প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় আপনারা বেশ ভালই আছেন। আমিও ভালোই আছি। পিতৃপক্ষ শেষ হয়ে মাতৃপক্ষের শুরু হলো। অর্থাৎ বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হয়ে গেছে। শরতের দুর্গাপূজার পেছনে কি কারণ সেই নিয়ে অন্য একদিন ব্লগ লিখব। আজ কথা বলব পিতৃপক্ষ ও মাতৃপক্ষ অর্থাৎ পিতা-মাতা অর্থাৎ পুরুষ নারী নিয়ে৷
নারী জাতি এখনও দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হিসাবে বিবেচিত, এমন হলে সমাজের সার্বিক উন্নতি কখনও সম্ভব নয়।
কথাটা আমার নয়, বাঙালির শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তথা বিদ্যাসাগরের। যিনি পরাশর সংহিতার হাত ধরে বিধবা বিবাহ প্রচলন করেছিলেন, সাথে নারীশিক্ষার পেছনেও তাঁর অবদান যথেষ্ট। তৎকালীন ভারতবর্ষে নারীদের জন্য করার মধ্যে বিদ্যাসাগরেরও আগে যাঁর কথা না বললেই নয় তিনি হলেন রামমোহন রায়৷ বেগম রোকেয়াকেই বা বাদ দিই কিভাবে। আর বেথুন সাহেব? তিনি কি কম? মাত্র এগারোজন নারীকে নিয়ে চালু করে ফেলেছিলেন বর্তমান কলকাতার বিখ্যাত স্কুল বেথুন স্কুল। আশাপূর্ণা দেবীর বিখ্যাত উপন্যাস সত্যবতী ট্রিলজির মধ্যম খণ্ডের নায়িকা সূবর্ণলতাকে ভর্তি করেছিলেন তাঁর মা সত্যবতী৷ যদিও সেই পড়াশুনো এগোয়নি বেশিদিন।
এই সবই কিন্তু নারীদের জন্য লড়াই। সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ যারা পিছিয়ে পড়ছে তাদের জন্য লড়াই। কেন এই লড়াই? কিই বা প্রয়োজন? একবার ভেবে দেখুন, একটা সন্তানকে বড় করে তোলার জন্য পরিবারের পাশাপাশি তার মায়ের শিক্ষার কতখানি অবদান৷ এক মা যে কোনদিন স্কুলে যায়নি, বই পড়েনি, জগৎ দেখেনি সে কিভাবে তার সন্তানকে মুক্ত শিক্ষায় মানুষ করবে? বাড়ির পুরুষ ইনকাম করতে চলে যায়, দাদু স্থানীয় পুরুষ কিংবা ঠাকুমা এনাদের কাছে নাতি নাতনি স্নেহের বিষম বস্তু। তবে? কি হবে সমাজের? পুরুষের সাথে সাথে যে একটি নারীও সমাজের অগ্রগতির কাণ্ডারী তা বলার বা প্রমাণ করার আলাদা করে কোন প্রয়োজন নেই।
বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ ভাবা যাবে না। তব কি প্রথম শ্রেনির ভাবব? তাহল তৃতীয় লিঙ্গরা কোথায় যাবে? এই কথা বহু বছর ধরেই ভাবিয়েছে।
একটা যুগ ছিল যখন নারীরা নানান ভাবে অত্যাচারিত হয়েছে। সংসারে মার খেয়ে, খাবার না পেয়ে, নানান কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটিয়েছে। বলা চলে নারীরা পীড়িত, নির্যাতিত। দিন যত বদলেছে চিত্রও বদলেছে। আজ পুরুষরা অত্যাচারিত৷ নানান পরিবারে শুনি বাড়ির বউ এসে মানাতে চায় না, স্বামীদের মারধর করে, ডিভোর্স হয়ে চলে যায়৷ এমনকি সন্তানের দায়িত্বও নিতে চায় না৷ একে যদি উশৃঙ্খল জীবন বলি তবে কি খুব ভুল হবে? আর যদি নাও বলি তাতে কিই বা এসে যাবে? কোথাও কি মনে হয় না, মেয়েরা আর মানিয়ে নিয়ে সংসারে নিজেদের প্রয়োজনীয়তার প্রমাণ দিতে ইচ্ছুক নয়। তারা এখন জায়গা চায়, প্রথম শ্রেণিতে নিজেদের সমান সমান অধিকার চায়৷
কিসের সাথে সমান অধিকার? একটি পুরুষের সাথে? একটি পুরুষ বা একটি নারী কোন দিক থেকে সমান? শারীরিক বল প্রদর্শন বা রাস্তাঘাটে পরিস্থিতি সামলানো, মানসিক চাপ নেওয়া, কে কার সমান? একটু খুঁটিয়ে ভাবলেই স্পষ্ট হয় কেউ কারও সমান নয়, যে যার নিজের ক্ষমতায় পৃথিবীতে এসছে। মানব জন্ম কোন রেসের মাঠ নয় যে নারীকে পুরুষের থেকে শ্রেষ্ঠ বা পুরুষক নারীর থেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণে দৌড়োতে হবে৷ সংসার সমাজ সর্বত্র দুই লিঙ্গের সমান প্রয়োজন৷ এখানে প্রথম শ্রেণি বা দ্বিতীয় শ্রেণির বিভাজন দরকার নেই৷ যে যেই কাজে পক্ত, সে সেই কাজটাই যদি চমৎকার ভাবে করে তবেই জাতির উন্নতি তথা সমাজের উন্নতি।
ছোট থেকেই বিভাজন করা আমাদের রন্ধ্রে। এই বিভাজন আজকের দিনে শুধু পুরুষ করে তা নয় নারীরাও করে সমান ভাবেই। যার ফল বাসে মহিলাদের সিট নিয়ে পুরুষরা আঙুল তোলে, রিজার্ভ কোটা দেখিয়ে। পুরুষদের কোটা নেই৷ এই রিজার্ভেশনের কি প্রয়োজন? বাসে ট্রামে ছেলেদের সাথে মেয়েরা সাধারণ যাত্রীর মতো সহযাত্রী হতে পারলে সমাজ কি নিশ্চিত হতো পারত না? একদিন রাস্তায় ছেলেরা মেয়েদের দেখলে শারীরিক গঠন সমেত পোশাক নিয়ে টিটকিরি কাটত। আজ মেয়েরাও ছেলেদের অপদস্ত করে। প্রতিশোধ স্পৃহায় সমাজ যেন নীরব দর্শক যে বিনা কারণে প্রতিনিয়ত আহত হয়।
কত পুরুষের মুখে শুনেছি, ছেলে ছাড়া এই কাজ হয় না ওই কাজ পারে না তার আবার নারী স্বাধীনতা। আবার মেয়েরাও উলটো পুরান গায়৷ কী ভয়ংকর নির্বোধ এই জাতি, যারা এটাই বোঝ না কোন একজনকে গুরুত্বহীন করে দিলে সমাজের প্রবাহ পিছিয়ে পড়তে পড়তে থেমে যায়।
আর তৃতীয় লিঙ্গরা? তারা কি সত্যিই অচ্ছুৎ? কোণঠাসা হয়ে গিয়ে আজ তাদের মস্ত ইউনিয়ন। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির ওপর করাঘাত আমরা করছি। বলিহারি উন্নত সমাজের উন্নত মাথা।
আমাদের আসলেই কোন শ্রেণির প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু ক্ষমতা আছে আবার অক্ষমতাও আছে। দুটোরই সম্মান ও সহায়তা করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেতে পারলেই সমাজের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব। আগে তো সম্মান করার শিক্ষায় শিক্ষিত হোক জাতি; পরে দুর্নীতি, পাপ, ও অন্যান্য অপকর্ম দমনের ধাপ। আজকের দিনে নারীবাদীদের কথা, পুরুষতন্ত্রের কথা শুনে মনের ভেতর অনেক উথাল-পাথাল হয়। অনেক মোচড় অনেক বদলেত কথা ঘোরে মাথায়, সেগুলো থেকেই যেসব চিন্তার অনবরত জন্ম নেয় তাই তুলে ধরলাম। আপনারাও মতামত দিন, এভাবে ভাবতে কি পারি না?
আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কীরূপ? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্য তাহাই।
....................... বেগম রোকেয়া
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
https://x.com/neelamsama92551/status/1842236823189475576?t=vMFWxufPt8Qe9kygo3Ulpg&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
নারী ছাড়া পুরুষ যেমন
পুরুষ ছাড়া নারী,
এই সমাজের জীবন যাপন
হয়ে উঠে ভারী।
মমতা ভরা আঁচল আছে
ভালোবাসায় ভরা,
নারী আছে বলেই আজও
সুখী সুন্দর ধরা।
পুরুষ সেতো ছায়ার মত
আগলে রাখে বুকে,
সবার চাহিদা অটুট রেখে
কাঁদে লুকে লুকে।
নারী-পুরুষ সবাই সেরা
মর্যাদাটা ও সবার
সমতায় গড়ি মর্যাদা বলে
গেলাম আবার।
লেখাটা হয়েছে তোমার
ভারী চমৎকার,,,
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কী চমৎকার বললে। ভালোবাসা নিও। সত্যিই তো সবাই যে যার জায়গায় সুন্দর। সবারই প্রয়োজন আছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
নারী এবং পুরুষ আমরা একে অপরের পরিপূরক। কাজে আমরা কাউকে ছোট করে কথা বলতে পারি না এটা আমাদের শিক্ষা। আর যারা নারীদেরকে অশ্রদ্ধা অসম্মান করে এটা তাদেরও পারিবারিক শিক্ষা। পরিচয় আমাদের একটাই আমরা মানুষ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি মনে করি একটা পরিবার একটা সমাজ একটা সুন্দর জাতি গঠনের জন্য নারী-পুরুষের সমান অধিকার এবং সমান কার্যক্রম এর প্রয়োজন। একজন পুরুষ যখন একটা কাজ করে তখন নারী যদি তার কাজে সহায়তা প্রদান করে তাহলে সে কাজটা সহজ হয়ে যায়। ঠিক তেমনি নারী একটা কাজ করছেন পুরুষ এসে যদি সে তার সহায়তা প্রদান করেন তাহলে সেখানেও সহযোগিতার মাধ্যমে কাজে এগিয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত সবাই সব কাজের মধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়ানো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মানবাধিকার থাক। সমান তো কেউ কারও না৷ যে যেটা পারে সে সেটাই করবে৷ সহায়তা শব্দটাই সঠিক প্রয়োগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে৷ ধন্যবাদ অনেক আপনি পড়লেন, এখানেই আমার লেখার সার্থকতা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
যাক আপনাকে এমন বিষয়ে কথা বলতে দেখে ভালো লাগল। সমাজে তো সবাই মেয়েদের অধিকার অত্যাচার নিয়ে কথা বলে কিন্তু পুরুষ কে অত্যাচার করা হয় এটা নিয়ে কাউকে খুব একটা কিছু বলতে শুনি না। সত্যি বলতে আপনিই ঠিক বলেছেন দুজনের একেবারে সমান অধিকার চাই। তাহলেই এই সমস্যার সমাধান আশা করা যায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সমাজ এখন বদলা প্রথায় বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। বদল হতে সময় লাগবে৷ একদিন নারীরা অত্যাচারিত হত বলে আজ পাল্টা জবাব দেবে এ ভাবে সৃষ্টির উন্নয়ন হয় না৷ শিক্ষা বোধ ন্যায় নীতি সবার মধ্যেই সমবন্টন ঘটলে জাতির উন্নয়ন কেউ আটকাতে পারবে না৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আজ আপনি আমাদের মাঝে দারুণ একটা পোস্ট শেয়ার করেছেন। কেননা আমরা নারী পুরুষরা যদি একসাথে সমাজের উন্নয়নে কাজ না করি তাহলে আমাদের সমাজ কখনো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে না। আর যে সমাজ নারীদেরকে অবজ্ঞা করে তারা কখনো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
তাই তো। সব্বাইকেই এক সাথে এগোতে হবে। তবেই জাতির উন্নয়ন। সমাজের উন্নয়ন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit