প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
আজ শরৎ পূর্ণিমা। বাঙালির কোজাগরী লক্ষ্মীপূর্ণিমা। আমার লেখা একটি আলোচনার কথা মনে পড়ল৷ প্রবন্ধ আকারে লিখেছিলাম। ভাবলাম পর্ব ভাগে আপনাদের সাথে ভাগ করে নিই। কারণ লেখাটা আসলেই অনেক বড়৷
আজ রইল প্রথম কিছু অংশ৷
প্রাককথন
শাস্ত্র ধরে এগোলে তেত্রিশ কোটি দেবতার কথা আদি। তবে এই কোটি শব্দটি সংখ্যার হিসেবে ব্যবহার হয়নি, হয়েছে শ্রেণী বা প্রকার বোঝাতে৷ অর্থাৎ বেদ অনুযায়ী তেত্রিশ কোটি দেবতা হলেন তেত্রিশ রকমের উচ্চকোটি সম্পর্ক দেবদেবী। তাঁরা কারা? তাঁরা হলেন ৮ বসু, ১১ রুদ্র, ১২ আদিত্য, ইন্দ্র ও প্রজাপতি। কেউ কেউ আবার ইন্দ্র ও প্রজাপতির স্থানে ২ অশ্বিনীকুমারকে গণ্য করেন।
এই তেত্রিশরকম দেবতার দিব্য জ্ঞানকেই আমরা পূজো করে থাকি, তা সরাসরি কিংবা নানান রূপভেদে। আমাদের বেশিরভাগ পৌরাণিক গল্পগুলোও এই দেবতাদের ঘিরে তৈরি হয়েছে৷ যার ওপর নির্ভর করে বাঙালির বেশিরভাগ পূজোই চালু হয়েছিল৷
বাঙালির পার্বণ
কথায় আছে বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণ কিংবা তারও বেশি৷ এক একটা ঋতুতে একেক পূজো। যার পূজোপকরণ সময়োপযোগী হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়৷ এই যেমন নবান্নের কথাই বলি, নবান্ন মানে আমাদের কাছে পৌষ সংক্রান্তি৷ মকর খাওয়ার দিন। আসলে বাড়িতে নতুন ধান এলে তার চাল থেকে দু মুঠো পেট ভরে খাওয়ার রীতি৷ গ্রাম বাংলার মানুষ কবেই বা সারা বছর এলাহি ভাবে খেয়ে পরে বাঁচত? সে জায়গায় গায়ে গতরে খেটে রোদে পুড়ে ফসল ফলাত। কত কৃষকের ঘরেই ঠিক মতো উনুন জ্বলত না। তাই গোলা ভরা ধান এলে ওই অতো দিনের কষ্ট, বুভুক্ষু রোজনামচার অন্তত একটা দিন লাঘব হোক। আর গ্রামবাংলার ভালো মন্দ খাবারের তালিকায় যে পিঠেপুলির চল বহু পুরনো সে বিষয়ে আর নতুন করে কি বলব। এরমই কয়েক যুগ থেকে নানান ঋতুতে নানান পূজো হয়ে আসছে, ঋতু-উপযোগী উপাচার মেনে। আজও চলছে, যুগের পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন ঘটিয়ে চলছে। বাংলার পূজা মানে আমরা কেন সারা বিশ্ব প্রথমেই যা ভাবেন তা হল দূর্গাপূজা। বহু বছর আগে থেকেই ধুমধাম করে এই পূজো হয়ে আসে৷ কয়েকদিন আগেই তা নিয়ে আলোচনা করেছি৷ আজকাল তো পাঠ্যপুস্তকেও পাই বাঙালীর প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা। আবার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের আওতায় পড়ে যাবার পর থেকে তো কথাই নেই৷ অতয়েব সেকালের বাংলার পূজো নিয়ে আলোচনা করলে সহজেই দূর্গাপূজার কথা মাথায় আসে ৷ কিন্তু আমি আলোচনা করতে চাই লক্ষ্মীপূজা নিয়ে৷ বাংলা একটি কৃষি প্রধান ভূমি। তাই দুর্গাপূজার মতোই লক্ষ্মীপূজাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্বণ বলেই মানা হয়৷
লক্ষ্মীপূজার গল্প
লক্ষ্মীপূজা সারাবছর প্রতি বৃহস্পতিবার করে হলেও পৌষ অগ্রহায়ণ দুই মাসের আটটি বৃহস্পতিবার উল্লেখযোগ্য তবে সব থেকে বেশি ধুমধাম করে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার কথাই আমরা জানি৷ কো-জাগরি শব্দটি এসছে কো-জাগতি শব্দ থেকে। যার অর্থ হল কে জেগে আছো৷ মাইথোলজিক্যালি বলা হয় দুর্গাপূজার পরের পূর্ণিমা (আশ্বিন-পূর্ণিমা)র রাতে যারাই জেগে থাকে তাদের বাড়িতে মা লক্ষ্মী ধনসম্পত্তি দিয়ে যায়৷ কারা জাগে? যাদের ধনসম্পত্তি নেই তারা পাওয়ার আশায় জাগে আর যাদের আছে তারা আগলে রাখার আশায় জাগে৷ অতয়েব সকলেই জাগে৷ এই ধনসম্পত্তি কিংবা জেগে থাকা নিয়ে কথা বলার সময় শুরুতেই যা বলতে হয় তা হল লক্ষ্মীর বাহন৷ কেন লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা? কথায় আছে লক্ষ্মী বড় চঞ্চলা। যত্নে না রাখলে সবই ছড়িয়ে যায়৷ আসলে অর্থই অনর্থের মূল। তাই ধন সম্পত্তির যখন অপব্যবহার করলে কপালে লেখা হয় যমের দণ্ড৷ যে কথা ঘোষণা করে লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা৷ এছড়াও ধনসম্পত্তি, সে টাকাই হোক বা চরিত্র সম্পদ জেগে থেকেই রক্ষা করতে হয়৷ আর রাতে জেগে থাকে পেঁচা যে কিনা সেই ধন-সম্পদ পাহারা দেয়।
লক্ষ্মীপূজাকে ঘিরে ইতিহাসে গল্প
মিথ মানেই যে সব গাল-গল্প আর অর্থহীন তা নয়৷ একটু খুঁজে দেখলেই ভেতরে ঢোকা যায়৷ বাংলায় কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা বিষয়ে জগৎশেঠকে ঘিরে একটা কাহিনী আছে যা না বললেই নয়৷ খুব অল্প বয়সে বিদ্বান হয়ে উঠেছিলেন মুর্শিদাবাদের শেঠ ফতেহ চাঁদ। এবং সেই কথা দিল্লীশ্বর মোহাম্মদ শাহ'র কানে পৌঁছায়। তিনি তখন তাকে দেখতে চান। এবং তিনি দিল্লি চলে গেলে রাজা তার কথাবার্তায় খুশি হন। আর তাকে দিল্লিতে থাকতে বলেন, তিনি থেকেও যান৷ কিছুদিন পরে রাজা তাকে বলেন তোমার উপর আমি অত্যন্ত খুশি, তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে তাই দেব। তখন ফতেহ চাঁদ বাড়ি ফিরে মাকে সব বললেন। তাঁর মা ছিলেন বুদ্ধিমতি, সন্তানের মঙ্গলের জন্য তিনি রাজাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করিয়ে বলেন কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে দিল্লিতে কোন গৃহস্থবাড়িতে যেন আলো না জ্বালায়। রাজা প্রতিজ্ঞা রেখেছিলেন এবং নির্দেশ অনুযায়ী ওই রাতে কেউ আলো জ্বালায়নি। কিন্তু তিনি নিজের ঘরে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন এবং ঘরের দরজা খুলে অপেক্ষা করতে থাকলেন, যথাসময়ে দেবী লক্ষ্মী সাধারণ নারী রূপে এসে বললেন, আমি খুব পরিশ্রান্ত, আমাকে একটু আশ্রয় দেবে? দেবীর ছলনা বুঝতে পারলেন। তিনি দেবীকে ঘরে আশ্রয় দিলেন এবং বললেন, আমি নদীতে স্নান করতে যাচ্ছি, ফিরে না আসা পর্যন্ত আপনি এখানেই থাকবেন, দেবী তাতেই রাজি হলেন। এবার ফতেহ চাঁদের মা নদীতে স্নান করতে গিয়ে প্রাণ ত্যাগ করলেন। আর সেদিন থেকে দেবী ফতেহ চাঁদের ঘরে থেকে গেলেন। এরপর শোনা যায় একদিন জঙ্গলে তিনি হঠাৎ করেই প্রচুর ধনসম্পত্তি মোহর ইত্যাদি পেয়েছিলেন। যা কিনা আলোকিত হয়ে পড়েছিল এক দিকে৷ সেই বিপুল ধনসম্পত্তির মালিক হবার পরেই তিনি জগৎশেঠ অর্থাৎ জগতের শেঠ হিসাবে উপাধি অর্জন করেন এবিং খ্যাতি লাগ করেন৷ লোককথা অনুযায়ী তাঁর ঘরে লক্ষ্মী দেবী থেকে গেছিলেন বলেই তিনি আর্থিক ভাবে শেঠ হতে পেরেছিলেন।
চলবে...
পোস্টের ধরণ | লক্ষ্মীপূজার গল্প |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
তোর পোস্ট মানেই নতুন নতুন চমক। এই পোস্টটি অসাধারণ হয়েছে। লক্ষ্মী পুজো নিয়ে এত তথ্য বহুল পোস্ট খুব কম পাওয়া যায়। আর সব থেকে বড় কথা হলো তোর উপস্থাপনার পদ্ধতি। একেবারে সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করে উপস্থাপনা। এত তথ্যবহুল এবং প্রাসঙ্গিক পোস্ট খুব কমই দেখা যায়। আরো এগিয়ে চল। আমার তরফ থেকে অনেক ভালোবাসা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গতানুগতিক লেখার বাইরে বেরিয়ে নানান ধরনের টপিক লিখতে গিয়ে আমি ভালোবাসি সে কথা তুমি তো খুব ভালোভাবেই জানো। হ্যাঁ, তুমি পরে মন্তব্য করলে বুকে বল আসে মনে হয় ঠিকঠাক লিখছি তবে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এ জগতে কত কিছু আছে যা সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। এই লেখা পড়ার আগ পর্যন্ত আমি জানতাম না তেত্রিশ কোটি বলতে সংখ্যা বুঝানো হয়নি। আসলে প্রতিটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানেরই একটা ঐতিহ্য থাকে। আজকে অনেককিছু জানলাম। দিদি, পর্বগুলো চালিয়ে যাবেন আশাকরি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমরা আসলে অনেক কিছুই জানি না। যে কথা যে ব্যাখ্যা আমাদের বর্তমানের প্রচলিত সেগুলির পেছনে আসল কারণ কি বা কতটা অপভ্রংশ হয়েছে সেগুলো জানার ইচ্ছে আমার প্রবল। সে কারণেই আমি নানান ধরনের বই পড়ি এবং তথ্যগুলো জোগাড় করি। হ্যাঁ পরবর্তী পর্বগুলো আমি অবশ্যই দেবো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit