আমার বাংলা ব্লগের ৬০-তম প্রতিযোগিতা || সংসারে কিছু উচ্ছিষ্ট নয় পকোড়া|| রেসিপি পোস্ট||

in hive-129948 •  5 months ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


1000225021.jpg








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



কিছুদিন আগেই আমার বাংলা ব্লগে ঘোষিত হয়েছিল ৬০-তম প্রতিযোগিতা। বিষয় ছিল চপ, পকোড়া রেসিপি। আমি সেই দিন থেকেই ভাবছিলাম কি রান্না করা যায়। বাড়িতে তো নানান ধরনের চপ বানাই। কেন জানেন? আসলে আমি যেখানে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় হোস্টেলে ছিলাম সেখানে একটি কাকু ঠেলাগাড়িতে করে রোজ সন্ধ্যাবেলায় চপ বিক্রি করতে আসতো। তার চপের মতো স্বাদ আমি আজ পর্যন্ত কোথাও পাইনি। আর তার কাছে থাকতো নানান ধরনের চপ। এত রকমের চপ আমি এর আগে কোনদিনও দেখিনি, শুনিনি, খাইওনি। টমেটো চপ, আলুর চপ, মোচার চপ, কাঁকরোলের চপ, পটলের চপ, ডিমের চপ, মাংসের চপ, চিংড়ির চপ, আরও নানান ধরনের মাছের চপ, নারকেলের চপ, পাউরুটির চপ, মানে কাকে ছেড়ে যে কাকে বলব আমি নিজেও জানিনা। আর প্রতিটা চপই অসাধারণ খেতে। এ তো গেল চপের কথা, এবার যদি পকোড়ার কথা বলি তার লিস্টের শেষ হবে না। সে কারণেই ভীষণভাবে কনফিউজড হয়ে গেলাম। এদিকে সময় চলে যাচ্ছে। অনেকেই ইতিমধ্যে পোস্ট করে ফেলেছেন। তো সকাল বেলায় উঠে ভাবলাম আজই কিছু একটা করে নেই। যাই পাব হাতের কাছে তাই দিয়ে একটা কিছু পকোড়া বানিয়ে ফেলি।

1000224972.jpg

এখানে বেশ কিছুদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। সূর্যের মুখ দেখিনি প্রায় বারো চোদ্দ দিন। দোকানে বাজারে সবজির আমদানিও কম ৷ সাথে দামও বেড়ে গেছে। এদিকে জ্বর জ্বালার অভাব নেই। এই সব মিলিয়ে জীবন কোনরকম চলে যাচ্ছে। রাতের দিকে এখন আর সে রকম বিশেষ রান্নাবান্না করিনা। গতকাল সবার জন্যই সাদামাটা ফেনা ভাত করেছিলাম, আলু সেদ্ধ আর ঘি দিয়ে সবাই খেয়েছে। না জানি কেন হঠাৎ করে আমার খেতে ইচ্ছে করছিল না। ফলত খানিকটা ভাত বেশি হল। এমনি ভাত হলে পরের দিন সেটা গরম করে খেয়ে নিই বা নতুন ভাতের সাথে মিশিয়ে দিই। যেহেতু ফেনা ভাত আর একটু নরম করে বানানো সেটা তো আর ঝরঝরে ভাতের সাথে মেশানো যাবে না। তাই ভাবলাম সকাল বেলায় সবার চায়ের সাথে টা হিসেবে এই ফেনা ভাতের সাথে কিছু একটা মিশিয়ে পকোড়া বানিয়ে ফেলি। ফ্রিজ থেকে ভাত বার করতে গিয়ে দেখলাম, তার সাথে দু টুকরো আলু সেদ্ধও রয়েছে। সেগুলোই বা ফেলবো কেন সবই একসাথে নিয়ে নিলাম। তারপর বানিয়ে ফেললাম মজাদার স্বাদের 'সংসারে কিছু উচ্ছিষ্ট নয়' পকোড়া।

এই নামটা কেন দিলাম ভাবছেন তো? ভাতের পকোড়া নাম দিলেই তো হত। আসলে বাড়িতে একটা কর্ণ পড়েছিল মানে ভুট্টা। বর্ষাকালে এই মুম্বাই পুণে ইত্যাদি জায়গায় প্রচুর মিষ্টি ভুট্টা পাওয়া যায় মানে সুইট কর্ন। জানেন তো সুইট কর্ণে প্রচুর রাফেজ আছে৷ তাই আমিও অনেকগুলো করে কিনে আনি। তার মধ্যেই একটা থেকে গেছিল, মানে সবজির ঝুড়িতে চাপা পড়েছিল, আমি দেখতে পাইনি, ফলে সেটা শুকনো হয়ে যাচ্ছিল। সবাই বলছিল ওটা ফেলে দিতে। টাকা দিয়ে কিনেছি ফেলে দেব! সেই ভেবে রেখে দিয়েছিলাম, এ পকোড়া টা বানাতে সেই শুকনো কর্ণগুলোও আমি ব্যবহার করে নিয়েছি। তাই নাম দিয়েছি 'সংসারে কিছু উচ্ছিষ্ট নয়' পকোড়া।

এবার চলুন বিস্তারিত ভাবে দেখে নিই ভাত আলু কর্ণ ছাড়া আরো কি কি উপকরণ দিয়েছি, আর কিভাবে বানিয়েছি।

1000213522.png

ছবি দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে কি কি উপকরণ ব্যবহার করেছি। তাও রেসিপির সুবিধার্থে আমি লিস্ট আকারে লিখছি।

উপকরণপরিমান
সেদ্ধ নরম ভাতপ্রায় দুই বাটি
সুইট কর্ণএক বাটি
পেঁয়াজকুচিহাল্ফ বাটি
কাঁচা লঙ্কা কুচিস্বাদ মতো
ধনেপাতা কুচিহাল্ফ বাটি
গ্রেটেড চিজএক বাটি
অরিগ্যানোএক টেবিল চামচ
নুনসামান্য স্বাদ মতো

এবার বলি কিভাবে বানিয়েছি। খুব কম সময়ে এই রান্নাটি হয়েছে। যদিও বেশিরভাগ রান্নাই আমি তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা করি।


1000213536.png


ধাপ-১

উপকরণগুলো মানে কর্ন, পেঁয়াজ, লঙ্কা এবং ধনেপাতা একটি বোলের মধ্যে নিয়েছিলাম তাতেই প্রায় একবাটি পরিমান চিজ গ্রেট করে বা কুরে দিয়েছি। বাজারের গ্রেটেড চিজ কিনতে পাওয়া যায়। বাড়িতে যেহেতু পিজা চিজ ছিল আমি সেটাই ব্যবহার করেছি।

ধাপ-২

এরপর পরিমাণ মতো নুন দিয়েছি। নুনের পরিমাণ কিন্তু খুবই ভেবেচিন্তে দিতে হবে। কারণ এই চিজটি লবণাক্ত। সামান্য বাটার ব্যবহার করলে তখন নুন আরো কম দিতে লাগবে৷

ধাপ-৩

এরপর এক চামচ পরিমাণ অরিগানো দিয়েছি। চিলিফ্লেক্সও দেওয়া যেতে পারে। আমরা যেহেতু একটু কম ঝাল খাই তাই চিলি ফ্লেক্স ব্যবহার করিনি। অরিগানো ব্যবহার করেছি শুধুমাত্র স্বাদটা অন্যরকম হবে ভেবে।

ধাপ-৪

গত রাতের বেঁচে থাকা ফেনা ভাত ও আলু সেদ্ধ দিয়ে দিলাম। রাত্রিবেলায় ভাতটাতে যে তরল ফ্যান ছিল সেটি ফ্রিজে রাখার কারণে শক্ত চাপ হয়ে ভাতের মধ্যে জড়িয়ে গেছে। তরল থাকলে আমাকে হয়তো একটু চালের গুড়ি বা কর্ন ফ্লার ব্যবহার করতে হতো।

ধাপ-৫

খুব সুন্দর করে মেখে নিয়েছি। ফলে ভাতের শক্ত ভাবটা একেবারেই চলে গেছে, এবং বাকি উপকরণগুলিও সমানভাবে সবকিছুর সাথে মিশে গেছে।

ধাপ-৬

পকোড়ার মতো অল্প অল্প হাতে নিয়ে সাথে সাথে ভাজা যায়। কিন্তু আমি এইভাবে গোল গোল বল বানিয়েছি যাতে বারবার করে হাত না ধুয়ে নিতে হয়। আসলে বর্ষাকালতো বেশি হাত ধুলে হাতটাও বড্ড নরম হয়ে কুঁকড়ে যায়।

ধাপ-৭

কড়াইতে তেল গরম করে নিয়েছি, আর চারটে পাঁচটা করে ভাজতে শুরু করেছি। এই পকোড়াটি কিন্তু কম আঁচে ভাজলে হবে না। তেলও গরম থাকবে আঁচও জোরে জ্বলবে। নইলে ভাতের আর আলুর তো একটা নরম ভাব থাকে সাথে চিজ রয়েছে সেটিও গলে গেলে নরম হয়ে যায়। তাই পকোড়া টা আর গোল হয়ে থাকবে না নরম হয়ে তেলের মধ্যেই নেতিয়ে পড়বে।

ধাপ-৮

এভাবেই একে একে সবগুলো বল ভেজে নিয়েছি। একটা পকোড়া ভেঙেও ছবি দিলাম। ভেতরটা কী সুন্দর নরম চিজ বার্স্ট পকোড়ার মতো দেখাচ্ছে। খেতেও তাই লেগেছিল।

1000225073.png

1000224969.jpg

1000224973.jpg

1000225011.jpg


বন্ধুরা, এভাবেই বানিয়ে নিয়েছি 'সংসারে কিছু উচ্ছিষ্ট নয়' পকোড়া। বাড়িতে যা কিছু তরকারি বা ডাল বা ভাত বেশি হয়, আমি সবকিছু দিয়েই কোন না কোন রান্না করি। এমনকি কোন রান্না যদি একটু পুড়েও যায় সেটিকেও অন্যরকম ভাবে কিছু একটা বানিয়ে পরিবেশন করার চেষ্টা করি। আজকের রেসিপি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

আবার আগামীকাল আসব নতুন কোন পোস্ট নিয়ে। আজ এ পর্যন্তই...

টাটা

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণরেসিপি পোস্ট
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট


1000216466.jpg


৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বেশ দারুণ রেসিপি তৈরি করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার তৈরি করা সুন্দর এই রেসিপি দেখে মুগ্ধ হলাম আমি। এক কথায় অসাধারণ করে তৈরি করেছেন। আসলে এই জাতীয় রেসিপিগুলো আমি খুবই পছন্দ করি।

আপনার রেসিপিটি ভালো লেগেছে জেনে আমি সত্যিই আপ্লুত। আমিও এই ধরনের বাকিবর্তা জিনিস দিয়ে নতুন কিছু খাবার বানিয়ে খাইয়ে দেই সবাইকে। তাতে করে অপচয় হয় না আর সংসারী খানিকটা সাশ্রয় হয় ।