প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
[সোর্স](মেটা AI)


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
মহাভারতের মহানির্মাণ (যজ্ঞসেন তথা দ্রুপদ)
কোন ছোট ছোট শিশু সন্তানের উদ্ভব হয়নি যজ্ঞের আহুতি থেকে। প্রথমে উঠে এসেছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন। পুত্র সন্তান দেখে সম্রাট দ্রুপদ আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন। এবং নিশ্চিত ভাবে জেনেছিলেন যে এবার বোধহয় আচার্য দ্রোণাচার্যের মৃত্যু এসে যাচ্ছে। অদ্ভুত আশ্চর্য তাই না? কারোর মৃত্যু কামনা করছে অথচ নিজে মারতে পারবে না নিজের সেই ক্ষমতা নেই তাই যাগ যজ্ঞ করে শক্তিশালী সন্তান লাভের প্রচেষ্টা। বর্তমানে আমরা একটা মানসিক দেখ দেখি মানুষের বিশেষ করে মায়েদের মধ্যে রয়েছে যে মায়েরা যে কিছু হতে পারেনি বা যে সমস্ত স্বপ্ন তাদের পূরণ হয়নি সেইগুলো তারা কোন না কোনভাবে সন্তানদের মধ্যে দিয়ে পূরণের চেষ্টা করে যায়। দ্রুপদও অনেকখানি সেরকমই। নিজের অক্ষমতা নিয়ে লড়াই করবে না আবার শিখন্ডি দ্রোণাচার্যের সামনে অস্ত্রধতে অপারগ তাই আরো শক্তিশালী কাউকে চাই। অর্থাৎ যেভাবেই হোক নিজের আশা-আকাঙ্ক্ষা লোভ লালসা পূরণ করতেই হবে। এই মুহূর্তে আনন্দে তিনি এত বেশি আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন যে তার কোন দিকে কোন জ্ঞান ছিল না ছেলেকে সাথে নিয়েই গর্বিত বাবা ফিরে যাচ্ছিলেন প্রাসাদের দিকে তখন পেছন থেকে ডাক পড়ল। দেখা গেল যজ্ঞ থেকে তার দ্বিতীয় সন্তান অর্থাৎ কন্যা সন্তান দ্রৌপদীর আগমন। কন্যা তো তার চাইনা তার তো চাই পুত্র। কোনভাবেই দ্রৌপদিকে তিনি সাথে নিয়ে যেতে চান না এবং স্বীকৃতিও দিতে চান না। অর্থাৎ যতটুকু তার স্বার্থের তাগিদে প্রয়োজন ততটুকু এসে নেবে অতিরিক্ত তা সে যাই হোক বা যেমনই হোক গ্রহণ করবে না। অনেক কান্ড কলাপ কথোপকথনের পর তিনি দ্রৌপদীকে সাথে নিয়ে যেতে রাজি হলেন ঠিকই তবে প্রচন্ড শাপ-শাপান্ত করে। নিজের সন্তানকে যে কিভাবে এত শাপ-শাপান্ত করা যায় তা বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে আমাদের অন্তত কল্পনাতীত।
অহংকার ক্রোধ ইত্যাদিতে প্রায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিল দ্রুপদ। কন্যা তার কোনভাবেই চাই না। তাই সংসারের সমস্ত অপমান, আজীবনের লাঞ্চনা ও দুঃখ-কষ্টের বোঝা চেয়ে বসলেন ঈশ্বরের কাছে তার মেয়েটির জন্য৷ উফফ কী অদ্ভুত পিতৃত্ব৷
পরের দিকে অবশ্য দ্রুপদের মন পরিবর্তন হয়েছিল এবং দ্রৌপদীর প্রতি সদয় হয়ে বিরাট স্বয়ংবরসভার আয়োজন করেছিলেন। যেখানে অর্জুন মাছের চোখের লক্ষ্যভেদ করেছিল। তবে পিতা হিসেবে পরবর্তী দায়িত্ব কর্তব্য পালনে দ্রুপদকে কোনদিন পিছু হটে যেতে দেখা যায়নি। বরং দ্রৌপদীর জন্য সব সময়ই কেঁদেছেন আর সমস্ত পরিস্থিতিতেই পাশে দাঁড়িয়েছেন।
মনে পড়ে যায় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের মুহুর্ত। যখন দ্রুপদ ও গুরু দ্রোণাচার্য মুখোমুখি। দ্রুপদ দ্রোণকে এক মুহুর্তও ছাড়ছেন না বাক্যবাণের প্রকোপ থেকে এবং বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, উনি একদিন অশ্বত্থামাকে পুত্র রূপে স্বীকার করতে বলেছিলেন অথচ দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় নীরব থেকেছেন। যেখানে আমারও প্রশ্ন ওঠে, এতোবড় অন্যায় মুখ বুজে একজন শিক্ষক কিভাবে দেখলেন৷ কেবলমাত্র বন্ধুর পুত্রী নয় নিজের প্রিয় ছাত্রদের স্ত্রী যে কিনা তাঁরও কন্যাসম। অথচ নীরব দর্শক। তবে দ্রুপদের সামনে নিজের ভুল যা পাপের সমান তা স্বীকার করতে পিছপা হননি এবং শাস্তি হিসেবে দ্রুপদের ছোঁড়া একটি তীর বুকে নিয়েছিলেন৷ দ্রুপদ যে কোনদিন বা কখনওই শারীরিক ক্ষমতায় পেরে ওঠেনি ওই এক খানি তীর ছুঁড়ে তাঁর পিতৃহৃদয়ের খানিকটা শান্তি এনেছিলেন৷ তবে এই ঘটনাগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে এটা যদি স্পষ্ট হয় যে মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ কেবলমাত্র দ্রৌপদীর কারণে ঘটেছিল তা কিন্তু নয়৷ ঘটনা প্রবাহ বা পান্ডবপক্ষের সবার বাক্যালাপে সেরক মনে হলেও আমার তা মনে হয় না। কারণ দ্রৌপদীর কারণে যুদ্ধ হলে চোদ্দ বছর আগেই হত৷ কিন্তু কৌরবরা শোধরাবার ছিল না৷
যাইহোক শেষ পর্যন্ত দ্রুপদ চরিত্রের মধ্যে যেটুকু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তা সত্যিই প্রশংসনীয়। যে অবহেলা তাঁর মধ্যে আমরা দেখেছি তা আর শেষ পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু তাঁর কন্যার জন্য ছুঁড়ে দেওয়া অভিশাপ দ্রৌপদীর জীবনে থেকেই গিয়েছিল চরম লাঞ্ছনা হিসেবে। তাই পিতা হিসেবে পরবর্তীতে যতই ভালো দিক দেখি না কেন একটা গভীর দাগ তাঁর চরিত্রে থেকেই যায়৷

পোস্টের ধরণ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | মেটা এ আই |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
X-Promotion
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit