শারদীয়া কন্টেস্ট ১৪৩১|| চলুন প্রবাসের কিছু পূজো দেখিয়ে দিই আপনাদের।

in hive-129948 •  21 days ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,



Onulipi_11_02_05_01_56.jpg

এর আগেও পুজো সম্পর্কিত দুটো পোস্ট করেছিলাম যেখানে আমি বলেই ছিলাম প্রবাসী বাঙালিরা দুর্গাপুজো কলকাতার মতো না করলেও নিজেদের মতো করে পুজো ঠিকই করে। সেই পুজো হয়তো কলকাতার মতো কোটি কোটি টাকার বাজেটের পূজো হয় না তাও আমি বলি প্রবাসী দুর্গাপুজো হলো বাঙালির আবেগের উৎসব। প্রবাসীর বিরাট অঞ্চলের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালি মেলবন্ধনের উৎসব। দেশে দুর্গাপূজা দেখার এক আলাদা আনন্দ রয়েছে তা কখনোই অস্বীকার করি না। তবে প্রবাসী পুজোর আবেগটাইই অন্যরকম।

কনটেস্টের ব্লগ শুরু করার আগেই প্রবাসী পুজো সম্পর্কে গুটিকয়েক কথা বলে নিলাম। আশা করি আপনারা বাঙালির আবেগ দেখার জন্য আমার পোস্টে এসে নিরাশ হয়ে যাবেন না। ও হ্যাঁ বলে রাখি দাদা তাঁর পোস্টে বলেছিলেন মোট চারটি পোস্ট শেয়ার করতে পারব, সিরিজ হিসেবে৷ আমার দেখা তো অনেক ঠাকুরের ছবি নেই৷ তাই ভেবেছি দুটো পোস্টেই শেয়ার করার কথা।

ফটোগ্রাফি পোস্ট শুরু করার আগেই জানতে চাইবো আপনারা কেমন আছেন। বর্তমান আবহাওয়ার দরুন হয়তো সর্দি কাশি লেগেই রয়েছে তবে উৎসবের মরশুম হিসেবে সকলেরই মন চাঙ্গা। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



সপ্তমীর দেখা ঠাকুর ১


আগে একটা পোস্টে পুনের হিঞ্জেওয়াড়ি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনর পুজোর একটি ছবি দেখিয়েছিলাম। আজ আরও কিছু দিয়ে শুরু করছি।

InShot_20241019_174426004.jpg

InShot_20241102_163346790.jpg

[লোকেশন] (https://what3words.com/skippers.lotteries.slam)

তারিখ- ১০/১০/২০২৪

ফেসবুকে প্রথম পুনেতে বসবাস করা বাঙালিদের গ্রুপ থেকেই এই পুজোর কথা জানতে পারি। খুব বড় পুজো না৷ একটি ফুটবল প্র‍্যাক্টিস করার গ্রাউন্ডে ছোট্ট চালা খাটিয়ে পুজো হয়েছে৷ পাশের স্টেজ বাধা ছিল যেখানে কালচারাল অনুষ্ঠান হচ্ছিল। এছাড়াও কলকাতা থেকে আসা বেশ কিছু খাবার দোকানের স্টল ছিল৷ প্রবাসী পুজোতে পুজোর আড়ম্বর না থাকলেও খাবার দোকানের অভাব হয় না। দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার স্ট্রিট ফুড না খেতে পাওয়া বুভুক্ষু বাঙালিরা এই চারদিন খেয়ে পেট ভরিয়ে নেয়৷ হা হা হা।

সপ্তমীর দেখা ঠাকুর -২


InShot_20241102_131315637.jpg

লোকেশন

তারিখ- ১০/১০/২০২৪

বঙ্গীয় সংস্কৃতি সংঘ। এই পুজোটা একেবারে নতুন৷ গত বছরই প্রথম শুরু হয়েছে। তবে খুবই সফিস্টিকেটেড পুজো৷ ছিমছাম। ঠাকুরের মুর্তিটা আমার বেশ ভালো লেগেছিল৷ নিখুঁত থার্মোকলের গয়না মায়ের রূপকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

অষ্টমীর দেখা ঠাকুর -১


IMG-20241102-WA0007.jpg

IMG-20241102-WA0004.jpg

IMG-20241102-WA0006.jpg

IMG-20241102-WA0005.jpg

FB_IMG_1730545208275.jpg

লোকেশন

তারিখ-১১/১০/২০২৪

খড়কি কালীবাড়ি র পুজো। পাশাপাশি বন্ধুদের মতে পুনের এই পুজোটি সব থেকে পুরনো পুজো। প্রা ছিয়াশি বছর ধরে চলছে। কালীবাড়ির মাঠে এই প্যান্ডেল বানিয়ে পুজো হয়েছে৷ এখানে অষ্টমীর দিন কুপন কেটে ভোগ খেয়েছি। খাবারের দোকান থেকে জামা কাপড় হার মালা চুড়ির দোকান তো ছিলই। তবে উল্লেখযোগ্য হল, কলকাতা গিল্ড অফিস থেকে একটি স্টল দিয়েছিল যারা অনেক শারদীয় পত্রিকা এনেছিলেন সাথে অনেক বই৷ সুদুর পুনেতে বসে এতোকিছু পাওয়াটা আমাদের প্রবাসীদের কাছে চাঁদ পাওয়ার মতো বিষয়।

অষ্টমীর দেখা ঠাকুর -২


InShot_20241102_155558312.jpg

InShot_20241102_154446575.jpg

InShot_20241102_154522712.jpg

লোকেশন

তারিখ - ১১/১০/২০২৪

কংগ্রেস ভবন খড়কি কালিবাড়ির মতো এটিও পুনের অনেক পুরনো দুর্গাপুজা। এবার যেহেতু পুজার বেশিরভাগটাই উইকডেতে পড়েছিল তাই ভিড় হয়েছিল রাত যত বেড়েছিল৷ এই পুজোটা আমাদের বাড়ি থেকে অনেকটাই দূরে। যেতেও সময় লেগেছিল। আসলে এক একটা পুজো এক একজনের থেকে প্রায় আধঘন্টা একঘন্টা দূরে। তাই এক দিনে অনেক পুজো কভার করা মুশকিল হয়ে যায়। তাও অষ্টমীতে সবাই বাড়ি ছিল বলেই দুরের পুরনো পুজো দেখতে বেরতে পেরেছিলাম।

অষ্টমীর দেখা পুজো - ৩


InShot_20241102_160631816.jpg

InShot_20241102_160701205.jpg

লোকেশন

তারিখ ১১/১০/২০২৪

সপ্তপদী কালচারাল স্পোর্টস অ্যাসোশিয়েশন এই পুজোটি খড়কি কালিবাড়ি যাবার পথেই পড়েছিল৷ কিন্তু যাবার তাড়া এতো বেশি ছিল৷ তাই ফেরার পথে ঢুকেছিলাম। এই পুজোও হল ভাড়া করে হয়েছে৷ স্টেজ বানিয়ে তার ওপর ঠাকুর বসিয়ে৷ এখানে খুব একটা মানুষের ভিড় ছিল না। এমনিতেও প্রবাসে যে কোন পুজোতেই ভিড় কম থাকে। তবে মুম্বাইতে গল্প খানিক অন্যরকম।

অষ্টমীতে দেখা পুজো - ৪


InShot_20241102_161536168.jpg

InShot_20241102_163948965.jpg

লোকেশন

তারিখ -১১/১০/২০২৪

এবছর এই পুজোর বয়স তেরো বছর পূর্ণ হল। একটু পুরনো হওয়ার কারণে মোটামুটি ভালোই বাঙালি ছিল৷ এই পুজোটিও হল ভাড়া করে হয়েছে৷ তবে এদের রোজই ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা ছিল। কুপন কেটে খাওয়া যায়। এছাড়াও চারদিনেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও ছিল।



পুণে পুজো পরিক্রমা এ পর্যন্তই। আরও অনেক ঠাকুর হয়েছিল। সময় ও দুরত্বের সমস্যার জন্য যেতে পারিনি। তাছাড়া এই বছর আমার পুনেতে প্রথম বছর তাই সবটা সাজাতেও পারিনি৷ পরের বছর চেষ্টা করব আরও অনেক ঠাকুরের গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরতে৷ দেখাবো বাঙালির বিস্তার।

এই কন্টেস্টে অংশগ্রহণ করেছি পজিশনে আসার জন্য না৷ কারণ যারা কলকাতায় থাকেন তারা ঠাকুরের বা প্যান্ডেলের ছবি যা দেবে তার কাছে প্রবাসের পুজো কিছুই না৷ তাও বাঙালির আবেগকে সম্মান জানাতে আমার এই অংশগ্রহণ৷ দীর্ঘ চোদ্দ বছর নানান জায়গায় থেকে দেখেছি, বাঙালি কিভাবে নিজের বাঙালিয়ানাকে ধরে রাখে৷ এই প্রতিটা পুজোই কিন্তু হাই বাজেট। কারণ এই সমস্ত হল বা জায়গার ভাড়াই অনেক। তাছাড়া ঠাকুর বেশিরভাগই কলকাতা থেকে আনানো হয়৷ নইলে পেটুয়া আনিয়ে এখানেই কোথাও বানানো হয়। তবে এই ঠাকুরের সমস্ত সাজপোশাক সবই কলকাতা থেকে আসে৷ এমনকি ব্রাহ্মণ ঢাকিও৷ একবার ব্রাহ্মণের সাথে কথা বলে জেনেছিলাম প্রবাসে কোন এক বছর পুজো করতে এলে তাদের যা ইনকাম হয় তাতে সারা বছরের সংসার খরচ চলে যায়৷ ভাবতে পারছেন? এতো কিছু করে বাঙালি তার নিজস্বতাকে ধরে রাখার জন্য দুর্গাপূজার উৎসব পালন করে। তাই আমি সব সময় বলি, প্রবাসের দুর্গাপূজা আসলে শিল্প না বাঙালির আবেগের পূজা, বাঙালির বেঁচে থাকার অক্সিজেন৷ সকলে কি পারে পুজোর সময় বাড়ি যেতে না কি সম্ভব? তাই এভাবেই জীবন বেঁচে নেয় প্রবাসী বাঙালিরা।

কিছু ছবি আমার বন্ধুদের তোলা তাদের মোবাইলে। আমি পারমিশন নিয়েই চেয়ে আপলোড করেছি ৷ আসলে রাত্রিতে আমার ফোনে ভালো ছবি ওঠে না৷ আপনাদের বলেওছিলাম আমার ক্যামেরাটা খারাপ হয়ে গেছে। তবে আমি তো ভেবে রেখেছি এর পর ফোন কিনলে এখানের ইনকামে কিনব। নিজের উপার্জনের প্রথম নিজেকে দেওয়া উপহার হিসেবে৷

আচ্ছা, আজকের ব্লগ এখানেই শেষ করছি৷ কাল নবমী দশমীর ছবির জন্য কিছু চমক আছে। অপেক্ষা করুন আর ভালো থাকুন।

টা টা


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

Untitled_design.png

downloadfile.webp

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আরিব্বাস। প্রবাসে তো দারুন পূজা হয়েছে। প্যান্ডেলের মধ্যে কত রকমের বৈচিত্র। আসলে দুর্গাপুজো এখন সারা বিশ্ব ছড়িয়ে গেছে। ভারতবর্ষের প্রতি কোণায় তো হয়ই। ভীষণ সুন্দর সুন্দর সব ছবি এবং তার সঙ্গে প্রবাসের পূজোর ডিটেল শেয়ার করলি। দেখে একেবারে সম্পূর্ণ পুজো পরিক্রমা হয়ে গেল।

হ্যাঁ গো পুজো সারাবিশ্বেই হয়। আমারই দেখা কত পুজো আছে। দেখি কখনও সুযোগ করে পোস্ট করব৷

একটা ভালো ফোন কিনে নেন আপু। স্টিমিটে তো এখন আপনাকে প্রতিনিয়ত ছবি আপলোড করতে হবে। দারুণ ছিল আপনার সারদীয় ফটোগ্রাফি গুলো। একেবারে একেক দিনের জন্য
আলাদা আলাদা ফটোগ্রাফি। সবমিলিয়ে দারুণ করেছেন। ভালো লাগল আপনার পোস্ট টা দেখে। ধন্যবাদ আপনাকে।।

ভাই দিনের বেলায় তুলতে অসুবিধে হয় না৷ রাত্রিবেলায় তুলতে হলে এর ওর থেকে ধার নিয়ে চালাই।