কলকাতা আন্তর্জাতিক বই মেলা। পর্ব ২

in hive-129948 •  4 days ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।


IMG_9905.jpeg







আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



আজ বইমেলা শেষ হলো। বিগত দশ দিন ধরে অক্ষরের যজ্ঞ চলল। অনেক মানুষই বলে থাকেন বইমেলায় বই কম খাবারের বিক্রি বেশি। আমি কখনোই বলবো না কথাটা পুরোটা সত্যিই কারণ টেবিলে বসে যখন বিক্রি করেছি তখন দেখেছি সাধারণ মানুষের বই কেনার ঢল। এমন অনেকেই আছেন যারা বিখ্যাত লেখক লেখিকা বাদ দিয়ে নতুনদের বই কিনে পড়েন। বিখ্যাতদের বই তো সকলেই পড়েন কিন্তু নতুনরাও যে ভালো লিখছেন এ কথা বলার জন্য বা জানার জন্য সাধারণ পাঠক কমই এগিয়ে আসেন।

কিন্তু এবার বইমেলায় অন্যরকম অভিজ্ঞতা দিলো। পত্রিকা বিক্রি হয়েছে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের কারণে। ওনারা নিজেরাই সেই হাতে না তুলে নিলে আমরা কোনভাবেই বুঝিয়ে বা মার্কেটিং করে পত্রিকা বিক্রি করতে পারতাম না। আনন্দের বিষয় আমাদের গত সংখ্যা এবং এবারের পত্রিকা দুটোরই স্টক ফুরিয়ে গেছে। এ আমাদের বড় প্রাপ্তি হয়ে আর কিছুই না।

বই বিক্রি বা বই কেনা ছাড়াও আমরা যারা টেবিলে বসি তাদের জন্য সবথেকে মজার বিষয় হলো পাশাপাশি নতুন প্রতিবেশী তৈরি হওয়া। রোজ দিন দেখা হওয়া গল্প গুজব করা। এভাবে কত অচেনা পরিচিত হয়ে ওঠেন। গতবার যারা ছিলেন তারা এখন আমার বেশ ভালই বন্ধু। আর এবারের প্রতিবেশী ছিলেন এক বয়স্ক ভদ্রলোক। যিনি কেবলমাত্র শখের বই সম্পাদনা করেন। মেলার প্রথম দিন থেকেই দেখেছি টেবিল সাজানোতে বা কাস্টমার কে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে তার যেন কোন আগ্রহই নেই। এসে টেবিলের ওপর কোন রকমে বইগুলো ছড়িয়ে দিতেন। আজ শেষ দিন দেখলাম তার প্রায় সমস্ত বই বিক্রি হয়ে গেছে। আর তিনি আমাদের জন্য কেক এনেছেন হাতে করে। পাশাপাশি টেবিলে তো আমরা যখন টেবিল ছেড়ে বেরিয়ে যাই একে অপরকে বলে যাই দেখভাল করার জন্য। সেইভাবেই সম্পর্কে সূত্রপাত। উনি যেহেতু বয়স্ক নাকি আমরা দাদু বলতাম। দাদুর জীবনের অনেক গল্প শুনেছি। দাদু বললেন এই প্রকাশনের কাজ ওনার নিতান্তই শখের বই বিক্রি হলে হবে না হলে না। খুব ক্যাজুয়াল দেখে ভালো লাগতো।

আজ শেষ দিন আমরা সবাই যেখানে সাত তাড়াতাড়ি গিয়ে টেবিল সাজিয়েছি সেখানে দাদু এসেছেন অনেক পরে। প্রায় সন্ধ্যের দিকে। খেলতে তুলতে কোনরকমে টেবিলে বসলেন। আর বেশ কিছু বই সেলও দিয়ে দিলেন। উনি আবার বলেন কিনলে কিনবে না কিনলে না। কোন প্রকাশক কে আমি এমন দেখিনি। পরে ওনার কথাই বুঝেছিলাম ওনার টাকা পয়সার কোন অভাব নেই বরং যথেষ্ট টাকা রয়েছে কিন্তু খরচা করার কোন জায়গা নেই। তাই শখের উপর ভিত্তি করে এই প্রকাশনার কাজ।

রোজ দিন বসে উনার সাথে আমাদের দারুন সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। আমরা প্রত্যেকেই দাদু বলে ডাকতাম। হাত যখন উনি কেকটা আমাদের হাতে তুলে দিলেন মনটা ভারী হয়ে এলো। ভাবলাম দাদুর সাথে আবার পরের বছর দেখা হবে। যদি টেবিল না খুঁজে পাই তাহলে দেখা হওয়ার কোন গল্পই নেই। কি জানি মানুষ তো আশা নিয়েই বেঁচে থাকে আমারও হয়তো তাই।

বইমেলা তো শুধুমাত্র বইয়ের মেলায় নয় নতুন সম্পর্ক যে তৈরি হয় ভালোলাগা নতুন কিছু শিখি তা প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ে।

আজ বাড়ি ফিরতে প্রায় সাড়ে দশটা হয়ে গিয়েছিল। কোনরকম খেয়ে হাত পা ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্লগ লিখতে বসেছি। চোখ দুটো জুড়িয়ে আসছে। কোনভাবেই ঠিক করে বুঝতে পারছি না। পর পর এতদিনের ধকলে আমি বেশ ক্লান্তই হয়ে গিয়েছি। তাই আজ আর বেশি কথা বাড়াচ্ছি না। বইমেলার আরো অনেক গল্প আছে আস্তে আস্তে বলবো আপনাদের।

আজ আসি।

টা টা।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণজেনারেল রাইটিং
কলমওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

5q1knatRafuz9XwMuuEKUktArqLQpY9ERHvTUkr4H3M7EJa5zmYjd88Mgg7ucDLaoRyBbuk6ZDoBxSEqGcM8f9gtL5ff3dELA5FFXhfdJMy3CLVqCeBiUcuHt1GpdcrweUGxxxmGTC4nBtUhD1QWuxAAkWX8iy55cDyLQMmixxBjRCHLY6iMvDqgWQXyeinoLTe3.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iPJrqKcZJETAdA7YZhepGeLmDVmitykwcE4ZY727f2tSpfY4knMyeojpyP93CptPsV8DDQHMKLJ.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

1000394718.jpg

1000394717.jpg

সবথেকে উল্লেখযোগ্য এবং মনে রাখবার মতো ঘটনা হলো দাদুকে কেউ অনলাইন পেমেন্ট করবে বললেই দাদু আমার দিকে দেখিয়ে দিচ্ছিল। আমি যে দাদুর কতগুলো অনলাইন পেমেন্ট এর টাকা নিয়েছি তার ঠিক নেই। আসলে এই সম্পর্ক গুলোই কেমন যেন ক্ষণস্থায়ী। এই কয়েকদিনে ভীষণ সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছিল দাদুর সঙ্গে। আর এখন থেকে আর হয়তো কোনদিনই দেখা হয়ে উঠবে না। কিন্তু মনের মধ্যে থেকে যাবে এই দিনগুলোর স্মৃতি।

ঠিক এইভাবেই আগের বছর হেমন্তদা ছিল আমাদের প্রতিবেশী এবং বইমেলার পরেই হেমন্ত দার সাথে সম্পর্ক খুব ভালো হয়ে গেছিল। যদিও দাদুর কন্টাক্ট নাম্বার নেওয়া হয়নি তবে পরের বইমেলায় খুঁজে নিশ্চয়ই দেখা করব।

আমাদের এই দিকে বই মেলা হচ্ছে তবে আপনাদের এইদিকে কেমন হয় জানা নেই।বই মেলায় সবাই নতুন বইকে একটু কম প্রাধান্য দেয়।আপনি তাহলে বেশ ব্যাস্ততম সময় পার করছেন এখন। আর আপনার নতুন প্রকাশনার জন্য অনেক অভিনন্দন রইল।দাদুর সাথে ভালোই সম্পর্ক হয়েছে তাহলে।আসলে কম সময়েও ভালো বন্ধু হয় অনেক সময়।

আপনাদের ওদিকের বই মেলা মানে ঢাকার বইমেলা যেটা হয় সেটা তো এক মাস ধরে হয়, আর কলকাতার বইমেলা ১০ দিন হয়। এখানে নতুন বইয়ের বেশ ভালো বিক্রি কারণ এই বই মেলাতেই একমাত্র ছোট ছোট প্রকাশনী যারা তাদের বড় সুযোগ বই বিক্রি করার কারণ অনেক প্রকাশনী আছে যাদের বই পাড়ায় কোন বইয়ের দোকান নেই। তার ফলে আমরা যে সমস্ত বই সেইসব প্রকাশনী থেকে কিনতে চাই বইমেলাতেই আমাদের কিনে নেওয়া ভালো কারণ আমরা ইই সময় হাতে নিয়েও দেখতে পারি।

আপনার বইমেলার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জেনে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। পাশে স্টলের দাদু সম্পর্কে বেশ ভালোই সম্পর্ক হয়েছে। আপনার এই বইমেলার গল্প এবং জার্নি সম্পর্কে পড়ে আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো। আশেপাশের স্টল সাথে ভালো সম্পর্ক। এক মাসের প্রতিদিন সেখানে তাদের সাথে কথাবার্তা নতুন নতুন সম্পর্ক তৈরি হয়। আসলে নতুন সম্পর্ক তৈরি হওয়ার সুযোগ বর্তমানে খুবই কম মেলে। কিন্তু আপনি এভাবে নতুন সম্পর্ক তৈরি করছেন জেনে খুব ভালো লাগলো। আশা করছি আগামী বছরও আপনার সাথে ওই দাদুর দেখা হবে। আর বইমেলার আরো অনেক মুহূর্তগুলো পড়ার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

আমারও ইচ্ছে পরের বছর যেন আবারো দাদুর সাথে দেখা হয়ে যায়। বই এক অদ্ভুত যিনি যা অনেক মানুষকে কাছে এনে দেয়। ঢাকার বইমেলার মতো আমাদের তো এক মাস ধরে হয় না দশ দিনের বই মেলা হয় আর এই দশদিনে আমাদের কত অপরিচিত মুখের সাথে পরিচিতি বেড়ে যায়। বই প্রিয় মানুষেরা বিশেষ করে যারা পত্রিকার সাথে জড়িত তাদের কাছে এইতো এক বিরাট উৎসব।

সেই দাদুর অনেক টাকা পয়সা আছে বলেই তো বই বিক্রি করা নিয়ে কোনো টেনশন ছিলো না উনার। তবুও উনার বইগুলো যে বিক্রি হয়ে গিয়েছে, এটা জেনে খুব ভালো লাগলো। তাছাড়া সেই দাদু আবার কেকও খাইয়েছে দেখছি। আগামী বছর বইমেলায়ও যাতে দাদুর পাশের টেবিল আপনি পান,সেই কামনা করছি। পোস্টটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো আপু। এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

বই নিয়ে বসাটা দাদুর প্যাশন। এবং দাদু আসলেই লাইফের অত্যন্ত ক্যাশবেল টাইপের। সেটা দাদুর কথাবার্তা থেকেই বুঝতাম। দাদুর পাশের টেবিল হলেও ভালো না হলেও দাদুর সাথে ঠিক দেখা করে আসবো। কারণ টেবিল পাওয়াটা পুরোটাই লটারি। ভালো থাকুন ভাইয়া ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর কমেন্ট করে পাশে থাকার জন্য।

এমন দাদু ছিল বলেই এবারের বই মেলাটি আপনার কাছে আরও বেশি স্মরনীয় হয়ে থাকবে। বেশ ভালই সক্ষতা গরে উঠেছিল দাদুর সাথে দেখছি। আপনার লিখা পড়ে মনে হয় আমিও দেখতে পাচ্ছি সেই দাদুকে। অনমনে বেখেয়ালী ভাবে বই নিয়ে বসে আছে।

হ্যাঁ দাদুকে রোজ শুভেচ্ছা বার্তা দিতাম এছাড়াও নৃত্য টুকটাক কথাবার্তা বিনিময় হত। দাদুর কথায় মেলা শেষের পরেও মনে পড়ে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু।