স্বরচিত কবিতা।

in hive-129948 •  5 days ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


Onulipi_07_30_05_48_14.jpg







আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



আজ শিবাজি জয়ন্তী। মহারাষ্ট্রে থাকি বলেই জানি। ভারতবর্ষের অন্য কোন প্রান্ত এসব জানে বা এনাকে নিয়ে বিশেষ মাথা ব্যথা আছে বলে আমার জানা নেই৷ আসলে ভারতের প্রতিটা রাজ্যের আলাদা আলাদা সংস্কৃতি। প্রত্যেকেরই নিজস্বতা আছে পরিচয় দেওয়ার মতো। যেমন মারাঠিরা বিদ্যাসাগর কে জানে না। এই না জানাগুলোতে কোন অপরাধ নেই৷ বা অবিদ্যাও নেই। মানুষ যেখানে থাকে সেই জায়গার ঐতিহ্য ও ইতিহাস জানবে এটাই তো স্বাভাবিক।

এখন কথা হল ছত্রপতি শিবাজির জন্মদিনে বাঙালি হিসেবে আমার কি করনীয় ছিল তা জানি না। আমার কাছে এটি ছুটির দিন। যেই দিনে আমার সকাল থেকে নিঃশ্বাস ফেলার সময় টুকু থাকে না। থাকবেই বা কি করে? পরের সপ্তাহ থেকে মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষা৷ উনি তো পড়াশুনো কিছু করেন না আমিই করি। আমি নিজেকে বুঝিয়েছি ছোটবেলায় বাংলা মিডিয়ামে পড়েছি আর সব পড়া মনে নেই তাই এখন সব দুলে দুলে পড়তে হচ্ছে৷ কিন্তু পড়াতে পড়াতে এবং পড়তে পড়তে দারুণ বিষয় উপলব্ধি করলাম। বইয়ের কথাগুলোই আমি কেমন যেন বাস্তবেও প্রয়োগ করতে শিখেছি। সেটাই ছোট করে শেয়ার করব আর সাথে কবিতাও।

এই একটু আগে একজনের সাথে তর্ক হয়ে গেল৷ কি নিয়ে জানেন? উনি বলছেন বাংলা ভাষা বিপন্ন। কারণ চারপাশে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল গজিয়ে উঠেছে তাই ইংরেজি আর হিন্দির দাপটে বাংলা ভাষা বিপন্ন। ওনাকে আমি বললাম ভাষা কোনদিনই বিপন্ন নয়। কারণ মানুষ ভাষা ব্যবহার করে প্রয়োজনের তাগিদে৷ জীবনে খেয়ে পরে বাঁচতে গেলে যে ভাষার প্রয়োজন হবে এবং যতটুকু প্রয়োজন হবে সেই ভাষাই আসবে দৈনন্দিন জীবনে৷ এখন উচ্চশিক্ষা যেহেতু ইংরেজিতে হয় আর বাংলা মিডিয়ামের ছেলেপুলেদের বেশ নাকানিচোবানি খেতে হয় তাই তারা নিজেদের মাটি শুরু থেকেই শক্ত রেখে বাকিদের সাথে লড়াই করার জন্য ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ে ছোট থেকেই৷ কারণ এটাই তার এবং তার বাবা মায়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে সহজ। এতে করে ভাষা বিপন্ন হচ্ছে না, আসলে ভাষা পরিবর্তন হচ্ছে৷ পরিবর্তনই একমাত্র ধ্রুবক। জল যেদিকে গড়ানোর সেদিকেই গড়বে৷ যার প্রয়োজন থাকবে না তা লোপ পেয়ে যাবে৷ উদাহরণ হিসেবে বললাম " ইরিগেশন সিস্টেমে খাল কেটে জল সাপ্লাই করলেও নদীর গতিপথ কোনভাবে পরিবর্তন করা যায় না৷ সে স্বাধীন ভাবেই চলে। গা জরিয়ে অনেক কিছু করতে গেলে বিষয়টা সোজা নয়৷

কিন্তু উনি মানতে নারাজ। আর আমি স্থুল আলোচনায় অংশগ্রহণ করি না৷ আমার কাছে সব কিছুই ক্ষণিক। এমনকি আমিও৷ এই পৃথিবী জন্মেছে যখন ধ্বংসও হবে৷ ভাষা তো খুবই সামান্য। কত কিই ফুরিয়ে যায়। জীবনটাই তো বালি৷ তাই নয় কি?

এসব কথা আপনাদের না বললেও চলত৷ কিন্তু সবই তো শেয়ার করি। তাই বললাম। যাইহোক চলুন কবিতা পড়াই।


ডুব দিয়েছি
------------------ নীলম সামন্ত

ঝুম হয়ে আসা ছাতিমগাছের নিচে
ঠাঁয় বসে আছে যে
তার ওপর আধখানা চাঁদ ঝুলে থাকার কথা ছিল
যেমনটা কোন সাধু-সন্তর মুখে আলো পড়ে
কিংবা জটায় ঝুলে থাকে ফিনফিনে বরফের ছিটেফোঁটা

আধখানা এই প্রশ্নের পেছনে
কোন হারজিতের গল্প নেই,
না আছে ভূগর্ভস্থ সাপের কথা

এ কেবল নিয়তি,
এবং খানিক পরেই আধখানা পূরণ হয়ে ঝলমলিয়ে উঠবে
ভাগ্য সুপ্রসন্ন ভেবে আমিও স্বপ্নের ভেতর
ছোট্ট ছোট্ট চারাগাছ পুঁতবো
সূর্যমুখীর থেকেও বেশি হেম বর্ণ

কেউ জিজ্ঞেস করলে বলব,
অন্নপ্রাশনে পাওয়া কাঁসার থালায় ভাত বেড়েছি
যে পদ্ম ফুটিয়ে দেবে বলেছিল
হেমন্ত আর ছাতিমের আমোদ এনে বলেছে
'কোন আপোষ নেই, ডুব দিয়েছি চাঁদ বিছানো সুড়ঙ্গে'...


1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণক্রিয়েটিভ রাইটিং
কলমওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNq11oNEiVHeYi1dFPZdD9DtfDnLSeGtLw3tXF7pNDf1KxPvxfffo2xboPm7wR8jPkKYie3LXrW.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iQSBbshXsaBma59uahG3EZgK1iDXVoywUGGxx1xjvsB7gc2x2aoAvMJQKdwPc9f7Bh4cuj9tdr6.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অনেক সুন্দর একটা কবিতা লিখেছেন দিদি। আমার কাছে আপনার লেখা আজকের এই কবিতাটা পড়তে খুবই দারুন লেগেছে। এরকম কবিতা গুলো আমি অনেক বেশি পছন্দ করি পড়তে। আপনি কিন্তু সবসময় খুব সুন্দর কবিতা লিখে থাকেন এটা বলতেই হচ্ছে। আপনার লেখা কবিতার সবগুলো লাইন অনেক সুন্দর হয়েছে।

কবিতা হয় কিনা জানি না ভাইয়া। মনের কথাগুলো সাহিত্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে লিখি। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ নেবেন।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

1000400691.jpg

1000400690.jpg

সত্যি আপু এখন চারদিকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অনেক হয়ে গেছে। যাইহোক ক্ষণিকের এই জীবনে এসব নিয়ে না ভাবাই উচিত। আপনি আপনার মনের কথাগুলো আমাদের মাঝে খুব সুন্দর ভাবে শেয়ার করেছেন। তাছাড়া আপনার কবিতাটি পড়ে অসম্ভব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপু শেয়ার করার জন্য।

এটাই ঘটনা আপু, আমাদের ক্ষণিকের জীবন তাও বড্ড বেশি ভাবি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

image.png

বেশ সুন্দর কবিতা লিখেছেন আপনি । আপনার কবিতা পড়ে খুব ভালো লাগলো। কবিতার প্রতিটি ছন্দ সত্যি খুবই দারুণ ছিলো। বিশেষ করে এই লাইন গুলো আমাকে খুব ভালো লেগেছে।

খানিক পরেই আধখানা পূরণ হয়ে ঝলমলিয়ে উঠবে
ভাগ্য সুপ্রসন্ন ভেবে আমিও স্বপ্নের ভেতর
ছোট্ট ছোট্ট চারাগাছ পুঁতবো
সূর্যমুখীর থেকেও বেশি হেম বর্ণ।

ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর কবিতা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আমার কবিতাটা যে আপনি এতোখানি মন দিয়ে পড়েছেন এতেই আমার লেখার সার্থকতা।

ভালো থাকুন। বাংলা ভাষার জয় হোক।

আপনিও ভালো থাকবেন আপু, ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার কবিতাগুলো সব সময়ই অন্যরকম হয় খেয়াল করেছি। আজকেও তার ব্যতিক্রম নয় সবার থেকে আলাদা একদম ভিন্ন আঙ্গিকে চমৎকার কথার দ্বারা এত ভালো একটা কবিতা লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। কবিতার প্রতিটি কথা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

ধন্যবাদ আপু। আপনি নিয়মিতই আমার কবিতাগুলো পড়ে থাকেন। আর আমার লেখা যে আপনাকে ছুঁতে পেরেছে এটাই আনন্দের৷ ভালো থাকুন আপু।

আপনার লেখার ধরণ বেশ গভীর এবং ভাবনাচিন্তাগুলোও দারুণ। শিবাজি জয়ন্তী, ভাষার পরিবর্তন বনাম বিপন্নতা এবং ব্যক্তিগত উপলব্ধিগুলোর মিশ্রণে লেখা আপনার এই টুকরো ভাবনা পড়তে বেশ ভালো লাগল।

আর কবিতার অংশটাও মন ছুঁয়ে গেল। "ডুব দিয়েছি" এই লাইনটা যেন একটা ভাবনাপ্রবাহের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। চাঁদের আলো, ছাতিমগাছ, নিয়তির প্রসঙ্গ,সব মিলিয়ে দারুণ এক অনুভূতি তৈরি হয়েছে।

অনেক রাতে এলেও আপনি যে ধৈর্য্য নিয়ে লেখা পড়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয় । সারাদিন নানান কাজের চাপে যখন রাত হয়ে যায় তখন আর নতুন করে কোন লেখাপড়ার মানসিকতাই বেঁচে থাকেনা যেন।

তারপরও আমার লেখা আপনাকে ছুয়ে গেছে। আশা করব আপনার মনের মধ্যে প্রশান্তিও জাগিয়ছে। ধন্যবাদ নেবেন ভাইয়া।

কি এক অবস্থা চিন্তা করেন আপু। ইংরেজি ভাষাটাকে মানুষ এখন স্মার্টনেস মনে করে। ইংরেজি বলতে পারো না মানে তুমি একটা ক্ষেত! আমাদের দেশেও অনেক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গড়ে উঠেছে। গার্ডিয়ানরাও তাদের ছেলে মেয়েদের এসব জায়গায় ভর্তি করিয়েই খুশি। যাক, আপনি ঠিক বলেছেন নদীর প্রবাহ নদীর মতোই হবে! দারুণ ছিল আপু কবিতাটি।

এটাই বর্তমান অবস্থা। আমাদেরকেই ঠিক হতে হবে বলে আমি মনে করি।

আমার কথাগুলো ধৈর্য্য নিয়ে পড়লেন বলে বেশ ভালো লাগল। ধন্যবাদ নেবেন ।

উনি তো পড়াশুনো কিছু করেন না আমিই করি

এটা বেশ ছিল। সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে এখন সন্তানের চেয়ে বাবা মা বেশি ঝামেলায় থাকে হা হা। কবিতা টা দারুণ লিখেছেন আপু। বেশ অসাধারণ লাগল। সত্যি ভাষা শুধু উপলব্দি করেননি। দারুণ ভাবে প্রয়োগ টাও রপ্ত করেছেন।।

কি করা যাবে, আমি যেখানে থাকি সেখানে টিউশনের কালচার নেই৷ তাই বাবা মায়ের ঘাড়েই সব।

কবিতা পড়লেন বলে আনন্দিত হলাম। কবিতার পাঠক তো বরাবরই কম, তাও যে ক'জনে পড়ে। ধন্যবাদ জানবেন৷