্ছে। সাথে সাথে ওই দ্যাখ পাখি ঐ দ্যাখ গাছ বলে প্রকৃতির সাথে সংযোগটা কি অনায়াসে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।
এবং দেখা যাচ্ছে সন্তানরা অকারণ জেদি হয়ে উঠেছে। লোভী হয়ে উঠেছে এমনকি আচার ব্যবহারেও শিশুসুলভ নেই।
এখন আপনারা বলতেই পারেন এতো যখন বুঝি আমি কি করেছি।
আপনাদের বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না, আমার মেয়ের চার বছর বয়স পেরিয়ে যাবার পর বাড়িতে টিভি কেনা হয়েছিল। তাও বড়দের চাপে। কারণ টিভি না থাকলে তারা আমার এখানে এলে সময় কাটাতে পারেন না।
আমি নিজে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করতাম না৷ সন্তানের সামনে আমরা ল্যাপটপ চালাতাম না। তাও প্লে স্কুলে গিয়ে শিখেছিল। কিছু ক্ষেত্রে আমিও বাধ্য হয়েছি ওকে খুব অল্প সময়ের জন্য আইপ্যাডে কোন ভিডিও চালিয়ে দিতে৷ কিন্তু তার পুরোটাই আমাদের আয়ত্তে ছিল৷
মেয়ের সামনে কোনদিন সিনেমা দেখতাম না। আমরা দু'জনেই পুতুল খেলেছি। গান গেয়েছি। একটু বড় হতে গল্পের বই পড়ে শুনিয়েছি৷ তারপর তো খেলাধুলো ছিলই।
তবে কি মোবাইলের বা টিভির নেশা নেই? বিশ্বাস করুন নিজে থেকে কোনদিন চায় না। ছুটির দিনে অল্পবিস্তর তো দেখবেই। সেটুকু আমরাই দেখি ওর সাথে৷ আর মোবাইলটা যে কাজের জিনিস সেটুকু বোঝানোর পর থেকে কোনদিনও হাত দেয় না। তবে সে কি করে?
তার কোন ফ্রী টাইম নেই।
শুনতে কঠিন হলেও সত্য। কেন জানেন? মাম্মা ছবি আঁকে আমিও আঁকব
খুব আগ্রহ দেখে একটি আঁকার শিক্ষক দিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর নেগেটিভ উচ্চারণে মেয়ে ভাবতে শুরু করল ও বোধহয় আঁকতেই পারে না। রঙ পেন্সিল ধরা বন্ধ করে দিল। এখানেই আমার বাংলা ব্লগের দান৷ আমি ব্লগের জন্য যখন আবারও তুলি ধরলাম ওর মধ্যে একটু একটু ইচ্ছে জাগল। এখন নিজের মতোই করে। আর অনেকটা সময়ও কেটে যায়।
ঈশ্বরের দান হিসেবে মেয়ে পেয়েছে মধুর কণ্ঠ। এক একসময় আমরা বিরক্ত হয়ে যাই ওর গানের ঠেলায়। সাম্প্রতিককালে ওকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেখার ক্লাসে ভর্তি করেছি। এখন আঁকা আর গান এক সাথে করে। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যে দুটো গান লিখে নিজে সুরও দিয়েছে৷ একটি হিন্দিতে কেরালা যাবার পথে আরেকটি ইংরেজিতে। সুর যেমনই হোক ভাষাও যেমন হোক নিজে এরম ভেবেছে বিষয়টাই আমার কাছে অদ্ভুত৷ আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি বানিয়ে বলছি। কিন্তু একটুও না। ওর কান্ডকলাপ ভিডিও রেকোর্ডিং করে রাখলে বুঝতে পারতেন।
এসবের মাঝে রবিবার ছুটির দিন এলে একটা করে গল্প লেখে। সেই গল্প কয়েমটা তুলে রেখেছি। কোন একদিন শেয়ার করব আপনাদের সাথে।
এছাড়াও উনি দাড়িদাদু মানে রবিঠাকুরের ভক্ত। সুকুমার রায়েরও। তাই কবিতা আবৃত্তি টা জমিয়ে করে। যদিও তা শিখছে বেশ কিছু বছর হল।
তবে কি নেশা নেই? বকুনি খায় না আমার কাছে? খুব খায়। কারণ পড়ার বইয়ের ভেতর গল্পের বই ঢুকিয়ে পড়া, কিংবা সুযোগ পেলেই নাওয়া খাওয়া ভুলে ক্রাফটের কাজে লেগে পড়া, চিৎকার সব সময়ই চলে।
এতো কিছু অনেকেই বলে খুব চাপ হয়ে যায়৷ কিন্তু জানেন কোনটাই আমি জোর করে করাই না৷ সবটাই তার একান্ত ইচ্ছে। আমার মা বলেন নাচ গান আঁকা এই সব কোনদিন কোন ক্ষতি করে না বরং মন ভালো থাকে। সত্যিই ভালো থাকে। আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে বলছি। ওর বয়সি বাচ্চারা যখন রাস্তা ঘাটে ছেলে মেয়েদের টোন টিটকিরি করে বা নিজের লোভ মেটাতে জেদ করে তখন ও আপন খেয়ালে কুকুর বেড়াল খাওয়ায় নইলে প্রকৃতি দেখে, বা গলা ছেড়ে গান করে, নতুন কোন বন্ধু পাতায়।
আমরা কেউই অযথা মোবাইলে রিল দেখি না, বা অকারণ বাড়িতে টিভি চালাই না এর ফল তার ফল হাতেনাতেই পেয়েছি।
তাই বার বার মনে হয়, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলে সন্তানও নিয়ন্ত্রণ শিখবে৷ যা বর্তমান ভয়ঙ্কর সময়ে দাঁড়িয়ে খুবই প্রয়োজন। কারণ আমি বিশ্বাস করি সন্তানরা বাড়ির বড়দের দেখেই শেখে। তাই প্রতিটি গুরুজন বাবা মা দাদু ঠাকুমা সকলেই যদি নিজেদের জায়গাগুলো সুন্দর ভাবে ধরে রাখেন স্রোতে ভেসে না গিয়ে, ফলাফল অবশ্যই ভালো হবে৷ সন্তানের জীবনে সমস্ত গুরুজনেরই প্রভাব সমান ভাবে পড়ে৷
সব শেষে বলে অরিপ্রাকে আপনারা আশির্বাদ করুন। বর্তমান দুনিয়ার ঝাঁ চকচকে লোভ লালসার পথে ভেসে না গিয়ে যেন মানুষ হয়৷ বড় মনের মানুষ হয়। যেন বটগাছ হয়ে ওঠে। 🙏🙏🙏
পোস্টের ধরণ | জেনারেল।রাইটিং |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ইনশট |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/neelamsama92551/status/1880319375586254995?t=lM9UgKjZyro6Cfc1Edni_Q&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি ঠিক বলেছেন দিদি সন্তানরা বাড়ির বড়দের দেখেই শেখে। বর্তমান ভয়ঙ্কর সময়ে দাঁড়িছে বাইরে পরিবেশ ।তাই বাচ্চাদের ছোট থেকে পবিরার এ আমরা যা শিখাবো তাই শিখে অভ্যস্ত হবে। আপনার মেয়ের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো 😍💝।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ আপু, এই কারণেই আমাদেরই অনেক বেশি সচেতন হতে হবে৷ আমার পোস্টটি ধৈর্য্য রেখে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাচ্চারা বাসার বড়দের দেখেই শেখে। তাই বড়রা যদি সচেতন হয় সকল বিষয়ে তবে তারাও সুন্দর মানষিকতা নিয়ে বড় হয়। কিন্তু একক পরিবারে বেশিভাগ মায়েরাই মোবাইল ফোনে ব্যস্ত রাখেন বাচ্চাদের/ ফলে বাচ্চারাও আসক্তি হয়ে পরছে মোবাইল বা টেলিভিশনের প্রতি।।বাচ্চাদের বড় করার ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন তার সাথে কোয়ালিটি টাইম কাটানো। অরিপ্রাক মামনীর জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা। আর দোয়া করি যেন সে মানুষের মতো মানুষ হয় । মানুষের জন্য কাজ করে যায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ আপু। ঠিকই বলেছেন। সময়ের সাথে সাথে বাচ্চাদের আগে বড়রাই বিগড়ে গেছে। বাচ্চারা আর কিভাবে ঠিক থাকবে?
অনেক ধন্যবাদ আপু, সুন্দর করে গুছিয়ে বললেন। ভালোবাসা নেবেন আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
দিদি, আপনার পোস্টটি আমার মনে হয় সকলের পড়া উচিত! বর্তমানের সাথে গা ভাসিয়ে চলার বদলে আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে মেয়েটাকে মানুষ করছেন। গুরুজনদের প্রভাব যে পরে জীবনে সেটা কিন্তু আসলেই! আপনি যদি ফোন ইউজ করতেন তাহলে কিন্তু আপনার মেয়েও তা করতো! এটা ভালো করেছেন ফোনের দিকে আকৃষ্ট না করে।
এটা চিরন্তন সত্য! আপনার মেয়ে মানুষের মতো মানুষ হোক এমনটাই প্রত্যাশা করছি 🙏।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি চেষ্টা করি মেয়েকে একটা সুস্থ পরিবেশ দিতে যাতে করে সে গড্ডলিকা প্রবাহে ভেসে না যায়। ধন্যবাদ ভাই পোস্টটি ভালো করে পড়লেন ও আমায় মন্তব্য করে উৎসাহিত করলেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit