প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
ভারতবর্ষ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ার কারণে মকরসংক্রান্তি প্রায় প্রতিটা রাজ্যেই অনুষ্ঠিত হয়। তবে নানান নামে, নানান ভাবে৷ আমাদের বাঙালিদের এই দিনই খামার পুজো হয়। কারণ খামারেই যে নতুন ফসল ওঠে। তো এই পূজো উপলক্ষে, মকর তৈরি হত, দুধ, নারকেল কোরা, তিলের পাটালি, আতপ চাল ইত্যাদি দিয়ে আর সেই মকর সেই সমস্ত বাড়িতে পাঠানো হত যাদের প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহ রয়েছে। আর সেই সব বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতেও আসত। এ আসলেই আমাদের দেশের গ্রাম বাংলার নবান্ন উৎসব।
নবান্ন- নতুন অন্ন। এই দেওয়া নেওয়ার মাধ্যমেই সক্কলে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠত সারাদিন। আর সন্ধ্যে থেকেই শুরু হয়ে যেত পিঠেপুলির আয়োজন। আমি যেহেতু আজ দীর্ঘ বছর প্রবাসী তাই এই উৎসব থেকে ভালো রকমের বঞ্চিত। তবে আফসোস বা মনখারাপ যাতে না হয় তাই পুজো পাঠ বা মকর বিলোনো না পারলেও প্রতি বছর বাড়িতে পিঠে পুলি বানাই।
মকর সংক্রান্তিতে আমাদের মূলত পুলিপিঠে হয়। নানান রকমের পুর ভরে৷ আমি চেষ্টা করি আমার মতো করে যতটুকু পারা যায়। বাঙালি বন্ধুবান্ধব থাকলে তাদের ডেকে নিই। আর সবাই মিলে বাড়িতে বেশ উৎসব উৎসব অনুভূতি তৈরি হয়ে যায়৷
আপনারা অনেকেই জানেন আমার বর্তমান ফ্ল্যাটের পাশেই আরেক বাঙালি পরিবার থাকেন। তো ওনাদেরও আমন্ত্রণ করে নিয়েছিলাম। বাড়িতে আমার শাশুড়ি মা রয়েছেন। তাই এবারের মকরসংক্রান্তি একেবারেই জমজমাট।
সব্বাই মিলে পিঠে বানানোর মজাই আলাদা। পুলি পিঠে বানাতে যেহেতু সময় লাগে তাই সব্বাইকে বসিয়ে দিয়ে আমি হয়ে গিয়েছিলাম জোগাড়দার। মানে জল গরম করে চালের গুঁড়োর ডো তৈরি, নারকেল, বাঁধাকপি, আলু, ছোলারডাল ইত্যাদির পুর তৈরি। পুরগুলো যদিও আমি আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছিলাম। আর ডো টা সাথে সাথে বানিয়েছি।
সেদিন আমাদের বাড়িতে ছেলে ও মেয়ে সকল সদস্যই কিন্তু দারুণ পিঠে বানিয়েছেন ৷ আমিও মাঝে মধ্যে বসে তাল দিয়েছি। তবে দুধ পুলি রান্না বা একের পর এক সেদ্ধ পুলি ভাপে বসানো যেহেতু লাগাতার কাজ তাই টানা বসতে পারিনি।
এবার অবশ্য সেদ্ধ পুলির সাথে কিছু পাটিসাপটা ও ক্ষীর সাপটা বানিয়েছিলাম। পাটিসাপটা বাচ্চাদের খুব প্রিয়। আমার এই বন্ধুপরিবারটি ক্ষীর সাপটা কোনদিন খায়নি বলে চটজলদি কয়েকটা পাটিসাপটাকে ক্ষীরে ডুবিয়ে ক্ষীর সাপটা বানিয়ে দিয়েছিলাম। সকলে কিন্তু দারুণ মজা করেছে।
এছাড়াও এবারের চমক হিসেবে ছিল মুগসামলি৷ প্রায় বছর দশেক বাদে বানিয়েছিলাম মুগসামলি। পিঠেগুলো ভাজার সময় বেশ চিন্তায় ছিলাম। কারণ অনেকদিন তো করিনি আবার বাড়িতে অতিথি ডেকেছি৷ যদি ভালো না হয় বা তেলে দেওয়ার পর সব খুলে যায় তবে তো হয়েই গেল। পুরো নাক কাটা যাবে। এদিকে অতিথি পরিবারের গিন্নি কিন্তু খুব চটপটে আমাকে বললে ওই ভেজে দেবে৷ তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বেশি আঁচ দিয়ে দেওয়াতে প্রথমের কিছু তো পুড়িয়েই ফেলছিল। আমার আবার একটু বেশিই মন খুঁতখুঁতে। উৎসবের দিনে আমার সব নিখুঁত চাই। অগত্যা আমি মিষ্টিমুখে চুলার দখল নিলাম। জানেন তো সংসারে সামান্য রাজনীতি করতে হয়। তাতে সকলেরই মন রাখা যায়৷
মকর উৎসবের মজা কি জানেন? সেদ্ধ পুলি যখন রান্না হয়, এক এক সেট নামানো হয় আর পিঠে বানাতে বানাতেই সব পেটে চালান হয়ে যায়৷ এবারেও তাই। বড় একটা থালায় করে আমি এক এক সেট নামিয়েছি আর সক্কলে টপাটপ মুখে ভরেছে। আমি যে কটা সুন্দর করে ছবি তুলব তার উপায় নেই। সকলে যেন ভুখা শের। হা হা হা।
বাচ্চারা খুব মজা পেয়েছে, ওরাও পিঠে গড়েছে। এই সব দেখে ভাবছিলাম আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ওদের মধ্যে এভাবেই যদি সামান্যও ঢুকিয়ে দিতে পারি তবে সব কিছুই বেঁচে থাকবে৷ তবে ভবিষ্যৎ কে জানে। আজ পারছি তাই আজ করলাম। আমি টিকিয়ে রেখেছি সেটা আমার ভালোবাসা আমার বাঙালিয়ানার প্রতি।
যাইহোক বন্ধুরা সেদিন তো খুবই মজা করলাম, সত্যি বলতে কি হাসি ঠাট্টার মধ্যে একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছিলাম। একটু মানে এমনই বেশি যে পরের দিন ভাত খাওয়ারও খিদে হয়নি৷ বিকেল পাঁচটায় সামান্য মুড়ি মেখে খেয়েছি৷ ভাগ্যিস পেট খারাপ হয়নি।
যাই হোক বন্ধুরা আমাদের মকরসংক্রান্তি ও নবান্ন তো এভাবেই কেটে গেল। আপনারা কেমন পিঠেপুলি খাচ্ছেন?
পোস্টের ধরণ | লাইফস্টাইল ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | আইফোন ১৪ ও স্যামসাং এফ ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি,ইনশট |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/neelamsama92551/status/1879961200295047253?t=xM2jWnV4_mBuEqSoJHM3PA&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এভাবেই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে আমার ঐতিহ্যকে গেঁথে দিতে হবে। তবেই না আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বেঁচে থাকবে।তবে আজ কালকার ছেলে মেয়ারা পিঠা খেতে তেমন পছন্দ করে না,ফাস্টফুডেই তাদের আসক্তি। তবে বেশ আয়োজনেই মকর সংক্রান্তি উদযাপন করলেন। তবে মুগসালামী পিঠা খেয়েছি কিনা ঠিক মনে পরছে না। মকরসংক্রান্তির আওনন্দময় মহূর্ত শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিকই বলেছেন বর্তমানে ছেলে মেয়েরা ফাস্টফুডই বেশি খায়। তবুও চেষ্টা করি যাই যতটুকু পারা সম্ভব। মুখ সামলে পিঠা কিন্তু খেতে খুবই ভালো, দেখি পরে কখনো বানালে রেসিপি শেয়ার করব। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করলেন এবং আমার ব্লগটি পড়লেন তাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এতো মজার মজার পিঠা থাকলে না খেয়ে পারা যায় নাকি। সেদিন তো দেখছি অনেক পিঠা তৈরি করেছিলেন। যাইহোক মকরসংক্রান্তিতে সবমিলিয়ে এককথায় দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছেন আপনারা। মুগসামলি পিঠা কখনো খাওয়া হয়নি আমার। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মুখ সামলি পিঠে অনেকটাই পুলে পিঠের মতো তবে ওটা মুগডাল এর সাথে চালের গুড়ি মিশিয়ে ডো বানানো হয় এবং সেটাকে তেলে ভেজে নেওয়া হয়। কখনো আপনাদের সাথে রেসিপিটা শেয়ার করব। হ্যাঁ দাদা মকর সংক্রান্তি মানেই তো পিঠে পুলের দিন। বলা চলে ঐদিন আমাদের নবান্ন এবং পিঠে পুলির উৎসব। তাই অনেক রকমেরই পিঠে হয়। অন্যান্য বছর আরো বানাই, চিতই পিঠে, সরু চাকলি, গুড়পিঠে ইত্যাদি। এবছর কম হয়েছে। 😀😀
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit