প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
[সোর্স](মেটা AI)


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
ঐতিহ্যমন্ডিত অসাধারণ বুনটে সেজে ওঠা মহাভারতের ছত্রে ছত্রে জড়িয়ে আছে নানান ঘটনা। শুধু ঘটনা বললে ভুল বলা হয়, রয়েছে সমাজের কথা, জীবনের কথা, মানুষ মনুষ্যত্ব সহ আমাদের ষড়রিপু, তৎকালীন জীবনযাত্রার খুটিনাটি৷ এই দীর্ঘ রচনাটিকে সুন্দর করে উপস্থাপনের জন্য যা যা প্রয়োজন তার কোনটিতেই কবি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন কার্পণ্য করেননি৷ তবে মহাকাব্য হেতু মহাভারতে জটিলতার অভাব নেই৷ হস্তিনাপুর রাজসিংহাসনের বংশবৃক্ষ দেখলে খানিকটা মাথা ঘোরার উপক্রম হলেও প্রতিটি চরিত্রের যথা সময়ে যথাযথ ব্যবহার দেখা যায়৷ আমি বলব না প্রত্যেকেই মুখ্য বা গৌন। যার যেখানে যেভাবে আসার প্রয়োজন সেই স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়েই প্রতিটি চরিত্র নিজ নিজ সাজে সেজে উঠেছিল।
মহাভারতের চরিত্রের কথা বললে আমাদের প্রথমেই মনে পড়ে পিতামহ ভীষ্ণ, ধৃতরাষ্ট্র, পান্ডু, পঞ্চপাণ্ডব, দুর্যোধন, দুঃশাসন, কৃষ্ণ, কর্ণ ইত্যাদির কথা; যারা প্রত্যেকেই পুরুষ চরিত্র। কিন্তু নারী চরিত্রের কথা এলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে গান্ধারী, কুন্তি, দ্রৌপদী। এছাড়াও স্বল্পবিস্তর আলোচনায় কখনো কখনো উঠে আসে সুভদ্রা, দুঃশলা কিংবা হিড়িম্বার নাম। ভানুমতী? আসে কি? এলেও ক'জনেই বা জানেন তার কথা?
কুরু রাজবংশের রাজা ধৃতরাষ্ট্রের ঔরসে গান্ধারী গর্ভধারণ করেন, ঘটনাচক্রে তিনি তাঁর গর্ভপাত করান এবং জন্ম দেন একটি মাংসপিণ্ড। যা ব্যাসদেবের নির্দেশে একশটি খন্ড করে একশ'টি ঘৃত কলসে রাখা হয় এবং জন্ম নেয় একশত পুত্র। এই একশত পুত্র-সন্তানদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ও শ্রেষ্ঠ ছিলেন দুর্যোধন। মহাভারতের যুদ্ধ অর্থাৎ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে দুর্যোধনই ছিল কৌরবদের নেতা। বাল্যকাল থেকেই দুর্যোধন নিয়ামক, প্রভুত্বশালী, আদেশদাতা হিসেবে প্রসিদ্ধ। তার আত্মম্ভরিতার ফলস্বরূপ কোথাও হেরে যাওয়াকে মেনে নিতে পারতো না। ভানুমতী আর কেউ না এই কৌরব শ্রেষ্ঠ দুর্যোধনের একমাত্র স্ত্রী। যিনি ময়ূরী নামেও পরিচিত। তবে কৃষ্ণদ্বৈপায়নের মহাভারতে দুর্যোধনের স্ত্রীয়ের নাম উল্লেখ ছিল না। পরবর্তী সংস্করনে ভানুমতী হিসেবে সংযোজন করা হয়েছে৷ চরিত্রটির খুব বেশি স্থানও দেখতে পাওয়া যায় না। মাত্র তিনটি পর্ব ছাড়া। তাও খুবই সামান্য- শল্য পর্বে , দুর্যোধন তার পুত্র লক্ষ্মণ কুমারের মায়ের ভাগ্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন । স্ত্রী পর্বে গান্ধারী তার পুত্রবধূর কথা উল্লেখ করেছেন। শান্তি পর্বে , ঋষি নারদ দুর্যোধন এবং কর্ণের বন্ধুত্ব সম্পর্কে একটি গল্প বর্ণনা করেছেন ।
কালি(দৈত্য)-এর একজন অবতার ভানুমতী মহাভারতে তার জীবন শুরু করেছিলেন কামরূপরাজা ভাগদত্ত কন্যা হিসেবে৷ বর্ণনায় পাওয়া যায় তৎকালীন ভারতবর্ষে দ্রৌপদীর পর সব থেকে বেশি রূপসী এবং গুণী নারী ছিল ভানুমতী। রাজকুমারী বিবাহযোগ্যা হলে রাজা ভাগদত্ত আয়োজন করেন বিশাল স্বয়ংবর সভার৷ সমস্ত বীর ক্ষত্রিয় রাজারা আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন৷ গল্পটি মহাভারতের শান্তি পর্বে দুর্যোধনের বিয়ের বর্ণনায় পাওয়া যায়। নারদ, দেবতা ঋষি দ্বারা বর্ণিত। প্রাগজ্যোতিষপুর নগরে সেদিন শিশুপাল , জরাসন্ধ , ভীষ্মক, বক্র, কপোতরোমন, নীলা, রুক্মীর মতো অনেক কিংবদন্তি শাসক, শ্রিংগা, অশোক, সাতধনওয়ান প্রভৃতি আমন্ত্রিত ও উপস্থিত ছিলেন৷ দুর্যোধন ছিলেন তাঁর বন্ধু কর্ণের সাথে৷ অস্ত্র সমেত নানান বিদ্যায় এইসব রাজনরা পারদর্শী। সুসজ্জিত সভা আলো করে তাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন । কখন সেই ভুবনমোহিনী রাজকন্যার দেখা পাওয়া যাবে। শুধু দেখা পাওয়া গেলেই তো হবে না, কার গলায় মানে কোন ভাগ্যবান রাজপুরুষের গলায় শোভা বর্ধন করবে সেই রত্নহার অর্থাৎ বরমালা। কেননা, স্বয়ম্বরের নিয়মই হল রাজকন্যা নিজের ইচ্ছায় যাকে খুশি নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করবেন।
তবে রাজা ভাগদত্ত শুধু স্বয়ম্বর ডেকেই ক্ষান্ত হননি। তাঁর অমন রূপসী রাজকন্যা যে সে রাজার গলায় যাতে না মালা পরান তার জন্য তিনি রাজপুরুষদের বীরত্ব, গুণ এবং শৌর্যের পরীক্ষা নেওয়ার উদ্দেশ্যে লক্ষ্যভেদের ব্যবস্থা রেখেছিলেন সেই সভায়। মাছের চক্ষুভেদ পরীক্ষা।একটি ধনুর্বাণও ছিল। যিনি লক্ষ্যভেদ করবেন তিনিই ভানুমতীকে পাবেন। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর, সুন্দরী রাজকুমারী তার নার্সমেইড এবং দেহরক্ষীদের দ্বারা বেষ্টিত হাতে মালা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করল। যেন সূর্যের প্রকাশে সমস্ত অন্ধকার ঘুঁচে গেছিল। সমস্ত রাজারা তাকে দেখে মোহিত হয়ে গেছিলেন। প্রত্যেকেই মনে মনে ভেবেছেন এই সেই সময় লক্ষ্যভেদ তো করবেনই সঙ্গে অসামান্যা রূপবতী গুণবতী রাজকন্যাকে নিয়ে রাজ্য ফিরবেন। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর ঘটে আর-এক। একে একে রাজারা উঠে ধনুকে গুণ পরাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু কেউ এঁটে উঠতে পারলেন না। মহারাজ জরাসন্ধ ধনুক নিয়ে বহু পরিশ্রমে তাকে নুইয়ে গুণ পরালেন। শেষে বাণ লাগিয়ে লক্ষ্য স্থির করেও লক্ষ্যভেদ করতে পারলেন না। লক্ষ্য স্পর্শ করে বাণ মাটিতে পড়ে গেছিল। আর জরাসন্ধও ধনুক বাণ ফেলে দিয়েছিলেন। এভাবে কোন রাজাই লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি সেদিন। রাজা ভাগদত্ত অস্থির হয়ে যাচ্ছিলেন৷ সভায় উপস্থিত রাজারা বললেন লক্ষ্যভেদ না শক্তির পরীক্ষা হোক। যিনি সব থেকে বেশি শক্তিশালী তিনিই পাবেন ভানুমতীর অমূল্য বরমালা৷ এমত অবস্থায় উঠে এসেছিলেন মহাবীর বৈকর্ত্তন কর্ণ। ধনুক আকর্ণ টেনে টঙ্কার ধ্বনি দিলেন। লক্ষ্যের উদ্দ্যেশে বাণ স্থাপন করে মহা পরাক্রমে তা ছুঁড়লেন। এক বাণে মৎসচক্রচ্ছেদও করে ফেললেন। যা দেখে ভানুমতী খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কর্ণের গলায় মালা দিতে গেলে কিন্তু কর্ণ পিছু হটে গলা সরিয়ে নিলেন। দেখে অন্য রাজারা অবাক হলেন। ধনুক আকর্ণ টেনে টঙ্কার ধ্বনি দিলেন। লক্ষ্যের উদ্দ্যেশে বাণ স্থাপন করে মহাপরাক্রমে তা ছুঁড়লেন। একবাণে মৎসচক্রচ্ছেদ করে ফেললেন। দেখে ভানুমতী খুশি হলেন। তিনি কর্ণের গলায় মালা দিতে গেলেন। কিন্তু কর্ণ গলা সরিয়ে নিলেন এবং বললেন তিনি তার বন্ধু দুর্যোধনের পছন্দ রক্ষা করতে এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে৷ দেখে অন্য রাজারা অবাক হলেন। রাজা জরাসন্ধও দাবী করেছিলেন অর্ধ ভাগীদার হিসেবে৷ কারণ তিনি ঐ ধনুকে গুণ পরিয়েছিলেন। তাই তোমার প্রসাদের অর্ধেক আমারও প্রাপ্য। এই বলে তিনি অন্য রাজাদের সমর্থন চাইতে লাগলেন। রাজারাও তাকে সমর্থন করে বলেন – ধনুকে গুণদাতারও অর্ধেক ভাগ আছে। ভানুমতীর স্বামিত্ব তাই দুজনেরই। অতয়েব ঠিক হল এই দুজনের মধ্যে যিনি বলবান তিনিই কন্যা ভানুমতীকে পাবেন। লড়াই হলো আবার। আর জিতলেন কর্ণ।

পোস্টের ধরণ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | মেটা এ আই |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
https://x.com/neelamsama92551/status/1909662422601777351?t=8gK2nLaLTUDV0-D5yj-Scw&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/neelamsama92551/status/1909663501238362609?t=kX9pLFS7579S_s9P4V0abQ&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1909664286471078170?t=nujfXymVN1BZ8C8mer4EDQ&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1909665343775310272?t=ARb3ee5Gbaymr7wMKAGmJQ&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মহাভারত সম্পর্কে যতই জানি, সত্যিই ততই অবাক হই দিদি! ভানুমতী সম্পর্কে এত কিছু জানা ছিলো না। আপনার পোষ্ট পড়ে জেনে ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মহাভারতের যুগে নারীরা অত্যন্ত শক্তিশালী ছিলেন এবং ভানুমতির তারই একটি উদাহরণ। ঘটনার ঘনঘটাই এই সমস্ত চরিত্রগুলো কখনোই খুব একটা আলো পাইনি অথচ নেপথ্য চরিত্র হিসেবে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ যে আপনি ধৈর্য ধরে পুরো পোস্টটি পড়েছেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit