প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় আপনারা বেশ ভালোই আছেন। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করি শুরু করছি আজকের ব্লগ।
আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব একটি মুভির রিভিউ। গত ২৫ শে অক্টোবর সিনেমাটি রিলিজ করে। এবং সরাসরি দেখা যায় নেটফ্লিক্সে। আমার যেহেতু ২৬ তারিখে এখানে আসার ট্রেন ছিল তাই আমি ২৫ তারিখেই বসে দেখে নিই সিনেমাটি। তারপর থেকেই রিভিউ লেখার কথা ভেবেছি কিন্তু হয়ে ওঠেনি। অবশেষে আজ বসেছি।
🎬 মুভিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য 🎬
মুভির নাম | দো পাত্তি (Do Patti) |
---|---|
প্লার্টফর্ম | নেটফ্লিক্স |
পরিচালকের নাম | শশাঙ্ক চতুর্বেদী |
কলাকুশলী | কাজল, কৃতি সানন, সাহির শেইখ, তানভি আজমি, বিজেন্দ্র কলা |
মুক্তির তারিখ | ২৫শে অক্টোবর ২০২৪ |
ভাষা | হিন্দি |
সময় | ২ ঘন্টা ৭ মিনিট |
কান্ট্রি অফ অরিজিন | ভারতবর্ষ |
থিম | ভালোবাসা, লোভ, টাকা, বদলা, শিক্ষা |
ধারা | রহস্য রোমাঞ্চ, মিস্ট্রি থ্রিলার |
🎬 মূল কাহিনী 🎬
দো পাত্তি মানে দুটো পাতা৷ দুটো পাতা অর্থে দুই বোনের গল্প রয়েছে এই মুভিতে। এখানে কাজল অভিনয় করেছেন একটি মহিলা পুলিশ অফিসারের চরিত্রে। কৃতি সানন এর জোড়া রোল৷ মানে দুই বোনের চরিত্রেই কৃতি অভিনয় করেছেন৷ সৌমিয়া ও শৈলী৷
মূল কাহিনী আমি সংক্ষেপে বলছি। কাহিনীতে ধ্রুব ছেলেটি প্রথমে সৌমিয়াকে দেখে প্রেমে পড়ে যায় কিন্তু তারপরেই শৈলীকে দেখে তার আল্ট্রা মডার্ন অ্যাটিটিউড দেখে তাকে আপন করতে চায়। কিন্তু ঘটনাক্রমে সে বুঝতে পারে সংসারের জন্য ঘরোয়া মেয়েই দরকার। তাই সৌমিয়াকে বিয়ে করে। দুই বোনের চরিত্রের দিক থেকে বিস্তর তফাৎ। তারা যমজ হলেও তাদের চিন্তা ভাবনা গুলো একেবারেই আলাদা। শৈলী অনেক বেশি স্মার্ট, বারে যায়, নেশা করে, ছোট ছোট পোশাক পরে। কিন্তু সৌমিয়া একেবারেই বিপরীত। সে অনেক বেশি ভীতু, শান্ত নম্র ধরনের। শৈলী ছোট থেকেই সৌমিয়ার দুর্বলতাকে আঘাত করে বাঁচতে পছন্দ করে। শৈলী ধ্রুবের সাথে মিশেই ছিল সৌমিয়ার থেকে সরিয়ে দেবে বলে। কিন্তু যখন বিয়ে হল তারপর শৈলী অনেক সমস্যা তৈরি করলেও সৌমিয়া সবসময়ই চেষ্টা করেছে সবকিছু বাঁচিয়ে চলার। কিন্তু ধ্রুবের অত্যন্ত মাথা গরম। তার আশা অনুপাতেই বা চিন্তা অনুপাতে কোন কথা সৌমিয়া যদি না বলে বা কোন কাজ সৌমিয়া যদি না করতে পারে তবে ধ্রুব তাকে অত্যন্ত মারধর করে। কোনদিন সিড়ি থেকে ফেলে দেয় কখনো দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেয়। সৌমিয়ার গোটা গায়ে কালশিটের দাগ। সৌমিয়ার পালিতা মা যিনি সৌমিয়ার সাথেই থাকেন তিনি একবার থানায় ফোন করে জানান, কিন্তু সৌমিয়া বিয়ে বাঁচাতে পুলিশ অর্থাৎ বিদ্যা(কাজল)কে পুরো মিথ্যে বলে চালিয়ে দেয়৷
এরপর একদিন ওই পালিতা মা বিদ্যাকে ডেকে সব কিছু বলে। সৌমিয়ার মা ছোটবেলায় মারা গেছেন। বাবা তার কিছুদিন পর৷ তারপর দুই বোনের বড় হওয়া, আর বিয়ের পরের অবস্থা৷ কাজল ভিডিও করে এভিডেন্স রাখতে বলে৷ কিন্তু সে সব আর করে উঠতে পারেননি। এদিকে ধ্রুব একদিন সৌমিয়াকে মেরে প্রায় আধমরা করে দিয়েছিল কারণ সৌমিয়া সন্তানের মা হতে চেয়েছিল। তখন ওদের ওই পালিতা মা শৈলীকে বলেছিল সৌমিয়াকে সাহায্য করতে৷ শৈলী যে সারাজীবন বোনের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে সে কিন্তু লুকিয়েই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল। এবং ধ্রুবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তা সাকসেসফুলও করেছিল৷
হোলির দিন, ওদের প্ল্যান ছিল। ধ্রুবের ব্যবসা ছিল পাহাড়ি ভ্যালিতে নানান ধরণের রাইড করানোর৷ যেখানে প্রথম সৌমিয়ার সাথে দেখা হয়েছিল। দুই বোনে ঠিক করল ওকে অ্যাটেম্পট টু মার্ডার কেসে ফাঁসাবে৷ তাই ছল চাতুরী করে শৈলী সৌমিয়ার জায়গায় প্যারাগ্লাইডিং করতে চলে যায় আর ওপরে উঠে সেফটি বেল্ট খুলে দেয় এবং চেঁচায় 'বাঁচাও' বলে।
পরে পুলিশ কেস হয় এবং এই ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত না হওয়ার ফলে ধ্রুবের জেল হয়ে যায়৷ ধ্রুবের প্রভাবশালী বাবাও কিছু করতে পারেন না৷ কিন্তু কিছুদিন পরেই ইন্সপেক্টর বিদ্যার সন্দেহ হয়। নতুন করে কেসটা পড়তে থাকে এবং অনেক কিছুই বুঝতে পারে। ওদের পালিতা মায়ের কাছে যায়, ছোট বোন শৈলীর সঙ্গে দেখা করে। কথা বলে। অনেক কিছু জানতে পারে।
ভদ্রমহিলা জানান সৌমিয়া ছোট থেকেই দেখেছে তার বাবা তার মাকে প্রচণ্ড মারধর করে। এইভাবেই একদিন মারধর করতে করতে তার মা মারা যায়। বাড়িতে পুলিশ এসেছিল কিন্তু শৈলী আর তার বাবা তাকে কোন কথাই পুলিশকে বলতে দেয়নি। সেই কষ্ট বুকের মধ্যে চাপতে চাপতে সৌমিয়া আজ এরকম হয়ে গেছে। শৈলী জানায়, একটা ভুল সে সেদিন করেছিল বাবার পক্ষ নিতে গিয়ে যে বাবাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় নি। কিন্তু সে যখন দেখলো তার বোন সৌমিয়া তার মায়ের মতনই সংসারে অত্যাচার সহ্য করে রয়েছে এবং প্রায় আধমরা অবস্থা তখন তার বোধদয় হলো, সে চাইলেও বোনকে বাঁচাতে। মাকে তো পারিনি অন্তত কোনজন বাঁচুক।
পরে বিদ্যা কেস রিওপেন করলে শৈলী ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স নিয়ে অনেক কথাই বলে। বিদ্যা আইনের পথে চলতে চেয়েছিল কিন্তু মানবিকতা তাকে আটকে দেয় ফলত ধ্রুবের জেল জীবন অটল রইল।
🎬 আমার মতামত 🎬
ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অর্থাৎ গার্হস্থ সহিংসতা। এই মুভিতে যাবতীয় ঘটনা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কে কেন্দ্র করেই। পুরুষদের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে এককালে বাড়ির বউরা কিছুই বলতে পারত না। সিনেমাতেও দেখেছি বাড়ির সকলে দেখছে চুপ করে একটি বউ মার খাচ্ছে এ তো আজকের ঘটনা নয়, বহু যুগ ধরেই এমন চলে আসছে এমন দেখে আসছি আমরা। কেউ কোন স্বামী স্ত্রীর মাঝখানে ঢুকতে পছন্দ করে না। অথচ তারা চুলোচুলি করতে করতে কখন কেউ একজন মরে গেল তখনো বাকিদের টনক নড়ে না। বর্তমান ভারতবর্ষের মেয়েদের স্বপক্ষে আইনের কোন কমতি নেই। তাই এই সমস্ত অপকর্ম করলে আদালত কোন পুরুষকেই ছাড়ে না । কিন্তু বাস্তবিকভাবে যুগটা শুধু এইটুকু অংশই থেমে নেই। বর্তমানে এই আইনের অনেক অপব্যবহারও হয়। আইনকে হাতিয়ার করে অনেক নারী আছে যারা পুরুষের ওপর নির্দ্বিধায় অত্যাচার করে। এই ঘটনাটি ও ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের আওতাতেই পড়ে।
মুভি থেকে সব থেকে মূল্যবান শিক্ষনীয় বস্তুটি হল নিজের রাগকে নিজের বশে রাখা উচিত। রাগ ষড়রিপরি এক জন। কিন্তু রাগ যদি নিজের বশ্যতা স্বীকার না করে সেক্ষেত্রে ভুগতে হয় বাকি অন্যদের। এবং রাগের মাথায় যে অপকর্মগুলো করে মানুষ তার বিচার ক্ষমতা তারা থাকে না। তাই রেগে যাই বা না যাই রাগ হয়ে যাওয়ার মুহূর্তগুলোকে নিজেকে অনেক বেশি শান্ত করে ধরে রাখা প্রয়োজন। কারণ রাগ বা মাথা গরম কেবলমাত্র ধ্বংসই ডেকে আনে। উভয়েরই জীবন থেকে সমস্ত সুখ হাজার একটা আরামদায়ক জীবনের মধ্য থেকে হারিয়ে যায় সহজেই। চরিত্রের গঠন সম্পর্কে নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। একটা বয়সের পর তো আর কেউ শিখিয়ে দেওয়াতল্র থাকে না তাই নিজেকেই নিজের শিক্ষাগুরু হতে হয়৷
সিনেমাটা যেভাবে বানিয়েছে, আমার আরো ভালোভাবে তৈরি করা যেত। আমার এক্সপেক্টেশন আর একটু বেশি যেহেতু কাজলের মুভি৷ তবে সিনেম্যাটোগ্রাফি আমার বেশ ভালো লেগেছে৷ অভিনয় নিয়ে কিছু বলার নেই প্রত্যেকেই প্রত্যেকের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। কাজলকে যেভাবে বাকি মুভিতে পেয়েছি সেরকমই অভিনয় এখানেও৷ মানে অভিনয়ে ভার্সেটাইলিটি টা কম৷
আজকের মুভি রিভিউ এবং সেই সম্পর্কে আমার বক্তব্য এ পর্যন্তই রইল। আপনাদের সুবিধার্থে আমি মুভির ট্রেলার টির ইউটিউব লিংক এখানে আপলোড করছে। 👇
নেটফিক্সে রয়েছে সিনেমাটা, আর আমি সিনেমাটা দেখেছিলাম টিভিতে। আমি তো এখন দেশের বাড়িতে, তাই আমি যে মুভিটা টিভিতে দেখেছিলাম তার কোন প্রমাণই দিতে পারলাম না। এদিকে নেটফ্লিক্সের চলতি সিনেমার স্ক্রিনশট নেওয়া যায় না। তাই আমার ফোনে নেটফলিক্স ডাউনলোড করে তা তে মুভি চালিয়ে অন্য একটি ফোন থেকে ছবি তুলেছি। এবং ক্রপ করে আপনাদের কাছে প্রস্থাপন করেছি।
বন্ধুরা আবার আগামীকাল আসব অন্য কোন পোস্ট নিয়ে, আপাতত এখানেই বিদায় নিচ্ছি।
টাটা।
পোস্টের ধরণ | মুভি রিভিউ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ইনশট |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/neelamsama92551/status/1853602513389306110?t=nqKkwYjeDc68nR-BHEI98Q&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক সুন্দর একটা মুভি রিভিউ করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনি। আপনার সুন্দর এই মুভি রিভিউ টা দেখে নতুন একটা মুভি সম্পর্কে ধারণা পেলাম। এর আগে কখনো এমন মুভি দেখি নাই আমি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
দেখবেন। নেটফ্লিক্সে আছে৷ ভালো লাগবে৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রতিনিয়ত যতগুলো মুভি রিলিজ হয় আমি প্রায় সব ধরনের মুভিও দেখে থাকি. এই গত ২-৩ দিন আগেই হয়তো এই মুভিটি আমি দেখেছিলাম তবে এই মুভির টুইস্ট আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে. প্রথম অবস্থাতেই দুই বোনের আর শত্রুতা দেখানো হয় কিন্তু পরবর্তীতে আস্তে আস্তে বিষয়গুলো সবার কাছেই পরিষ্কার হয়. আপনার রিভিউটি অনেক চমৎকার হয়েছে.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ টুইস্টটা ভালো ছিল। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল কি হবে৷ কাজলের অভিনয় বাকি পাঁচটা সিনেমাতে যেমন করে তেমনই লেগেছে। একটু ভার্সেটাইল আশা করেছিলাম। এমনিতেই প্লটটা শিক্ষনীয়৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কত যত্ন করে একটা মুভি রিভিউ করলি রে। দারুন লাগলো পড়ে। যদিও তুই তো জানিস আমি মুভি একেবারেই দেখি না। তাই এই জিনিসটার প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু পড়তে বেশ গল্পের মত লাগছিল। একটা সুন্দর টুইস্ট আছে গল্পটায়। এই মুভিটার কথাই তুই আমায় বলেছিলি মনে হয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit