ব্ল্যাকস দাদার বিয়ের মাছ কেনার অভিজ্ঞতা।

in hive-129948 •  last year 

কেমন আছেন " আমার বাংলা ব্লগ " পরিবারের সবাই। আশাকরি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আপনারা সবাই সুস্থ আছেন। মহান সৃষ্টিকর্তা এবং আপনাদের আশীর্বাদে আমিও সুস্থ আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে ব্ল্যাকস দাদার বিয়ে উপলক্ষে আমার অভিজ্ঞতা পোস্ট করলাম । আশাকরি আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


IMG_20231118_114628.jpg



আসলে আজ আমি ছোট দাদার বিয়ের সম্পর্কে কিছু ঘটনা আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে চাচ্ছি। যদিও আজকের পোস্টে আমি তেমন কোন ছবি দিতে পারছি না কারণ সারাদিন আমি এতই কাজে ব্যস্ত ছিলাম যে কোন রকম একটা ছবি তোলারও সুযোগ আমি পাইনি। আসলে আমরা সবাই জানি যে, ছোট দাদার কাল বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু বিয়ের আগে থেকে দাদার বিয়ের বন্দোবস্তের জন্য আমাদের সবাইকেই খুব ছোটাছুটি করতে হচ্ছিল। বিশেষ করে দুটো ভাই এবং আমি মিলে প্রায় সারাদিন অনেক ছোটাছুটি করছিলাম। সাথে ছোট দাদাও মাঝে মাঝে ছিল আমাদের সঙ্গে। আসলে আমরা আমাদের কাজটা ভাগ করে নিয়েছিলাম।


কারণ দাদার বিয়ে উপলক্ষে যেহেতু অনেক কাজ রয়েছে তাই সবাই মিলে আমরা আলাদা আলাদা করে এক একটি কাজ সম্পন্ন করতে লাগলাম। তাই বিয়ের আগে থেকে আমাদের একদম প্রায় স্নান করা, খাওয়া-দাওয়া এবং রাতের ঘুম প্রায় চলে গিয়েছে। আসলে সবাইকে অনেক রাত অব্দি কাজ করতে হচ্ছিল এবং সকালবেলা ভোরে উঠে আবার পুনরায় কাজ করতে হচ্ছিল। বিভিন্ন দায়িত্বের ভিতর আমার অন্যতম একটা দায়িত্ব ছিল যে বাজারের সবথেকে বড় কাতলা মাছ জোগাড় করা। তাই আমি দাদার বিয়ের প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে বিভিন্ন দোকানে আগাম অর্ডার করে রেখেছিলাম। আসলে বড় সাইজের মাছ পাওয়া কিন্তু খুব একটা সহজ বিষয় নয়।


এরপর বিয়ের প্রায় দুদিন আগে আমাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থাৎ বিভিন্ন মাছের দোকানদার আমাকে কল করে বলল যে, দাদা আমরা কোথাও বড় কোন কাতলা মাছ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এদিকে বড় দাদার অর্ডার ছিল যে বাজারে সবথেকে বড় মাছ তুমি দেখবে। কিন্তু কুড়ি কেজি ওজনের মাছের নিচে তুমি সেই মাছ কিনবে না। আসলে কুড়ি কেজির উপরে যত বড়ই মাছ হোক না কেন সেই মাছ নিতে আমরা প্রস্তুত। আর এজন্য আমাকে অনেকটা চাপের ভিতর থাকতে হয়েছিল। এছাড়াও মনের ভিতর ভয় ছিল যে আমি কি এত বড় মাছ জোগাড় করতে পারব। যাইহোক শেষের দুদিন আগে দোকানদারদের এই কথা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।


যাইহোক আমি আর দেরি না করে বিভিন্ন দোকানে একদম পাগলের মত ছুটে বেড়াতে লাগলাম। কারণ এত অল্প সময়ে এত বড় মাছ জোগাড় করার খুবই কঠিন একটা বিষয়। যাইহোক আমি এক দোকানদারকে পেলাম যে সে আমাকে বড় মাছ কিনে দেওয়ার আশ্বাস দিলেন। যদিও আমি সেই দোকানদারের সাথে মাছের টাকার বিষয়ে কোনো কথা বললাম না। কারণ আমার কাছে টাকার থেকে মাছ পাওয়াটাই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যাইহোক আমি বিয়ের সকাল অব্দি খুব টেনশনে ছিলাম। কারন আমার মনে সন্দেহ ছিল যে ওই লোকটি এত বড় মাছ কোথা থেকে জোগাড় করবে। যাইহোক আমি বিয়ের দিন সকালবেলা ভোরে মাছের দোকানদারকে কল করলাম।


আসলে উনি ব্যস্ত থাকার কারণে আমার প্রায় পাঁচটি কল উনি রিসিভ করতে পারেননি। এরপরে আমি খুব টেনশনে পড়ে গেলাম। আমার মনে ভীষণ ভয় হচ্ছিল। যাইহোক আমি আর ঘুমাতে পারলাম না। আমি সকালবেলা ভোরে উঠে বাইক নিয়ে সেই মাছের বাজারের দিকে রওনা দিলাম। আসলে এত সকালবেলা রওনা দিয়েছিলাম যে তখন প্রায় সব মাছের দোকান এখনো খোলেনি। যাইহোক আমি বাজারে গিয়ে ওই মাছের দোকানদারকে প্রথমে দেখতে পেলাম না। আশেপাশে দু একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম যে উনি আজ দোকান খুলবেন কিনা। অন্যান্য দোকানদার আমাকে বললেন যে, উনি আজও ওনার দোকান খুলবেন। যাইহোক আমি আশপাশ থেকে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম এবং কোথাও বড় মাছ পাওয়া যায় কিনা সেটি খুঁজতে লাগলাম।

প্রায় আধঘন্টা পর আমি দেখলাম যে কয়েকজন লোক ওই দোকানদারের জায়গাতে এসে বিভিন্ন ধরনের মাছ রাখছিলেন। তখন আমি উনাদের কাছে ওনার মালিকের কথা জিজ্ঞাসা করলাম। তখন ওরা আমায় বললো যে মালিক প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর দোকানে আসবেন। এদিকে তো আমার টেনশনে প্রায় প্রেশার হাই হয়ে গিয়েছিল। যাই হোক প্রায় কুড়ি মিনিট অপেক্ষার পর আমি সেই দোকানদার দাদাকে দেখতে পেলাম। দোকানদার দাদাকে দেখে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। দৌড়ে গিয়ে ওই দোকানদার দাদাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে দাদা তুমি আমার মাছ পেয়েছেন কিনা। যাইহোক তখন উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বললেন টেনশনের কোন কারণ নেই আমি তোমার মাছ পেয়েছি।


তখন মনে হলো যে আমার শরীর থেকে বড় একটা বোঝা নিমিষেই নেমে গেল। কারন আমি এতক্ষণ যে এতটাই টেনশনে ছিলাম যে উনি যদি আমাকে একবার বলত যে আমার মাছ উনি পাননি তাহলে হয়তোবা সেদিন আর আমি ঘরে ঢুকবো না। এরপর মুহূর্তে আমি দাদাকে ফোন করে বললাম যে দাদা আমি মাছ পেয়ে গেছি অবশেষে। এদিকে দাদা মাছের খবর শুনেও দাদা খুব খুশি হয়েছিল। যাইহোক আমি উনার কাছে মাছটি রেখে ওনাকে বললাম যে আমি সকাল দশটার দিকে এসে আমি মাছটি নিয়ে যাব। কারণ এছাড়াও আমার অনেক কাজ ছিল। তাই সব কাজ শেষ করে আমি দশটার দিকে এসে সেই মাছটি আমি আর আরেক ভাই মিলে নিয়ে গেলাম। আসলে মাছ তো কেনা হলো কিন্তু এই বড় মাছ উঁচু করা তো ভীষণ একটা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।


কারণ এই মাছ নিয়ে আমাদের সবাইকে স্বাগতা দিদির বাড়িতে যেতে হবে। অর্থাৎ আমাদের তিনজনকে এই গায়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে দিদিদের বাড়িতে যেতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। এদিকে মাছ আনতে আনতে আমাদের একটু বেশি দেরি হয়ে গেল। তাই আমরা মাছটি কোনোমতে রেখে নিজেদের জামাকাপড় চেঞ্জ করে দিদিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আসলে তাড়াহুড়ার জন্য এবং টেনশনে আমি মাছটির একটিও ছবি তুলতে পারলাম না। যদিও দাদার বিয়ের তেমন কোনো ছবি আমি তুলতে পারিনি। কারণ আমি এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে কোথাও একটু শান্তি করে ছবি তুলব সে সময়টুকু আমার ছিল না। যাইহোক অবশেষে আমরা মাছ নিয়ে দিদিদের বাড়িতে পৌঁছে গেলাম।


আশাকরি আপনাদের সবার খুব ভালো লেগেছে আজকের পোস্টটি । ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না।


আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে।

11-20-04-359_512.gif

সবাইকে ধন্যবাদ।

2XmsB3ZF6jJG7218A8ghgBmbB3W4Hm94fHM8vdisDLD4EuDS1mKCnUwr2WPdiRhWod2Rf2CCtBiK8N3pspzqnCWafFzVigrzmtsxCskMPdzGxv6X2qA4C6XCzVtoT7DrPdhaLQmVXDtTsoDBnDnkqY1H7mbiRmNAo6VRbcH65Ky8sUcB6iD2CGuEkfhUpCrHvemi76oe4F.gif

IMG_20210107_075142 (2).jpg

আমার নাম নিলয় মজুমদার। আমি একজন কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র। আমার মাতৃভাষা হলো বাংলা। কিন্তু আমার রাষ্ট্রীয় ভাষা হলো হিন্দী। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি। আমি একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। নতুন নতুন জিনিস তৈরী করতে আমি খুব ভালোবাসি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

আসলে দাদা কোন কাজ মাথার ওপর থাকলে টেনশন অনেক হয় যতক্ষণ না পর্যন্ত কাজ শেষ না হয়। যাইহোক দাদা অবশেষে আপনি মাছ পেয়েছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো। আসলে দাদা এত বড় মাছ পাওয়া সত্যি কঠিন ব্যাপার।সত্যি বলতে নিজেদের অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফি করার মতো কোন সময় থাকে না। তবে মাছ নিয়ে ভালো মতো স্বাগতা দিদির বাড়িতে পৌঁছাতে পেরেছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

ব্ল্যাক্স দাদার বিয়ের মাছ কেনার দারুন অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন । আপনি যে টেনশনে পড়ে গিয়েছিলেন আপনার লেখা পড়ে তো আমিও টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম । যাক শেষ পর্যন্ত আপনি মাছ কিনতে পেরেছেন । ভাগ্যিস লোকটি জোগাড় করে দিয়েছে তা না হলে তো আপনার বিয়ের অনুষ্ঠানের আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যেত । এখন মাছটি নিয়ে খুশি মনে দিদির বাড়িতে যেতে পারবেন । ভালই লাগলো আপনার লেখা গুলো পড়ে । ছবি না দিলে কি হবে পোস্টটি পড়ে প্রতিটা মুহূর্ত অনুভব করতে পেরেছি ।

ব্ল্যাক দাদার বিয়ের বেশ কিছু দায়িত্ব আপনার কাঁধের উপরে এসে পড়েছে আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটি পড়েই জানতে পারলাম। আপনি মাছের দোকানদারকে কল করেছিলেন কিন্তু মাছের দোকানদার আপনার পাঁচটি কল রিসিভ করতে পারেনি সত্যি কথাটি কিন্তু বেশ চাপের দাদা। এত বড় একটা দায়িত্ব আপনি ঠিকঠাক মতো পালন করতে পেরেছেন জানতে পেরে বেশ খুশি হলাম ভাই। ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে পোস্ট তৈরি করে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আসলেই দায়িত্ব পালন করতে না পারলে নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগে। দাদা যেহেতু বলে দিয়েছিল কাতলা মাছের ওজন মিনিমাম ২০ কেজি হতে হবে, এতে করে টেনশন হওয়ারই কথা। কারণ এতো বড় মাছ সহজে পাওয়া যায় না। যাইহোক অবশেষে সেই লোকের মাধ্যমে কাঙ্খিত মাছটা পেয়ে গেলেন। তবে মাছের ফটোগ্রাফিটা দেখতে পারলে আসলেই খুব ভালো লাগতো। যাইহোক এতো চমৎকার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

ব্ল্যাক্স দাদার বিয়ের মাছ কেনার অভিজ্ঞতা পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আসলে কুড়ি কেজি মাছ এত বড় মাছ পাওয়াটা সত্যিই খুব চিন্তার বিষয়। যাইহোক শেষ পর্যন্ত যে আপনি মাছটা কিনতে পেরেছেন এটা জেনে খুবই ভালো লাগে। যদিও ব্যস্ততার কারণে ছবি তুলতে পারেননি তারপর কষ্ট করে যদি মাছের একটা ছবি তুলতেন তাহলে মাছটা দেখতে পেতাম এত বড় মাছ আসলে তেমন একটা দেখা হয়নি। মাছ কিনে স্বাগতা দিদির বাড়িতে সময় মতো যেতে পেরেছেন একটা জেনে সত্যি খুব ভালো লাগছে। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর ফল পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

ব্ল‍্যাকস দাদার বিয়ের মাছ কেনার দায়িত্ব তাহলে পড়েছিল আপনার উপর। কিন্তু এটা করতে গিয়ে তো আপনার অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছিল ভাই যা দেখছি হা হা। আফসোস একটাই মাছের ছবিটা দেখতে পারলাম না। তবে আপনার ব্লগটা বেশ উপভোগ করেছি ভাই।।

Posted using SteemPro Mobile