“আমার বাংলা ব্লগ” এর সবাইকে আমার পক্ষ থেকে রইল অফুরন্ত ভালবাসা। আশাকরি আপনারা সবাই খুব ভাল আছেন। আপনাদের আশীর্বাদে আমিও খুব ভালো আছি। আজ আপনাদের সাথে আমি আমার ছোটবেলার একটা ছোট ঘটনা শেয়ার করবো।
( বিঃদ্রঃ - এই পোস্টের সব ছবিগুলো আমার তোলা )
একদল ছোট্টো শিশু কৌতূহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।
লোকেশন :- টাকি , বসিরহাট , উত্তর ২৪ পরগনা, ভারত।
তখন আমার বয়স ছিলো ১০ অথবা ১২ বছর। আমার গ্রামের এক বন্ধু ছিল। তার নাম ছিলো সুব্রত এবং সে ছিল খুব দুষ্টু। আমার ঐ বন্ধুর বাবা তার জন্মের পর মারা যায়। আমরা সবসময় এক সাথে খেলাধুলা করতাম। তার একটি পুরনো সাইকেল ছিল। ঐ সাইকেল নিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরাতাম। গ্রামের সবাই বলত যে, তুই সুব্রতর সাথে কেনো ঘুরে বেরাস? ও কখনো স্কুলে যায় না, বই পরে না। কিন্তু তাও আমি ওর সাথে ঘুরে বেরাতাম, খেলাধুলা করতাম, আর মারামারি ওটা তো কমোন ব্যাপার।
রোদের মধ্যে নিষ্পাপ প্রাণের খেলাধুলা চলছে।
লোকেশন :- টাকি , বসিরহাট , উত্তর ২৪ পরগনা, ভারত।
স্কুল বাদে সারাটা সময় ওর সাথে আমার সময় কাটতো। দুপুরে স্নান এর সময় মা যতক্ষণ লাঠী নিয়ে তারা না করত ততোক্ষণ পুকুরে স্নান করতাম। স্নান করার পর চোখ দুটি লাল টকটোকে হয়ে যেত। আর গায়ে মাটির সাদা স্বর পরে যেত। বিকাল বেলায় গ্রামের সবাই মিলে মাঠে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করতাম।
ছোট্ট বালকটির গোল দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা।
লোকেশন :- টাকি , বসিরহাট , উত্তর ২৪ পরগনা, ভারত।
রাখাল ছেলেটি তার নিজের খেলায় মনোনিবেশ করেছে।
লোকেশন :- টাকি , বসিরহাট , উত্তর ২৪ পরগনা, ভারত।
খেলাধুলা করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলে পুনরায় মা হাতে লাঠি নিয়ে তাড়া করত, তখন দৌড়ে গিয়ে হাত পা ধুয়ে ভদ্র ছেলের মত বই নিয়ে পড়তে বসতাম। সুব্রতোর বাড়ি ছিল আমার বাড়ির কাছে। রাতে যখন কারেন্ট চলে যেত, তখন আমরা জ্যোৎস্না আলোয় বাড়ির উঠানে নিজেদের ছায়া ধরার চেষ্টা করতাম।
কথায় আছে না, নিজের বাড়ির রান্নার থেকে অন্যের বাড়ির রান্না ভালো লাগে। তেমনি আমিও ঘরের রান্নার থেকে সুব্রতদের বাড়ির রান্না করা খাবার বেশি ভালো লাগতো।
আমাদের গ্রামের প্রায় প্রতিটা বাড়িতে গরুর গোয়াল থাকত। আমাদেরও তেমনি বাড়িতে গরুর গোয়াল ছিলো। আমাদের গোয়ালে তিনটি গরু আর একটি বাছুর (গরুর বাচ্চা) ছিলো। মাঝে মাঝে আমি আর বাবা গরু নিয়ে আমাদের জমিতে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যেতাম। আবার কখনো কখনো আমি একা গরু নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। আমাদের বাড়িতে একটা কাজের দাদা থাকতেন। উনি আমাদের জমিতে কাজ করতেন। আমাদের গরুর জন্য দাদা বিকালে ঘাস কাটতে যেতেন। আমিও ঐ দাদার সাথে ঘাস কাটতে যেতাম। একদিন আবার ঘাস কাটতে গিয়ে আমার আঙ্গুল কেটে গিয়েছিল।
সুব্রতোদেরও একটা গরু ছিল।ও ওদের গরুর জন্য প্রতিদিন ঘাস কাটতে যেতো। কারন ওরা খুব দরিদ্র ছিল। গরুর খড় কেনার মতো অর্থ ওদের ছিল না। আমিও মাঝে মাঝে ওর সাথে ঘাস কাটতে যেতাম।
একদিন আমি আর সুব্রত বরাবর এর মতো ঘাস কাটতে গেলাম। সুব্রত আমাকে বলল যে আমার এক জ্যেঠুর জমিতে নাকি অনেক ঘাস হয়েছে। আমি সুব্রতকে বললাম যে, চল আজ জ্যেঠুর জমিতে গিয়ে ঘাস কাটব। দুজনে এক সাথে গেলাম। কিছুক্ষন ঘাস কাটতে লাগলাম।
কিন্তু আমার ওই জেঠুর জমিতে পেঁপে গাছের বাগান ছিল। প্রায় প্রত্যেকটা গাছে বড় বড় পেঁপে হয়েছে। কিছু গাছে আবার পেঁপে পেকে হলুদ হয়ে গেছে। সুব্রতোর খুব লোব হল। সুব্রত আমাকে বলল যে, তুই তোর জ্যেঠুর গাছ থেকে একটা পেঁপে পেড়ে নিয়ে আয়। আমি ওকে বললাম যে জ্যেঠুকে না বলে পেঁপে পারলে উনি আমাকে বকবেন। কিন্তু সুব্রত আমাকে বলল, ধুর বোকা এখানে তুই আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই। চুপ করে গিয়ে একটা পেঁপে পেড়ে নিয়ে আয়। অনেক বার বলার পর আমি গাছ থেকে একটা পেঁপে পাড়তে গেলাম।
পাশের ধানের জমিতে একজন ধান গাছের গোরায় আগাছা পরিস্কার করছিল। উনি আমাদের দিকে চুপিসারে নজর রাখছিলেন যে আমরা কি করছি। গাছের নিচে গিয়ে যেই একটা পেঁপে পারলাম তখন উনি জোরে চিৎকার করে বললেন, ওই তোরা কি করছিস ওখানে। ততক্ষণে আমার পেঁপে ছেড়া হয়ে গেছে। ওই লোকের চিৎকার শুনে সুব্রত নিজের ঘাসের বস্তা ফেলে দে দৌড়। ততোক্ষণে লোকটি বুঝতে পেরে গেল যে আমি কার ছেলে।
আমি ওই সময় খুব ভয় পেয়ে গেলাম। আমিও তখন সেই পেঁপে রেখে কাঁদতে কাঁদতে আমার নিজের বস্তা আর সুব্রতর বস্তা নিয়ে বাড়ির দিকে যেতে লাগলাম। দূর থেকে দেখি সুব্রত হাতে কাস্তে নিয়ে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর কাছে যেতেই ও আমাকে বলল যে ওই লোকটা আমায় দেখতে পেয়েছে নাকি? আমি তখন বললাম যে, আমি জানি না। তখন আমরা দুজন আর ঘাস না কেটে বাড়িতে ফিরলাম। মা-বাবাকে আর ওই দিন কিছু বললাম না।
পরের দিন সকালে ওই জ্যেঠু আমাদের বাড়িতে চারটে পাকা পেঁপে নিয়ে হাজির। বাবাকে জ্যেঠু সব ঘটনা খুলে বললো যে, কাল হারাধন ( যে লোকটি আমাদের পেঁপে চুরি করতে দেখেছিল ) আমায় নিলয় কি করেছে সেই সব কথা আমায় বলেছে । জ্যেঠুর কথা শেষ হতে না হতেই পাশ থেকে মা আমায় দুই দিন আগে কেটে আনা নিম গাছের শুকান ডাল দিয়ে আমায় ধোলাই শুরু করে দিলো। তাই দেখে জ্যেঠু আমায় তাড়াতাড়ি মা এর কাছ থেকে কাছে টেনে নিয়ে মা কে বলল, আমার ভাইপো আমার গাছ থেকে পেঁপে খেয়েছে তাই বলে তুমি ওকে মারছ কেন? মা তখন বলল যে, ও তোমায় বলে খেতে পারত, তাহলে চুরি করল কেনো? তাই শুনে জ্যেঠু আমায় বলল যে, বাবা চুরি করা মহা অপরাধ। চুরি করলে সবাই তোমাকে খারাপ বলবে। তুমি আর কখনো চুরি করবে না। জ্যেঠু বলল, আমি তোমার জন্য এই পেঁপে নিয়ে এসেছি। এইগুল তুমি খাবে। তারপর মা-বাবাকে জ্যেঠু বলল, তোমরা আর ওকে মারবে না। এই বলে জ্যেঠু বাড়ি চলে গেল।
কিন্তু আমি কখনও সুব্রতর নাম কাউকে বলিনি। কারন সুব্রতর নাম বললে ওর মা ওকে খুব মারবে। কিছু দিন আমি সুব্রতর সাথে কথা বললাম না। কিন্তু আস্তে আস্তে আবার সুব্রতর সাথে মিশতে শুরু করলাম এবং পূর্বের সব কথা ভুলে আবার একসাথে খেলাধুলা আর দুষ্টুমি করতে শুরু করলাম।
সেই বল নিয়ে আবার ছুটতে মন চায়।
লোকেশন :- টাকি , বসিরহাট , উত্তর ২৪ পরগনা, ভারত।
সব ছবিগুলো তোলা
ক্যামেরা :- NIKON D5200
লেন্স :- 35-105mm
তারিখ :- 13/06/2019
সময় :- 03:20
আজ আমার সেই বন্ধু কোন এক খারাপ কাজের জন্য ঘর থেকে পালিয়ে গেছে। তার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। গ্রামের কেউ কেউ বলে ও নাকি বাঙ্গালুরে আছে। যাই হোক সুব্রতর কথা মাঝে মাঝে মনে পরে, কারন সে যত বড় অপরাধী হোক না কেন, সে আমার শৈশব কালে বন্ধু এবং তাকে আমি অনেক ভালবাসি। আবার মন চায় সুব্রতকে নিয়ে যেতে চাই সেই শৈশব কালে ফিরে যেতে।
এটা আমার ছোটবেলার একটি ঘটনা। আরো অনেক দুষ্টু -মিষ্টি, ভয়ের ঘটনা রয়েছে আমার জীবনে। আপনাদের অনুপ্রেরনা এবং সাপোর্ট পেলে আমি আমার জীবনের আরও অনের স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আপনারা সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
হা হা হা এটা সেরা ছিল। বেশ ভালো লাগলো আমাদের নিলয় বাবুর গল্প পড়ে। আমরা পাশে আছি। আরো ভালো ভালো গল্প চাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পাশে থাকলে আরও ভালো কিছু শেয়ার করবো
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit