চার্ট পেপারে আমার ডিজাইন করা কিছু ড্রেস || একদা ফ্যাশন ডিজাইনিং পোর্টফলিও তে যা ছিল

in hive-129948 •  3 months ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


Beige Neutral Polaroid Birthday Photo Collage_20241025_224607_0000.png








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



ছোট থেকেই আমার শখ অনেক কিছু শেখার। কারও কিছু ভালো দেখলে আমি ভাবতাম ও পারছে যখন আমিও পারব। আমিও তো মানুষ, ওর মতো না হোক আমার মতোই নয় হবে৷ শুধু মাত্র এই মনোভাবের জন্য আমি নানান কাজ শিখেছি। যখন যেমন সময় পেয়েছি৷

সেই সময়টাতে আমার সন্তান সদ্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে আর আমারও হাতে খানিকটা সময়। চাকরি করব ভাবলাম। কিন্তু কোন ধরাবাঁধা নিয়মে পড়ে যাবার মানুষ আমি নই। লেখালিখিটাও যে সেইভাবে করব তেমন ঠেলার মতো কেউ ছিল না। সবটাই যেন আমার ইচ্ছে। আর সত্যি বলতে কি একা একা সব কিছু করতে আমার কেমন যেন অনীহা এসে যায়৷ এদিকে সময়ও ঠিক করে কাটে না। বাড়ি বসে নিজেকে পাগল পাগল লাগল৷ তখনই একদিন রাস্তায় দেখলাম ফ্যাশন ডিজাইনিং- এর ডিপ্লোমা কোর্সের বিজ্ঞাপন৷ গিয়ে কথা বললাম, ইন্টারভিউ দিলাম, হয়েও গেল৷ দেড় বছর ধরে শিখলাম, নানান রঙ তার মানে, কখন কেন কার সাথে কোন রঙের ব্যবহার করা যায়। কাকে কি পরলে মানায় ইত্যাদি নানান জিনিস। একটা সেমিস্টার পরেই শুরু হল ড্রেস ডিজাইনিং। শুরুতে আমার বেশ চাপই হত৷ সংসার সামলে রেগুলার ক্লাস করা ও সময় মতো প্রোজেক্ট সাবমিট করা রীতিমতো হিমসিম খেয়ে যেতাম। তাও করেছি। কারণ শেখার তীব্র নেশা।

যখন লেভেলে ছিলাম তখনই ভাবতাম একটু একটু করে ঝুলি থেকে সমস্ত বেড়াল মানে যত যা জানি সব নিয়েই পোস্ট লিখি৷ কিন্তু এও ভাবলাম তবে ভেরিফায়েড হওয়ার পর কি করব? তাই বেশ কিছু গপ্পো বাকি রেখে দিয়েছি। আজ তারই একটা নিয়ে এলাম।

শুরুতেই বলি এই সমস্ত ড্রেস আমাদের একটা ফিক্সড মডেলের ওপর ট্রেসিং পেপারে আঁকতে হত৷ তারপর চার্ট পেপারে সেটিকে ট্রেস করে রঙ ও ডিজাইন করা। আমার সে সমস্ত কাজের জিনিস এখন বাক্সবন্দী। কালীপুজোর ছুটির পর বের করে একদিন ধাপে ধাপে দেখাব কিভাবে করি। আজ ক্লাসের পোর্টফলিওর কিছু ডিজাইন নিয়ে এসেছি। যদিও পোর্টফলিওটি আমার ম্যাম তার বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করার জন্য রেখে দিয়েছেন। আমার কাছে কেবল ছবি রয়েছে৷ তবে এর পর ব্লগের জন্য যখন আঁকব তখন পুরোটাই আমার কাছে থাকবে যেটা খুবই আনন্দের৷

চলুন কথা না বাড়িয়ে দেখাই ডিজাইনগুলো।

ডিজাইন- ১

InShot_20241025_225415239.jpg

জীবনের প্রথম ডিজাইন করা ড্রেস। ইন্ডিয়ান ক্যাসুয়াল আর ওয়েস্টার্ন ক্যাসুয়াল। এর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম স্টেডলার কালার পেন্সিল আর ওপর থেকে জল দিয়ে ব্রাশ৷

ডিজাইন- ২

InShot_20241025_215518668.jpg

এই ড্রেসটি কর্পোরেট ড্রেস। মানে অফিস কাচারিতে ধোপদুরস্ত হয়ে যাবার জন্য৷ মিডিয়াম হিসেবে ব্যবহার করেছি চারকোল পেন্সিল আর সাদা কালির পেন।

ডিজাইন- ৩

FB_IMG_1565429751608.jpg

আপনারা অনেকেই জানেন ভারতবর্ষের নানান রাজ্যের পোশাকের স্টাইল আলাদা। আমাদের দেওয়া হয়েছিল প্রায় দশটা রাজ্য। এই ড্রেসটি রাজস্থানি স্টাইলের৷ বৈশিষ্ট্য হল আঙ্গারখা প্যাটার্ন মানে জামার সামনের অংশটি ওভার ল্যাপিং৷ অর্থাৎ একটির ওপর আরেকটি চাপানো৷ এবং মাথায় বিশাল পাগড়ি এঁকেছিলাম আনুষাঙ্গিক সাজ হিসেবে৷ মিডিয়াম হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম ওয়াটার কালার, স্টেডলার রঙ পেন্সিল ও সাদা কালির পেন।

ডিজাইন- ৪

FB_IMG_1729875677191.jpg

এই দুটি ড্রেস হলো ইন্ডো ওয়েস্টার্ন। মানে ভারতীয় ও পাশ্চাত্য পোশাকের মেলবন্ধন৷ ডেনিম জিন্সের ওপর কুচি করা কাপড় সাথে ক্রপ টপ ও ডেনিম জ্যাকেট। আরেকটি ধুতি পাজামা সাথে স্টাইলিশ ক্রপ টপ। মিডিয়াম হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম ওয়াটার কালার ও স্টেডলার রঙ পেন্সিল।

ডিজাইন- ৫

FB_IMG_1729875749318.jpg

এই পোশাকটি হিমাচল প্রদেশের ফ্যাশনকে বেস করে ডিজাইন করেছিলাম। বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল পঞ্চু প্যাটার্ন টপ। হিমাচলের লোকেরা ঠান্ডার কারণে পঞ্চু শাল ব্যবহার করেন। এটিরও মিডিয়াম হিসেবে ব্যবহার করেছি ওয়াটার কালার ও স্টেডলার রঙ পেন্সিল।

ডিজাইন- ৬

FB_IMG_1729875731637.jpg

ককটেল গাউন। ককটেল পার্টিতে পরে যাবার ড্রেস। একেবারে ডট ওয়েস্টার্ন। কোমরে বো দিয়েছিলাম। আমার আসলে বো ওভার ল্যাপিং কাপড়ের টুকরো এই গুলো খুব পছন্দের ছিল৷ তাই প্রায় ড্রেসেই দিতাম। এই ডিজাইন যেন আমার সিগ্নেচার ডিজাইন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

আমার ডিজাইন করা নানান ধরণের ড্রেস নিয়ে সাজালাম আজকের ব্লগ৷ তবে আপনাদের কথা দিচ্ছি ছুটির পর আমি সম্পূর্ণ এঁকে আপনাদের সামনে নিয়ে আসব। কিভাবে ডিজাইন করতে হয় তার প্রতিটা ধাপ অবশ্যই দেখাবো৷ আমি মূলত নানান ধরণের রঙের ব্যবহার ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্স করতে এসেই শিখেছি৷ পরে সেইগুলিই কাজে লাগিয়ে ছবি আঁকি। এই যে নানান ধরণের আর্টফর্ম আঁকি তার অনেককিছুরই আইডিয়া থিওরিটিক্যালি এই কোর্সে ছিল, যার ফলে আর্ট ফর্মের ইতিহাসও বিগত ব্লগে লিখেছিলাম।

কেমন লাগল আমার আজকের পোস্ট? অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন৷ জানেন এখানে না এলে হয়তো সময়ের জাঁতাকলে এটাই ভুলে যেতাম আমি একজন ট্রেনিং প্রাপ্ত ফ্যাশন ডিজাইনার। হা হা হা।

আবার আসব কাল অন্য পোস্ট নিয়ে৷ আজ এ পর্যন্তই

টা টা।
1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণড্রেস ডিজাইন
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, ইনশট


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

Untitled_design-1.png

puss_mini_banner3.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আরিব্বাস। দারুন সব পোষাক তো৷ কত সুন্দর করে সবকটা ডিজাইন করেছিলি। তোর করা সেই ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্সটার কথা মনে পড়ছে। কত গুণ তোর। সুন্দর সুন্দর সব পোস্ট করে সকলকে সমৃদ্ধ করিস। দারুন কোয়ালিটির সবকটা পোস্ট। এই পোস্টটা একদম স্বতন্ত্র এবং ভিন্নধর্মী। সবকটি ছবি অসাধারণ হয়েছে।

পুরনো স্মৃতি নতুন করে জাগিয়ে তুললাম। তোমার কমেন্ট সব দিনই আলো দেয়। আজও দিল৷

image.png