আমার প্রিয় বন্ধুগন, সবাই কেমন আছেন? সবাইকে আমার আন্তরিক মোবারকবাদ এবং অন্তরের অন্তস্থল থেকে আপনাদেরকে জানাই শুভেচ্ছা।
|আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৩ || শেয়ার করো তোমার স্কুল জীবনের কোন তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি|
|-|
আজকের এই প্রতিযোগিতাটি একদমই ভিন্নরকম।এই রকম একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে দেখে খুবই ভালো লাগছে।তবে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই @hafizullah ভাইয়াকে,এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতা নিয়ে আসার জন্য।সবার অনুভূতিগুলোকে সামনে তুলে ধরার সু্যোগ করে দেয়ার জন্য।আমি আমার অনুভূতি আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করতে পেরে আনন্দিত।
সত্যি বলতে আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা অনেক রয়েছে। তবে সবগুলো তুলে ধরা সম্ভব নয়।কিন্তু একই ভিত্তিতে আমার দুটো তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর সেটা আপনাদের সাথে তুলে ধরবো। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
প্রথমত প্রাইমারি স্কুলে ঘটে যাওয়া একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা ছোট্ট করে শেয়ার করব।আর সেটি হলো আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন আমরা দুই বন্ধু খুব দুষ্টামি করতাম। হঠাৎ করে আমাদের ক্লাসে অন্য স্কুল থেকে আসা একটি মেয়ে ভর্তি হয় এবং মেয়েটির নাম ছিল রাবেয়া।দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি লম্বা।তখন মেয়েটি আমাদের ক্লাসে আসতো এবং সকল ছেলেরা তার উপর হা করে তাকিয়ে থাকত। যদিও আমি এবং আমার বন্ধু দুজনে একটু বেশি পাকা ছিলাম।তখন আমরা মেয়েটিকে দেখে রীতিমতো সেই ছোট্টবেলায় ও ক্রাশ খেয়ে গিয়েছিলাম। মনের ভিতরে প্রেম না জাগলেও তবে কিছুটা আবেগ বা ভাললাগা কাজ করত। প্রেম কি হয়তো বুঝতাম না, তবে মনে হতো মেয়েটি অনেক সুন্দর, তার সাথে একটু চলাফেরা বন্ধুত্ব করলে ভালো লাগতো।
অনেক সময় দেখতাম মেয়েটি আমাদের হেডমাস্টারকে বিভিন্ন জিনিস গিফট করতো এবং হেডমাস্টার ও মেয়েটির গিফট গুলো নিতো এবং খুব সুন্দর করে তার সাথে ভাষা ব্যবহার করত। কিন্তু আমাদের সাথে তার ব্যতিক্রম আচরণ করতো। অবশেষে একদিন মেয়েটিকে কিছু বলব ভেবে আমি আর আমার বন্ধু সিদ্ধান্ত নিলাম যে তাকে একটি লাভ লেটার দিব। বুঝতে পারতেছেন সেই ক্লাস ফোরে থাকা ছাত্র কোন মেয়েকে লাভ লেটার দিবে😀। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ঘাসের উপরে বসে বসে একটি লাভ লেটার লিখি আর এই লাভ লেটারটি লেখার অনুপ্রেরণা পাই আমি চিঠি লেখা থেকে।
আমার বাবা বিদেশ থাকেন। সেই ছোটবেলায় আমার বাবাকে ডাকযোগে চিঠি পাঠাতে হতো তখন ফোন ছিল না, যার কারণে চিঠি লিখে মনের ভাব প্রকাশ করতে হতো ডাক মাধ্যমে। আমি বাবাকে চিঠি লিখতে লিখতে কিছুটা পরিপক্ক ছিলাম চিঠি লেখায়। তখন আমার বন্ধু বলল তুইতো চিঠি লিখতে পারিস চল মেয়েটার জন্য একটা চিঠি লেখ ভালোবাসার প্রস্তাব নিয়ে। তখন ঘাসের উপরে বসে চিঠি লেখি।
যাই হোক লেখা শেষে আমি এবং বন্ধু দুজনে মিলে মেয়েটিকে চিঠিটি দিব, সেখানেই বাধলো খটকা। মেয়েটির ব্যাগের মধ্যে চিঠিটি দিয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু ভুলবশত প্রেমের চিঠির নিচে দুই বন্ধুর নামে লিখে ফেলেছিলাম। ভাবতে পারেন এটা যে দুইজনে একসাথে প্রেম করার আবেদন জানিয়েছি। যাইহোক পুরো চিঠিতে কি লিখেছি সেটা বললাম না। তবে চিঠিটা মেয়েটি যখন পেল তখন সে পড়ে প্রথমে একটা চিৎকার দিল, আমার ব্যাগের মধ্যে চিঠি রাখল কে। পরে নাম দেখলো এবং সাথে সাথে আমাদেরকে ওয়ার্নিং দিল যে আমি স্যারকে দেখাবো তখন তো আমরা ভয়ে শেষ।
তখন আমি এবং আমার বন্ধু প্রায় বের হয়ে যাব ক্লাস থেকে এমত অবস্থায় শিক্ষক ক্লাসে ঢুকে যান, খেলাম ধরা দুজনেই। তখন মেয়েটি কান্না করে স্যারকে চিঠিটি দিয়ে দিল, স্যার আমাদেরকে ডেকে নিল অফিস কক্ষে। এরপর সবগুলো স্যারের সামনে চিঠিটি পড়ল এবং সব স্যার হাসছিল চিঠিটির ভাষা শুনে। তখন দুইজনকে আমাদের প্রধান শিক্ষক উত্তম-মধ্যম দিলো। আর অফিস থেকে বের করে দেয়।তখন আমরা ক্লাসরুমে ফিরে যাই এবং ছেলে মেয়ে সবাই আমাদেরকে দেখে হাসছিল। সেই মজার ছলের তিক্ত অভিজ্ঞতা আজও মনে পড়ে।
যদিও প্রধান শিক্ষক চাইলে এটাকে সুন্দর ভাবে নিতে পারতো, কারণ আমরা তো বাচ্চা ছিলাম। তখন তো এত কিছু বুঝতাম না। হয়তো ক্ষমা করার মন মানসিকতা ছিল না তাই এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা বা তিক্ত একটি ঘটনার সৃষ্টি হয়েছিল।
যাক অবশেষে এই অভিজ্ঞতা কাটিয়ে চলে গেলাম হাই স্কুলে। সেখানে গিয়েও একই জিনিস। বুঝতেই পারছেন যে ছেলেটা ক্লাস ফোরে থাকাকালীন প্রেমময় ভাব, বসন্তের আগমন মনে করতে পারে। তাহলে সে হাই স্কুলে কি হবে। হ্যাঁ সেটাই, হাইস্কুলে যাওয়ার পরে যখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি তখন আবার বাধলো আরেকটা ঝামেলা। খুব সুন্দর একটি মেয়ে ছিল ক্লাসে। মেয়েটিকে দেখতে দেখতে অনেকটা মায়া জন্মায়। তখন মনের ভিতর আবেগ ভালোবাসা কিছুটা কাজ করে। পরিপূর্ণ ভালবাসার মানে না বুঝলেও কিছুটা হলেও বুঝতাম।
সে মেয়েকে খুব পছন্দ করতাম ক্লাস নাইনে পড়াকালীন। কিন্তু মেয়েটি লাইন মারতো আমাদের গণিত শিক্ষকের সাথে এবং গণিত শিক্ষক তাকে অনেক পছন্দ করত, যেটা আমি জানতাম না।তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতাম বিভিন্ন বিষয়ে তখন মেয়েটি বুঝতে পারে আমিও মেয়েটির সাথে লাইন মারার চেষ্টা করতেছি। তখন মেয়েটি মনে হয় স্যারকে এ বিষয়গুলো জানিয়েছে। তখন স্যার একদিন ক্লাসে আসলো আসার পর আমাদের সবাইকে একটা বীজগণিত অংক দিল অংকটি করার জন্য। তখন আমরা করলাম অংকটি। একেক জন একেক নিয়মে অংক শেষ করল এবং আমার অংকটা বিকল্প পদ্ধতিতে করেছিলাম। একই অংকের বিকল্প থাকতেই পারে, তাই বলে তো অংকটি ভুল নয়।
তখন আমার প্রাইভেট টিচার যেভাবে শিখিয়েছে আমি সেভাবে অংকটি করে স্যারকে দিলাম। স্যার এতদিন আমার অংক বা যে কোন বিষয়ে সুন্দরভাবে নিয়েছিল কিন্তু ওইদিন দেখলাম স্যার আমার অংকটা দেখে আমার খাতাটা ছুড়ে ফেলে দিল। বলল এটা কোন অংক হলো। আমি বললাম কেন স্যার কি সমস্যা? স্যার বলল এটা এভাবে হবে না। তখন আমি বললাম স্যার এটা হবে না কেন? আমাকে তো প্রাইভেট শিক্ষক এভাবে শিখিয়েছে। তাও বলে যে, না হবে না। আবার বললাম কেন হবে না, বলে হবে না বলছি হবে না। এই বলে আমাকে দুইটা লাগিয়ে দিল। আমার কিছু বলার নেই খাতাটা নিয়ে এসে বসে গেলাম।
তখন বুঝতে পারলাম আমার উপরে রাগ। আর প্রত্যেকদিন ক্লাসে আমাকে অন্য নজরে দেখছিল। তখন ধীরে ধীরে আমরা সকল ছাত্ররা ও বুঝতে পারি যে স্যার আমাদের ক্লাসমেট সেই মেয়েটাকে পছন্দ করে। এভাবে কেটে গেল পুরো এসএসসি পরীক্ষার সময়টা। এসএসসি পরীক্ষা শেষে হঠাৎ একদিন শুনতে পাই মেয়েটির বিয়ে হয়ে গিয়েছে, আর মেয়েটির বিয়ে হয়েছে আমাদের সেই শিক্ষকের সাথে।
তখন অনেক বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেলাম, আর সেটা শোনার পরে মেজাজটা অনেক গরম হয়ে গিয়েছিল। ভাবলাম এতদিন স্কুলে স্যারের কন্ট্রোলে ছিলাম তাই কিছু বলতে পারিনি। এখন তো স্যারের কন্ট্রোলে নেই আর এদিকে এসএসসি পরীক্ষা ও দিয়ে ফেলেছি। তখন আমি এবং আরো কয়েকটি বন্ধু মিলে স্যারকে একটা উচিত শিক্ষা দিব বলে প্ল্যান রেডি করলাম।
যদিও শুনতে খারাপ তবুও মেজাজ ঠিক ছিল না তাই ওই রকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম এবং একদিন স্যার যখন সাইকেল চালিয়ে স্কুলের দিকে যাচ্ছিল তখন একটা জায়গাতে স্যারকে আমরা আটক করলাম। কিছু বলার আগেই দেখতে পাই রোডের পাশে জঙ্গল থেকে আরো তিনটা ছেলে এসে স্যারকে উত্তম-মধ্যম দু একটা লাগিয়ে দিল। তখন আমরা তো অবাক এবং স্যারকে কোনভাবে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিলাম। পরে ঘটনা শেষে স্যার সেখান থেকে চলে যায়।অবশেষে বুঝতে পারি সেই তিনজনের মধ্যেও ওই মেয়েটার দূর থেকে ভালবাসার একজন লাভার ছিল,যার কারণে তার গায়ে হাত দিয়েছিল।
অবশেষে নিজের মনে কষ্টটা রয়ে গেল তবে স্যার কে হয়তো কিছু বলা হয়ে ওঠেনি আর এটাই ছিল আমার প্রাইমারি স্কুল ও হাই স্কুলের তিক্ত অভিজ্ঞতা।
তো বন্ধুরা আজকে এতটুকু , আশা করি সামনে আরও ভিন্ন ধরনের পোস্ট নিয়ে আপনাদের সাথে হাজির হবো। আর আমার পোস্ট এ যদি কোন ভুল ত্রুটি থাকে সেটা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।এই বলে আজকের মত এখানেই বিদায় নিলাম।
আজ আর নয়, আপনার নিকটতম এবং প্রিয়জনদের সাথে সুস্থ ও নিরাপদে থাকুন, নিজের যত্ন নিন। আপনার দিনটি শুভ হোক
আমি বাংলাদেশ থেকে এমদাদ হোসেন নিভলু। আমার স্টিমিট আইডি হল @ nevlu123। আমি ফেনী জেলায় থাকি। আমার কাজ কম্পিউটার শেখানো, আমার একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। যেখানে আমি স্টিমিট কাজের পাশাপাশি আমার সময় কাটাই। @nevlu123 নামে আমার একটি ডিসকর্ড অ্যাকাউন্ট আছে। আমার বয়স এখন 30 বছর। আমি জাতিগতভাবে মুসলিম বা আমি মুসলিম কিন্তু ভাষাগতভাবে আমি বাঙালি। কারণ আমি বাংলা ভাষায় কথা বলি, তাই ভাষাগতভাবে আমি বাঙালি।
Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ওয়েটনেস ভোটের জন্য এভাবে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সাপোর্ট করে যাওয়ার জন্য শুভকামনা রইল
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাই আপনার প্রথম ঘটনার সাথে আমার মিল রয়েছে।তবে আমি চিঠি দেওয়ার বদলে শুধু ভাবি বলে ডেকেছিলাম।২টা ঘটনা পড়েই অনেক মজা পেয়েছি।তবে আপনার প্রেমিকা কে গণিত শিক্ষক চুরি করায় খারাপ লেগেছে।শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কি আর করব ভাই গাণিতিক সূত্রের মাঝখানে পড়ে গিয়েছিলাম আমি, তাই চুরি করে নিয়ে গিয়েছে ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাই । এরকম স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা সবারে বিভিন্ন রকম। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সবার স্কুল জীবন সম্পর্কে কিছুটা জানা হলো।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যিই বলেছেন যদি প্রতিযোগিতার আয়োজন না করা হতো তাহলে অনুভূতিগুলো জানা হতো না ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দেখে খুবই ভালো লাগলো। আসলেই স্কুল জীবনে অনেক আনন্দময় অনুভূতির সাথে তিক্ত অনুভূতি রয়েছে। তবে আপনারা দুই বন্ধু মিলে একটা চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে আপনাদের দুজনের নাম লেখা ছিল। বিষয়টি আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ ভাই আসলে এই রকমই মনে হয়েছিল যে একটি লাভ লেটার দুজনে মিলে দিচ্ছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit